লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: শুক্র, ২০০৯-১১-২৭ ০২:২২)
মূল লেখাটির লিংক--http://www.sachalayatan.com/subasish/28871
ছফাগিরি। কিস্তি এক।
আমি সম্প্রদায়ে মানুষ। আরো ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ে বললে হিন্দু মানুষ। জন্মস্থান চট্টগ্রাম। আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত হাজারি গলি নামের এক হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় আমি বেড়ে উঠি। তারপর ঢাকায় চলে আসি। পড়তে। ১৯৯১-১৯৯২ সালের দিকে আমি ঠিকমতো বুঝতে পারি ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ে আমার পরিচয়। এর আগে বেশ ভালোই ছিলাম।
একদম যে বুঝতাম না তা কিন্তু নয়। কলেজিয়েট স্কুলের হুজুর লাল বিস্কুটের( সরি, উনার ভালো নাম মনে নাই) এক দুটা কথায় আন্দাজ করেছিলাম ধর্মে আলাদা হলে তাদের প্রতি ব্যবহারও আলাদা হবে। আর ক্লাস সেভেনে ক্যাডেট কলেজের মেডিক্যাল টেস্টের সময় আমাকে ডাক্তার সাহেব বলেছিলেন, টিকে গেলে তোমার খতনা করে দিবো। ছোটখাট এই এক-দুটা ঘটনা। কিন্তু ১৯৯২ সালে এসে বুঝলাম, ধর্ম মৃত্যুর কারণ ও হতে পারে। সে এক আতঙ্কের সময়। ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদে ভাংচুর হলো। আর চট্টগ্রামে শুরু হলো নরক গুলজার । রাতে আমাদের পাড়ার পোলাপান খড়গ আর এসিড নিয়ে পাহারা দিতো। আমাদের এলাকার পাশে ছিল আন্দরকিল্লার জামে মসজিদ। তখন এক রাতে মসজিদ থেকে কারা যেন কেরোসিন বোমা মেরে হিন্দুদের একটা বস্তি জ্বালিয়ে দেয়। পরেরদিন বিশাল চিৎকার চেঁচামেচি। দৌঁড়ে গিয়ে দেখি জুম্মার নামাজের পর কিছু মুসল্লি লুঙ্গি উঁচু করে হিন্দুপাড়ার বাড়িগুলোর দিকে পশ্চাৎদেশ দেখাচ্ছে। সেই ট্রমা আমি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি।সম্প্রদায়চিন্তা কিভাবে শরীরের মধ্যে ঢুকে পড়ে আমি খালি এটুকুতেই বুঝালাম। জোর করেও অনেক সময় বৃহৎ মানব সম্প্রদায়ের একজন না ভেবে নিজেকে ভেবে নিতে হয় আমি হিন্দু গোত্রের। আহমদ ছফা কেন মুসলমান সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে চাইতেন আমার নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি কিছুটা বুঝতে পারি।
এই কিস্তি এবং আগামী কিস্তিতে আমি ছফার দুইটা প্রবন্ধ কোট করার জন্য যথেচ্ছ ব্যবহার করবো। প্রথম প্রবন্ধ শতবর্ষের ফেরারিঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় , আর দ্বিতীয়টা বাঙালী মুসলমানের মন । দ্বিতীয়টির প্রকাশকাল ১৯৭৭ এবং প্রথমটির ১৯৯৭। মাঝে মাঝে কথা পাড়বো যদ্যপি আমার গুরু থেকে।
পহেলা ধরি বঙ্কিমবাবুকে নিয়ে লেখা প্রথম প্রবন্ধটিকে। কিন্তু বঙ্কিম কেন? ছফা লিখেছেন যদ্যপিতে-
আমি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ওপর নাতিদীর্ঘ একটি পুস্তিকা লিখেছিলাম। ওতে কিছু নতুন কথা সাহস করে লিখেছিলাম। লেখাটির বক্তব্য নিয়ে ঢাকা এবং কলকাতার পণ্ডিতদের মধ্যে উত্তপ্ত বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। অনেকে আমার সাথে একমত হয়েছিলেন। অপরদিকে আমার মতের বিরোধিতা যাঁরা করছিলেন, তাঁদের সংখ্যাও অল্প ছিল না। আমার ইচ্ছে ছিল রাজ্জাক স্যার আমার লেখাটি সম্পর্কে কী ধারণা পোষণ করেন একসময়ে গিয়ে জেনে নিবো ১ … স্যার এভাবে কথা শুরু করলেন, একটা কবিতা আছে না- ‘আমি থাকি ছোট ঘরে বড় মন লয়ে, নিজের দুঃখের অন্ন খাই সুখী হয়ে’। বঙ্কিমের ব্যাপারে জিনিসটা অইব একেবারে উল্টা অর্থাৎ আমি থাকি বড় ঘরে ছোট মন লয়ে। হের উপর আপনের সময় নষ্ট করার প্রয়োজন আছিল না। আপনের তো অঢেল ক্ষমতা, অপাত্রে নষ্ট করেন ক্যান? ইচ্ছা করলে অন্য কাম করবার পারেন ২…
মৌলবী আহমদ ছফা তাও গুরুকে বোঝাতে চান। গুরু সেইসব থুয়ে তলস্তয় নিয়ে কথা পাড়েন। গুরু চান শিষ্য যেন মুসলমান সমাজের প্রতিনিধি হিসাবে ঢাউস কোন ওয়ার এন্ড পীস লিখে ওই সমাজের সুরতহাল করে। শিষ্য চায় ইতিহাস বুঝে নিয়ে ধীরে সুস্থে আগাতে।
ছফা শুরু করেছেন বাল্যকাল থেকে। বলেছেন তাঁর বঙ্কিম-অভিজ্ঞতার কথা। কেন বঙ্কিমের বইয়ের গায়ে অশ্রাব্য খিস্তি লেখা থাকে- এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে তিনি এই লেখকের রাষ্ট্রবেত্তা চরিত্র ভালো করে ফুটিয়েছেন। ঔপন্যাসিক হিসেবে বঙ্কিম ছিলেন চরম সাম্প্রদায়িক। একটা হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন। আর সেটা মুসলমানদের পুরো অস্বীকার করে। … বাঙালি সমাজে বঙ্কিমচন্দ্রের প্রভাব সর্বাধিক ক্রিয়াশীল হতে পেরেছে, তার মুখ্য কারণ বঙ্কিম রচিত সাহিত্য গ্রন্থের অনন্যতা নয়, বঙ্কিমের রাষ্ট্রচিন্তা। মনে রাখতে হবে বঙ্কিমের মৃত্যুর প্রায় সত্তুর বছর পরে তাঁর রচিত ‘ সুজলং সুফলং মলয়জ শীতলং বন্দে মাতরম’ গানটি ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের দলীয় সঙ্গীত হিসেবে গৃহীত হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলো৩ … দেশ বিভাগের জন্য কাউকে সত্যি অর্থে দায়ী করতে চাইলে বঙ্কিমের নাম না এসে থাকবে না।আর কেনই বা বঙ্কিম? এর উত্তর খুঁজতে গেলে পেছনের আটশো বছরের ইতিহাস ঘাঁটতে হবে। সাম্প্রদায়িক মনোভাব এমনিতে জন্ম নেয় না। শোষণ বঞ্চনার কোন ট্রাজেডি এর পিছনে থাকে। তবে কারণ যাই হোক ঔপন্যাসিক বঙ্কিমের উচিত ছিলো কালের চিত্রের যথাযথ বর্ণন। তিনি তা করেননি। সত্যকে এড়িয়ে এগোতে চেয়েছেন। ফলে তাঁর উপর দোষ চাপানো ছাড়া ছফার গতি থাকে না। বঙ্কিমের সেই আমলের রাষ্ট্রচিন্তার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায় নি এখনো… ভারতে বৃটিশ শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পর থেকেই ভারতের আত্মবিস্মৃত হিন্দুরা হিন্দুসত্তা তথা ভারতীয় সত্তা ফিরে পেতে আরম্ভ করেন, বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠে তার সূচনা এবং বাবরী মসজিদ ধবংসের মাধ্যমে হিন্দুসত্তা চূড়ান্ত সার্থকথার সাথে বিরাট একটা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে পেরেছে। একটি হিন্দু রাষ্ট্রের স্বপ্ন নির্মাণ করে ভারতীয় হিন্দুদের যথার্থ পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন বঙ্কিম। দেখা যাচ্ছে, আজকের ভারতবর্ষেও বঙ্কিমের রাষ্ট্রচিন্তা অসম্ভব রকম জীবন্ত। ঘোষিতভাবে ধর্মনিরপেক্ষ ভারত রাষ্ট্রের কর্ণধারদের পক্ষেও বঙ্কিমের চিন্তাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না ৪ … উপন্যাস রচনার ক্ষেত্রে বঙ্কিমচন্দ্র সত্যকে প্রকাশ করেন নি। দেবী চৌধুরানী আর আনন্দমঠে সেটা স্পষ্ট হয়। ইংরেজদের সাথে বিদ্রোহে মুসলমানদের অবদান পুরা অস্বীকার করলেন বঙ্কিম … সন্ন্যাসী এবং ফকিরদের মধ্যে বোঝাপড়ার ভাবটি ছিল চমৎকার।কোনো কোনো সময়ে সন্ন্যাসী এবং ফকিরেরা মিলিতভাবে ইংরেজ সৈন্যদের সাথে যুদ্ধ করেছেন। তার ভুরি ভুরি লিখিত প্রমাণ রয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যেটি করলেন, ফকিরদের ভূমিকা সম্পূর্ণরূপে ছেটে বাদ দিয়ে সন্ন্যাসীদের লড়াইকে তাঁর রচনার বিষয়বস্তু করলেন। সত্যানন্দকে বীরের গৌরব দিলেন, কিন্তু মজনু শাহ্র নামটি উল্লেখ করার উদারতা পর্যন্ত দেখাতে পারলেন না। বঙ্কিম তো আসল ঘটনা জানতেন। বঙ্কিমচন্দ্রের অপরাধ- তিনি বাস্তবতাকে খুন করেছেন৫ … হিন্দু-মুসলমানের সম্মিলিত লড়াইকে একক হিন্দুর লড়াই দেখাতে গিয়ে ইতিহাসের এমন একটা বিকলাঙ্গ অগ্রগতির খাত খনন করেছেন, যা বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসকে একটা কানা গলির ভেতর ঢুকিয়ে দিয়েছে, তার প্রভাব এতো সুদূরপ্রসারী হয়েছে, ভারতের জাতীয় ইতিহাস অদ্যাবধি স্বাভাবিক পথটির সন্ধান করে নিতে পারেনি৬ … হিন্দু-মুসলমানদের মিলনভূমি ভারতকে একটা সেক্যুলার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পরিবর্তে হিন্দু রাষ্ট্রের স্বপ্নে বিভোর বঙ্কিমচন্দ্র ইতিহাসকে মেনে নিতে অস্বীকার করলেন … হিন্দু সমাজের উত্থানের উন্মেষ পর্বে রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের মধ্যে হিন্দু রাষ্ট্রের স্বপ্ন এতোটা গাঢ়মূল হয়েছিলো যে, তার অভিঘাত মুসলমান সম্প্রদায়কে আরেকটি ধর্মতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে ঠেলে দিয়েছিল৭ …
ছফা বঙ্কিমের সমালোচনা করেছেন কিন্তু তাঁর গদ্যভঙ্গি, শিল্পচাতুর্য ও জীবনদৃষ্টি্র প্রশংসা করতে ভুলেননি। সেই যুগের কথাও অস্বীকার করেননি। তখন আর্য গৌরবের কাল আর মুসলিম নিন্দায় ভরপুর। বঙ্কিম যুগের চেতনাকে একটা ইতিহাস বিনির্মাণের ধারায় ফেলতে চেয়েছিলেন … আনন্দমঠকে যদি কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর সঙ্গে তুলনা করা হয়, কৃষ্ণচরিতের তুলনা করতে হবে ডাস ক্যাপিটালের সাথে৮ … বঙ্কিম শ্রীকৃষ্ণের জীবন চরিতের বিভিন্ন দিকে না গিয়ে রাষ্ট্রগুরু হিসেবে তাঁকে অধিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। অবতার হবার কারণে তাঁর ধর্মগুরুর পরিচয়টাও পুরো লুকিয়ে ফেলেননি। এককেন্দ্রিক শাসন কায়েম রাখতে কংস, শিশুপাল, জরাসন্ধ এসব আঞ্চলিক রাজাকে খুন করতে শ্রীকৃষ্ণের বাধেনি।দীনেশচন্দ্র সেন শ্রীকৃষ্ণের এই সাম্রাজ্যবাদী রূপের মুখোশ খুলে দেন তাঁর ‘বৃহৎ বঙ্গ’ গ্রন্থে। এই নিয়ে বেজায় চটেছিলেন বঙ্কিম। বঙ্কিম বর্ণিত শ্রীকৃষ্ণের চরিত্রের সাথে ছফা আশ্চর্য সাযুজ্য পেয়েছেন অন্য এক মানব শিক্ষকের … আমি আরবের নবী হযরত মুহম্মদের কথা বলছি। তিনিও তাঁর প্রচারিত ধর্মের নাম রেখেছিলেন ইসলাম তথা শান্তি। তিনি নিজেকে রাহমাতুল্লিল আল-আমিন, মানে বিশ্বজগতের প্রতি আশীর্বাদ বলে পরিচয় দিতেন। যুদ্ধ বিগ্রহের বিষয়টা শ্রীকৃষ্ণ যে দৃষ্টিতে বিচার করতেন, তার সঙ্গে হযরত মুহম্মদের মতামতের আশ্চর্য সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। ইসলামের দৃষ্টিতে অকারণে যুদ্ধ করা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। একমাত্র আক্রান্ত হলেই তোমার প্রতিরোধ করার অধিকার আছে। আক্রান্ত না হলে খবরদার আক্রমণ করবে না। যুদ্ধ শুরু করার আগে শান্তি বজায় রাখার সব ধরণের চেষ্টা এবং যত্ন করবে। কিন্তু যুদ্ধ যদি তোমার উপর চাপিয়ে দেয়া হয়, সে যুদ্ধ করা তোমার জন্য ফরজ- অবশ্য কর্তব্য, শান্তি প্রচারের প্রয়োজনে যে যুদ্ধ তোমার জন্য এসে পড়েছে, তাতে অবশ্যই শামিল হবে। তুমি পালিয়ে যেতে পারবে না। পৃষ্ঠ প্রদর্শন কিংবা কর্তব্যে অবহেলা করলে পরকালে তোমাকে নরকবাসী হতে হবে। মনে রাখবে, ধর্মযুদ্ধ তোমার ঈমানের অঙ্গীকারের অংশ৯ … হিন্দুধর্মের আকারহীন গভীরতার নাগাল পেতে বঙ্কিমচন্দ্র কৃষ্ণচরিত রূপায়নে হযরত মুহম্মদের জীবনী থেকে অনেক সহায়তা নিয়েছেন বলে ছফার বিশ্বাস। বঙ্কিমের মানসগঠন নিয়ে লিখতে গিয়ে ছফা বলেছেন … ইংরেজ শক্তিকে পরাজিত করে আপাততঃ হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা অসম্ভব, একথা স্বপ্ন তাড়িত বঙ্কিমও না মেনে নিয়ে পারেন না। তাই বঙ্কিমকে হিন্দু রাষ্ট্রের টগবগে স্বপ্ন বুকে নিয়ে অতীতের দিকে তাকাতে হয়। আটশো বছরের মুসলিম শাসনের গ্লানি আপন রক্তে শুষে নিয়ে তিনি অস্থির এবং উতলা হয়ে উঠেন। তাঁর মানবতাবোধ, সৌন্দর্য চেতনা এবং নিরপেক্ষ ইতিহাস চিন্তা সবকিছু পরাস্ত হয়, জেগে থাকে শুধু ঘৃণা। এই ঘৃণাবোধই তাঁর চিন্তার চালিকাশক্তি হয়ে বসে১০ …
বঙ্কিমচন্দ্রের ইতিহাস বিচারের ভুল ধরতে গিয়ে সেই সময়ের বাঙালি মুসলমানদের মানসচরিতের ব্যাখ্যাও তলব করেছেন আহমদ ছফা … বঙ্কিমচন্দ্র যখন তাঁর যুগান্তকারী উপন্যাসসমূহ রচনা করেছিলেন, রাষ্ট্র সমাজ ইত্যাকার বিষয় নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছিলেন, সেই কোলকাতার মুসলমানেরা বড়োজোর চিৎপুর রোডের সোনাউল্লার মুদ্রণযন্ত্রে ছাপা গুলে বাকাওলির কিসসা কিংবা আমির হামজার পুঁথি শোনায় মশগুল অথবা মিলাদ শুনে পীরের দরবারে ধরণা দিয়ে পুণ্য সঞ্চয়ে রত১১ … ছফার যোগ্যতা তাঁর বর্ণন ভঙ্গিতে। অজস্র তথ্যের ভিড়েও ছফার আওয়াজ স্পষ্ট কানে লাগে। ঠিক কোন কারণে দেশ বিভাগ কি সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প অগোচরে ধমনীর রক্তস্রোতে ঢুকে পড়ে তার দিকনিশানা করতে গিয়ে বঙ্কিমকে বোঝা জরুরী হয়ে পড়ে ছফার। যদ্যপি আমার গুরুতে রাজ্জাক সাহেব এক জায়গায় বলেছিলেন … উপন্যাস অইল গিয়া আধুনিক সোশিয়াল ডিসকোর্স। বেঙ্গলে হিন্দু মুসলমান শত শত বছর ধইরা পাশাপাশি বাস কইরা আইতাছে। হিন্দু লেখকরা ডেলিবারেটলি মুসলমান সমাজরে ইগ্নোর কইরা গেছে১২ … সেক্যুলার ভারত যে আদতে তা নয় বাবরি মসজিদ ইস্যু নিয়ে সৃষ্ট রায়ট, গুজরাটের দাঙ্গা তার প্রমাণ। ছফার লেখা পড়ে বোঝা যায় ঘৃণা হজম করে নির্লিপ্ত হয়ে কিভাবে ইতিহাসকে তার মতোন সঠিকভাবে বলা সম্ভব। একজন খাঁটি সেক্যুলার লেখক ছফা যখন একজন পাঁড় মুসলিম লীগ সমর্থক প্রফেসর আবদুর রাজ্জাককে একজন খাঁটি সেক্যুলার মানুষ হিসেবে রায় দেন তখন তার মাঝে অর্থ থাকে। তাঁদের সেক্যুলারিজম ভারতবর্ষের মতো মুখোশ কিছু নয়।
বঙ্কিমকে নিয়ে ছফার প্রবন্ধের শেষ দুই পৃষ্ঠা পাঠ খুব জরুরী। আমি এক নাগাড়ে সেখান থেকে কথাগুলো তুলে দিচ্ছি-
বঙ্কিমচন্দ্রের হিন্দু রাষ্ট্রচিন্তার অভিঘাতে আরেকটি স্বতন্ত্র ধর্মীয় রাষ্ট্র গঠনের প্রয়াস মুসলিম সমাজের ভেতর থেকে স্ফূরিত হয়ে উঠেছিলো। তার ফল এই হয়েছে যে বাংলাদেশ দ্বিখন্ডিত হয়েছে, ভারতের মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দু’প্রান্তের দু’টো অঞ্চল মিলে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। সিকি শতাব্দীর অবসান না হতেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ব বাংলার জনগোষ্ঠী ভাষাভিত্তিক একটি স্বাধীন জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে একটি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামক স্বতন্ত্র স্বাধীন একটি রাষ্ট্রের জন্ম সম্ভাবিত করে তোলে। জন্মের পর থেকেই এই রাষ্ট্রের অধিবাসীদের এক দোলাচল মানসিকতার মধ্য দিয়েই সময় অতিবাহিত করতে হচ্ছে। অনেক সময় তার প্রকোপ এমন মারাত্মক আকার ধারণ করে যে রাষ্ট্রের চরিত্রের ওপর তা অনিবার্য প্রভাব বিস্তার করে। ধর্ম এবং সংস্কৃতির প্রশ্নে জাতির মধ্যে দ্বিধা বিভক্তির লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আইডেন্টিটি ক্রাইসিস তথা আত্মপরিচয়ের সঙ্কট তার রাষ্ট্রসত্তার ভবিষ্যত অন্ধকারে আবৃত করে রাখে। বর্তমান বাংলাদেশ এক সময় অবিভক্ত বাংলাদেশের অংশ ছিলো আবার পরে ধর্মীয় রাষ্ট্র পাকিস্তানের সাথে সংযুক্ত ছিলো। ব্যক্তির মতো জনগোষ্ঠীও অতীতের টান অগ্রাহ্য করতে পারে না। ভাষাভিত্তিক জাতি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সর্বপ্রধান সংকটসমূহের একটা হলো ধর্ম এবং সংস্কৃতির মধ্যে একটা মেলবন্ধন রচনা করা। অদ্যাবধি বাংলাদেশের কৃত্যবিদ্য শ্রেণীর লোক সে পথে বেশীদূর এগিয়েছেন সে কথা কিছুতেই বলা যাবে না।
ঘোষণা দিলেই একটা রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে যায় না। একটি দরিদ্র কৃষিপ্রধান দেশ কিছুতেই এক লাফে সাম্প্রদায়িকতা পরিহার করতে পারে না। সে একটি সুদীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের এই প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। আমি, ‘শুরু করতে হবে’, এইবাক্যটি জোর দিয়ে উচ্চারণ করছি। সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের অগ্রগণ্য প্রাতিষ্ঠানিক বুদ্ধিজীবীদের বিরাট একটি অংশ বাঙালিয়ানার নামে সে সব চিন্তা চেতনা প্রচার করে আসছেন তার বেশিরভাগই পশ্চিম বাংলার কোলকাতা কেন্দ্রিক চিন্তাচর্চার চর্বিত চর্বণ। মুসলিমপ্রধান একটি সমাজে বাঙালিয়ানার প্রচার ঘটাতে হলে বাঙালিয়ানার একটা নতুন সংজ্ঞা নির্মাণ করতে হবে। এই সংজ্ঞা নির্মাণ পদ্ধতিতে দু’টো বিষয় অবশ্যই সমান গু্রুত্বে বিবেচনার মধ্যে আনতে হবে। প্রথমতঃ ধর্মশাসিত বাঙালি মুসলমান সমাজে ধর্মতান্ত্রিক সামন্ত চিন্তার একচ্ছত্র প্রতাপের অবসান ঘটাতে হবে। যে জাড্যতা, যে বদ্ধমত, যে কূর্মবৃত্তি এই সমাজমানসকে সংকুচিত, অসহিষ্ণুতার মধ্যে নিক্ষেপ করেছে, তার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসার একটি সৃষ্টিশীল প্রক্রিয়া শুরু করা না হলে, বাঙালি মুসলমান সমাজ
আধুনিক বিশ্বের সামনে নির্ভয় চিত্তে কখনো দাঁড়াতে পারবে না। বাংলাদেশে মুসলমান সম্প্রদায় ছাড়া আরো নানা সম্প্রদায় রয়েছে। তথাপি মুসলমান সমাজের কথা বললাম একারণে যে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়। সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মানুষ স্বেচ্ছায় যদি নিজেদের মানস পরিবর্তনের পথটি অনুসরণ না করে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর পক্ষে বেশি কিছু করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বাঙালি মুসলমানের মানস ভুবনের প্রায় সমস্ত অঞ্চলে মধ্যযুগ এখনো রাজ্যপাট বিস্তার করে আছে। মধ্যযুগীয় মানস পরিমণ্ডলে আধুনিক যুগের আলো বিকীরণ করা সহজ কাজ নয়। বাঙালি মুসলমান নিজের ভারেই নুইয়ে আছে।
সাম্প্রতিক কালের বাঙালিত্বের নতুন সংজ্ঞা নির্মাণের দ্বিতীয় শর্তটি হলো উনবিংশ শতাব্দীর বাঙালি হিন্দু মধ্যবিত্ত আধুনিক বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির যে পাটাতনটি সৃষ্টি করেছে সম্পূর্ণরূপে নতুনভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে একটি গ্রহণযোগ্য মানদণ্ড আবিষ্কার করা। বাঙালি সমাজের নানামুখী জাগরণের এই স্তরটি অবহেলা করা যেমন আমাদের সম্ভব হবে না, তেমনি নির্বিচারে গ্রহণ করাও উচিত হবে না। উনবিংশ শতাব্দীর বাঙালি মধ্যবিত্তের জাগরণের সমস্ত বীজতলাটাই ছিলো হিন্দু সমাজের অধিকারে। বাঙালি সংস্কৃতিতে এই শ্রেণীটি অনেক উৎকৃষ্ট কিছু সংযোজন করেছেন, কিন্তু পাশাপাশি তাঁদের সম্প্রদায়গত প্রবণতাসমূহও চারিয়ে দিয়েছেন।
বাংলাদেশে মধ্যশ্রেণীভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে উনবিংশ শতাব্দীর প্রতি এমন এক ধরণের মোহমুগ্ধতা ক্রিয়াশীল, সেটাকে অনেকটা অন্ধত্বের পর্যায়ে ফেলা যায়। এই অসঙ্গত অতীতমুখীতা তাঁদেরকে বর্তমানের প্রতি সম্পূর্ণরূপে কর্তব্যবিমুখ করে রেখেছে। মুসলমান সমাজের ভেতর থেকে অনেকগুলো সংস্কার এবং সামাজিক আন্দোলনের উত্থিত হওয়া প্রয়োজন। পারিবারিক কাঠামোর মধ্যে, সমাজ সংগঠনের মধ্যে, মানব সম্পর্কের ক্ষেত্র পুরোনো মূল্যচিন্তার স্তরে একগুচ্ছ নতুন মূল্যচিন্তা সমাজে প্রতিষ্ঠা দিতে না পারলে বাঙালিত্বের নতুন সংজ্ঞা নির্মাণ করা কখনো সম্ভব হবে না। উনবিংশ শতাব্দীর হিন্দু মধ্যবিত্তের প্রেক্ষিতটা ভেঙ্গে ফেলে বাঙালিত্বের সম্পূর্ণ একটা নতুন প্রেক্ষিত নির্মাণ করা প্রয়োজন। ইতিহাস বাংলাদেশের মানুষদের হাতে বাঙালিত্বের নতুন সংজ্ঞা নির্মাণের দায়িত্ব তুলে দিয়েছে। এই প্রস্তাবিত নতুন সাংস্কৃতিক পাটাতন সমস্ত বাঙালি জনগণের মধ্যে বোঝাপড়া, এবং সুস্থ বিনিময়ের পথ অনেকখানিই সম্প্রসারিত করবে।১৩
সূত্রআমি সম্প্রদায়ে মানুষ। আরো ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ে বললে হিন্দু মানুষ। জন্মস্থান চট্টগ্রাম। আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত হাজারি গলি নামের এক হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় আমি বেড়ে উঠি। তারপর ঢাকায় চলে আসি। পড়তে। ১৯৯১-১৯৯২ সালের দিকে আমি ঠিকমতো বুঝতে পারি ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ে আমার পরিচয়। এর আগে বেশ ভালোই ছিলাম।
একদম যে বুঝতাম না তা কিন্তু নয়। কলেজিয়েট স্কুলের হুজুর লাল বিস্কুটের( সরি, উনার ভালো নাম মনে নাই) এক দুটা কথায় আন্দাজ করেছিলাম ধর্মে আলাদা হলে তাদের প্রতি ব্যবহারও আলাদা হবে। আর ক্লাস সেভেনে ক্যাডেট কলেজের মেডিক্যাল টেস্টের সময় আমাকে ডাক্তার সাহেব বলেছিলেন, টিকে গেলে তোমার খতনা করে দিবো। ছোটখাট এই এক-দুটা ঘটনা। কিন্তু ১৯৯২ সালে এসে বুঝলাম, ধর্ম মৃত্যুর কারণ ও হতে পারে। সে এক আতঙ্কের সময়। ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদে ভাংচুর হলো। আর চট্টগ্রামে শুরু হলো নরক গুলজার । রাতে আমাদের পাড়ার পোলাপান খড়গ আর এসিড নিয়ে পাহারা দিতো। আমাদের এলাকার পাশে ছিল আন্দরকিল্লার জামে মসজিদ। তখন এক রাতে মসজিদ থেকে কারা যেন কেরোসিন বোমা মেরে হিন্দুদের একটা বস্তি জ্বালিয়ে দেয়। পরেরদিন বিশাল চিৎকার চেঁচামেচি। দৌঁড়ে গিয়ে দেখি জুম্মার নামাজের পর কিছু মুসল্লি লুঙ্গি উঁচু করে হিন্দুপাড়ার বাড়িগুলোর দিকে পশ্চাৎদেশ দেখাচ্ছে। সেই ট্রমা আমি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি।সম্প্রদায়চিন্তা কিভাবে শরীরের মধ্যে ঢুকে পড়ে আমি খালি এটুকুতেই বুঝালাম। জোর করেও অনেক সময় বৃহৎ মানব সম্প্রদায়ের একজন না ভেবে নিজেকে ভেবে নিতে হয় আমি হিন্দু গোত্রের। আহমদ ছফা কেন মুসলমান সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে চাইতেন আমার নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি কিছুটা বুঝতে পারি।
এই কিস্তি এবং আগামী কিস্তিতে আমি ছফার দুইটা প্রবন্ধ কোট করার জন্য যথেচ্ছ ব্যবহার করবো। প্রথম প্রবন্ধ শতবর্ষের ফেরারিঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় , আর দ্বিতীয়টা বাঙালী মুসলমানের মন । দ্বিতীয়টির প্রকাশকাল ১৯৭৭ এবং প্রথমটির ১৯৯৭। মাঝে মাঝে কথা পাড়বো যদ্যপি আমার গুরু থেকে।
পহেলা ধরি বঙ্কিমবাবুকে নিয়ে লেখা প্রথম প্রবন্ধটিকে। কিন্তু বঙ্কিম কেন? ছফা লিখেছেন যদ্যপিতে-
আমি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ওপর নাতিদীর্ঘ একটি পুস্তিকা লিখেছিলাম। ওতে কিছু নতুন কথা সাহস করে লিখেছিলাম। লেখাটির বক্তব্য নিয়ে ঢাকা এবং কলকাতার পণ্ডিতদের মধ্যে উত্তপ্ত বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। অনেকে আমার সাথে একমত হয়েছিলেন। অপরদিকে আমার মতের বিরোধিতা যাঁরা করছিলেন, তাঁদের সংখ্যাও অল্প ছিল না। আমার ইচ্ছে ছিল রাজ্জাক স্যার আমার লেখাটি সম্পর্কে কী ধারণা পোষণ করেন একসময়ে গিয়ে জেনে নিবো ১ … স্যার এভাবে কথা শুরু করলেন, একটা কবিতা আছে না- ‘আমি থাকি ছোট ঘরে বড় মন লয়ে, নিজের দুঃখের অন্ন খাই সুখী হয়ে’। বঙ্কিমের ব্যাপারে জিনিসটা অইব একেবারে উল্টা অর্থাৎ আমি থাকি বড় ঘরে ছোট মন লয়ে। হের উপর আপনের সময় নষ্ট করার প্রয়োজন আছিল না। আপনের তো অঢেল ক্ষমতা, অপাত্রে নষ্ট করেন ক্যান? ইচ্ছা করলে অন্য কাম করবার পারেন ২…
মৌলবী আহমদ ছফা তাও গুরুকে বোঝাতে চান। গুরু সেইসব থুয়ে তলস্তয় নিয়ে কথা পাড়েন। গুরু চান শিষ্য যেন মুসলমান সমাজের প্রতিনিধি হিসাবে ঢাউস কোন ওয়ার এন্ড পীস লিখে ওই সমাজের সুরতহাল করে। শিষ্য চায় ইতিহাস বুঝে নিয়ে ধীরে সুস্থে আগাতে।
ছফা শুরু করেছেন বাল্যকাল থেকে। বলেছেন তাঁর বঙ্কিম-অভিজ্ঞতার কথা। কেন বঙ্কিমের বইয়ের গায়ে অশ্রাব্য খিস্তি লেখা থাকে- এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে তিনি এই লেখকের রাষ্ট্রবেত্তা চরিত্র ভালো করে ফুটিয়েছেন। ঔপন্যাসিক হিসেবে বঙ্কিম ছিলেন চরম সাম্প্রদায়িক। একটা হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন। আর সেটা মুসলমানদের পুরো অস্বীকার করে। … বাঙালি সমাজে বঙ্কিমচন্দ্রের প্রভাব সর্বাধিক ক্রিয়াশীল হতে পেরেছে, তার মুখ্য কারণ বঙ্কিম রচিত সাহিত্য গ্রন্থের অনন্যতা নয়, বঙ্কিমের রাষ্ট্রচিন্তা। মনে রাখতে হবে বঙ্কিমের মৃত্যুর প্রায় সত্তুর বছর পরে তাঁর রচিত ‘ সুজলং সুফলং মলয়জ শীতলং বন্দে মাতরম’ গানটি ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের দলীয় সঙ্গীত হিসেবে গৃহীত হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলো৩ … দেশ বিভাগের জন্য কাউকে সত্যি অর্থে দায়ী করতে চাইলে বঙ্কিমের নাম না এসে থাকবে না।আর কেনই বা বঙ্কিম? এর উত্তর খুঁজতে গেলে পেছনের আটশো বছরের ইতিহাস ঘাঁটতে হবে। সাম্প্রদায়িক মনোভাব এমনিতে জন্ম নেয় না। শোষণ বঞ্চনার কোন ট্রাজেডি এর পিছনে থাকে। তবে কারণ যাই হোক ঔপন্যাসিক বঙ্কিমের উচিত ছিলো কালের চিত্রের যথাযথ বর্ণন। তিনি তা করেননি। সত্যকে এড়িয়ে এগোতে চেয়েছেন। ফলে তাঁর উপর দোষ চাপানো ছাড়া ছফার গতি থাকে না। বঙ্কিমের সেই আমলের রাষ্ট্রচিন্তার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায় নি এখনো… ভারতে বৃটিশ শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পর থেকেই ভারতের আত্মবিস্মৃত হিন্দুরা হিন্দুসত্তা তথা ভারতীয় সত্তা ফিরে পেতে আরম্ভ করেন, বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠে তার সূচনা এবং বাবরী মসজিদ ধবংসের মাধ্যমে হিন্দুসত্তা চূড়ান্ত সার্থকথার সাথে বিরাট একটা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে পেরেছে। একটি হিন্দু রাষ্ট্রের স্বপ্ন নির্মাণ করে ভারতীয় হিন্দুদের যথার্থ পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন বঙ্কিম। দেখা যাচ্ছে, আজকের ভারতবর্ষেও বঙ্কিমের রাষ্ট্রচিন্তা অসম্ভব রকম জীবন্ত। ঘোষিতভাবে ধর্মনিরপেক্ষ ভারত রাষ্ট্রের কর্ণধারদের পক্ষেও বঙ্কিমের চিন্তাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না ৪ … উপন্যাস রচনার ক্ষেত্রে বঙ্কিমচন্দ্র সত্যকে প্রকাশ করেন নি। দেবী চৌধুরানী আর আনন্দমঠে সেটা স্পষ্ট হয়। ইংরেজদের সাথে বিদ্রোহে মুসলমানদের অবদান পুরা অস্বীকার করলেন বঙ্কিম … সন্ন্যাসী এবং ফকিরদের মধ্যে বোঝাপড়ার ভাবটি ছিল চমৎকার।কোনো কোনো সময়ে সন্ন্যাসী এবং ফকিরেরা মিলিতভাবে ইংরেজ সৈন্যদের সাথে যুদ্ধ করেছেন। তার ভুরি ভুরি লিখিত প্রমাণ রয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যেটি করলেন, ফকিরদের ভূমিকা সম্পূর্ণরূপে ছেটে বাদ দিয়ে সন্ন্যাসীদের লড়াইকে তাঁর রচনার বিষয়বস্তু করলেন। সত্যানন্দকে বীরের গৌরব দিলেন, কিন্তু মজনু শাহ্র নামটি উল্লেখ করার উদারতা পর্যন্ত দেখাতে পারলেন না। বঙ্কিম তো আসল ঘটনা জানতেন। বঙ্কিমচন্দ্রের অপরাধ- তিনি বাস্তবতাকে খুন করেছেন৫ … হিন্দু-মুসলমানের সম্মিলিত লড়াইকে একক হিন্দুর লড়াই দেখাতে গিয়ে ইতিহাসের এমন একটা বিকলাঙ্গ অগ্রগতির খাত খনন করেছেন, যা বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসকে একটা কানা গলির ভেতর ঢুকিয়ে দিয়েছে, তার প্রভাব এতো সুদূরপ্রসারী হয়েছে, ভারতের জাতীয় ইতিহাস অদ্যাবধি স্বাভাবিক পথটির সন্ধান করে নিতে পারেনি৬ … হিন্দু-মুসলমানদের মিলনভূমি ভারতকে একটা সেক্যুলার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পরিবর্তে হিন্দু রাষ্ট্রের স্বপ্নে বিভোর বঙ্কিমচন্দ্র ইতিহাসকে মেনে নিতে অস্বীকার করলেন … হিন্দু সমাজের উত্থানের উন্মেষ পর্বে রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের মধ্যে হিন্দু রাষ্ট্রের স্বপ্ন এতোটা গাঢ়মূল হয়েছিলো যে, তার অভিঘাত মুসলমান সম্প্রদায়কে আরেকটি ধর্মতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে ঠেলে দিয়েছিল৭ …
ছফা বঙ্কিমের সমালোচনা করেছেন কিন্তু তাঁর গদ্যভঙ্গি, শিল্পচাতুর্য ও জীবনদৃষ্টি্র প্রশংসা করতে ভুলেননি। সেই যুগের কথাও অস্বীকার করেননি। তখন আর্য গৌরবের কাল আর মুসলিম নিন্দায় ভরপুর। বঙ্কিম যুগের চেতনাকে একটা ইতিহাস বিনির্মাণের ধারায় ফেলতে চেয়েছিলেন … আনন্দমঠকে যদি কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর সঙ্গে তুলনা করা হয়, কৃষ্ণচরিতের তুলনা করতে হবে ডাস ক্যাপিটালের সাথে৮ … বঙ্কিম শ্রীকৃষ্ণের জীবন চরিতের বিভিন্ন দিকে না গিয়ে রাষ্ট্রগুরু হিসেবে তাঁকে অধিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। অবতার হবার কারণে তাঁর ধর্মগুরুর পরিচয়টাও পুরো লুকিয়ে ফেলেননি। এককেন্দ্রিক শাসন কায়েম রাখতে কংস, শিশুপাল, জরাসন্ধ এসব আঞ্চলিক রাজাকে খুন করতে শ্রীকৃষ্ণের বাধেনি।দীনেশচন্দ্র সেন শ্রীকৃষ্ণের এই সাম্রাজ্যবাদী রূপের মুখোশ খুলে দেন তাঁর ‘বৃহৎ বঙ্গ’ গ্রন্থে। এই নিয়ে বেজায় চটেছিলেন বঙ্কিম। বঙ্কিম বর্ণিত শ্রীকৃষ্ণের চরিত্রের সাথে ছফা আশ্চর্য সাযুজ্য পেয়েছেন অন্য এক মানব শিক্ষকের … আমি আরবের নবী হযরত মুহম্মদের কথা বলছি। তিনিও তাঁর প্রচারিত ধর্মের নাম রেখেছিলেন ইসলাম তথা শান্তি। তিনি নিজেকে রাহমাতুল্লিল আল-আমিন, মানে বিশ্বজগতের প্রতি আশীর্বাদ বলে পরিচয় দিতেন। যুদ্ধ বিগ্রহের বিষয়টা শ্রীকৃষ্ণ যে দৃষ্টিতে বিচার করতেন, তার সঙ্গে হযরত মুহম্মদের মতামতের আশ্চর্য সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। ইসলামের দৃষ্টিতে অকারণে যুদ্ধ করা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। একমাত্র আক্রান্ত হলেই তোমার প্রতিরোধ করার অধিকার আছে। আক্রান্ত না হলে খবরদার আক্রমণ করবে না। যুদ্ধ শুরু করার আগে শান্তি বজায় রাখার সব ধরণের চেষ্টা এবং যত্ন করবে। কিন্তু যুদ্ধ যদি তোমার উপর চাপিয়ে দেয়া হয়, সে যুদ্ধ করা তোমার জন্য ফরজ- অবশ্য কর্তব্য, শান্তি প্রচারের প্রয়োজনে যে যুদ্ধ তোমার জন্য এসে পড়েছে, তাতে অবশ্যই শামিল হবে। তুমি পালিয়ে যেতে পারবে না। পৃষ্ঠ প্রদর্শন কিংবা কর্তব্যে অবহেলা করলে পরকালে তোমাকে নরকবাসী হতে হবে। মনে রাখবে, ধর্মযুদ্ধ তোমার ঈমানের অঙ্গীকারের অংশ৯ … হিন্দুধর্মের আকারহীন গভীরতার নাগাল পেতে বঙ্কিমচন্দ্র কৃষ্ণচরিত রূপায়নে হযরত মুহম্মদের জীবনী থেকে অনেক সহায়তা নিয়েছেন বলে ছফার বিশ্বাস। বঙ্কিমের মানসগঠন নিয়ে লিখতে গিয়ে ছফা বলেছেন … ইংরেজ শক্তিকে পরাজিত করে আপাততঃ হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা অসম্ভব, একথা স্বপ্ন তাড়িত বঙ্কিমও না মেনে নিয়ে পারেন না। তাই বঙ্কিমকে হিন্দু রাষ্ট্রের টগবগে স্বপ্ন বুকে নিয়ে অতীতের দিকে তাকাতে হয়। আটশো বছরের মুসলিম শাসনের গ্লানি আপন রক্তে শুষে নিয়ে তিনি অস্থির এবং উতলা হয়ে উঠেন। তাঁর মানবতাবোধ, সৌন্দর্য চেতনা এবং নিরপেক্ষ ইতিহাস চিন্তা সবকিছু পরাস্ত হয়, জেগে থাকে শুধু ঘৃণা। এই ঘৃণাবোধই তাঁর চিন্তার চালিকাশক্তি হয়ে বসে১০ …
বঙ্কিমচন্দ্রের ইতিহাস বিচারের ভুল ধরতে গিয়ে সেই সময়ের বাঙালি মুসলমানদের মানসচরিতের ব্যাখ্যাও তলব করেছেন আহমদ ছফা … বঙ্কিমচন্দ্র যখন তাঁর যুগান্তকারী উপন্যাসসমূহ রচনা করেছিলেন, রাষ্ট্র সমাজ ইত্যাকার বিষয় নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছিলেন, সেই কোলকাতার মুসলমানেরা বড়োজোর চিৎপুর রোডের সোনাউল্লার মুদ্রণযন্ত্রে ছাপা গুলে বাকাওলির কিসসা কিংবা আমির হামজার পুঁথি শোনায় মশগুল অথবা মিলাদ শুনে পীরের দরবারে ধরণা দিয়ে পুণ্য সঞ্চয়ে রত১১ … ছফার যোগ্যতা তাঁর বর্ণন ভঙ্গিতে। অজস্র তথ্যের ভিড়েও ছফার আওয়াজ স্পষ্ট কানে লাগে। ঠিক কোন কারণে দেশ বিভাগ কি সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প অগোচরে ধমনীর রক্তস্রোতে ঢুকে পড়ে তার দিকনিশানা করতে গিয়ে বঙ্কিমকে বোঝা জরুরী হয়ে পড়ে ছফার। যদ্যপি আমার গুরুতে রাজ্জাক সাহেব এক জায়গায় বলেছিলেন … উপন্যাস অইল গিয়া আধুনিক সোশিয়াল ডিসকোর্স। বেঙ্গলে হিন্দু মুসলমান শত শত বছর ধইরা পাশাপাশি বাস কইরা আইতাছে। হিন্দু লেখকরা ডেলিবারেটলি মুসলমান সমাজরে ইগ্নোর কইরা গেছে১২ … সেক্যুলার ভারত যে আদতে তা নয় বাবরি মসজিদ ইস্যু নিয়ে সৃষ্ট রায়ট, গুজরাটের দাঙ্গা তার প্রমাণ। ছফার লেখা পড়ে বোঝা যায় ঘৃণা হজম করে নির্লিপ্ত হয়ে কিভাবে ইতিহাসকে তার মতোন সঠিকভাবে বলা সম্ভব। একজন খাঁটি সেক্যুলার লেখক ছফা যখন একজন পাঁড় মুসলিম লীগ সমর্থক প্রফেসর আবদুর রাজ্জাককে একজন খাঁটি সেক্যুলার মানুষ হিসেবে রায় দেন তখন তার মাঝে অর্থ থাকে। তাঁদের সেক্যুলারিজম ভারতবর্ষের মতো মুখোশ কিছু নয়।
বঙ্কিমকে নিয়ে ছফার প্রবন্ধের শেষ দুই পৃষ্ঠা পাঠ খুব জরুরী। আমি এক নাগাড়ে সেখান থেকে কথাগুলো তুলে দিচ্ছি-
বঙ্কিমচন্দ্রের হিন্দু রাষ্ট্রচিন্তার অভিঘাতে আরেকটি স্বতন্ত্র ধর্মীয় রাষ্ট্র গঠনের প্রয়াস মুসলিম সমাজের ভেতর থেকে স্ফূরিত হয়ে উঠেছিলো। তার ফল এই হয়েছে যে বাংলাদেশ দ্বিখন্ডিত হয়েছে, ভারতের মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দু’প্রান্তের দু’টো অঞ্চল মিলে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। সিকি শতাব্দীর অবসান না হতেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ব বাংলার জনগোষ্ঠী ভাষাভিত্তিক একটি স্বাধীন জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে একটি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামক স্বতন্ত্র স্বাধীন একটি রাষ্ট্রের জন্ম সম্ভাবিত করে তোলে। জন্মের পর থেকেই এই রাষ্ট্রের অধিবাসীদের এক দোলাচল মানসিকতার মধ্য দিয়েই সময় অতিবাহিত করতে হচ্ছে। অনেক সময় তার প্রকোপ এমন মারাত্মক আকার ধারণ করে যে রাষ্ট্রের চরিত্রের ওপর তা অনিবার্য প্রভাব বিস্তার করে। ধর্ম এবং সংস্কৃতির প্রশ্নে জাতির মধ্যে দ্বিধা বিভক্তির লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আইডেন্টিটি ক্রাইসিস তথা আত্মপরিচয়ের সঙ্কট তার রাষ্ট্রসত্তার ভবিষ্যত অন্ধকারে আবৃত করে রাখে। বর্তমান বাংলাদেশ এক সময় অবিভক্ত বাংলাদেশের অংশ ছিলো আবার পরে ধর্মীয় রাষ্ট্র পাকিস্তানের সাথে সংযুক্ত ছিলো। ব্যক্তির মতো জনগোষ্ঠীও অতীতের টান অগ্রাহ্য করতে পারে না। ভাষাভিত্তিক জাতি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সর্বপ্রধান সংকটসমূহের একটা হলো ধর্ম এবং সংস্কৃতির মধ্যে একটা মেলবন্ধন রচনা করা। অদ্যাবধি বাংলাদেশের কৃত্যবিদ্য শ্রেণীর লোক সে পথে বেশীদূর এগিয়েছেন সে কথা কিছুতেই বলা যাবে না।
ঘোষণা দিলেই একটা রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে যায় না। একটি দরিদ্র কৃষিপ্রধান দেশ কিছুতেই এক লাফে সাম্প্রদায়িকতা পরিহার করতে পারে না। সে একটি সুদীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের এই প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। আমি, ‘শুরু করতে হবে’, এইবাক্যটি জোর দিয়ে উচ্চারণ করছি। সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের অগ্রগণ্য প্রাতিষ্ঠানিক বুদ্ধিজীবীদের বিরাট একটি অংশ বাঙালিয়ানার নামে সে সব চিন্তা চেতনা প্রচার করে আসছেন তার বেশিরভাগই পশ্চিম বাংলার কোলকাতা কেন্দ্রিক চিন্তাচর্চার চর্বিত চর্বণ। মুসলিমপ্রধান একটি সমাজে বাঙালিয়ানার প্রচার ঘটাতে হলে বাঙালিয়ানার একটা নতুন সংজ্ঞা নির্মাণ করতে হবে। এই সংজ্ঞা নির্মাণ পদ্ধতিতে দু’টো বিষয় অবশ্যই সমান গু্রুত্বে বিবেচনার মধ্যে আনতে হবে। প্রথমতঃ ধর্মশাসিত বাঙালি মুসলমান সমাজে ধর্মতান্ত্রিক সামন্ত চিন্তার একচ্ছত্র প্রতাপের অবসান ঘটাতে হবে। যে জাড্যতা, যে বদ্ধমত, যে কূর্মবৃত্তি এই সমাজমানসকে সংকুচিত, অসহিষ্ণুতার মধ্যে নিক্ষেপ করেছে, তার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসার একটি সৃষ্টিশীল প্রক্রিয়া শুরু করা না হলে, বাঙালি মুসলমান সমাজ
আধুনিক বিশ্বের সামনে নির্ভয় চিত্তে কখনো দাঁড়াতে পারবে না। বাংলাদেশে মুসলমান সম্প্রদায় ছাড়া আরো নানা সম্প্রদায় রয়েছে। তথাপি মুসলমান সমাজের কথা বললাম একারণে যে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়। সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মানুষ স্বেচ্ছায় যদি নিজেদের মানস পরিবর্তনের পথটি অনুসরণ না করে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর পক্ষে বেশি কিছু করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বাঙালি মুসলমানের মানস ভুবনের প্রায় সমস্ত অঞ্চলে মধ্যযুগ এখনো রাজ্যপাট বিস্তার করে আছে। মধ্যযুগীয় মানস পরিমণ্ডলে আধুনিক যুগের আলো বিকীরণ করা সহজ কাজ নয়। বাঙালি মুসলমান নিজের ভারেই নুইয়ে আছে।
সাম্প্রতিক কালের বাঙালিত্বের নতুন সংজ্ঞা নির্মাণের দ্বিতীয় শর্তটি হলো উনবিংশ শতাব্দীর বাঙালি হিন্দু মধ্যবিত্ত আধুনিক বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির যে পাটাতনটি সৃষ্টি করেছে সম্পূর্ণরূপে নতুনভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে একটি গ্রহণযোগ্য মানদণ্ড আবিষ্কার করা। বাঙালি সমাজের নানামুখী জাগরণের এই স্তরটি অবহেলা করা যেমন আমাদের সম্ভব হবে না, তেমনি নির্বিচারে গ্রহণ করাও উচিত হবে না। উনবিংশ শতাব্দীর বাঙালি মধ্যবিত্তের জাগরণের সমস্ত বীজতলাটাই ছিলো হিন্দু সমাজের অধিকারে। বাঙালি সংস্কৃতিতে এই শ্রেণীটি অনেক উৎকৃষ্ট কিছু সংযোজন করেছেন, কিন্তু পাশাপাশি তাঁদের সম্প্রদায়গত প্রবণতাসমূহও চারিয়ে দিয়েছেন।
বাংলাদেশে মধ্যশ্রেণীভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে উনবিংশ শতাব্দীর প্রতি এমন এক ধরণের মোহমুগ্ধতা ক্রিয়াশীল, সেটাকে অনেকটা অন্ধত্বের পর্যায়ে ফেলা যায়। এই অসঙ্গত অতীতমুখীতা তাঁদেরকে বর্তমানের প্রতি সম্পূর্ণরূপে কর্তব্যবিমুখ করে রেখেছে। মুসলমান সমাজের ভেতর থেকে অনেকগুলো সংস্কার এবং সামাজিক আন্দোলনের উত্থিত হওয়া প্রয়োজন। পারিবারিক কাঠামোর মধ্যে, সমাজ সংগঠনের মধ্যে, মানব সম্পর্কের ক্ষেত্র পুরোনো মূল্যচিন্তার স্তরে একগুচ্ছ নতুন মূল্যচিন্তা সমাজে প্রতিষ্ঠা দিতে না পারলে বাঙালিত্বের নতুন সংজ্ঞা নির্মাণ করা কখনো সম্ভব হবে না। উনবিংশ শতাব্দীর হিন্দু মধ্যবিত্তের প্রেক্ষিতটা ভেঙ্গে ফেলে বাঙালিত্বের সম্পূর্ণ একটা নতুন প্রেক্ষিত নির্মাণ করা প্রয়োজন। ইতিহাস বাংলাদেশের মানুষদের হাতে বাঙালিত্বের নতুন সংজ্ঞা নির্মাণের দায়িত্ব তুলে দিয়েছে। এই প্রস্তাবিত নতুন সাংস্কৃতিক পাটাতন সমস্ত বাঙালি জনগণের মধ্যে বোঝাপড়া, এবং সুস্থ বিনিময়ের পথ অনেকখানিই সম্প্রসারিত করবে।১৩
১। যদ্যপি আমার গুরু – আহমদ ছফা (মাওলা ব্রাদার্স , মে ২০০০) [পৃষ্ঠা ৯৬]
২। [পৃষ্ঠা ৯৬]
৩। আহমদ ছফার প্রবন্ধ – (ষ্টুডেণ্ট ওয়েজ , জানুয়ারী ২০০০) [পৃষ্ঠা ১৯]
৪। [পৃষ্ঠা ২০] ৫। [পৃষ্ঠা ২২] ৬। [পৃষ্ঠা ২২] ৭। [পৃষ্ঠা ২৩-২৪]
৮। [পৃষ্ঠা ২৫] ৯। [পৃষ্ঠা ৩১] ১০। [পৃষ্ঠা ৩৫-৩৬] ১১। [পৃষ্ঠা ৪৭]
১২। যদ্যপি আমার গুরু – আহমদ ছফা (মাওলা ব্রাদার্স , মে ২০০০) [পৃষ্ঠা ৫৮]
১৩। আহমদ ছফার প্রবন্ধ – (ষ্টুডেণ্ট ওয়েজ , জানুয়ারী ২০০০) [পৃষ্ঠা ৪৯-৫০]
লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: শুক্র, ২০০৯-১১-২৭ ০২:২২)
উদ্ধৃতি | শুভাশীষ দাশ এর ব্লগ | ৫৭টি মন্তব্য | ১০২০বার পঠিত
শেয়ার
উদ্ধৃতি | শুভাশীষ দাশ এর ব্লগ | ৫৭টি মন্তব্য | ১০২০বার পঠিত
শেয়ার
প্রকাশিত লেখা ও মন্তব্যের দায় একান্তই সংশ্লিষ্ট লেখক বা মন্তব্যকারীর, সচলায়তন কর্তৃপক্ষ এজন্য কোনভাবেই দায়ী নন।
লেখকের এবং মন্তব্যকারীর লেখায় অথবা প্রোফাইলে পরিষ্কারভাবে লাইসেন্স প্রসঙ্গে কোন উল্লেখ না থাকলে স্ব-স্ব লেখার এবং মন্তব্যের সর্বস্বত্ব সম্পূর্ণভাবে সংশ্লিষ্ট লেখকের বা মন্তব্যকারী কর্তৃক সংরক্ষিত থাকবে। লেখকের বা মন্তব্যকারীর অনুমতি ব্যতিরেকে লেখার বা মন্তব্যের আংশিক বা পূর্ণ অংশ কোন ধরনের মিডিয়ায় পুনঃপ্রকাশ করা যাবে না।
২
দেখি, দিবো কিছুদিনের মধ্যে। হাতের কাছে অনেক বই নাই, এটাও একটা সমস্যা। আপনি পড়ছেন লেখাটা- এটা দেখে ভালো লাগলো।
৩
আপনার দৃষ্টির শক্তি এবং ভঙ্গীর প্রশংসা না করে পারছিনা। পরের কিস্তরি অপেক্ষায় থাকলাম।
৪
ভাই, ধন্যবাদ।
৫
আমি যদি সাহস করে- আহমদ ছফা এবং তার গুরু প্রফেসর রাজ্জাককে প্রতিক্রিয়াশীল বলি, আপনি কি রাগ করবেন?
একটু ব্যাখ্যা করি।
বঙ্কিম নিজেকে হিন্দু সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতেন, ছফা নিজেকে মুসলমান সমাজের প্রতিনিধি- বড়দাগে পার্থক্য কোথায়?
ছফার মুসলমানিত্ব যদি আপনার কাছে যৌক্তিক মনে হয়, সুযোগ পেলে আপনি ও কি এরকম নিজেকে হিন্দু সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরবেন শুভাশীষ- যেহেতু আপনি, আপনার সহধর্ম বিশ্বাসীরা অনেক অনেক বিশ্রী আঘাত পেয়েছেন সংখ্যাগুরু মুসলমানদের কাছ থেকে?
কিন্তু এই পোষ্টে আপনার নিজের যে কথাগুলো সেগুলো তো এই আশংকা জাগায়না, বরং প্রতীতি জাগায় '৪৭ এর আগে কে কাকে শোষন করেছে- পাকিস্তান আমলে কে কোন শোষনের প্রতিশোধ নিয়েছেন তার ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া নয় এই ভূ-খন্ডের সকল মানুষ সকল ধরনের প্রতিক্রিয়াশীলতা থেকে মুক্তি পাবে।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
একটু ব্যাখ্যা করি।
উদ্ধৃতি
'৪৭ পূর্ব সময়ে পূর্ববাংলার মুসলমানরা হিন্দুদের দ্বারা নিগৃহীত হতেন( মুসলমানের ভেতর ও ধনী মুসলমান গরীব মুসলমান ছিলো, হিন্দুর মধ্যে ও ছিলো ধনী হিন্দু, গরীব হিন্দু- নিগৃহের প্রচারনায় এই বিভাজনটুকু উহ্য থাকে যদিও)। '৪৭ এর পর যখন মুসলমানরা শাসক হলেন, সংখ্যাগুরু হলেন তখন সেই নিগৃহের স্মৃতি ভুললেননা অনেকেই। তার প্রতিক্রিয়াটুকু ধরে রাখলেন। এমনকি বুদ্ধিজীবিদের কেউ কেউ, পন্ডিতদের কেউ কেউ।আহমদ ছফা কেন মুসলমান সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে চাইতেন আমার নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি কিছুটা বুঝতে পারি।
বঙ্কিম নিজেকে হিন্দু সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতেন, ছফা নিজেকে মুসলমান সমাজের প্রতিনিধি- বড়দাগে পার্থক্য কোথায়?
ছফার মুসলমানিত্ব যদি আপনার কাছে যৌক্তিক মনে হয়, সুযোগ পেলে আপনি ও কি এরকম নিজেকে হিন্দু সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরবেন শুভাশীষ- যেহেতু আপনি, আপনার সহধর্ম বিশ্বাসীরা অনেক অনেক বিশ্রী আঘাত পেয়েছেন সংখ্যাগুরু মুসলমানদের কাছ থেকে?
কিন্তু এই পোষ্টে আপনার নিজের যে কথাগুলো সেগুলো তো এই আশংকা জাগায়না, বরং প্রতীতি জাগায় '৪৭ এর আগে কে কাকে শোষন করেছে- পাকিস্তান আমলে কে কোন শোষনের প্রতিশোধ নিয়েছেন তার ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া নয় এই ভূ-খন্ডের সকল মানুষ সকল ধরনের প্রতিক্রিয়াশীলতা থেকে মুক্তি পাবে।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
৬
_______________________________
শান্তিও যদি সিংহের মত গর্জায়, তাকে ডরাই।
--নরেশ গুহ
৭
থ্যাংকু।
৮
উদ্ধৃতিঃ
বঙ্কিম নিজেকে হিন্দু সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতেন, ছফা নিজেকে মুসলমান সমাজের প্রতিনিধি- বড়দাগে পার্থক্য কোথায়?
বঙ্কিম নিজেকে হিন্দু সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতেন, ছফা নিজেকে মুসলমান সমাজের প্রতিনিধি- বড়দাগে পার্থক্য কোথায়?
বিশাল বিশাল বিশাল বড়দাগের পার্থক্য রয়েছে। বঙ্কিম ধর্মভিত্তিক একটা হিন্দুরাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছেন , আর দেখিয়েছেন তাঁর রচিত উপন্যাসে। ছফা সেটা করেন নাই। কোন মুসলমান রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখে সেই অনুসারে কোন 'আনন্দমঠ' তিনি লিখেন নাই। মুসলমান সমাজের এনালাইসিস করে কেউ (মুসলমান কোন লেখক) লিখলে তাকে সাম্প্রদায়িক বলতে হবে- এটা কোন আঙ্গিকের যুক্তি? ছফার কোন লেখায় আপনি সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ পেলেন? একটু স্পষ্ট করে বলুন।
৯
কেবল 'আনন্দমঠ' লিখলেই সাম্প্রদায়িক? অন্যথায় নয়?
ছফা'র গুরু আব্দুর রাজ্জাক তো ধর্মভিত্তিক মুসলিম রাষ্ট্রের স্বপ্ন শুধু নয় এর জন্য আন্দোলন ও করেছেন।
প্রথমত- ছফা ধর্মভিত্তিক মুসলিম রাষ্ট্রের স্বপ্নে বিভোর আব্দুর রাজ্জাককে তার গুরু মেনেছেন, গুরু'র ধর্ম রাষ্ট্রের বিভোরতাকে নানা যুক্তি টুক্তি দিয়ে জাস্টিফাই ও করেছেন
দ্বিতীয়ত- গুরু'র মতো ছফা ও বারবার পূর্ববাংলার জনগোষ্ঠী বলতে মুসলমানদেরই বুঝেছেন- সমগ্র'কে নয়। 'ছফা মুসলিম সমাজের প্রতিনিধি ছিলেন' -এটা আপনারই মন্তব্য আগের পর্বে।
পাঁড় মুসলিমলীগার আব্দুর রাজ্জাককে ছফা সার্টিফিকেট দেন 'সেক্যুলার' হিসেবে, মুসলিম সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেন( আপনার ভাষ্যেই) এমন ছফাকে ও আপনি অসাম্প্রদায়িক ঘোষনা করেন- কবে যেনো শুনবো বাস্টার্ড জিন্নাহ ও ছিলো খাঁটি সেক্যুলার।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ছফা'র গুরু আব্দুর রাজ্জাক তো ধর্মভিত্তিক মুসলিম রাষ্ট্রের স্বপ্ন শুধু নয় এর জন্য আন্দোলন ও করেছেন।
উদ্ধৃতি
যুক্তিটা এরকমঃমুসলমান সমাজের এনালাইসিস করে কেউ (মুসলমান কোন লেখক) লিখলে তাকে সাম্প্রদায়িক বলতে হবে- এটা কোন আঙ্গিকের যুক্তি?
প্রথমত- ছফা ধর্মভিত্তিক মুসলিম রাষ্ট্রের স্বপ্নে বিভোর আব্দুর রাজ্জাককে তার গুরু মেনেছেন, গুরু'র ধর্ম রাষ্ট্রের বিভোরতাকে নানা যুক্তি টুক্তি দিয়ে জাস্টিফাই ও করেছেন
দ্বিতীয়ত- গুরু'র মতো ছফা ও বারবার পূর্ববাংলার জনগোষ্ঠী বলতে মুসলমানদেরই বুঝেছেন- সমগ্র'কে নয়। 'ছফা মুসলিম সমাজের প্রতিনিধি ছিলেন' -এটা আপনারই মন্তব্য আগের পর্বে।
পাঁড় মুসলিমলীগার আব্দুর রাজ্জাককে ছফা সার্টিফিকেট দেন 'সেক্যুলার' হিসেবে, মুসলিম সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেন( আপনার ভাষ্যেই) এমন ছফাকে ও আপনি অসাম্প্রদায়িক ঘোষনা করেন- কবে যেনো শুনবো বাস্টার্ড জিন্নাহ ও ছিলো খাঁটি সেক্যুলার।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
১০
বাস্টার্ড জিন্নাহ এই লেখায় আপ্রাসঙ্গিক। জিন্নাহ তাও আবার সেক্যুলার! পরে একটু ঘেঁটে দেখি ১৯৯৭ সালে ‘সেক্যুলার এন্ড ন্যাশনালিস্ট জিন্নাহ’ শিরোনামে বাজারে বই বের করেছেন দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মাস্টার। মানে প্রায় এক যুগ আগেই এই কাজটা হয়ে গেছে। ব্যাপক বিনোদন। ছফার লেখাটা আবার না হয় লিখি-
আধুনিক বিশ্বের সামনে নির্ভয় চিত্তে কখনো দাঁড়াতে পারবে না। বাংলাদেশে মুসলমান সম্প্রদায় ছাড়া আরো নানা সম্প্রদায় রয়েছে। তথাপি মুসলমান সমাজের কথা বললাম একারণে যে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়। সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মানুষ স্বেচ্ছায় যদি নিজেদের মানস পরিবর্তনের পথটি অনুসরণ না করে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর পক্ষে বেশি কিছু করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বাঙালি মুসলমানের মানস ভুবনের প্রায় সমস্ত অঞ্চলে মধ্যযুগ এখনো রাজ্যপাট বিস্তার করে আছে। মধ্যযুগীয় মানস পরিমণ্ডলে আধুনিক যুগের আলো বিকীরণ করা সহজ কাজ নয়। বাঙালি মুসলমান নিজের ভারেই নুইয়ে আছে।
সাম্প্রদায়িকতা কেন মাথা থেকে যায় না সেটা লিভড এক্সপেরিয়েন্স দিয়ে আমাদের বুঝে নিতে হয়। এই উপমহাদেশের মানুষের মাথা থেকে সাম্প্রদায়িকতার ভূত এখন পর্যন্ত নামে নাই। এই সত্য আপনি হয়তো অস্বীকার করবেন না। বাংলাদেশ সেক্যুলারিজমের মুখোশ না পরে খাঁটি সেক্যুলার হোক এই আশাবাদ আমার। ছফা এক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রভাকাটিভ লেখক। তাই তাঁকে নিয়ে সেক্যুলারগিরি।
আধুনিক বিশ্বের সামনে নির্ভয় চিত্তে কখনো দাঁড়াতে পারবে না। বাংলাদেশে মুসলমান সম্প্রদায় ছাড়া আরো নানা সম্প্রদায় রয়েছে। তথাপি মুসলমান সমাজের কথা বললাম একারণে যে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়। সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মানুষ স্বেচ্ছায় যদি নিজেদের মানস পরিবর্তনের পথটি অনুসরণ না করে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর পক্ষে বেশি কিছু করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বাঙালি মুসলমানের মানস ভুবনের প্রায় সমস্ত অঞ্চলে মধ্যযুগ এখনো রাজ্যপাট বিস্তার করে আছে। মধ্যযুগীয় মানস পরিমণ্ডলে আধুনিক যুগের আলো বিকীরণ করা সহজ কাজ নয়। বাঙালি মুসলমান নিজের ভারেই নুইয়ে আছে।
সাম্প্রদায়িকতা কেন মাথা থেকে যায় না সেটা লিভড এক্সপেরিয়েন্স দিয়ে আমাদের বুঝে নিতে হয়। এই উপমহাদেশের মানুষের মাথা থেকে সাম্প্রদায়িকতার ভূত এখন পর্যন্ত নামে নাই। এই সত্য আপনি হয়তো অস্বীকার করবেন না। বাংলাদেশ সেক্যুলারিজমের মুখোশ না পরে খাঁটি সেক্যুলার হোক এই আশাবাদ আমার। ছফা এক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রভাকাটিভ লেখক। তাই তাঁকে নিয়ে সেক্যুলারগিরি।
১১
উদ্ধৃতি
জিন্নাহ তাও আবার সেক্যুলার!
পঞ্চভূতে জিন্নাহ ও মনে হয় সেক্যুলার প্রমানিত হয়ে যাবে, না হলে তার ফলোয়ার, তাকে যে বড় নেতা মানতেন সেই প্রফেসর রাজ্জাক সেক্যুলার হন কি করে? আমার কাছে কিন্তু জিন্নাহকে এই আলোচনায় প্রাসঙ্গিক মনে হয় শুভাশীষ। হিন্দু-মুসলমানের সংস্কৃতি আলাদা, হিন্দু-মুসলমান আলাদা জাতি, আলাদা রাষ্ট্র না হলে মুসলমানের মুক্তি নাই-এই বিষবৃক্ষের বীজ তো তারই দান নাকি? জিন্নাহ'র দ্বিজাতি তত্বের ঘোর সমর্থক রাজ্জাক সাহেবকে তার শিষ্য ছফা দাবী করছেন 'সেক্যুলার' আর ছফাকে আপনি দাবী করছেন বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক মননের অসাম্প্রদায়িক আইকন।
এই প্যারাডক্সটা আমি বুঝিনা শুভাশীষ। আসলেই বুঝিনা- দ্বিজাতি তত্বের সমর্থক হয়ে ও যদি রাজ্জাক সাহেব সেক্যুলার হতে পারেন, তাহলে জিন্নাহ না কেনো?
এ প্রসংগে আর কিছু বলার নেই।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
১২
আজ কিস্তি তিন লেখা আরম্ভ করলাম। মোরশেদ ভাই, একটা সহজ প্রশ্ন। উত্তর দরকার।এমসিকিউ।
ছফাকে কেন আপনার সাম্প্রদায়িক মনস্ক মনে হয়?
ক) ছফা বাংলাদেশকে পূর্ব বাংলা বলতেন। বাংলাদেশের মুসলমান সমাজের কথা তিনি বলেছেন। হিন্দুদের কথা না ভেবে।
খ) পাঁড় মুসলিম লীগার রাজ্জাক সাহেবকে ছফা গুরু ভাবতেন এবং সেক্যুলার বলে রায় দিয়েছেন।
গ) জিন্নাহ ঘৃণ্য দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রবর্তক। রাজ্জাক সাহেব জিন্নাহর ভক্ত। ছফা প্রফেসর রাজ্জাকের চেলা্। মানে ছফা দ্বিজাতিতত্ত্বের সাপোর্টার।
ঘ) ছফা প্রফেসর রাজ্জাককে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা বলেছেন।
ভালো থাকবেন।
ছফাকে কেন আপনার সাম্প্রদায়িক মনস্ক মনে হয়?
ক) ছফা বাংলাদেশকে পূর্ব বাংলা বলতেন। বাংলাদেশের মুসলমান সমাজের কথা তিনি বলেছেন। হিন্দুদের কথা না ভেবে।
খ) পাঁড় মুসলিম লীগার রাজ্জাক সাহেবকে ছফা গুরু ভাবতেন এবং সেক্যুলার বলে রায় দিয়েছেন।
গ) জিন্নাহ ঘৃণ্য দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রবর্তক। রাজ্জাক সাহেব জিন্নাহর ভক্ত। ছফা প্রফেসর রাজ্জাকের চেলা্। মানে ছফা দ্বিজাতিতত্ত্বের সাপোর্টার।
ঘ) ছফা প্রফেসর রাজ্জাককে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা বলেছেন।
ভালো থাকবেন।
১৩
সহজ প্রশ্নের সহজ উত্তর দেইঃ
১। ছফা বিষয়ে আমি সন্দেহাতীত নই তার নিজের লেখালেখি কারনে নয় বরং তার গুরুপ্রেমের কারনে।
ছফা আব্দুর রাজ্জাককে শুধু সেকুলারই দাবী করেননি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা বলেছেন যদিও এর সপক্ষে তিনি প্রামান্য কিছু হাজির করেননি। যেমন কেউ কেউ কোন প্রমান ছাড়াই রাজ্জাক সাহেবকে ছয়দফার জনক বানিয়ে ও ছাড়েন।
রাজ্জাক সাহেব কতোটা জ্ঞানী সেটা আমার চায়ের পেয়ালা নয়( আমার নিজের জ্ঞানগম্যি একেবারেই সাধারন পর্যায়ের)। যেহেতু আমি দ্বিজাতি তত্বের কারনে জিন্নাহকে অপছন্দ করি, হিন্দু-মুসলমান আলাদা জাতি বলে মানিনা, অথচ রাজ্জাক সাহেব দ্বিজাতি তত্ব মানতেন, মুসলীম লীগ করতেন, জিন্নাহকে গ্রেট লিডার বলতেন এবং জীবদ্দশায় তার এই রাজনৈতিক অবস্থানের পরিবর্তন ঘটেছিল বলে ও কিছু জানিনা( জানলে জানান, আমি আমার ভাবনা বদলাবো) সেহেতু রাজ্জাক সাহেবকে সাম্প্রদায়িক না ভাবার পক্ষে আমি কোন যুক্তি খুঁজে পাইনা।
এই সাম্প্রদায়িক রাজ্জাক সাহেবকে ছফা গুরু মানতেন, সেকুলার বলে সার্টিফিকেট দিতেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা বলে ও দাবী করেছেন সে কারনেই ছফা'র বিষয়ে ও আমি দ্বিধাহীন হতে পারিনা।
২।পূর্ববাংলার বাঙ্গালীকে আবার বাঙ্গালী মুসলমান, বাঙ্গালী হিন্দু, বাঙ্গালী খ্রীষ্টান, বাঙ্গালী বৌদ্ধ এইভাবে পরিচয় করানো হলে, পূর্ব বাংলার সংস্কৃতি বলতে বাঙ্গালী মুসলমানের সংস্কৃতি এইভাবে বলা হলে দ্বিজাতি তত্ব থেকে তার দূরত্ব কতোদূর থাকে শুভাশীষ? বাঙ্গালী মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানের মন, সংস্কৃতি কি আসলেই এতোটা ভিন্ন যে এগুলো আলাদা আলাদা পরিচয় বহন করতে পারে?
যদি ছফা পাঠে আমার ভুল না হয়, ছফা বাঙ্গালী মুসলমানের মনকে আলাদাভাবেই বিশ্লেষন করেছিলেন।
আপনার সাথে আলোচনা ভাল্লাগছে। ইচ্ছে আছে সময় করে আলাদা পোষ্টানোর, সময় হচ্ছেনা।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
১। ছফা বিষয়ে আমি সন্দেহাতীত নই তার নিজের লেখালেখি কারনে নয় বরং তার গুরুপ্রেমের কারনে।
ছফা আব্দুর রাজ্জাককে শুধু সেকুলারই দাবী করেননি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা বলেছেন যদিও এর সপক্ষে তিনি প্রামান্য কিছু হাজির করেননি। যেমন কেউ কেউ কোন প্রমান ছাড়াই রাজ্জাক সাহেবকে ছয়দফার জনক বানিয়ে ও ছাড়েন।
রাজ্জাক সাহেব কতোটা জ্ঞানী সেটা আমার চায়ের পেয়ালা নয়( আমার নিজের জ্ঞানগম্যি একেবারেই সাধারন পর্যায়ের)। যেহেতু আমি দ্বিজাতি তত্বের কারনে জিন্নাহকে অপছন্দ করি, হিন্দু-মুসলমান আলাদা জাতি বলে মানিনা, অথচ রাজ্জাক সাহেব দ্বিজাতি তত্ব মানতেন, মুসলীম লীগ করতেন, জিন্নাহকে গ্রেট লিডার বলতেন এবং জীবদ্দশায় তার এই রাজনৈতিক অবস্থানের পরিবর্তন ঘটেছিল বলে ও কিছু জানিনা( জানলে জানান, আমি আমার ভাবনা বদলাবো) সেহেতু রাজ্জাক সাহেবকে সাম্প্রদায়িক না ভাবার পক্ষে আমি কোন যুক্তি খুঁজে পাইনা।
এই সাম্প্রদায়িক রাজ্জাক সাহেবকে ছফা গুরু মানতেন, সেকুলার বলে সার্টিফিকেট দিতেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা বলে ও দাবী করেছেন সে কারনেই ছফা'র বিষয়ে ও আমি দ্বিধাহীন হতে পারিনা।
২।পূর্ববাংলার বাঙ্গালীকে আবার বাঙ্গালী মুসলমান, বাঙ্গালী হিন্দু, বাঙ্গালী খ্রীষ্টান, বাঙ্গালী বৌদ্ধ এইভাবে পরিচয় করানো হলে, পূর্ব বাংলার সংস্কৃতি বলতে বাঙ্গালী মুসলমানের সংস্কৃতি এইভাবে বলা হলে দ্বিজাতি তত্ব থেকে তার দূরত্ব কতোদূর থাকে শুভাশীষ? বাঙ্গালী মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানের মন, সংস্কৃতি কি আসলেই এতোটা ভিন্ন যে এগুলো আলাদা আলাদা পরিচয় বহন করতে পারে?
যদি ছফা পাঠে আমার ভুল না হয়, ছফা বাঙ্গালী মুসলমানের মনকে আলাদাভাবেই বিশ্লেষন করেছিলেন।
আপনার সাথে আলোচনা ভাল্লাগছে। ইচ্ছে আছে সময় করে আলাদা পোষ্টানোর, সময় হচ্ছেনা।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
১৪
কোন মুসলমান রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখে সেই অনুসারে কোন 'আনন্দমঠ' তিনি লিখেন নাই।
ছফা যে সমাজে/রাষ্ট্রে বসে লিখেছেন সেখানে মনে হয়না 'মুসলমান রাষ্ট্রের স্বপ্ন' দেখার প্রয়োজন ছিল!
আহমদ ছফা কেন মুসলমান সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে চাইতেন আমার নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি কিছুটা বুঝতে পারি।
এখানে আপনি যে খুব সচেতন ভাবে 'সম্প্রদায়'-এর জায়গায় 'সমাজ' ব্যবহার করেছেন এটা বোঝা যায়। শুরুর অংশে আপনি এর আগে কোথাও 'সম্প্রদায়' এর জায়গায় 'সমাজ' ব্যবহার করছেন না! এইখানে 'ছফাগিরি - কিস্তি এক'-এর মন্ত্যবে 'ষষ্ঠ পান্ডব' এর মন্ত্যবের অংশ তুলে দিচ্ছি -
কাউকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে আপনার অবস্থান যদি নিরপেক্ষ না হয়, বিচারের ক্ষেত্রে আপনি যদি কঠোর না হন তাহলে আপনার বিশ্লেষণ শেষ পর্যন্ত স্তুতি বা নিন্দাতে পরিণত হবে।
সেখানে কিন্তু লিখেছিলেন কথাটা মাথায় রাখবেন!
আপনার লেখার মাধ্যমে যতটা বঙ্কিমকে সাম্প্রদায়িক হিসেবে চিহ্নিত করতে পেরেছেন ততটা পারেননি আহমেদ ছফাকে সেক্যুলার হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিতে। বরং যে বিষয়টাই উঠে এসেছে সেটা এরকম যে, বঙ্কিম-এর সাম্প্রদায়িক চেহারার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে তৈরি হওয়া অপর সাম্প্রদায়িক চিন্তার প্রতি ছফার সমর্থন। 'আত্মপরিচয়ের সঙ্কট তার রাষ্ট্রসত্তার ভবিষ্যত অন্ধকারে আবৃত করে রাখে।' বলে ছফা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের করণীয় বিষয়ে যে কথা বলেছেন, সে কাজে তিনি নিজেও খুব বেশী একটা অবদান রেখেছেন বলে জানা নেই। এটা লেখার উপরে আলোচনা যেহেতু, তাই ছফাগিরি-র ২ কিস্তিতেও সেরকমটা জানতে পারিনা। পরবর্তী কিস্তিগুলোর অপেক্ষায় থাকলাম; আশা রাখব ছফার ভাষ্যেই তার সেক্যুলার চিন্তাভাবনার সাথে পরিচিত করিয়ে দিবেন! গুণমুগ্ধ পাঠকের কলমে নয়।
আর আমার অবস্থান থেকে 'স্যেকুলারিজমের মুখোশ' বিষয়ে ভাবনাটা এরকম - বাংলাদেশে নিদেন পক্ষে একটা মুখোশেরও বড় প্রয়োজন! ব্যক্তি ছফা বা আব্দুর রাজ্জাক সেক্যুলার কিনা তার চেয়ে বড় প্রয়োজন 'রাষ্ট্র বাংলাদেশ' বা 'প্রতিষ্ঠান'-এর সেক্যুলার অবস্থান। যেন কোন 'সম্প্রদায়'-এর মানুষই 'পদ' গ্রহণ করে নগ্নভাবে নিজ সম্প্রদায়কে সুবিধা দিতে না পারে বা অন্য কোন সম্প্রদায়কে উপেক্ষা করতে না পারে।
ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া নয়, এই ভূ-খন্ডের সকল মানুষ সকল ধরনের প্রতিক্রিয়াশীলতা থেকে মুক্তি পাক
হাসান মোরশেদের সাথে আমারও একই আশাবাদ.....
(আপনাদের আলোচনায় নাক গলানোয় দুজনের কাছেই দুঃখিত!!!)
ছফা যে সমাজে/রাষ্ট্রে বসে লিখেছেন সেখানে মনে হয়না 'মুসলমান রাষ্ট্রের স্বপ্ন' দেখার প্রয়োজন ছিল!
আহমদ ছফা কেন মুসলমান সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে চাইতেন আমার নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি কিছুটা বুঝতে পারি।
এখানে আপনি যে খুব সচেতন ভাবে 'সম্প্রদায়'-এর জায়গায় 'সমাজ' ব্যবহার করেছেন এটা বোঝা যায়। শুরুর অংশে আপনি এর আগে কোথাও 'সম্প্রদায়' এর জায়গায় 'সমাজ' ব্যবহার করছেন না! এইখানে 'ছফাগিরি - কিস্তি এক'-এর মন্ত্যবে 'ষষ্ঠ পান্ডব' এর মন্ত্যবের অংশ তুলে দিচ্ছি -
কাউকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে আপনার অবস্থান যদি নিরপেক্ষ না হয়, বিচারের ক্ষেত্রে আপনি যদি কঠোর না হন তাহলে আপনার বিশ্লেষণ শেষ পর্যন্ত স্তুতি বা নিন্দাতে পরিণত হবে।
সেখানে কিন্তু লিখেছিলেন কথাটা মাথায় রাখবেন!
আপনার লেখার মাধ্যমে যতটা বঙ্কিমকে সাম্প্রদায়িক হিসেবে চিহ্নিত করতে পেরেছেন ততটা পারেননি আহমেদ ছফাকে সেক্যুলার হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিতে। বরং যে বিষয়টাই উঠে এসেছে সেটা এরকম যে, বঙ্কিম-এর সাম্প্রদায়িক চেহারার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে তৈরি হওয়া অপর সাম্প্রদায়িক চিন্তার প্রতি ছফার সমর্থন। 'আত্মপরিচয়ের সঙ্কট তার রাষ্ট্রসত্তার ভবিষ্যত অন্ধকারে আবৃত করে রাখে।' বলে ছফা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের করণীয় বিষয়ে যে কথা বলেছেন, সে কাজে তিনি নিজেও খুব বেশী একটা অবদান রেখেছেন বলে জানা নেই। এটা লেখার উপরে আলোচনা যেহেতু, তাই ছফাগিরি-র ২ কিস্তিতেও সেরকমটা জানতে পারিনা। পরবর্তী কিস্তিগুলোর অপেক্ষায় থাকলাম; আশা রাখব ছফার ভাষ্যেই তার সেক্যুলার চিন্তাভাবনার সাথে পরিচিত করিয়ে দিবেন! গুণমুগ্ধ পাঠকের কলমে নয়।
আর আমার অবস্থান থেকে 'স্যেকুলারিজমের মুখোশ' বিষয়ে ভাবনাটা এরকম - বাংলাদেশে নিদেন পক্ষে একটা মুখোশেরও বড় প্রয়োজন! ব্যক্তি ছফা বা আব্দুর রাজ্জাক সেক্যুলার কিনা তার চেয়ে বড় প্রয়োজন 'রাষ্ট্র বাংলাদেশ' বা 'প্রতিষ্ঠান'-এর সেক্যুলার অবস্থান। যেন কোন 'সম্প্রদায়'-এর মানুষই 'পদ' গ্রহণ করে নগ্নভাবে নিজ সম্প্রদায়কে সুবিধা দিতে না পারে বা অন্য কোন সম্প্রদায়কে উপেক্ষা করতে না পারে।
ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া নয়, এই ভূ-খন্ডের সকল মানুষ সকল ধরনের প্রতিক্রিয়াশীলতা থেকে মুক্তি পাক
হাসান মোরশেদের সাথে আমারও একই আশাবাদ.....
(আপনাদের আলোচনায় নাক গলানোয় দুজনের কাছেই দুঃখিত!!!)
১৫
যে কেউ নাক গলাতে পারেন। এটা কোন সমস্যা নয়। আর আপনাকে অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। উদ্ধৃতি
বরং যে বিষয়টাই উঠে এসেছে সেটা এরকম যে, বঙ্কিম-এর সাম্প্রদায়িক চেহারার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে তৈরি হওয়া অপর সাম্প্রদায়িক চিন্তার প্রতি ছফার সমর্থন।
দ্বিমত করি। ছফার লেখা ঠিক মানে করে না পড়লে সাম্প্রদায়িক হিসেবে ভেবে নেয়া অস্বাভাবিক নয়।
উদ্ধৃতি
'আত্মপরিচয়ের সঙ্কট তার রাষ্ট্রসত্তার ভবিষ্যত অন্ধকারে আবৃত করে রাখে।' বলে ছফা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের করণীয় বিষয়ে যে কথা বলেছেন, সে কাজে তিনি নিজেও খুব বেশী একটা অবদান রেখেছেন বলে জানা নেই।
দ্বিমত করি। অবদান যে রেখেছেন তা ছফাসমগ্র পড়লে বোঝা যাবে। আর তুলনা হিসেবে বাংলাদেশের অন্যান্য বুদ্ধিজীবিদের লেখা পড়তে পারেন।
উদ্ধৃতি
আর আমার অবস্থান থেকে 'স্যেকুলারিজমের মুখোশ' বিষয়ে ভাবনাটা এরকম - বাংলাদেশে নিদেন পক্ষে একটা মুখোশেরও বড় প্রয়োজন!
সহমত। অন্য ধর্মের অনুসারী হওয়ায় নিজের মাতৃভূমিতে জন্মামাত্র সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন হতে কার ভালো লাগে! বাংলাদেশ সেক্যুলারিজমের মুখোশ না পরে খাঁটি সেক্যুলার হোক এই আশাবাদ আমার।
উদ্ধৃতি
ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া নয়, এই ভূ-খন্ডের সকল মানুষ সকল ধরনের প্রতিক্রিয়াশীলতা থেকে মুক্তি পাক। (হাসান মোরশেদের সাথে আমারও একই আশাবাদ.....)
সহমত।
বরং যে বিষয়টাই উঠে এসেছে সেটা এরকম যে, বঙ্কিম-এর সাম্প্রদায়িক চেহারার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে তৈরি হওয়া অপর সাম্প্রদায়িক চিন্তার প্রতি ছফার সমর্থন।
দ্বিমত করি। ছফার লেখা ঠিক মানে করে না পড়লে সাম্প্রদায়িক হিসেবে ভেবে নেয়া অস্বাভাবিক নয়।
উদ্ধৃতি
'আত্মপরিচয়ের সঙ্কট তার রাষ্ট্রসত্তার ভবিষ্যত অন্ধকারে আবৃত করে রাখে।' বলে ছফা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের করণীয় বিষয়ে যে কথা বলেছেন, সে কাজে তিনি নিজেও খুব বেশী একটা অবদান রেখেছেন বলে জানা নেই।
দ্বিমত করি। অবদান যে রেখেছেন তা ছফাসমগ্র পড়লে বোঝা যাবে। আর তুলনা হিসেবে বাংলাদেশের অন্যান্য বুদ্ধিজীবিদের লেখা পড়তে পারেন।
উদ্ধৃতি
আর আমার অবস্থান থেকে 'স্যেকুলারিজমের মুখোশ' বিষয়ে ভাবনাটা এরকম - বাংলাদেশে নিদেন পক্ষে একটা মুখোশেরও বড় প্রয়োজন!
সহমত। অন্য ধর্মের অনুসারী হওয়ায় নিজের মাতৃভূমিতে জন্মামাত্র সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন হতে কার ভালো লাগে! বাংলাদেশ সেক্যুলারিজমের মুখোশ না পরে খাঁটি সেক্যুলার হোক এই আশাবাদ আমার।
উদ্ধৃতি
ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া নয়, এই ভূ-খন্ডের সকল মানুষ সকল ধরনের প্রতিক্রিয়াশীলতা থেকে মুক্তি পাক। (হাসান মোরশেদের সাথে আমারও একই আশাবাদ.....)
সহমত।
১৬
যাক! আমি তাহলে অস্বাভাবিক গোত্রে পড়িনা! একটু শান্তি পেলাম মনে!
আমার কাছে সমস্যাটা মনে হয় এই জায়গাটাতেই, ঠিক মানে করে না পড়লে সাম্প্রদায়িক হিসেবে ভেবে নেয়া। এখানেরই ছফার দূর্বলতা। আজকে আপনারা অনেকেই, আহমেদ ছফাকে পড়ছেন বা জানছেন ব্যক্তিগত ভাবে চিনে বা ব্যক্তি ছফাকে চিনতেন এরকম কারো মাধ্যমে। কিন্তু আজকে থেকে ৫০-১০০ বছর পরে আহমেদ ছফাকে পড়া হবে যখন, তখন কিন্তু ব্যক্তিগত ভাল-মন্দ লাগার বাইরে থেকে বিশ্লেষণ হবে। তখন ছফা কথা বলবেন তার লেখার মধ্য দিয়েই। তার বিশ্লেষণও হবে সেভাবেই। আগে থেকেই তাকে সেক্যুলার ধরে নিয়ে নয়। তাই আজকে যেভাবেই ছফাকে দাঁড় করাবার চেষ্টা করছেন, তার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমার সন্দেহ আছে! তাই চাইব, বিশ্লেষণের সময় ব্যক্তিগত পছন্দের বাইরে থেকে লিখবেন এবং পুরো সত্ত্বার পরিচয়টা তুলে আনবেন!
ছফার লেখা সামান্যই পড়া আছে! আরও পড়ার ইচ্ছে আছে। হয়ত আরও পড়লে আমার চিন্তার পরিবর্তন হতে পারে। তবে এই সময়ে আপনার লেখার মধ্য দিয়ে যতটুকু জানা যায় সেটুকু জানার ইচ্ছা রাখছি...
শুভেচ্ছ!
আমার কাছে সমস্যাটা মনে হয় এই জায়গাটাতেই, ঠিক মানে করে না পড়লে সাম্প্রদায়িক হিসেবে ভেবে নেয়া। এখানেরই ছফার দূর্বলতা। আজকে আপনারা অনেকেই, আহমেদ ছফাকে পড়ছেন বা জানছেন ব্যক্তিগত ভাবে চিনে বা ব্যক্তি ছফাকে চিনতেন এরকম কারো মাধ্যমে। কিন্তু আজকে থেকে ৫০-১০০ বছর পরে আহমেদ ছফাকে পড়া হবে যখন, তখন কিন্তু ব্যক্তিগত ভাল-মন্দ লাগার বাইরে থেকে বিশ্লেষণ হবে। তখন ছফা কথা বলবেন তার লেখার মধ্য দিয়েই। তার বিশ্লেষণও হবে সেভাবেই। আগে থেকেই তাকে সেক্যুলার ধরে নিয়ে নয়। তাই আজকে যেভাবেই ছফাকে দাঁড় করাবার চেষ্টা করছেন, তার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমার সন্দেহ আছে! তাই চাইব, বিশ্লেষণের সময় ব্যক্তিগত পছন্দের বাইরে থেকে লিখবেন এবং পুরো সত্ত্বার পরিচয়টা তুলে আনবেন!
ছফার লেখা সামান্যই পড়া আছে! আরও পড়ার ইচ্ছে আছে। হয়ত আরও পড়লে আমার চিন্তার পরিবর্তন হতে পারে। তবে এই সময়ে আপনার লেখার মধ্য দিয়ে যতটুকু জানা যায় সেটুকু জানার ইচ্ছা রাখছি...
শুভেচ্ছ!
১৭
আমি ছফাকে চিনেছি তাঁর বই পড়ে। ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর সাথে আমার কোন পরিচয় ছিল না। কেউ তাঁর বই পড়তে আমাকে বলেনও নি। একুশের কোন এক বইমেলায় আমি তাঁর পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গপুরাণ কিনি। বইটির অদ্ভুত প্রচ্ছদ দেখে। আমি জানি ছফা কথা বলবেন তাঁর বই দিয়ে।আশা রাখি আগামী দুশো বছর পর্যন্ত।
তাঁকে যেমন সেক্যুলার ধরে নিয়ে পড়া উচিত নয়, তেমনি উচিত নয় উড়োকথায় তাঁকে সাম্প্রদায়িক ভেবে নিয়ে এগোনো।
আমি ছফাকে দাঁড় করানো নয়, সামান্য পরিচয় করিয়ে দিতে চেষ্টা করছি।
তাঁকে দাঁড় করানোর মতো কামেল লোক আমাকে ভাবলে ভুল করবেন।
ছফাপাঠ অবশ্যই জরুরী। সবার জন্য। ধন্যবাদ।
তাঁকে যেমন সেক্যুলার ধরে নিয়ে পড়া উচিত নয়, তেমনি উচিত নয় উড়োকথায় তাঁকে সাম্প্রদায়িক ভেবে নিয়ে এগোনো।
আমি ছফাকে দাঁড় করানো নয়, সামান্য পরিচয় করিয়ে দিতে চেষ্টা করছি।
তাঁকে দাঁড় করানোর মতো কামেল লোক আমাকে ভাবলে ভুল করবেন।
ছফাপাঠ অবশ্যই জরুরী। সবার জন্য। ধন্যবাদ।
১৮
প্রথম পর্বের তুলনায় এই পর্ব নিতান্তই নীরস। ছফার বানীচিরন্তনী ছাড়া কিছু মনে হয়নি।
আমার মনে হয়েছে আপনি বঙ্কিম একেবারেই পড়েন নি। পড়লে অন্তত বিভিন্ন দৃষ্টিকোন কোন আলোচনা করতে পারতেন।
উদাহরন দিয়ে বলি
রাজসিংহ উপন্যাসের শেষে বঙ্কিমের স্বীকারোক্তি দেখেছেন? কিছুটা উদ্ধৃত করি ।
আনন্দমঠের প্রথম সংস্করণ এবং পঞ্চম সংস্করণে পার্থক্য বিস্তর। ( দেখুন চিত্তরঞ্জন বন্দোপাধ্যায় সম্পাদিত আনন্দমঠ উপন্যাসের প্রথম সংস্করণ )প্রথম সংস্করণে যা ছিল ইংরেজ তাই পঞ্চম সংস্করনে হয়ে যায় যবন বা বা মুসলমান বা নেড়ে।
যখন উপন্যাস লিখিত হয় তখন বঙ্কিমের শিল্প মানস কাজ করছিল কিন্তু যখন পরিবর্তিত হয় শিল্পী বঙ্কিম মারা গিয়ে জন্ম লাভ করে ব্যক্তি বঙ্কিম। যে বঙ্কিম ইংরেজের সামান্য চাকুরে, আজীবন পদোন্নতি বঞ্চিত ।
সহজ করে ছোট্ট কথা বলি । এ পরিবর্তন হচ্ছে বঙ্কিমের ব্যাক্তি মানসের সাথে শিল্প মানসের দ্বন্দ ।
যা আপনি ধরতে পারেননি বরং প্রলেপ লাগিয়েছেন চরম সাম্প্রদায়িকতার ।
আমার মনে হয়েছে আপনি বঙ্কিম একেবারেই পড়েন নি। পড়লে অন্তত বিভিন্ন দৃষ্টিকোন কোন আলোচনা করতে পারতেন।
উদাহরন দিয়ে বলি
উদ্ধৃতি
(ধরে নিচ্ছি আপনার বিশ্লেষণ) বঙ্কিম উপন্যাসে মুসলমান চরিত্রগুলো পড়েছেন তো? দূর্গেশনন্দিনীর আয়েশা – ওসমান কে মনে পড়ে? যুদ্ধে প্রতিদ্বন্দীকে ক্ষমা করা যায় কিন্তু প্রেমের প্রতিদ্বন্দীকে? সেই মহোত্তম ক্ষমা বঙ্কিম করিয়েছেন ওসমানকে দিয়ে। এখানেই ওসমান চরিত্রের সার্থকতা , আরও উদাহরন চাই মতিবিবি (কপালকুণ্ডলা), দলনী বেগম (চন্দ্রশেখর), মবারক (রাজ সিংহ) .. যিনি এমন চরিত্র সৃষ্টি করেছেন তিনি সাম্প্রদায়িক অনুদারতায় ভুগতেন তা বিশ্বাস করা কি কষ্টকর নয়? ঔপন্যাসিক হিসেবে বঙ্কিম ছিলেন চরম সাম্প্রদায়িক।
রাজসিংহ উপন্যাসের শেষে বঙ্কিমের স্বীকারোক্তি দেখেছেন? কিছুটা উদ্ধৃত করি ।
উদ্ধৃতি
হ্যা, আনন্দমঠের কথা না বললেই নয়। বঙ্কিম চন্দ্রের উপর যারা সাম্প্রদায়িক কথাটা আরোপ করেন তারা এই উপন্যাসটির কথাই সবসময় বলে থাকেন। গ্রন্হকারের বিনীত নিবেদন এই যে, কোন পাঠক না মনে করেন যে, হিন্দু-মুসলমানের কোন প্রকার তারতম্য নির্দেশ করা এই গ্রন্হের উদ্যেশ্য। হিন্দু হইলেই ভাল হয় না, মুসলমান হইলেই মন্দ হয় না, অথবা হিন্দু হইলেই মন্দ হয় না, মুসলমান হইলেই ভাল হয় না। ভাল মন্দ উভয়ের মধ্যে তুল্য রূপেই আছে।.... অন্যান্য গুনের সহিত যাহার ধর্ম আছে – হিন্দু হৌক, মুসলমান হৌক সেই শ্রেষ্ঠ। অন্যান্য গুন থাকিতেও যাহার ধর্ম নাই সেই নিকৃষ্ট।
আনন্দমঠের প্রথম সংস্করণ এবং পঞ্চম সংস্করণে পার্থক্য বিস্তর। ( দেখুন চিত্তরঞ্জন বন্দোপাধ্যায় সম্পাদিত আনন্দমঠ উপন্যাসের প্রথম সংস্করণ )প্রথম সংস্করণে যা ছিল ইংরেজ তাই পঞ্চম সংস্করনে হয়ে যায় যবন বা বা মুসলমান বা নেড়ে।
যখন উপন্যাস লিখিত হয় তখন বঙ্কিমের শিল্প মানস কাজ করছিল কিন্তু যখন পরিবর্তিত হয় শিল্পী বঙ্কিম মারা গিয়ে জন্ম লাভ করে ব্যক্তি বঙ্কিম। যে বঙ্কিম ইংরেজের সামান্য চাকুরে, আজীবন পদোন্নতি বঞ্চিত ।
সহজ করে ছোট্ট কথা বলি । এ পরিবর্তন হচ্ছে বঙ্কিমের ব্যাক্তি মানসের সাথে শিল্প মানসের দ্বন্দ ।
যা আপনি ধরতে পারেননি বরং প্রলেপ লাগিয়েছেন চরম সাম্প্রদায়িকতার ।
১৯
আমি লেখাটা কিস্তিতে দিচ্ছি। পরের লেখায় ও বঙ্কিমচন্দ্র কিছুটা থাকবেন। ১। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পড়েছি।
২। দুর্গেশনন্দিনীর কথা আমি লেখায় আনিনি। তাই মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
একটু বলিঃ
রাষ্ট্রবেত্তা হিসেবে ঔপন্যাসিক বঙ্কিম যখন কোন হিন্দু রাষ্ট্রের কথা বলেন তা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণের হয়ে যায়। লেখক আহমদ ছফাকে রেফারেন্স করে আমি বঙ্কিমকে বুঝতে চেষ্টা করেছি - কারণ ছফা এক্ষেত্রে নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেছেন। আবারো বলছি ঔপন্যাসিক রাষ্ট্রবেত্তা বঙ্কিমচন্দ্রের কথা আমি বলতে চেয়েছি। আর সব উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র সাম্প্রদায়িক নন।
৩। রাজসিংহের কথা আমি লেখায় আনিনি। তাই মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
৪। হ্যাঁ। আনন্দমঠ। বঙ্কিমের ব্যক্তি মানসের সাথে শিল্প মানসের দ্বন্দ্ব। ঠিকাছে। কিন্তু এই লেখার ইমপ্যাক্ট নিয়ে তো ভাবতে হবে। তখনকার দিনে বঙ্কিমের উপন্যাসের বেশ প্রভাব ছিল তাঁর পাঠক সমাজে। সেই বঙ্কিম যখন ইংরেজদের সাথে সংগ্রামে মুসলমানদের ভূমিকা নাকচ করে দেন কিংবা মুসলমানদের বাদ দিয়ে হিন্দু রাষ্ট্রের কথা তোলেন- তার প্রভাব নিয়ে তিনি কেন ভাবেননি?
৫। বাকি কথা লেখায় বলে ফেলেছি। প্রলেপ লাগাইনি। একদমই। আমি এখানে ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্রের কথা এনেছি ছফার মানসিক গঠন বুঝতে, কিছুটা বোঝাতে। সেক্যুলার চিন্তা নিয়েও একটা সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করা যায়। আমার এই লেখায় সেটাই নীরসভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি।
২। দুর্গেশনন্দিনীর কথা আমি লেখায় আনিনি। তাই মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
একটু বলিঃ
রাষ্ট্রবেত্তা হিসেবে ঔপন্যাসিক বঙ্কিম যখন কোন হিন্দু রাষ্ট্রের কথা বলেন তা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণের হয়ে যায়। লেখক আহমদ ছফাকে রেফারেন্স করে আমি বঙ্কিমকে বুঝতে চেষ্টা করেছি - কারণ ছফা এক্ষেত্রে নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেছেন। আবারো বলছি ঔপন্যাসিক রাষ্ট্রবেত্তা বঙ্কিমচন্দ্রের কথা আমি বলতে চেয়েছি। আর সব উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র সাম্প্রদায়িক নন।
৩। রাজসিংহের কথা আমি লেখায় আনিনি। তাই মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
৪। হ্যাঁ। আনন্দমঠ। বঙ্কিমের ব্যক্তি মানসের সাথে শিল্প মানসের দ্বন্দ্ব। ঠিকাছে। কিন্তু এই লেখার ইমপ্যাক্ট নিয়ে তো ভাবতে হবে। তখনকার দিনে বঙ্কিমের উপন্যাসের বেশ প্রভাব ছিল তাঁর পাঠক সমাজে। সেই বঙ্কিম যখন ইংরেজদের সাথে সংগ্রামে মুসলমানদের ভূমিকা নাকচ করে দেন কিংবা মুসলমানদের বাদ দিয়ে হিন্দু রাষ্ট্রের কথা তোলেন- তার প্রভাব নিয়ে তিনি কেন ভাবেননি?
৫। বাকি কথা লেখায় বলে ফেলেছি। প্রলেপ লাগাইনি। একদমই। আমি এখানে ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্রের কথা এনেছি ছফার মানসিক গঠন বুঝতে, কিছুটা বোঝাতে। সেক্যুলার চিন্তা নিয়েও একটা সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করা যায়। আমার এই লেখায় সেটাই নীরসভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি।
২০
উদ্ধৃতি
আবারো বলছি ঔপন্যাসিক রাষ্ট্রবেত্তা বঙ্কিমচন্দ্রের কথা আমি বলতে চেয়েছি। আর সব উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র সাম্প্রদায়িক নন।
এটা যদি মন্তব্যে বলে থাকেন লিখায়
উদ্ধৃতি
ঔপন্যাসিক হিসেবে বঙ্কিম ছিলেন চরম সাম্প্রদায়িক।
উঠিয়ে দিন ।
২১
উদ্ধৃতি
তো ফলাফল কি? পঞ্চম সংস্করনে মুসলমানদের কচুকাটা করতে কি বঙ্কিমবাবু'কে কেউ বাধ্য করেছিল?আনন্দমঠের প্রথম সংস্করণ এবং পঞ্চম সংস্করণে পার্থক্য বিস্তর। ( দেখুন চিত্তরঞ্জন বন্দোপাধ্যায় সম্পাদিত আনন্দমঠ উপন্যাসের প্রথম সংস্করণ )প্রথম সংস্করণে যা ছিল ইংরেজ তাই পঞ্চম সংস্করনে হয়ে যায় যবন বা বা মুসলমান বা নেড়ে।
যখন উপন্যাস লিখিত হয় তখন বঙ্কিমের শিল্প মানস কাজ করছিল কিন্তু যখন পরিবর্তিত হয় শিল্পী বঙ্কিম মারা গিয়ে জন্ম লাভ করে ব্যক্তি বঙ্কিম। যে বঙ্কিম ইংরেজের সামান্য চাকুরে, আজীবন পদোন্নতি বঞ্চিত ।
যে লোক সামান্য চাকুরীর জন্য এই ইতরামী করতে পারে সে সাম্প্রদায়িক না?
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
২২
উত্তর আমার প্রথম মন্তব্যেই নিহিত, কষ্টকরে যদি মর্মোদ্ধার করেন ।
আচ্ছা শরৎচন্দ্র কি সাম্প্রদায়িক ছিলেন?
আপনার যুক্তি মানতে হলে বলতে হবে অতি অবশ্যই ছিলেন । না হলেন তিনি গফুর (মহেশ) বা আকবর সদ্র্দার (পল্লী সমাজ) এরমত অনুপম কিছু মুসলমান চরিত্রের স্রষ্টা তবু যিনি হিন্দু সাম্প্রদায়িক মুখপত্র হিন্দু মহাসভার পক্ষে কলম ধরেছিলেন তিনি অবশ্যই সাম্প্রদায়িক !
আচ্ছা সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজীকে কি আপনার সাম্প্রদায়িক মনে হয়?
আপনার যুক্তি মানলে তিনি ঘোরতর সাম্প্রদায়িক। তাঁর প্রথম উপন্যাস রায়-নন্দিনীর প্রথম সংস্করণের ভূমিকা পড়ে দেখতে পারেন (প্রকাশ ১৩২২ বাংলা) । এখনো মুসলিম সাহিত্যিকদের মধ্যে ঐতিহাসিক উপন্যাস রচনার কৃতিত্ব সৈয়দ শিরাজীর।
বঙ্কিম রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না। ছিলেন সাহিত্যিক তাঁকে বিচারের মাধ্যম হওয়া উচিত শিল্প। শিল্প মানসের বিচারই নির্ধারন করে সাম্প্রদায়িক তকমা লাগানো কতটা যুক্তিযুক্ত ।
ধন্যবাদ
আচ্ছা শরৎচন্দ্র কি সাম্প্রদায়িক ছিলেন?
আপনার যুক্তি মানতে হলে বলতে হবে অতি অবশ্যই ছিলেন । না হলেন তিনি গফুর (মহেশ) বা আকবর সদ্র্দার (পল্লী সমাজ) এরমত অনুপম কিছু মুসলমান চরিত্রের স্রষ্টা তবু যিনি হিন্দু সাম্প্রদায়িক মুখপত্র হিন্দু মহাসভার পক্ষে কলম ধরেছিলেন তিনি অবশ্যই সাম্প্রদায়িক !
আচ্ছা সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজীকে কি আপনার সাম্প্রদায়িক মনে হয়?
আপনার যুক্তি মানলে তিনি ঘোরতর সাম্প্রদায়িক। তাঁর প্রথম উপন্যাস রায়-নন্দিনীর প্রথম সংস্করণের ভূমিকা পড়ে দেখতে পারেন (প্রকাশ ১৩২২ বাংলা) । এখনো মুসলিম সাহিত্যিকদের মধ্যে ঐতিহাসিক উপন্যাস রচনার কৃতিত্ব সৈয়দ শিরাজীর।
বঙ্কিম রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না। ছিলেন সাহিত্যিক তাঁকে বিচারের মাধ্যম হওয়া উচিত শিল্প। শিল্প মানসের বিচারই নির্ধারন করে সাম্প্রদায়িক তকমা লাগানো কতটা যুক্তিযুক্ত ।
ধন্যবাদ
২৩
শিল্পের দোহাই দিয়ে ব্যক্তির অবস্থানকে জাস্টিফাই করার প্রেজুডিস থেকে বেরিয়ে আসা দরকার গৌরিশ।
রোমান পোলন্সকি মহৎ শিল্পসৃষ্টা এই অজুহাতে তার শিশু নির্যাতন ক্ষমা পেয়ে যাবে?
শরৎবাবু হিন্দু মহাসভার পক্ষে কলম ধরলে তাকে আমি সাম্প্রদায়িক না বলার কারন কি? আল-মাহমুদ জামাতের পক্ষে কলম ধরেছে তাকে আমি জামাতী বলেই ঘৃনা করবো, কবিতার দোহাই দিয়ে তাকে ক্ষমা করার কি আছে?
সাম্প্রদায়িকতা একটা ক্রাইম। যে যেভাবেই এই ক্রাইম করুক সে ক্রিমিনাল- নবী থেকে কবি যেই হোক।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
রোমান পোলন্সকি মহৎ শিল্পসৃষ্টা এই অজুহাতে তার শিশু নির্যাতন ক্ষমা পেয়ে যাবে?
শরৎবাবু হিন্দু মহাসভার পক্ষে কলম ধরলে তাকে আমি সাম্প্রদায়িক না বলার কারন কি? আল-মাহমুদ জামাতের পক্ষে কলম ধরেছে তাকে আমি জামাতী বলেই ঘৃনা করবো, কবিতার দোহাই দিয়ে তাকে ক্ষমা করার কি আছে?
সাম্প্রদায়িকতা একটা ক্রাইম। যে যেভাবেই এই ক্রাইম করুক সে ক্রিমিনাল- নবী থেকে কবি যেই হোক।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
২৪
আপনি যে দৃষ্টিভঙ্গি থেকে “সাম্প্রদায়িক” শব্দের অর্থ ব্যাক্ষা করেন, ঠিক সেই অর্থে আমি করি না। যার ফলস্রুতিতে প্রিজুডিস থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলেছেন। ধন্যবাদ ।
ছোট উদাহরন দিয়ে আবার আমাকে বোঝানোর চেষ্টা পুনরায় করা যেতে পারে।
আনন্দমঠকে নিয়েই কিন্তু সমস্যার উদ্ভব নয়। দূর্গেশনন্দিনী বা রাজসিংহ যথোপযুক্ত ভাবে জড়িত। বঙ্কিমের মুসলিম বিদ্বেষী ভাব পরিষ্ফুট হবার পর তা অক্ষুন্ন রাখাও জরুরী ছিল। নয় কী? অথচ বঙ্কিম হিন্দু জাতীয়তার ধজ্জা ধরে সেই কাজটিও সম্পন্ন করতে পারেন নি।
বঙ্গদর্শনে মীর মোশারফ হোসেনর ‘গোরাই সেতু’ গ্রন্হের প্রসংসা করতে গিয়ে বঙ্কিম বলেছেন
সাম্প্রদায়িক আল মাহমুদ আর বিভিন্ন সময় মানসিক দ্বন্দে ভোগা ভোগা বঙ্কিম চন্দ্রের মূল পার্থক্য জাতীয়তাবাদে। একজন চরম প্রতিক্রিয়াশীল জাতীয়তাবাদের ধারক আর আরেক জন বাঙালী জাতীয়তাবাদের ধারক। যদিও স্হান কাল পাত্র ভেদে মাঝে মধ্যেই তা ভঙ্গুর জাতীয়তাবাদে রূপ নিয়েছে কিন্তু তা সামাজিক ক্রিয়ারই ফসল। সেটাকে সাম্প্রদায়িকতার মত নোংরা বিশেষণে বিশেষিত করতে আমি নারাজ । টলষ্টয়ও শেষ জীবনে তাঁর সমস্ত লিখা অস্বীকার করতে চেয়েছেন যা প্রতিক্রিয়াশীলার দিকেই মোড় নেয় তাই বলে আজ পর্যন্ত কেই তাঁকে ফান্ডামেন্টালিস্ট বলে আখ্যায়িত করেছেন বলে জানা নেই।
পান খেকে চূন, খসলেই খুন এই পন্হা থেকে আমাদের উত্তরণ জরুরী মোরশেদ ভাই
ছোট উদাহরন দিয়ে আবার আমাকে বোঝানোর চেষ্টা পুনরায় করা যেতে পারে।
আনন্দমঠকে নিয়েই কিন্তু সমস্যার উদ্ভব নয়। দূর্গেশনন্দিনী বা রাজসিংহ যথোপযুক্ত ভাবে জড়িত। বঙ্কিমের মুসলিম বিদ্বেষী ভাব পরিষ্ফুট হবার পর তা অক্ষুন্ন রাখাও জরুরী ছিল। নয় কী? অথচ বঙ্কিম হিন্দু জাতীয়তার ধজ্জা ধরে সেই কাজটিও সম্পন্ন করতে পারেন নি।
বঙ্গদর্শনে মীর মোশারফ হোসেনর ‘গোরাই সেতু’ গ্রন্হের প্রসংসা করতে গিয়ে বঙ্কিম বলেছেন
উদ্ধৃতি
এই গ্রন্হকার আরো বাংলা গ্রন্হ প্রকাশ করিয়াছেন। তাঁর রচনার ন্যায় বিশুদ্ধ বাংলা অনেক হিন্দুতে লিখিতে পারে না।...... বাঙ্গালা হিন্দু মাসলমানের দেশ, একা হিন্দুর দেশ নহে। কিন্তু হিন্দু-মুসলমান এতক্ষনে সহৃদয়তা শূন্য। বাঙালীর প্রকৃত উন্নতির জন্য নিতান্ত প্রয়োজনীয় যে হিন্দু-মুসলমানে ঐক্যঁ”
সাম্প্রদায়িক আল মাহমুদ আর বিভিন্ন সময় মানসিক দ্বন্দে ভোগা ভোগা বঙ্কিম চন্দ্রের মূল পার্থক্য জাতীয়তাবাদে। একজন চরম প্রতিক্রিয়াশীল জাতীয়তাবাদের ধারক আর আরেক জন বাঙালী জাতীয়তাবাদের ধারক। যদিও স্হান কাল পাত্র ভেদে মাঝে মধ্যেই তা ভঙ্গুর জাতীয়তাবাদে রূপ নিয়েছে কিন্তু তা সামাজিক ক্রিয়ারই ফসল। সেটাকে সাম্প্রদায়িকতার মত নোংরা বিশেষণে বিশেষিত করতে আমি নারাজ । টলষ্টয়ও শেষ জীবনে তাঁর সমস্ত লিখা অস্বীকার করতে চেয়েছেন যা প্রতিক্রিয়াশীলার দিকেই মোড় নেয় তাই বলে আজ পর্যন্ত কেই তাঁকে ফান্ডামেন্টালিস্ট বলে আখ্যায়িত করেছেন বলে জানা নেই।
পান খেকে চূন, খসলেই খুন এই পন্হা থেকে আমাদের উত্তরণ জরুরী মোরশেদ ভাই
২৫
বঙ্কিমকে কেবল যে ছফা সাম্প্রদায়িক বলছেন তা কিন্তু নয়। অনেকের লেখাতেই বঙ্কিমের সাম্প্রদায়িক রূপের ব্যাখ্যা আছে। আল-মাহমুদের সাথে বঙ্কিমের মূল পার্থক্য- আল মাহমুদ সামান্য একজন সুবিধাভোগী মাত্র, যার বেশি কিছু করার ক্ষমতা নাই। বঙ্কিম মাস্টারমাইন্ড।
২৬
পড়ছি...
২৭
ঠিকাছে
২৮
গৌরীশ রায় অতিথি wrote:
উদ্ধৃতি
আনন্দমঠের প্রথম সংস্করণ এবং পঞ্চম সংস্করণে পার্থক্য বিস্তর। ( দেখুন চিত্তরঞ্জন বন্দোপাধ্যায় সম্পাদিত আনন্দমঠ উপন্যাসের প্রথম সংস্করণ )প্রথম সংস্করণে যা ছিল ইংরেজ তাই পঞ্চম সংস্করনে হয়ে যায় যবন বা বা মুসলমান বা নেড়ে। যখন উপন্যাস লিখিত হয় তখন বঙ্কিমের শিল্প মানস কাজ করছিল কিন্তু যখন পরিবর্তিত হয় শিল্পী বঙ্কিম মারা গিয়ে জন্ম লাভ করে ব্যক্তি বঙ্কিম। যে বঙ্কিম ইংরেজের সামান্য চাকুরে, আজীবন পদোন্নতি বঞ্চিত ।
যতো চাপে পরেই ব্যক্তি বঙ্কিমের জন্ম হোক না কেনো, কাজটা কিন্তু একদমই মেনে নেওয়ার মতো নয়...
২৯
লেখটাতে ছফার অনেকগুলো বিষয়ই এসেছে
অনেক প্রসঙ্গ
কিন্তু লেখাটার একটা আশংকাজনক দিক হচ্ছে ছফাকে যাদের ভালো জানা শোনা নেই তারা যে কেউ এই লেখা পড়ে ছফাকে প্রতিক্রিয়াশীর কিংবা সাম্প্রদায়িক ভেবে বসতে পারেন
একই ভাবে প্রফেসর রাজ্জাককে
(রাজ্জাককে অনেকে মুসলিম লিগার বলে সাম্প্রদায়িকতার সূত্র প্রমাণ করতে চান। কিন্তু তাদের মনে রাখা উচিত শেখ মুজিব সহ আওয়ামি লিগার বেশিরভাগই আদি মুসলিম লিগার।)
০২
৭১ এর পরে বাঙালিদের নিয়ে যে বাংলাদেশ
আহমদ ছফাকে আমি সেই বাংলাদেশের বাঙালিদের জাতীয়তাবাদের (বাংলাদেশী না বাঙালি জাতীয়তাবাদ; জানি না)
তার আগে বাঙালিদের মধ্যে যে ভাগ হয়ে গেছে
তার আগে যে বাংলার অঞ্চল ধর্মে ধর্মে মেজরিটি আর মাইনোরিটি হয়ে গেছে
ছফা সেই পলিটিক্যাল সত্যগুলো মাথায় রেখেই বাংলাদেশকে ভাবতেন
এর মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বিষয় ছিল না
ছিল সংখ্যাপ্রধানের চিন্তার সূত্রগুলো দেখা
০৩
বহু কষ্ট এবং চেষ্টা এবং তার সাহিত্যের ভয়ানক রকম ভক্ত হয়েও কিন্তু বঙ্কিমকে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ থেকে রেহাই দিতে পারিনি আমি
অনেক প্রসঙ্গ
কিন্তু লেখাটার একটা আশংকাজনক দিক হচ্ছে ছফাকে যাদের ভালো জানা শোনা নেই তারা যে কেউ এই লেখা পড়ে ছফাকে প্রতিক্রিয়াশীর কিংবা সাম্প্রদায়িক ভেবে বসতে পারেন
একই ভাবে প্রফেসর রাজ্জাককে
(রাজ্জাককে অনেকে মুসলিম লিগার বলে সাম্প্রদায়িকতার সূত্র প্রমাণ করতে চান। কিন্তু তাদের মনে রাখা উচিত শেখ মুজিব সহ আওয়ামি লিগার বেশিরভাগই আদি মুসলিম লিগার।)
০২
৭১ এর পরে বাঙালিদের নিয়ে যে বাংলাদেশ
আহমদ ছফাকে আমি সেই বাংলাদেশের বাঙালিদের জাতীয়তাবাদের (বাংলাদেশী না বাঙালি জাতীয়তাবাদ; জানি না)
তার আগে বাঙালিদের মধ্যে যে ভাগ হয়ে গেছে
তার আগে যে বাংলার অঞ্চল ধর্মে ধর্মে মেজরিটি আর মাইনোরিটি হয়ে গেছে
ছফা সেই পলিটিক্যাল সত্যগুলো মাথায় রেখেই বাংলাদেশকে ভাবতেন
এর মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বিষয় ছিল না
ছিল সংখ্যাপ্রধানের চিন্তার সূত্রগুলো দেখা
০৩
বহু কষ্ট এবং চেষ্টা এবং তার সাহিত্যের ভয়ানক রকম ভক্ত হয়েও কিন্তু বঙ্কিমকে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ থেকে রেহাই দিতে পারিনি আমি
৩০
উদ্ধৃতি
লীলেন ভাই, ছফা+রাজ্জাকের ভক্ত হয়েও তাদের ব্যাপারটা মেনে নেয়া কষ্টকর। বাস্তবতার যুক্তি দিয়ে কি রাজ্জাক স্যারের পাকিস্তানপন্থী হওয়াটাকে যুক্তিশীল করে তোলা যায়?...তার সাহিত্যের ভয়ানক রকম ভক্ত হয়েও কিন্তু বঙ্কিমকে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ থেকে রেহাই দিতে পারিনি আমি।
ধর্মীয় সংখ্যালঘু/সংখ্যাগুরুর প্রবণতা দিয়ে একটা দেশের সাহিত্য/রাজনীতি/সমাজের প্রবণতা চিহ্নিত/নির্মাণ করার চেষ্টা করাটা কি ঠিক?
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
৩১
উদ্ধৃতি
লীলেন ভাই,(রাজ্জাককে অনেকে মুসলিম লিগার বলে সাম্প্রদায়িকতার সূত্র প্রমাণ করতে চান। কিন্তু তাদের মনে রাখা উচিত শেখ মুজিব সহ আওয়ামি লিগার বেশিরভাগই আদি মুসলিম লিগার।)
শেখ মুজিব সহ আওয়ামি লিগার বেশিরভাগই আদি মুসলিম লিগার, তাতে কি মুসলীম লীগ জায়েজ হয়ে যায়? সেই সময়ে ও কি সংখ্যায় নগন্য হলে ও কিছু মানুষ ছিলেননা যারা এই উন্মাদনায় মেতে উঠেননি।
স্বীকার্য্য, শেখ মুজিব সহ সেই সময়ের তরুনদের প্রায় সকলেই জিন্নাহর- দ্বিজাতিতত্ব বটিকা গিলেছিলেন। কিন্তু তাদেরই বেশীরভাগ কি পরে এটা থেকে সরে আসেননি? তারা তাদের ঐ সময়ের অবস্থান থেকে সরে এসেছিলেন বলেই তো ধর্মভিত্তিক জাতীয়তার বিপরীতে ভাষা ও সংস্কৃতি ভিত্তিক জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ঘটেছিলো,তাইনা?
আমাকে কি তুমি( কিংবা অন্য কেউ) জানাবেন- রাজ্জাক সাহেব অন্য প্রায় সকলের মতো মুসলিম লীগের ছায়াতল থেকে সরে এসেছিলেন কিনা? জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্বকে পরবর্তীতে ভুল বলে স্বীকার করেছিলেন কিনা? নাকি শেষ পর্যন্ত তিনি জিন্নাহ'র ফলোয়ারই ছিলেন?
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
৩২
মোরশেদ ভাই,
আমার যতটুকু মনে পড়ে "যদ্যপি আমার গুরু"-তে পড়েছি ৬ দফা'র পেছনে প্রফেসর আবদুর রাজ্জাকের ভূমিকা ছিল। আমার হাতের কাছে এখন বইটি নেই--শুভাশীষ দা বা অন্য কেউ কি ব্যাপারটা একটু নিশ্চিত করতে পারবেন। আর একটি তথ্য এ বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে মনে করি--- হুমায়ূন আজাদ কিন্তু আবদুর রাজ্জাককে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন। বাংলাদেশের যে ৪ জন মানুষকে উনি সাক্ষাত্কার নেয়ার যোগ্য মনে করেছেন তাঁদের মধ্যে আবদুর রাজ্জাক একজন। হুমায়ূন আজাদের 'সাক্ষাত্কার' নামক বইয়ের ভূমিকায় এ কথা পড়েছি মনে আছে। (অন্য ৩ জন হচ্ছেন -- আহমদ শরীফ, শামসুর রাহমান এবং শওকত ওসমান )।
আহমদ ছফা আমি খুবই কম পড়েছি। তবে তাঁর 'পুষ্প, বৃক্ষ, বিহংগ ও পুরাণ'বইটা কিন্তু শুরু হয়েছে তাঁর সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার অসহনীয় মন:কষ্ট নিয়ে এবং সেই কষ্ট ভুলতে যেয়ে তিনি কী কী করা শুরু করেছিলেন তার বর্ণনা দিয়ে। যে লোক সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন মনে পুষে রাখেন-- তিনি সাম্প্রদায়িক হতে পারেন কিনা আমি জানি না। আর আহমদ ছফা মারা যাওয়ার পর মুহম্মদ জাফর ইকবাল কিন্তু তাঁর লেখা একটি কলামে নতুন প্রজন্মের কাছে অনুরোধ করেছিলেন ছফার লেখাগুলো পড়ে দেখতে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য জাফর স্যারের বিবেচনাকে আমি অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে করি বলে আহমদ ছফা সাম্প্রদায়িক হবেন এটা বিশ্বাস করতে ঠিক মন চায় না। আর ছফার লেখা নিজে এত কম পড়েছি যে নিজে থেকে কোনো সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব না। তাই শুভাশীষ দার লেখা আর আপনাদের আলোচনা গোগ্রাসে গিলছি!
আমার যতটুকু মনে পড়ে "যদ্যপি আমার গুরু"-তে পড়েছি ৬ দফা'র পেছনে প্রফেসর আবদুর রাজ্জাকের ভূমিকা ছিল। আমার হাতের কাছে এখন বইটি নেই--শুভাশীষ দা বা অন্য কেউ কি ব্যাপারটা একটু নিশ্চিত করতে পারবেন। আর একটি তথ্য এ বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে মনে করি--- হুমায়ূন আজাদ কিন্তু আবদুর রাজ্জাককে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন। বাংলাদেশের যে ৪ জন মানুষকে উনি সাক্ষাত্কার নেয়ার যোগ্য মনে করেছেন তাঁদের মধ্যে আবদুর রাজ্জাক একজন। হুমায়ূন আজাদের 'সাক্ষাত্কার' নামক বইয়ের ভূমিকায় এ কথা পড়েছি মনে আছে। (অন্য ৩ জন হচ্ছেন -- আহমদ শরীফ, শামসুর রাহমান এবং শওকত ওসমান )।
আহমদ ছফা আমি খুবই কম পড়েছি। তবে তাঁর 'পুষ্প, বৃক্ষ, বিহংগ ও পুরাণ'বইটা কিন্তু শুরু হয়েছে তাঁর সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার অসহনীয় মন:কষ্ট নিয়ে এবং সেই কষ্ট ভুলতে যেয়ে তিনি কী কী করা শুরু করেছিলেন তার বর্ণনা দিয়ে। যে লোক সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন মনে পুষে রাখেন-- তিনি সাম্প্রদায়িক হতে পারেন কিনা আমি জানি না। আর আহমদ ছফা মারা যাওয়ার পর মুহম্মদ জাফর ইকবাল কিন্তু তাঁর লেখা একটি কলামে নতুন প্রজন্মের কাছে অনুরোধ করেছিলেন ছফার লেখাগুলো পড়ে দেখতে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য জাফর স্যারের বিবেচনাকে আমি অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে করি বলে আহমদ ছফা সাম্প্রদায়িক হবেন এটা বিশ্বাস করতে ঠিক মন চায় না। আর ছফার লেখা নিজে এত কম পড়েছি যে নিজে থেকে কোনো সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব না। তাই শুভাশীষ দার লেখা আর আপনাদের আলোচনা গোগ্রাসে গিলছি!
৩৩
কিস্তি এক লেখায় যদ্যপি আমার গুরুর নরমকপির লিঙ্ক দিয়েছিলাম। বইটা সেখান থেকে পড়ে নিতে পারেন। ছয় দফার পেছনে প্রফেসর রাজ্জাকের অবদান নিয়ে সরাসরি কিছু লেখা নেই বোধকরি বইটাতে। হুমায়ূন আজাদের সাক্ষাৎকারের বইটা পড়েছিলাম। এখন আমার কাছে নেই।
মু জা ই য়ের প্রেসক্রিপসন নিয়ে আর মন্তব্য করলাম না।
ভালো থাকবেন।
মু জা ই য়ের প্রেসক্রিপসন নিয়ে আর মন্তব্য করলাম না।
ভালো থাকবেন।
৩৪
রাজিব মোস্তাফিজ,
শুধু ছয়দফা কেনো ,ছফা তো গুরুবন্দনায় তার গুরুকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা বলেই দাবী করেছেন।
ছয়দফা, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম এগুলো নিকট ইতিহাস মাত্র। আপনি কিংবা অন্য কেউ কি দয়া করে প্রামান্য কিছু দেখাতে পারেন এর সপক্ষে? ছফা নিজে ও এই কাজটি করেননি।
আর ডঃ আজাদ কিংবা জাফর ইকবালের বিবেচনাকে আমি নিজে ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে করি তবু যে কাউকে মুল্যায়ন করতে চাই তার নিজস্ব ভূমিকা দিয়েই, অন্য কারো বিবেচনায় নয়।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
শুধু ছয়দফা কেনো ,ছফা তো গুরুবন্দনায় তার গুরুকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা বলেই দাবী করেছেন।
ছয়দফা, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম এগুলো নিকট ইতিহাস মাত্র। আপনি কিংবা অন্য কেউ কি দয়া করে প্রামান্য কিছু দেখাতে পারেন এর সপক্ষে? ছফা নিজে ও এই কাজটি করেননি।
আর ডঃ আজাদ কিংবা জাফর ইকবালের বিবেচনাকে আমি নিজে ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে করি তবু যে কাউকে মুল্যায়ন করতে চাই তার নিজস্ব ভূমিকা দিয়েই, অন্য কারো বিবেচনায় নয়।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
৩৫
ছফাকে ভালো লাগে। লেখা পড়ছি।
৩৬
ক্যাঠা? পিপিদা নি?
৩৭
জ্বী ভাই। অফিস থেকে দিয়েছিলাম
৩৮
পড়ছি।
৩৯
ঠিকাছে
৪০
সেক্যুলারিজম ও কিন্তু শেষ পর্যন্ত একটা 'ইজম' । আমার মতে জাতিগতভাবে কোনোরকম ইজম-এরই চর্চা করা বা মুখোশ পড়া উচিৎ না। ব্যক্তিগত পর্যায়ে যে কেউ যেকোনো ইজম অনুসরণ করুক কোনো সমস্যা নাই। জাতি বা রাষ্ট্রের শুধু এতটুকু লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন যে একজন যেন নিজের ইজম অন্যের উপর জোর করে চাপিয়ে না দেয় আর একজনের ইজম যেন আরেকজনের ইজম-কে ঘৃণা না করে বা আরেকজনের ইজম-এর ক্ষতি না করে।
আর আরেকটা জিনিস আমার একটু জানার ইচ্ছা আছে - সেক্যুলারিজম মানে আসলে কি? আমি কোনো ধর্মকেই পছন্দ করিনা(ধর্মহীনতা?) এইটা? নাকি আমি সব ধর্মকেই পছন্দ করি এইটা? নাকি আমি শুধু আমার নিজের ধর্ম নিয়ে মাথা ঘামাই অন্য ধর্মের লোক যা খুশী তাই করুক এইটা?
আর আরেকটা জিনিস আমার একটু জানার ইচ্ছা আছে - সেক্যুলারিজম মানে আসলে কি? আমি কোনো ধর্মকেই পছন্দ করিনা(ধর্মহীনতা?) এইটা? নাকি আমি সব ধর্মকেই পছন্দ করি এইটা? নাকি আমি শুধু আমার নিজের ধর্ম নিয়ে মাথা ঘামাই অন্য ধর্মের লোক যা খুশী তাই করুক এইটা?
৪১
এটা ঠিক পৃথিবীতে ম্যালা ইজম। কিছু ভালো কিছু খারাপ। কিছু ভালো না খারাপ তাই নিয়ে ক্যাচালের শেষ নাই। সেক্যুলারিজম কি বস্তু চার/ছয় বাক্যে বলে শেষ করা যাবে না। গ্রায়েম স্মিথের 'আ শর্ট হিস্টরি অব সেক্যুলারিজম' পড়তে পারেন। সেক্যুলারিজমের বাংলা ইহজাগতিকতা - ছফার মতো এই বাংলাকরণ আমারও পছন্দ না।
অক্সফোর্ড য়্যুনুভার্সিটি প্রেস থেকে ছাপানো একটা বইয়ের পিডিয়েফ পেয়েছিলাম নেটে। নাদের হাশেমির 'ইসলাম, সেক্যুলারিজম এন্ড লিবারেল ডেমোক্রেসি'। নতুন বই। প্রকাশকাল- ২০০৯ সাল। ওই বইয়ের অধ্যায় তিন আমি অনুবাদ করা শুরু করেছিলাম (এই রকম অনেক কিছুর অনুবাদ আমি অর্ধেক পর্যন্ত করে অন্য জিনিসে মশগুল হয়ে পড়ি) কিছুটা।
সেই অধ্যায়ের নাম ছিল 'আ কনসাইজ এনাটমি অব সেক্যুলারিজম'। দেখি অনুবাদটা শেষ করে আপ করতে পারি কিনা।
অক্সফোর্ড য়্যুনুভার্সিটি প্রেস থেকে ছাপানো একটা বইয়ের পিডিয়েফ পেয়েছিলাম নেটে। নাদের হাশেমির 'ইসলাম, সেক্যুলারিজম এন্ড লিবারেল ডেমোক্রেসি'। নতুন বই। প্রকাশকাল- ২০০৯ সাল। ওই বইয়ের অধ্যায় তিন আমি অনুবাদ করা শুরু করেছিলাম (এই রকম অনেক কিছুর অনুবাদ আমি অর্ধেক পর্যন্ত করে অন্য জিনিসে মশগুল হয়ে পড়ি) কিছুটা।
সেই অধ্যায়ের নাম ছিল 'আ কনসাইজ এনাটমি অব সেক্যুলারিজম'। দেখি অনুবাদটা শেষ করে আপ করতে পারি কিনা।
৪২
অনুবাদটা করে আপ করেন। জলদি, জলদি...............
আর এই লেখায় ।
আর এই লেখায় ।
৪৩
উদ্ধৃতি
কোনো ইজম চর্চা না করাও একটা ইজম। ঐটা কেবল রবিনসন ক্রুসোর দ্বীপে চর্চা করা সম্ভব।সেক্যুলারিজম ও কিন্তু শেষ পর্যন্ত একটা 'ইজম' । আমার মতে জাতিগতভাবে কোনোরকম ইজম-এরই চর্চা করা বা মুখোশ পড়া উচিৎ না।
সেকুলারিজমকে বলা যেতে পারে, ব্যক্তির সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক নিরূপণে ধর্মকে কোনো ফ্যাক্টর হিসেবে বিবেচনা না করার ইজম।
হাঁটুপানির জলদস্যু | আলো দিয়ে লিখি |
৪৫
সেক্যুলারিজমের বাংলা কি করা যায়? ইহজাগতিকতা ছাড়া। এক কথায়।
৪৬
পাঠ হল।
ভালো লেগেছে কিন্তু।
ভালো থাকুন।
__________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!
ভালো লেগেছে কিন্তু।
ভালো থাকুন।
__________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!
৪৭
কবি, আপনাকে ধন্যবাদ।
৪৮
দারুণ লাগছে। লিখে যান স্যার। আহমদ ছফা সাম্প্রদায়িক ছিলেন এই ধারণা তাঁর বই পড়ে যদি কেউ পেয়ে থাকেন......সেটা দুঃখের বিষয়, আমি তাঁর লেখার তো ভক্তই, ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর সাথে একাধিক বার দেখ-কথা হয়েছে.....এই লোক আর যাই হোক, সাম্প্রদায়িক ছিলেন না।
.........
আমাদের দূর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
.........
আমাদের দূর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
৪৯
অর্ক, লিখছি। কিন্তু এখানে আসার সময় ছফার সব বই তো নিয়ে আসা হয় নাই। মাঝে মাঝে রেফেরেন্স টানতে পারছি না। মাসিক চিন্তার ছফাকে নিয়ে করা সংখ্যাটা খুব দরকার। এখন কই পাই? কারো কাছে থাকলে স্ক্যান করে পাঠালে ভীষণ উপকার হতো।
subasishdas@hotmail.com
subasishdas@hotmail.com
৫০
ফেইসবুকে লিস্টি দিয়েন। কিছু করা যায় নাকি দেখবো...
.........
আমাদের দূর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
.........
আমাদের দূর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
৫১
ঠিকাছে, পাঠাবো।
৫২
ছফাগিরি নিয়ে আপনার লেখার জন্য অধীর হয়ে বসে থাকি। আমাদের জেনারেশনে ছফাচর্চা অনেক কমে গেছে।এর মধ্যে আবার কিছু প্রতিক্রিয়াশীল লোকজন আজকাল ছফাকে প্রতিক্রিয়াশীল এমনকি সাম্প্রদায়িক মনোভাবপন্ন বলে মনে করেন। ছফাকে না পড়ে তাঁর সম্পর্কে কিছু বলা এক ধরণের ক্রাইম। আপনি ছফাকে নিয়ে বাংলা ব্লগ আলোকিত করছেন। এই কিস্তি অনেক পর্ব পর্যন্ত আগালে ভালো হয়। বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে ছফাকে বুঝে নেয়া অনেকাংশে ইমার্জেন্সী।
৫৩
ছফাকে বিচার করতে হবে তাঁর লেখা দিয়ে। ছফাচর্চা কমে গেছে এটা বেশ এলার্মিং খবর। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
৫৪
ছফা পড়া অবশ্য কর্তব্য এটাই বুঝলাম।
মাঝের কমেন্ত গুলোও উপভোগ করলাম । বংকিমের সাম্প্রদায়িক রুপটা
গ্রহনযোগ্য না আবার অস্বাভাবিকও না ।
লেখককে ধন্যবাদ ।
ইমতিয়াজ মির্জা
imz.mrz@gmail.com
মাঝের কমেন্ত গুলোও উপভোগ করলাম । বংকিমের সাম্প্রদায়িক রুপটা
গ্রহনযোগ্য না আবার অস্বাভাবিকও না ।
লেখককে ধন্যবাদ ।
ইমতিয়াজ মির্জা
imz.mrz@gmail.com
৫৫
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
৫৬
অনেক
৫৭
শুভাশিস আর হাসান মোর্শেদকে ধন্যবাদ একটি সুন্দর তর্ক আমাদের উপহার দেবার জন্য।
.
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।