লায়লা হাসান
'নৃত্যে তোমার মুক্তির রূপ
নৃত্যে তোমার মায়া
বিশ্ব তনুতে অণুতে অণুতে
কাঁপে নৃত্যের ছায়া'...
আমরা জানি নৃত্যই সব শিল্পের 'জননী।' ভাষা সৃষ্টির আগে নৃত্যের সৃষ্টি। অঙ্গভঙ্গি-অভিব্যক্তি দিয়ে মনের ভাব প্রকাশ হতো_ কালক্রমে এই অঙ্গভঙ্গি ও অভিব্যক্তির সঙ্গে যুক্ত হলো সুর, তাল, ছন্দ। এগুলোর সমন্বয়ে সুললিতভাবে মনের ভাব প্রকাশ করাই হলো নৃত্য। নৃত্যের ভাষা সর্বজনীন সবার কাছে সহজেই বোধগম্য হয়। বোঝানো বা ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। তাই নৃত্য সর্বত্র আদরণীয় ও গ্রহণযোগ্য।
এ উপমহাদেশে শাস্ত্রীয় নৃত্যের ঐতিহ্য আছে। কোনো কোনো অঞ্চলে জনজীবনেও লোকনৃত্যের প্রচলন আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, বাংলাদেশের জনজীবনে সাহিত্য, সঙ্গীত, অভিনয় প্রভৃতির অত্যন্ত সমৃদ্ধ ঐতিহ্য থাকলেও নৃত্যের স্থান আমাদের দৈনন্দিন জীবন একরকম ছিল না বললেই হয়। বিশ্ববরেণ্য কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সর্বপ্রথম নৃত্যশিল্পকে সংস্কৃতির অন্যতম বাহন হিসেবে উপলব্ধি করেন এবং তিনি নৃত্যকলাকে তার যোগ্য আসনে সমাসীন করেন।
আধুনিক নৃত্যকলার ইতিহাসে যে নামটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো দীপ্যমান সেটি হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার হাতে গড়া শান্তিনিকেতনই আমাদের আধুনিক নৃত্যের পীঠস্থান। তিনি নৃত্যে নবযুগ সূচনা করেছেন। জনসাধারণের বিরুদ্ধে মনোভাব দূরীভূত করে নৃত্যকলাকে অভিজাত সমাজে আকর্ষণীয় ও আদরণীয় করে তোলেন।
নৃত্য এক সময় মন্দিরে ও রাজদরবারের মধ্যে আবদ্ধ ছিল। মন্দিরে সেবাদাসীরা ও রাজদরবারে রাজনর্তকীরা যথাক্রমে দেব-দেবী ও রাজা-বাদশাদের মনোতুষ্টি বা মনোরঞ্জনের জন্য নৃত্য পরিবেশন করতেন।
সময়ের বিবর্তনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নৃত্যকে সংস্কারমুক্ত-কালিমামুক্ত করে ভদ্র সমাজে ঠাঁই দিলেন। তার প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতনের বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নৃত্যগুরুকে আমন্ত্রণ জানান ছাত্রছাত্রীদের নৃত্যশিক্ষা দেওয়ার জন্য। এছাড়া কবিগুরু বিভিন্ন ঋতুতে, বিভিন্ন পালা-পার্বণে নৃত্য পরিবেশনের প্রবর্তন করেন যেমন_ বৃক্ষরোপণ উৎসব, বর্ষামঙ্গল উৎসব, বসন্তোৎসব ইত্যাদি। ১৯১৯ সালে তিনি অচলায়তন ও ফাল্গুনীতে বালকদের দ্বারা নৃত্য পরিবেশন করান। এরপর এলেন ১৯২৯ সালে শ্রী উদয় শঙ্কর। ১৯৩১ সালে গুরু সদয় দত্ত আরম্ভ করলেন লোকনৃত্যের আন্দোলন। এরপর বুলবুল চৌধুরী প্রমুখ নৃত্যগুরু, নৃত্যের অগ্রদূত। যাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায়, পরিশ্রমে এবং দূরদর্শিতার ফসল আমাদের বর্তমান নৃত্যের অবস্থান।
আমাদের পূর্ববাংলায় সম্ভবত চলি্লশ দশকের প্রথম দিকে (আমার জানা মতে) নৃত্যচর্চা আরম্ভ হয়। নৃত্যশিক্ষক ব্যান্ডেল, (শ্রীভুবনেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়) যিনি উদয় শঙ্করের আলমোড়া কালচারাল সেন্টারের শিক্ষক ছিলেন। তিনি বাড়িতে গিয়ে নৃত্যে তালিম দিতেন। তার ছাত্রীরা ছিলেন লুলু বিলকিস বানু ও মালেকা পারভীন বানু। অন্যদিকে ঢাকার নবাব বাড়িতে কিছু নৃত্যচর্চা হতো, সেটিও বাড়ির চার দেয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। বাড়ির বাইরে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তখনও নৃত্যশিক্ষা দেওয়া বা নৃত্যশিক্ষা পাওয়া আরম্ভ হয়নি। পাকিস্তান আমলে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে নৃত্যচর্চায় প্রচণ্ড অনীহা ছিল। সে সঙ্গে ছিল রক্ষণশীলতা।
শিল্পকলা ভবন নামে ১৯৪৮ সালে গওহর জামিল একটি নৃত্য প্রতিষ্ঠান গঠন করেন। তার সাহচর্যে অন্যরা উদ্বুদ্ধ হলেন। সময়ের বিবর্তনে মানসিকতা, চিন্তাধারা, দৃষ্টিভঙ্গি_ সবকিছুরই পরিবর্তন হয়। ফলে সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েরাও নৃত্যচর্চা আরম্ভ করেন। সে সময়কার কুসংস্কার ও রক্ষণশীলতার ভ্রুকুটিকে আগ্রাহ্য করে তারা নৃত্যশিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যান বেশ অনেক দূর। তাদের মধ্যে যারা প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে আছেন তারা হলেন_ লায়লা সামাদ, রোকেয়া কবীর, রওশন জামিল, জহরত আরা, মনিমুন নেসা, কুলসুম হুদা, নঈমা রহমান, লিলি খান, মেহের আহমেদ, জিনাত আহমেদ, রোজী মজিদ, জান্নাত গনি, মমতাজ, আবেদা, খালেদা প্রমুখ নৃত্যশিল্পী।
পঞ্চাশ দশকের দিকে মাস্তান ভাই, ড. সাজেদুর রহমান যিনি কুয়াশা নামে রহস্য উপন্যাস লিখতেন, তিনিই সম্ভবত ছেলেমেয়ের একসঙ্গে নাচের সূচনা করেন। তার অবদান অবিস্মরণীয়।
'৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের জোয়ারে নৃত্যশিল্পের চর্চা আরও বেগবান হলো_ সৃষ্টি হলো বহু আন্দোলনমুখী গীতিনৃত্য, দেশাত্মবোধক নৃত্য, বিপ্লবাত্মক নৃত্যনাট্য, ছায়ানৃত্য ইত্যাদি। এ সময়কার কৃতী শিল্পী নিজামুল হক, আলতাফ মাহমুদ, জুলফিকার, শেখ লুৎফুর রহমান, আবদুল লতিফ প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। '৫৪ সালের নির্বাচনের সময় এই কর্মকাণ্ড আরও ব্যাপ্তি লাভ করে হৃদয়কে আলোড়িত করে তোলে, জনগণকে সচেতন করে তোলে। আন্তর্জাতিক সঙ্গীত সম্মেলন এ সময়েই ঢাকার গুলিস্তান হলে অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলন দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে আরও সুদৃঢ় করল। মুসলিম লীগের পতনের পরে '৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের একটি উদারনৈতিক সরকার গঠিত হয়। এ সময় বুলবুল ললিতকলা একাডেমী, চারুকলা ইনস্টিটিউট, চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা, বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
এ দেশের নৃত্যজগতের অগ্রদূত বুলবুল চৌধুরীর অকাল তিরোধানে তার গুণগ্রাহী বন্ধুবান্ধব বুলবুলের স্মৃতি ও সৃষ্টিকে অমর করে রাখার অভিপ্রায়ে বুলবুল ললিতকলা একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন। এই একাডেমীর প্রধান উদ্যোক্তাদের মধ্যে মাহমুদ নূরুল হুদা, মোহাম্মদ মোদাব্বের, আনোয়ারা বাহার চৌধুরী প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বুলবুল চৌধুরীর এক কৃতী ছাত্র অজিত সান্যাল বুলবুল একাডেমীর প্রথম শিক্ষক হয়ে আসেন ভারত থেকে। তার নেতৃত্বে নৃত্যকলা এগিয়ে গেল আরও একধাপ। এরপর এলেন ভক্তিময় দাশগুপ্ত_ যার তত্ত্বাবধানে সৃষ্টি হলো অনেকগুলো রবীন্দ্র নৃত্যনাট্যের নৃত্যরূপ। এরপর শিক্ষকতার ভার নেন জিএ মান্নান, সমর ভট্টাচার্য, রাম সিং প্রমুখ নৃত্যগুরু। যাদের অবদান নৃত্যের ক্ষেত্রে প্রাতঃস্মরণীয়। তাদের সঙ্গে আরও কিছু নামও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যাদের ঐকান্তিক চেষ্টার কারণে রবীন্দ্র নৃত্যচর্চা বাধাপ্রাপ্ত হতে পারেনি। তারা হলেন আতিকুল ইসলাম, জাহেদুর রহিম, সাদউদ্দীন, আবদুর রহিম, সেলিনা বাহার জামান প্রমুখ নিবেদিতপ্রাণ শিল্পী। ফলে আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চা আরও ত্বরিত গতিসম্পন্ন হয় ও সমৃদ্ধি লাভ করে। এ ধারা '৫৮ সালের মার্শাল ল'য়ের পর কিছুটা স্তিমিত হয়ে এলে বুলবুল ললিতকলা একাডেমী তার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায়। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান আমলের তীব্র রবীন্দ্র-বিরোধিতা সত্ত্বেও অত্যন্ত আড়ম্বরপূর্ণভাবে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উৎসব পালিত হয়। এ উপলক্ষে বাফার উদ্যোগে রবীন্দ্রনাথের তিনটি নৃত্যনাট্য_ শ্যামা, চিত্রাঙ্গদা ও চণ্ডালিকার সফল মঞ্চায়ন হয়। ষাট দশকের দিকে গোড়াপত্তন হলো 'ছায়ানট'-এর। আমাদের সংস্কৃতিতে সংযোজিত হলো এক নবতর মাত্রা। এর উদ্যোক্তার মধ্যে অন্যতম হলেন ডা. সন্জীদা খাতুন ও ওয়াহিদুল হক। আর যে ক'টি প্রতিষ্ঠানের অবদান নৃত্যের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সেগুলো হচ্ছে_ গওহর জামিলের 'জাগো আর্ট ললিতকলা একাডেমী,' জিএ মান্নান-এর 'নিকস্ফণ ললিতকলা কেন্দ্র' ও 'মিউজিক কলেজ'। এ কলেজের নৃত্যকলা বিভাগে শিক্ষকতা করেন জিনাত জাহান ও মঞ্জুর চৌধুরী। এই সমসাময়িককালে একজন বিশিষ্ট কত্থক নৃত্যের ওস্তাদকে আমরা পাই, তিনি হলেন ওস্তাদ মঞ্জুর হোসেন। তার শিষ্যদের মধ্যে সৈয়দ আবুল কালামের নাম উল্লেখযোগ্য। এ সময়কার কয়েকজন নৃত্যশিল্পী নৃত্যে বিশিষ্টতা লাভ করেন_ তাদের মধ্যে রাহিজা খানম, ডালিয়া নিলুফার, মন্দিরা নন্দী, আলপনা মুমতাজ, নার্গিস মুর্শিদা, কামাল লোহানী, অজিত দে, দুলাল তালুকদার, কাজল ইব্রাহিম, মীনু হক, ডলি ইকবাল, জিনাত বরকতউল্লাহ, লুবনা মরিয়ম, পিনু খান, আমীর হোসেন বাবু, সেলিনা হোসেন প্রমুখ।
সংস্কৃতির মূল উদ্দেশ্য মানুষের জীবনকে সত্য ও সুন্দরের পথে প্রবাহিত করা। আমাদের দেশে প্রচলিত প্রাথমিক পর্যায়ের নৃত্য জীবনঘনিষ্ঠ ছিল না। নৃত্যের মধ্যে সমাজজীবন ও মানবজীবনের প্রতিফলন খুব বেশি ঘটত না, জীবনের রোমান্টিক ও আনন্দের প্রতিফলনই ছিল বেশি। জীবনের বাস্তব ছবিটি এই নৃত্যে পাওয়া যেত না। মুক্তিযুদ্ধের পর সংস্কৃতির মুক্তি ঘটায় নৃত্য অনেক ব্যাপকতা লাভ করল। শিল্পী ও পরিচালকরা অধিক মাত্রায় সচেতন হয়েছেন। তারা জীবনের কথা, সমাজের কথা চিন্তা-ভাবনা করছেন_ নৃত্যের মাধ্যমে জনগণের কণ্ঠকে সোচ্চার করে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছেন, জীবনের কথা বলেছেন, আমাদের চাওয়া-পাওয়া, দাবি-দাওয়া, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার কথা বলছেন। অনেক কবিতা, কাহিনী, গল্প, উপাখ্যান ও বাস্তব ঘটনার সহায়তায় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে এখন নৃত্যে প্রতিফলিত করার চেষ্টা চলছে। নৃত্য হয়ে উঠছে বক্তব্যপ্রধান জীবনভিত্তিক।
এ ক্ষেত্রে দিব্য, নটরাজ, ধ্রুপদ, কথাকলি, বেণুকা, সঙ্গীতভবন, ঝঙ্কার ও শিল্পকলা একাডেমীর অবদানের কথা অনস্বীকার্য। দীপা খন্দকার, শিবলী মহম্মদ, পীযূষ কিরণ পাল, আলতামাস আহমেদ, শাহেদা আলতামাস, আবুল কাশেম, আমানুল হক, গোলাম মুস্তফা, রাহিজা খানম, আলপনা, মুমতাজ, শামীম আরা নীপা, জিনাত বরকতউল্লাহ অনেক নিরীক্ষাধর্মী কাজ করছেন। শিবলী মহম্মদ আমাদের দেশীয় নৃত্যের সঙ্গে ব্যালেরীতির সংমিশ্রণে নৃত্যনির্মিতি করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এখানে উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথ 'ঝুলন' কবিতার নৃত্যনির্মিতিতে আধুনিক ইউরোপীয় নৃত্যপদ্ধতি ব্যবহার করেন। শামীম আরা নীপা বৈচিত্র্য এনেছেন কোরিওগ্রাফিতে_ এখনকার নৃত্যগুলো বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ, ফরমেশনগুলো চমকপ্রদ। অন্য পরিচালকরাও তাদের সৃষ্ট নৃত্যে এই বৈচিত্র্য আনতে সচেষ্ট। দীপা খন্দকার নৃত্যকে আরও সমৃদ্ধ ও উন্নত করে তোলার জন্য প্রচুর শ্রম দিচ্ছেন, নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন। নটরাজের ভূমিকাও এক্ষেত্রে নগণ্য নয়। তারাই সর্বপ্রথম শহীদ মিনারে নৃত্য পরিবেশন করার সাহসিকতা দেখান। এর আগে শহীদ মিনারে শহীদ দিবসে নৃত্য পরিবেশন নিষিদ্ধ ছিল। কারণ শহীদ দিবস শোক দিবস, তাই রক্ষণশীলদের মতে, শোক দিবসে নৃত্য কেন? 'নৃত্য তো আনন্দের বিষয়'। কিন্তু নৃত্যশিল্পীরা তাদের মনের আবেগ, প্রাণের কথা, তাদের বক্তব্য প্রকাশ করবেন কিসের মাধ্যমে? গল্প, কবিতা, না-কি গানে? তাদের প্রাণও চায় ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের মহান বীর সৈনিকদের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে, তাদের মনের কথা বলতে। আজ প্রায় বেশ কয়েক বছর ধরে শোক দিবসেও নৃত্য তার নিজস্ব ঠাঁই করে নিয়েছে_ এ বাধা আমাদের টেলিভিশনেও প্রচলিত ছিল কিন্তু এখন সে দ্বারও উন্মুক্ত হয়েছে নৃত্যশিল্পীদের দ্বারা। নটরাজ নৃত্যকে আধুনিকীকরণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে, নৃত্যনাট্যে বিভিন্ন ফর্ম এনে গতানুগতিকতাকে ভেঙে নতুন কিছু সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। নাটকের কিছু কিছু ফর্মও সংযোজিত হচ্ছে। জিএ মান্নান নির্দেশিত বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর অসংখ্য
ষ এরপর ১৪ পৃষ্ঠায়
নৃত্যনাট্যের মধ্যে : 'নকশীকাঁথার মাঠ', 'ক্ষুধিত পাষাণ' 'সিন্ধু', ডা. এনামুল হক বিরচিত 'রাজপথ-জনপথ', 'উত্তরণের দেশে', গওহর জামিলের 'আনারকলি', মাস্তানার 'মহুয়া', 'মেঘদূত', পীযূষ কিরণ-এর 'ওমর খৈয়াম' ইত্যাদি নৃত্যজগতে এক একটি মাইলফলক। আমাদের নৃত্যধারায় আরও কিছু পরিবর্তন ঘটেছে সাংস্কৃতিক চুক্তির বিনিময়ে বিদেশি নৃত্যদলের আগমনে।
নৃত্যের ক্ষেত্রে আরও একজনের কথা অবশ্যই মনে করা প্রয়োজন। তিনি হলেন মুস্তাফা মনোয়ার। তার পরিকল্পনা, পোশাক, আলোক নির্দেশনা ইত্যাদি বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা নৃত্যকে অনেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে এবং সমৃদ্ধ করেছে_ তার পদ্ধতিতে অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে বর্তমানে কাজ করছেন।
আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পর শিল্পকলা একাডেমী গঠিত হলো_ অনেক সুযোগ-সুবিধা বাড়ল শিল্পীদের, প্রায় সারাদেশে শাখা গঠন হলো। নৃত্যচর্চার ক্ষেত্রে একটা জোয়ার এলো_ বৃত্তি নিয়ে অনেক শিল্পী ভারতে গেলেন উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য। তারা ফিরে এসে আমাদের নৃত্যপদ্ধতিকে নবতর মাত্রা সংযোজন করলেন। তাদের মধ্যে অনুপ কুমার দাশ, বেলায়েত হোসেন খান, সোমা মুমতাজ, শর্মিলা আহমেদ, আনিসুল ইসলাম হীরু, কচি ইসলাম, লিখন, প্রমা অবন্তী, প্রেমা, ওয়াদা, ব্যানার্জি, সাজু আহম্মেদ, মুনমুন, শুক্লা সরকার ও শিবলী মোহাম্মদের নাম উল্লেখযোগ্য। এক্ষেত্রে শিশু একাডেমীর ভূমিকাও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। শিশুরা এখানে শিল্পকলার অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি নৃত্যকলায় প্রশিক্ষণ পাচ্ছে_ এই সুযোগ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুরাও যেন, পায় তাদের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষকের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
১৯৮০ থেকে '৮৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনে নিয়মিতভাবে প্রচারিত ছোটদের নাচ শেখার আসর 'রুমঝুম' ছোটদের মধ্যে নাচ শেখার ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের নাচ শেখানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হন। ফলে অনেক ক্ষুদে নৃত্যশিল্পীর জন্ম হলো। এই আসরটি সবচেয়ে বেশি উদ্বুদ্ধ করেছিল আর প্রয়োজনও ছিল মফস্বল ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদের জন্য। যেখানে নাচ শেখার তেমন কোনো রকম উপায় ছিল না। এই অনুষ্ঠানের ফলে নৃত্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়।
বর্তমানকালে নাচের বেশ উন্নতি সাধন হয়েছে_ অন্তত এটুকু বলা যায়, নৃত্যশিল্পীরা যথেষ্ট সচেতন হয়েছেন তাদের কর্তব্য সম্পর্কে। নাটক, গান, সাহিত্য ইত্যাদির পাশাপাশি নৃত্যশিল্পীরাও নাচের উন্নতি সাধনে বদ্ধপরিকর। এ ব্যাপারে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ও জাতীয় শিশু প্রতিযোগিতার অবদানও উল্লেখযোগ্য। তবে এ কথা সত্য যে, নৃত্যশিক্ষার সুযোগ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ইত্যাদি শহরকেন্দ্রিক, ঢাকাকেন্দ্রিক। ঢাকার বাইরে এ ধরনের সুযোগ সীমিত। শিল্পকলা একাডেমী এ ব্যাপারে কিছুটা সহায়তা করেছে, কিন্তু তা খুবই অপ্রতুল। কিছু কিছু নৃত্যামোদী অভিভাবক ও নৃত্যপাগল ছেলেমেয়ে নাচ শেখার জন্য ছুটে আসে ঢাকায়। এভাবে তারা কিছু পদ্ধতিগত নৃত্যের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রযোজিত ছোটদের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান 'নতুন কুঁড়ি' নৃত্যের ক্ষেত্রে প্রচুর আগ্রহ সৃষ্টি করেছে, শিল্পী তৈরি করেছে। নৃত্যের ব্যাপকতা প্রসার বা বৃদ্ধি পেয়েছে নিঃসন্দেহে। শিশুদের মধ্যে ভালো করে নাচ শেখার, নৃত্য পরিবেশন করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে পুরস্কার পাওয়ার আশায়। প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব মানুষকে শিল্পচর্চার প্রতি নিষ্ঠাবান ও আন্তরিক করে তোলে।
এ প্রসঙ্গে আরও একটি ব্যাপার তুলে ধরা বিশেষ প্রয়োজন। সেটি হলো নৃত্য প্রশিক্ষণের একটি পাঠ্যসূচি নির্ধারণ এবং যোগ্য প্রশিক্ষক দ্বারা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ব্যবসায়িক মনোভাব নিয়ে কিছু কিছু নৃত্য প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সেখানে যোগ্য প্রশিক্ষকের অভাবে শিক্ষার্থীরা যথার্থ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা, যা নাকি সব বিষয়েরই মূল ভিত্তি তা যদি শুদ্ধ বা শক্ত না হয় পরবর্তীকালে তা সংশোধন করা অত্যন্ত দুরূহ, এর প্রতিকার হওয়া প্রয়োজন।
ইদানীংকালে আমাদের নৃত্যে ক্লাসিক ও ফোক ফরমগুলো ভেঙে একটি নতুন আঙ্গিকের সূচনা করা হয়েছে। উচ্চাঙ্গ নৃত্যের সমাদর ছিল আগেই, বিশেষভাবে কত্থক নৃত্যের। এছাড়া ভরতনাট্যম, ওড়িষী, মণিপুরি নৃত্যও সমাদর পেয়েছে প্রচুর। মণিপুরি নৃত্যেও অসম্পূর্ণ ধারার প্রচলন ছিল, আমাদের ছায়ানটের সহযোগিতায় তাকে পরিপূর্ণতা দান করলেন মণিপুরি নৃত্যবিশারদ শান্তিবালা সিনহা। তার ঐকান্তিক চেষ্টায় মণিপুরি নৃত্য শুদ্ধতা পেল। মণিপুরি নৃত্যের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে শৃঙ্গারমণি কলাবতী দেবীর অবদান অবিস্মরণীয়, যিনি তার মূল্যবান সময়ের অনেকটা ব্যয় করে ভারত থেকে আসেন আমাদের শিক্ষার্থীদের উন্নততর প্রশিক্ষণ দিতে_ তামান্না রহমান ও শর্মিলা ব্যানার্জি তার কাছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
ওড়িষী নৃত্যের প্রচলন আমাদের দেশে বিশেষ ছিল না বললেই চলে। ভারতীয় নৃত্যগুরু সানি মহাপাত্র প্রায় তিন-চার বছর আমাদের শিল্পীদের ওড়িষী নৃত্যে প্রশিক্ষণ দেন। বর্তমানে এ নৃত্যের দর্শকও তৈরি হয়েছে প্রচুর। কত্থক, ভরতনাট্যম নৃত্য আগেও প্রচলিত ছিল, এখন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পীদের চেষ্টায় আরও উন্নত হয়েছে। ১৯৯৩ সালে ভারতের প্রখ্যাত নৃত্য বিশারদ পদ্মশ্রী লীলা স্যামসন 'ইন্টান্যাশনাল ডান্স কাউন্সিল' বাংলাদেশ কেন্দ্রের উদ্যোগে ঢাকায় ভরতনাট্যমের একটি সংক্ষিপ্ত কর্মশিবির পরিচালনা করেন। শিল্পকলা একাডেমী কোরিয়ার প্রখ্যাত কোরিওগ্রাফার কিমকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল এদেশের নৃত্যশিল্পীদের কোরিওগ্রাফিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য।
একটি বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে, সেটি হলো শিশু নৃত্যশিল্পীরা যেন তাদের উপযোগী নৃত্যের মুদ্রা, অঙ্গভঙ্গি, অভিব্যক্তি, পোশাক-পরিচ্ছদ, অলঙ্কার, রূপসজ্জা ব্যবহার করে। এমনকি যে নাচটি সেই শিশুশিল্পী পরিবেশন করবে তার গানটি, নৃত্য নির্মিতিটি তার জন্য যথার্থ কি-না এ বিষয়টি অবশ্যই ভেবে দেখা প্রয়োজন। যারা শিক্ষকতা করেন তাদেরও এ ব্যাপারে সজাগ হওয়া উচিত।
নাটকের মতো দর্শনীর বিনিময়ে নৃত্যানুষ্ঠান প্রযোজনার চিন্তা-ভাবনা সর্বপ্রথম করে 'বৈতালিক'। ১৯৭৭ সাল থেকে প্রায় ৫-৬ বছর নিয়মিত দর্শনীর বিনিময়ে নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ হতো। এরপর এলো 'ধ্রুপদ' ও কয়েকটি অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ করল। 'বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা' 'বাফা', 'সাধনা', 'দিব্য নটরাজ', 'বেণুকা' ও 'বাংলাদেশ ব্যালেট্রুপ' মাঝেমধ্যে দর্শনীর বিনিময়ে নৃত্যানুষ্ঠান মঞ্চস্থ করেছে। এ ব্যাপারে আগ্রহী দর্শকের সাড়া পাওয়া গেছে প্রচুর। বোধদীপ্ত নৃত্যরস-পিপাসু দর্শক তৈরি করাও নৃত্যশিল্পীদের একান্ত কাম্য হওয়া বাঞ্ছনীয়।
জনজীবনে নৃত্যকে সম্পৃক্ত করে সবার মাঝে সেই নৃত্যধারার রসকে প্রবাহিত করতে হবে, বইয়ে দিতে হবে সর্বত্র। উপজাতীয়দের মধ্যে যেমন দলবদ্ধভাবে আনুষ্ঠানিক নৃত্যের প্রচলন আছে, গানে যেমন সমবেত সঙ্গীতের রেওয়াজ আছে, কয়ার করা হয়, গ্রামাঞ্চল যেমন : পালা-পার্বণ, বিয়ে ইত্যাদি অনুষ্ঠানে_ সবাই সংঘবদ্ধবাবে যোগ দেওয়া_ বিদেশেও যার প্রচলন আছে তেমনি আমাদের নগরবাসীদের মধ্যেও যদি কোনো নির্দিষ্ট নৃত্যের প্রচলন করা যেত, যেটা খুবই সহজসাধ্য, সবাই জানবে, সবাই অংশগ্রহণ করতে পারবে, তাহলে নৃত্য শুধু নৃত্যশিল্পীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আরও ব্যাপকতা লাভ করে মানুষের হৃদয়ের কাছাকাছি পেঁৗছে সর্বজনীনতা লাভ করতে পারত।
শিল্পের দ্বারা আপন আত্মাকে সংস্কৃত ও জনজীবনকে সুন্দর থেকে সুন্দরতর করে তোলাই শিল্পীর মূল লক্ষ্য।
মুক্ত সুরের ছন্দে সব অন্ধকার, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা দূর করে আলোকিত হওয়া ও আলোকিত করার লক্ষ্যে আমরা ১৯৯২ সাল থেকে ২৯ এপ্রিল আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস পালন করছি। ক্রমেই এটি ব্যাপকতা লাভ করেছে সমগ্র দেশজুড়ে। এই দিনটি পালিত হচ্ছে উৎসবাকারে। শুধু নৃত্যানুষ্ঠান পরিবেশনই আমাদের মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নয়, আমাদের উদ্দেশ্য সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে নৃত্যশিল্পকে মূল্যায়ন করা ও মর্যাদা প্রদান। নৃত্য শুধু বিনোদন নয়_ নৃত্য জীবনের কথা বলে_ আমাদের ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, নারীমুক্তি আন্দোলন, মানবাধিকার, আমাদের হতাশা-বঞ্চনা, স্বাধিকার আন্দোলন প্রতিটি বিষয়ই বিবৃত হয় আমাদের নৃত্যকলার মাধ্যমে নৃত্যজীবনেরই প্রতিফলন, প্রতিবিম্ব।
মেধা, মননশীল, আদর্শবান, সৎ নাগরিক গড়ে তোলার জন্য সাংস্কৃতিক চর্চা তথা নৃত্য অনুশীলন অপরিহার্য। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে নৃত্যের ভূমিকা অপরিসীম। তাই আমাদের আগামী প্রজন্ম যারা সোনার বাংলার ভবিষ্যৎ তাদের মেধা ও মননের যথাযথ বিকাশের জন্য প্রাথমিক পাঠ্যক্রম থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাঠ্যক্রম পর্যন্ত নৃত্যকলাকে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা একান্ত প্রয়োজন। এর কোনো বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে সরকারের পৃষ্ঠপোষককতার জন্য বারবার দ্বারস্থ হয়েও সে রকম সাড়া বা আশ্বাস আমরা পাইনি। বর্তমানে দেশব্যাপী নৃত্যচর্চা হচ্ছে, নৃত্যশিল্পীর সংখ্যাও ক্রমবর্ধমান। নাচ নিয়ে নানারকম পরীক্ষামূলক কার্যক্রম হচ্ছে, কর্মশিবির, সেমিনার ইত্যাদি হচ্ছে। বিদেশে সরকারের প্রতিনিধি দলে নৃত্যশিল্পীদের তালিকাও দীর্ঘ থাকে কিন্তু দেশে নৃত্যশিল্পীদের সেই অর্থে মূল্যায়ন করা হয় না। আমাদের বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা দেশব্যাপী সপ্তাহব্যাপী নৃত্যদিবস পালন করছে। জাতীয় নৃত্য উৎসব পালন করছে। নৃত্যশিক্ষার প্রতিষ্ঠানও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে_ নৃত্য গোষ্ঠীগুলোর সংখ্যাও শতাধিক কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি, আমরা নৃত্যানুষ্ঠানের জন্য কোনো 'স্পন্সর' পাই না, কোনোরকম আর্থিক সহযোগিতা বা অনুদান পাই না। সরকারি অনুষ্ঠানগুলোতেও নৃত্যশিল্পীদের সম্মানী উল্লেখ করার মতো নয়। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, পাঠ্যসূচিতে নৃত্যকে অন্তর্ভুক্তিকরণ করা হলে শিক্ষার্থীরা এর প্রতি মনোনিবেশ করবে, আগ্রহী হয়ে উঠবে। ফলে বিপথগামিতাও অনেকাংশে রোধ হবে। নৃত্যশিল্পের যথার্থ মূল্যায়ন হলে শিল্পীরা এই মাধ্যমকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে পারবেন। মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের মতো আমরা একটি স্বতন্ত্র নৃত্যকলা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করার আবেদন রেখেছি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে আমাদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। আশা করছি, আমরা আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সফলকাম হবো নিশ্চয়ই।
শুধু অনুষ্ঠানসর্বস্ব নৃত্যশিক্ষা বা পরিবেশ নয়, আমাদের মূল লক্ষ্য নৃত্যশিল্প ও নৃত্যশিল্পীকে সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সম্মানীয় স্থানে অধিষ্ঠিত করা। নৃত্যই আমাদের সমাজ বদলের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর, শানিত হাতিয়ার। জয় আমাদের অনিবার্য।
জয় হোক নৃত্যশিল্পের
জয় হোক নৃত্যশিল্পীর।
নৃত্যে তোমার মায়া
বিশ্ব তনুতে অণুতে অণুতে
কাঁপে নৃত্যের ছায়া'...
আমরা জানি নৃত্যই সব শিল্পের 'জননী।' ভাষা সৃষ্টির আগে নৃত্যের সৃষ্টি। অঙ্গভঙ্গি-অভিব্যক্তি দিয়ে মনের ভাব প্রকাশ হতো_ কালক্রমে এই অঙ্গভঙ্গি ও অভিব্যক্তির সঙ্গে যুক্ত হলো সুর, তাল, ছন্দ। এগুলোর সমন্বয়ে সুললিতভাবে মনের ভাব প্রকাশ করাই হলো নৃত্য। নৃত্যের ভাষা সর্বজনীন সবার কাছে সহজেই বোধগম্য হয়। বোঝানো বা ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। তাই নৃত্য সর্বত্র আদরণীয় ও গ্রহণযোগ্য।
এ উপমহাদেশে শাস্ত্রীয় নৃত্যের ঐতিহ্য আছে। কোনো কোনো অঞ্চলে জনজীবনেও লোকনৃত্যের প্রচলন আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, বাংলাদেশের জনজীবনে সাহিত্য, সঙ্গীত, অভিনয় প্রভৃতির অত্যন্ত সমৃদ্ধ ঐতিহ্য থাকলেও নৃত্যের স্থান আমাদের দৈনন্দিন জীবন একরকম ছিল না বললেই হয়। বিশ্ববরেণ্য কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সর্বপ্রথম নৃত্যশিল্পকে সংস্কৃতির অন্যতম বাহন হিসেবে উপলব্ধি করেন এবং তিনি নৃত্যকলাকে তার যোগ্য আসনে সমাসীন করেন।
আধুনিক নৃত্যকলার ইতিহাসে যে নামটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো দীপ্যমান সেটি হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার হাতে গড়া শান্তিনিকেতনই আমাদের আধুনিক নৃত্যের পীঠস্থান। তিনি নৃত্যে নবযুগ সূচনা করেছেন। জনসাধারণের বিরুদ্ধে মনোভাব দূরীভূত করে নৃত্যকলাকে অভিজাত সমাজে আকর্ষণীয় ও আদরণীয় করে তোলেন।
নৃত্য এক সময় মন্দিরে ও রাজদরবারের মধ্যে আবদ্ধ ছিল। মন্দিরে সেবাদাসীরা ও রাজদরবারে রাজনর্তকীরা যথাক্রমে দেব-দেবী ও রাজা-বাদশাদের মনোতুষ্টি বা মনোরঞ্জনের জন্য নৃত্য পরিবেশন করতেন।
সময়ের বিবর্তনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নৃত্যকে সংস্কারমুক্ত-কালিমামুক্ত করে ভদ্র সমাজে ঠাঁই দিলেন। তার প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতনের বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নৃত্যগুরুকে আমন্ত্রণ জানান ছাত্রছাত্রীদের নৃত্যশিক্ষা দেওয়ার জন্য। এছাড়া কবিগুরু বিভিন্ন ঋতুতে, বিভিন্ন পালা-পার্বণে নৃত্য পরিবেশনের প্রবর্তন করেন যেমন_ বৃক্ষরোপণ উৎসব, বর্ষামঙ্গল উৎসব, বসন্তোৎসব ইত্যাদি। ১৯১৯ সালে তিনি অচলায়তন ও ফাল্গুনীতে বালকদের দ্বারা নৃত্য পরিবেশন করান। এরপর এলেন ১৯২৯ সালে শ্রী উদয় শঙ্কর। ১৯৩১ সালে গুরু সদয় দত্ত আরম্ভ করলেন লোকনৃত্যের আন্দোলন। এরপর বুলবুল চৌধুরী প্রমুখ নৃত্যগুরু, নৃত্যের অগ্রদূত। যাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায়, পরিশ্রমে এবং দূরদর্শিতার ফসল আমাদের বর্তমান নৃত্যের অবস্থান।
আমাদের পূর্ববাংলায় সম্ভবত চলি্লশ দশকের প্রথম দিকে (আমার জানা মতে) নৃত্যচর্চা আরম্ভ হয়। নৃত্যশিক্ষক ব্যান্ডেল, (শ্রীভুবনেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়) যিনি উদয় শঙ্করের আলমোড়া কালচারাল সেন্টারের শিক্ষক ছিলেন। তিনি বাড়িতে গিয়ে নৃত্যে তালিম দিতেন। তার ছাত্রীরা ছিলেন লুলু বিলকিস বানু ও মালেকা পারভীন বানু। অন্যদিকে ঢাকার নবাব বাড়িতে কিছু নৃত্যচর্চা হতো, সেটিও বাড়ির চার দেয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। বাড়ির বাইরে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তখনও নৃত্যশিক্ষা দেওয়া বা নৃত্যশিক্ষা পাওয়া আরম্ভ হয়নি। পাকিস্তান আমলে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে নৃত্যচর্চায় প্রচণ্ড অনীহা ছিল। সে সঙ্গে ছিল রক্ষণশীলতা।
শিল্পকলা ভবন নামে ১৯৪৮ সালে গওহর জামিল একটি নৃত্য প্রতিষ্ঠান গঠন করেন। তার সাহচর্যে অন্যরা উদ্বুদ্ধ হলেন। সময়ের বিবর্তনে মানসিকতা, চিন্তাধারা, দৃষ্টিভঙ্গি_ সবকিছুরই পরিবর্তন হয়। ফলে সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েরাও নৃত্যচর্চা আরম্ভ করেন। সে সময়কার কুসংস্কার ও রক্ষণশীলতার ভ্রুকুটিকে আগ্রাহ্য করে তারা নৃত্যশিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যান বেশ অনেক দূর। তাদের মধ্যে যারা প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে আছেন তারা হলেন_ লায়লা সামাদ, রোকেয়া কবীর, রওশন জামিল, জহরত আরা, মনিমুন নেসা, কুলসুম হুদা, নঈমা রহমান, লিলি খান, মেহের আহমেদ, জিনাত আহমেদ, রোজী মজিদ, জান্নাত গনি, মমতাজ, আবেদা, খালেদা প্রমুখ নৃত্যশিল্পী।
পঞ্চাশ দশকের দিকে মাস্তান ভাই, ড. সাজেদুর রহমান যিনি কুয়াশা নামে রহস্য উপন্যাস লিখতেন, তিনিই সম্ভবত ছেলেমেয়ের একসঙ্গে নাচের সূচনা করেন। তার অবদান অবিস্মরণীয়।
'৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের জোয়ারে নৃত্যশিল্পের চর্চা আরও বেগবান হলো_ সৃষ্টি হলো বহু আন্দোলনমুখী গীতিনৃত্য, দেশাত্মবোধক নৃত্য, বিপ্লবাত্মক নৃত্যনাট্য, ছায়ানৃত্য ইত্যাদি। এ সময়কার কৃতী শিল্পী নিজামুল হক, আলতাফ মাহমুদ, জুলফিকার, শেখ লুৎফুর রহমান, আবদুল লতিফ প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। '৫৪ সালের নির্বাচনের সময় এই কর্মকাণ্ড আরও ব্যাপ্তি লাভ করে হৃদয়কে আলোড়িত করে তোলে, জনগণকে সচেতন করে তোলে। আন্তর্জাতিক সঙ্গীত সম্মেলন এ সময়েই ঢাকার গুলিস্তান হলে অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলন দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে আরও সুদৃঢ় করল। মুসলিম লীগের পতনের পরে '৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের একটি উদারনৈতিক সরকার গঠিত হয়। এ সময় বুলবুল ললিতকলা একাডেমী, চারুকলা ইনস্টিটিউট, চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা, বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
এ দেশের নৃত্যজগতের অগ্রদূত বুলবুল চৌধুরীর অকাল তিরোধানে তার গুণগ্রাহী বন্ধুবান্ধব বুলবুলের স্মৃতি ও সৃষ্টিকে অমর করে রাখার অভিপ্রায়ে বুলবুল ললিতকলা একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন। এই একাডেমীর প্রধান উদ্যোক্তাদের মধ্যে মাহমুদ নূরুল হুদা, মোহাম্মদ মোদাব্বের, আনোয়ারা বাহার চৌধুরী প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বুলবুল চৌধুরীর এক কৃতী ছাত্র অজিত সান্যাল বুলবুল একাডেমীর প্রথম শিক্ষক হয়ে আসেন ভারত থেকে। তার নেতৃত্বে নৃত্যকলা এগিয়ে গেল আরও একধাপ। এরপর এলেন ভক্তিময় দাশগুপ্ত_ যার তত্ত্বাবধানে সৃষ্টি হলো অনেকগুলো রবীন্দ্র নৃত্যনাট্যের নৃত্যরূপ। এরপর শিক্ষকতার ভার নেন জিএ মান্নান, সমর ভট্টাচার্য, রাম সিং প্রমুখ নৃত্যগুরু। যাদের অবদান নৃত্যের ক্ষেত্রে প্রাতঃস্মরণীয়। তাদের সঙ্গে আরও কিছু নামও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যাদের ঐকান্তিক চেষ্টার কারণে রবীন্দ্র নৃত্যচর্চা বাধাপ্রাপ্ত হতে পারেনি। তারা হলেন আতিকুল ইসলাম, জাহেদুর রহিম, সাদউদ্দীন, আবদুর রহিম, সেলিনা বাহার জামান প্রমুখ নিবেদিতপ্রাণ শিল্পী। ফলে আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চা আরও ত্বরিত গতিসম্পন্ন হয় ও সমৃদ্ধি লাভ করে। এ ধারা '৫৮ সালের মার্শাল ল'য়ের পর কিছুটা স্তিমিত হয়ে এলে বুলবুল ললিতকলা একাডেমী তার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায়। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান আমলের তীব্র রবীন্দ্র-বিরোধিতা সত্ত্বেও অত্যন্ত আড়ম্বরপূর্ণভাবে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উৎসব পালিত হয়। এ উপলক্ষে বাফার উদ্যোগে রবীন্দ্রনাথের তিনটি নৃত্যনাট্য_ শ্যামা, চিত্রাঙ্গদা ও চণ্ডালিকার সফল মঞ্চায়ন হয়। ষাট দশকের দিকে গোড়াপত্তন হলো 'ছায়ানট'-এর। আমাদের সংস্কৃতিতে সংযোজিত হলো এক নবতর মাত্রা। এর উদ্যোক্তার মধ্যে অন্যতম হলেন ডা. সন্জীদা খাতুন ও ওয়াহিদুল হক। আর যে ক'টি প্রতিষ্ঠানের অবদান নৃত্যের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সেগুলো হচ্ছে_ গওহর জামিলের 'জাগো আর্ট ললিতকলা একাডেমী,' জিএ মান্নান-এর 'নিকস্ফণ ললিতকলা কেন্দ্র' ও 'মিউজিক কলেজ'। এ কলেজের নৃত্যকলা বিভাগে শিক্ষকতা করেন জিনাত জাহান ও মঞ্জুর চৌধুরী। এই সমসাময়িককালে একজন বিশিষ্ট কত্থক নৃত্যের ওস্তাদকে আমরা পাই, তিনি হলেন ওস্তাদ মঞ্জুর হোসেন। তার শিষ্যদের মধ্যে সৈয়দ আবুল কালামের নাম উল্লেখযোগ্য। এ সময়কার কয়েকজন নৃত্যশিল্পী নৃত্যে বিশিষ্টতা লাভ করেন_ তাদের মধ্যে রাহিজা খানম, ডালিয়া নিলুফার, মন্দিরা নন্দী, আলপনা মুমতাজ, নার্গিস মুর্শিদা, কামাল লোহানী, অজিত দে, দুলাল তালুকদার, কাজল ইব্রাহিম, মীনু হক, ডলি ইকবাল, জিনাত বরকতউল্লাহ, লুবনা মরিয়ম, পিনু খান, আমীর হোসেন বাবু, সেলিনা হোসেন প্রমুখ।
সংস্কৃতির মূল উদ্দেশ্য মানুষের জীবনকে সত্য ও সুন্দরের পথে প্রবাহিত করা। আমাদের দেশে প্রচলিত প্রাথমিক পর্যায়ের নৃত্য জীবনঘনিষ্ঠ ছিল না। নৃত্যের মধ্যে সমাজজীবন ও মানবজীবনের প্রতিফলন খুব বেশি ঘটত না, জীবনের রোমান্টিক ও আনন্দের প্রতিফলনই ছিল বেশি। জীবনের বাস্তব ছবিটি এই নৃত্যে পাওয়া যেত না। মুক্তিযুদ্ধের পর সংস্কৃতির মুক্তি ঘটায় নৃত্য অনেক ব্যাপকতা লাভ করল। শিল্পী ও পরিচালকরা অধিক মাত্রায় সচেতন হয়েছেন। তারা জীবনের কথা, সমাজের কথা চিন্তা-ভাবনা করছেন_ নৃত্যের মাধ্যমে জনগণের কণ্ঠকে সোচ্চার করে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছেন, জীবনের কথা বলেছেন, আমাদের চাওয়া-পাওয়া, দাবি-দাওয়া, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার কথা বলছেন। অনেক কবিতা, কাহিনী, গল্প, উপাখ্যান ও বাস্তব ঘটনার সহায়তায় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে এখন নৃত্যে প্রতিফলিত করার চেষ্টা চলছে। নৃত্য হয়ে উঠছে বক্তব্যপ্রধান জীবনভিত্তিক।
এ ক্ষেত্রে দিব্য, নটরাজ, ধ্রুপদ, কথাকলি, বেণুকা, সঙ্গীতভবন, ঝঙ্কার ও শিল্পকলা একাডেমীর অবদানের কথা অনস্বীকার্য। দীপা খন্দকার, শিবলী মহম্মদ, পীযূষ কিরণ পাল, আলতামাস আহমেদ, শাহেদা আলতামাস, আবুল কাশেম, আমানুল হক, গোলাম মুস্তফা, রাহিজা খানম, আলপনা, মুমতাজ, শামীম আরা নীপা, জিনাত বরকতউল্লাহ অনেক নিরীক্ষাধর্মী কাজ করছেন। শিবলী মহম্মদ আমাদের দেশীয় নৃত্যের সঙ্গে ব্যালেরীতির সংমিশ্রণে নৃত্যনির্মিতি করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এখানে উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথ 'ঝুলন' কবিতার নৃত্যনির্মিতিতে আধুনিক ইউরোপীয় নৃত্যপদ্ধতি ব্যবহার করেন। শামীম আরা নীপা বৈচিত্র্য এনেছেন কোরিওগ্রাফিতে_ এখনকার নৃত্যগুলো বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ, ফরমেশনগুলো চমকপ্রদ। অন্য পরিচালকরাও তাদের সৃষ্ট নৃত্যে এই বৈচিত্র্য আনতে সচেষ্ট। দীপা খন্দকার নৃত্যকে আরও সমৃদ্ধ ও উন্নত করে তোলার জন্য প্রচুর শ্রম দিচ্ছেন, নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন। নটরাজের ভূমিকাও এক্ষেত্রে নগণ্য নয়। তারাই সর্বপ্রথম শহীদ মিনারে নৃত্য পরিবেশন করার সাহসিকতা দেখান। এর আগে শহীদ মিনারে শহীদ দিবসে নৃত্য পরিবেশন নিষিদ্ধ ছিল। কারণ শহীদ দিবস শোক দিবস, তাই রক্ষণশীলদের মতে, শোক দিবসে নৃত্য কেন? 'নৃত্য তো আনন্দের বিষয়'। কিন্তু নৃত্যশিল্পীরা তাদের মনের আবেগ, প্রাণের কথা, তাদের বক্তব্য প্রকাশ করবেন কিসের মাধ্যমে? গল্প, কবিতা, না-কি গানে? তাদের প্রাণও চায় ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের মহান বীর সৈনিকদের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে, তাদের মনের কথা বলতে। আজ প্রায় বেশ কয়েক বছর ধরে শোক দিবসেও নৃত্য তার নিজস্ব ঠাঁই করে নিয়েছে_ এ বাধা আমাদের টেলিভিশনেও প্রচলিত ছিল কিন্তু এখন সে দ্বারও উন্মুক্ত হয়েছে নৃত্যশিল্পীদের দ্বারা। নটরাজ নৃত্যকে আধুনিকীকরণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে, নৃত্যনাট্যে বিভিন্ন ফর্ম এনে গতানুগতিকতাকে ভেঙে নতুন কিছু সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। নাটকের কিছু কিছু ফর্মও সংযোজিত হচ্ছে। জিএ মান্নান নির্দেশিত বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর অসংখ্য
ষ এরপর ১৪ পৃষ্ঠায়
নৃত্যনাট্যের মধ্যে : 'নকশীকাঁথার মাঠ', 'ক্ষুধিত পাষাণ' 'সিন্ধু', ডা. এনামুল হক বিরচিত 'রাজপথ-জনপথ', 'উত্তরণের দেশে', গওহর জামিলের 'আনারকলি', মাস্তানার 'মহুয়া', 'মেঘদূত', পীযূষ কিরণ-এর 'ওমর খৈয়াম' ইত্যাদি নৃত্যজগতে এক একটি মাইলফলক। আমাদের নৃত্যধারায় আরও কিছু পরিবর্তন ঘটেছে সাংস্কৃতিক চুক্তির বিনিময়ে বিদেশি নৃত্যদলের আগমনে।
নৃত্যের ক্ষেত্রে আরও একজনের কথা অবশ্যই মনে করা প্রয়োজন। তিনি হলেন মুস্তাফা মনোয়ার। তার পরিকল্পনা, পোশাক, আলোক নির্দেশনা ইত্যাদি বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা নৃত্যকে অনেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে এবং সমৃদ্ধ করেছে_ তার পদ্ধতিতে অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে বর্তমানে কাজ করছেন।
আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পর শিল্পকলা একাডেমী গঠিত হলো_ অনেক সুযোগ-সুবিধা বাড়ল শিল্পীদের, প্রায় সারাদেশে শাখা গঠন হলো। নৃত্যচর্চার ক্ষেত্রে একটা জোয়ার এলো_ বৃত্তি নিয়ে অনেক শিল্পী ভারতে গেলেন উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য। তারা ফিরে এসে আমাদের নৃত্যপদ্ধতিকে নবতর মাত্রা সংযোজন করলেন। তাদের মধ্যে অনুপ কুমার দাশ, বেলায়েত হোসেন খান, সোমা মুমতাজ, শর্মিলা আহমেদ, আনিসুল ইসলাম হীরু, কচি ইসলাম, লিখন, প্রমা অবন্তী, প্রেমা, ওয়াদা, ব্যানার্জি, সাজু আহম্মেদ, মুনমুন, শুক্লা সরকার ও শিবলী মোহাম্মদের নাম উল্লেখযোগ্য। এক্ষেত্রে শিশু একাডেমীর ভূমিকাও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। শিশুরা এখানে শিল্পকলার অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি নৃত্যকলায় প্রশিক্ষণ পাচ্ছে_ এই সুযোগ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুরাও যেন, পায় তাদের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষকের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
১৯৮০ থেকে '৮৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনে নিয়মিতভাবে প্রচারিত ছোটদের নাচ শেখার আসর 'রুমঝুম' ছোটদের মধ্যে নাচ শেখার ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের নাচ শেখানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হন। ফলে অনেক ক্ষুদে নৃত্যশিল্পীর জন্ম হলো। এই আসরটি সবচেয়ে বেশি উদ্বুদ্ধ করেছিল আর প্রয়োজনও ছিল মফস্বল ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদের জন্য। যেখানে নাচ শেখার তেমন কোনো রকম উপায় ছিল না। এই অনুষ্ঠানের ফলে নৃত্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়।
বর্তমানকালে নাচের বেশ উন্নতি সাধন হয়েছে_ অন্তত এটুকু বলা যায়, নৃত্যশিল্পীরা যথেষ্ট সচেতন হয়েছেন তাদের কর্তব্য সম্পর্কে। নাটক, গান, সাহিত্য ইত্যাদির পাশাপাশি নৃত্যশিল্পীরাও নাচের উন্নতি সাধনে বদ্ধপরিকর। এ ব্যাপারে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ও জাতীয় শিশু প্রতিযোগিতার অবদানও উল্লেখযোগ্য। তবে এ কথা সত্য যে, নৃত্যশিক্ষার সুযোগ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ইত্যাদি শহরকেন্দ্রিক, ঢাকাকেন্দ্রিক। ঢাকার বাইরে এ ধরনের সুযোগ সীমিত। শিল্পকলা একাডেমী এ ব্যাপারে কিছুটা সহায়তা করেছে, কিন্তু তা খুবই অপ্রতুল। কিছু কিছু নৃত্যামোদী অভিভাবক ও নৃত্যপাগল ছেলেমেয়ে নাচ শেখার জন্য ছুটে আসে ঢাকায়। এভাবে তারা কিছু পদ্ধতিগত নৃত্যের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রযোজিত ছোটদের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান 'নতুন কুঁড়ি' নৃত্যের ক্ষেত্রে প্রচুর আগ্রহ সৃষ্টি করেছে, শিল্পী তৈরি করেছে। নৃত্যের ব্যাপকতা প্রসার বা বৃদ্ধি পেয়েছে নিঃসন্দেহে। শিশুদের মধ্যে ভালো করে নাচ শেখার, নৃত্য পরিবেশন করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে পুরস্কার পাওয়ার আশায়। প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব মানুষকে শিল্পচর্চার প্রতি নিষ্ঠাবান ও আন্তরিক করে তোলে।
এ প্রসঙ্গে আরও একটি ব্যাপার তুলে ধরা বিশেষ প্রয়োজন। সেটি হলো নৃত্য প্রশিক্ষণের একটি পাঠ্যসূচি নির্ধারণ এবং যোগ্য প্রশিক্ষক দ্বারা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ব্যবসায়িক মনোভাব নিয়ে কিছু কিছু নৃত্য প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সেখানে যোগ্য প্রশিক্ষকের অভাবে শিক্ষার্থীরা যথার্থ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা, যা নাকি সব বিষয়েরই মূল ভিত্তি তা যদি শুদ্ধ বা শক্ত না হয় পরবর্তীকালে তা সংশোধন করা অত্যন্ত দুরূহ, এর প্রতিকার হওয়া প্রয়োজন।
ইদানীংকালে আমাদের নৃত্যে ক্লাসিক ও ফোক ফরমগুলো ভেঙে একটি নতুন আঙ্গিকের সূচনা করা হয়েছে। উচ্চাঙ্গ নৃত্যের সমাদর ছিল আগেই, বিশেষভাবে কত্থক নৃত্যের। এছাড়া ভরতনাট্যম, ওড়িষী, মণিপুরি নৃত্যও সমাদর পেয়েছে প্রচুর। মণিপুরি নৃত্যেও অসম্পূর্ণ ধারার প্রচলন ছিল, আমাদের ছায়ানটের সহযোগিতায় তাকে পরিপূর্ণতা দান করলেন মণিপুরি নৃত্যবিশারদ শান্তিবালা সিনহা। তার ঐকান্তিক চেষ্টায় মণিপুরি নৃত্য শুদ্ধতা পেল। মণিপুরি নৃত্যের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে শৃঙ্গারমণি কলাবতী দেবীর অবদান অবিস্মরণীয়, যিনি তার মূল্যবান সময়ের অনেকটা ব্যয় করে ভারত থেকে আসেন আমাদের শিক্ষার্থীদের উন্নততর প্রশিক্ষণ দিতে_ তামান্না রহমান ও শর্মিলা ব্যানার্জি তার কাছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
ওড়িষী নৃত্যের প্রচলন আমাদের দেশে বিশেষ ছিল না বললেই চলে। ভারতীয় নৃত্যগুরু সানি মহাপাত্র প্রায় তিন-চার বছর আমাদের শিল্পীদের ওড়িষী নৃত্যে প্রশিক্ষণ দেন। বর্তমানে এ নৃত্যের দর্শকও তৈরি হয়েছে প্রচুর। কত্থক, ভরতনাট্যম নৃত্য আগেও প্রচলিত ছিল, এখন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পীদের চেষ্টায় আরও উন্নত হয়েছে। ১৯৯৩ সালে ভারতের প্রখ্যাত নৃত্য বিশারদ পদ্মশ্রী লীলা স্যামসন 'ইন্টান্যাশনাল ডান্স কাউন্সিল' বাংলাদেশ কেন্দ্রের উদ্যোগে ঢাকায় ভরতনাট্যমের একটি সংক্ষিপ্ত কর্মশিবির পরিচালনা করেন। শিল্পকলা একাডেমী কোরিয়ার প্রখ্যাত কোরিওগ্রাফার কিমকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল এদেশের নৃত্যশিল্পীদের কোরিওগ্রাফিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য।
একটি বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে, সেটি হলো শিশু নৃত্যশিল্পীরা যেন তাদের উপযোগী নৃত্যের মুদ্রা, অঙ্গভঙ্গি, অভিব্যক্তি, পোশাক-পরিচ্ছদ, অলঙ্কার, রূপসজ্জা ব্যবহার করে। এমনকি যে নাচটি সেই শিশুশিল্পী পরিবেশন করবে তার গানটি, নৃত্য নির্মিতিটি তার জন্য যথার্থ কি-না এ বিষয়টি অবশ্যই ভেবে দেখা প্রয়োজন। যারা শিক্ষকতা করেন তাদেরও এ ব্যাপারে সজাগ হওয়া উচিত।
নাটকের মতো দর্শনীর বিনিময়ে নৃত্যানুষ্ঠান প্রযোজনার চিন্তা-ভাবনা সর্বপ্রথম করে 'বৈতালিক'। ১৯৭৭ সাল থেকে প্রায় ৫-৬ বছর নিয়মিত দর্শনীর বিনিময়ে নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ হতো। এরপর এলো 'ধ্রুপদ' ও কয়েকটি অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ করল। 'বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা' 'বাফা', 'সাধনা', 'দিব্য নটরাজ', 'বেণুকা' ও 'বাংলাদেশ ব্যালেট্রুপ' মাঝেমধ্যে দর্শনীর বিনিময়ে নৃত্যানুষ্ঠান মঞ্চস্থ করেছে। এ ব্যাপারে আগ্রহী দর্শকের সাড়া পাওয়া গেছে প্রচুর। বোধদীপ্ত নৃত্যরস-পিপাসু দর্শক তৈরি করাও নৃত্যশিল্পীদের একান্ত কাম্য হওয়া বাঞ্ছনীয়।
জনজীবনে নৃত্যকে সম্পৃক্ত করে সবার মাঝে সেই নৃত্যধারার রসকে প্রবাহিত করতে হবে, বইয়ে দিতে হবে সর্বত্র। উপজাতীয়দের মধ্যে যেমন দলবদ্ধভাবে আনুষ্ঠানিক নৃত্যের প্রচলন আছে, গানে যেমন সমবেত সঙ্গীতের রেওয়াজ আছে, কয়ার করা হয়, গ্রামাঞ্চল যেমন : পালা-পার্বণ, বিয়ে ইত্যাদি অনুষ্ঠানে_ সবাই সংঘবদ্ধবাবে যোগ দেওয়া_ বিদেশেও যার প্রচলন আছে তেমনি আমাদের নগরবাসীদের মধ্যেও যদি কোনো নির্দিষ্ট নৃত্যের প্রচলন করা যেত, যেটা খুবই সহজসাধ্য, সবাই জানবে, সবাই অংশগ্রহণ করতে পারবে, তাহলে নৃত্য শুধু নৃত্যশিল্পীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আরও ব্যাপকতা লাভ করে মানুষের হৃদয়ের কাছাকাছি পেঁৗছে সর্বজনীনতা লাভ করতে পারত।
শিল্পের দ্বারা আপন আত্মাকে সংস্কৃত ও জনজীবনকে সুন্দর থেকে সুন্দরতর করে তোলাই শিল্পীর মূল লক্ষ্য।
মুক্ত সুরের ছন্দে সব অন্ধকার, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা দূর করে আলোকিত হওয়া ও আলোকিত করার লক্ষ্যে আমরা ১৯৯২ সাল থেকে ২৯ এপ্রিল আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস পালন করছি। ক্রমেই এটি ব্যাপকতা লাভ করেছে সমগ্র দেশজুড়ে। এই দিনটি পালিত হচ্ছে উৎসবাকারে। শুধু নৃত্যানুষ্ঠান পরিবেশনই আমাদের মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নয়, আমাদের উদ্দেশ্য সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে নৃত্যশিল্পকে মূল্যায়ন করা ও মর্যাদা প্রদান। নৃত্য শুধু বিনোদন নয়_ নৃত্য জীবনের কথা বলে_ আমাদের ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, নারীমুক্তি আন্দোলন, মানবাধিকার, আমাদের হতাশা-বঞ্চনা, স্বাধিকার আন্দোলন প্রতিটি বিষয়ই বিবৃত হয় আমাদের নৃত্যকলার মাধ্যমে নৃত্যজীবনেরই প্রতিফলন, প্রতিবিম্ব।
মেধা, মননশীল, আদর্শবান, সৎ নাগরিক গড়ে তোলার জন্য সাংস্কৃতিক চর্চা তথা নৃত্য অনুশীলন অপরিহার্য। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে নৃত্যের ভূমিকা অপরিসীম। তাই আমাদের আগামী প্রজন্ম যারা সোনার বাংলার ভবিষ্যৎ তাদের মেধা ও মননের যথাযথ বিকাশের জন্য প্রাথমিক পাঠ্যক্রম থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাঠ্যক্রম পর্যন্ত নৃত্যকলাকে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা একান্ত প্রয়োজন। এর কোনো বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে সরকারের পৃষ্ঠপোষককতার জন্য বারবার দ্বারস্থ হয়েও সে রকম সাড়া বা আশ্বাস আমরা পাইনি। বর্তমানে দেশব্যাপী নৃত্যচর্চা হচ্ছে, নৃত্যশিল্পীর সংখ্যাও ক্রমবর্ধমান। নাচ নিয়ে নানারকম পরীক্ষামূলক কার্যক্রম হচ্ছে, কর্মশিবির, সেমিনার ইত্যাদি হচ্ছে। বিদেশে সরকারের প্রতিনিধি দলে নৃত্যশিল্পীদের তালিকাও দীর্ঘ থাকে কিন্তু দেশে নৃত্যশিল্পীদের সেই অর্থে মূল্যায়ন করা হয় না। আমাদের বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা দেশব্যাপী সপ্তাহব্যাপী নৃত্যদিবস পালন করছে। জাতীয় নৃত্য উৎসব পালন করছে। নৃত্যশিক্ষার প্রতিষ্ঠানও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে_ নৃত্য গোষ্ঠীগুলোর সংখ্যাও শতাধিক কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি, আমরা নৃত্যানুষ্ঠানের জন্য কোনো 'স্পন্সর' পাই না, কোনোরকম আর্থিক সহযোগিতা বা অনুদান পাই না। সরকারি অনুষ্ঠানগুলোতেও নৃত্যশিল্পীদের সম্মানী উল্লেখ করার মতো নয়। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, পাঠ্যসূচিতে নৃত্যকে অন্তর্ভুক্তিকরণ করা হলে শিক্ষার্থীরা এর প্রতি মনোনিবেশ করবে, আগ্রহী হয়ে উঠবে। ফলে বিপথগামিতাও অনেকাংশে রোধ হবে। নৃত্যশিল্পের যথার্থ মূল্যায়ন হলে শিল্পীরা এই মাধ্যমকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে পারবেন। মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের মতো আমরা একটি স্বতন্ত্র নৃত্যকলা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করার আবেদন রেখেছি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে আমাদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। আশা করছি, আমরা আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সফলকাম হবো নিশ্চয়ই।
শুধু অনুষ্ঠানসর্বস্ব নৃত্যশিক্ষা বা পরিবেশ নয়, আমাদের মূল লক্ষ্য নৃত্যশিল্প ও নৃত্যশিল্পীকে সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সম্মানীয় স্থানে অধিষ্ঠিত করা। নৃত্যই আমাদের সমাজ বদলের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর, শানিত হাতিয়ার। জয় আমাদের অনিবার্য।
জয় হোক নৃত্যশিল্পের
জয় হোক নৃত্যশিল্পীর।
No comments:
Post a Comment