লেখাটির মুল লিংক--http://www.sachalayatan.com/subasish/29250
আহমদ ছফা প্রচুর প্রবন্ধ লিখেছেন, কিন্তু প্রবন্ধের শেষে কোন দোহাই বা সূত্র দেন নি। প্রথাগত একাডেমিক টোনে লেখালেখি তাঁর স্বভাববিরুদ্ধ ছিল। গবেষকদের তাঁর লেখা নিয়ে কাজ করতে গেলে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তথ্যের রেফারেন্স বের করতে হয়। ছফা মাত্র আটাশ বছর বয়সে একাত্তরের যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে লিখেছেন ‘জাগ্রত বাংলাদেশ’। রাষ্ট্র বাংলাদেশকে কিভাবে সাবালক করা যায় তার জিহাদ চালিয়ে গেছেন আমৃত্যু। বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও বাঙালী জাতি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক জটিলতা। একাত্তরঃ মহাসিন্ধুর কল্লোল। বাঙালী মুসলমানের মন। এ সকল প্রবন্ধের মাধ্যমে ছফাকে বিচার করা যায়, বোঝা যায় তাঁর রাষ্ট্রচিন্তা আর দেশপ্রেম। ছফাগিরি লিখতে গিয়ে আমার নগদ লাভ হচ্ছে অনেক। কিছু কিছু তথ্যের সূত্র জেনে নিতে এমন কিছু বই পড়ছি বা পড়েছি, কখনো হয়তো এসব বই পড়ার চিন্তা মাথায় আসত না। আর পাঠকদের মিথস্ক্রিয়া তো আছেই। এই কিস্তিতে ‘বাঙালী মুসলমানের মন’ নিয়ে কথাবার্তা শেষ হবে। প্রবন্ধের বিষয়ে ফিরে যাই। বাঙালি মুসলমানেরা সেই কালে হিন্দুদের মতো মৌলিক চিন্তা করতে পারেননি। সেই সময়ের বাঙালি মুসলমানরা তিতুমীরের অনুসারীদের ওহাবী আন্দোলন আর হাজী দুদুমিয়ার ফারায়েজী আন্দোলন ছাড়া অন্য কোন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন নি। আধুনিক কোন রাষ্ট্রদর্শন থেকে তাঁরা এই আন্দোলনে জড়াননি।সমাজের নিচুতলার কৃষকশ্রেণীর এই সংগ্রামে ধর্মই ছিল মূল কারণ। অন্য যেসব আন্দোলনে তারা জড়িয়েছিল বেশির ভাগই ছিল তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া। ফলে মানসিক জগতে যে ব্যাপক পরিবর্তন তাদের দরকার ছিল সেটা কখনো ঘটে নি। …
বাঙালী মুসলমান সমাজ স্বাধীন চিন্তাকেই সবচেয়ে ভয় করে। তার মনের আদিম সংস্কারগুলো কাটেনি। সে কিছুই গ্রহণ করে না মনের গভীরে। ভাসা ভাসা ভাবে, অনেক কিছু জানার ভান করে, আসলে তার জানাশোনার পরিধি খুবই সঙ্কুচিত। বাঙালী মুসলমানের মন এখনো একেবারে অপরিণত, সবচেয়ে মজার কথা এ-কথাটা ভুলে থাকার জন্যই সে প্রাণান্তকর চেষ্টা করতে কসুর করে না। যেহেতু আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান এবং প্রসারমান যান্ত্রিক কৃতকৌশল স্বাভাবিকভাবে বিকাশ লাভ করছে এবং তার একাংশ সুফলগুলোও ভোগ করছে, ফলে তার অবস্থা দাঁড়িয়েছে এঁচড়ে পাকা শিশুর মতো। অনেক কিছুরই সে সংবাদ জানে, কিন্তু কোনো কিছুকে চিন্তা দিয়ে, যুক্তি দিয়ে, মনীষা দিয়ে আপনার করতে জানে না। যখনই কোন ব্যবস্থার মধ্যে কোন রকম অসংগতি দেখা দেয়, গোঁজামিল দিয়েই সবচেয়ে বেশি আনন্দ পায় এবং গোঁজামিল দিতে পারাটাকে রীতিমতো প্রতিভাবানের কর্ম বলে মনে করে। শিশুর মতো যা কিছু হাতের কাছে, চোখের সামনে আসে, তাই নিয়ে সে সন্তুষ্ট। দূরদর্শিতা তার একেবারেই নেই, কেননা একমাত্র চিন্তাশীল মনই আগামী কাল কি ঘটবে সে বিষয়ে চিন্তা করতে জানে। বাঙালী মুসলমান বিমূর্ত চিন্তা করতেই জানে না এবং জানে না এই কথাটি ঢেকে রাখার যাবতীয় প্রয়াসকে তার কৃষ্টি কালচার বলে পরিচিত করতে কুণ্ঠিত হয় না।
বাঙালী মুসলমানের সামাজিক সৃষ্টি, সাংস্কৃতিক সৃষ্টি, দার্শনিক এবং বৈজ্ঞানিক সৃষ্টি সমূহের প্রতি চোখ বুলালেই তা প্রতিভাত হয়ে উঠবে। সাবালক মন থেকেই উন্নত স্তরের সাহিত্য, দর্শন ও বিজ্ঞানের উদ্ভব এবং বিকাশ সম্ভব।এই সকল ক্ষেত্রে তার মনের সাবালকত্বের কোনো পরিচয় রাখতে পারেনি। যে জাতি উন্নত বিজ্ঞান, দর্শন এবং সংস্কৃতির স্রষ্টা হতে পারে না, অথবা সেগুলোকে উপযুক্ত মূল্য দিয়ে গ্রহণ করতে পারেনা, তাকে দিয়ে উন্নত রাষ্ট্র সৃষ্টিও সম্ভব নয়। যে নিজের বিষয় নিজে চিন্তা করতে জানে না, নিজের ভালোমন্দ নিরূপন করতে অক্ষম, অপরের পরামর্শ এবং শোনা কথায় যার সমস্ত কাজ কারবার চলে,তাকে খোলা থেকে আগুনে কিংবা আগুন থেকে খোলা, এইভাবে পর্যায়ক্রমে লাফ দিতেই হয়। সুবিধার কথা হলো নিজের পঙ্গুত্বের জন্য সব সময়েই দায়ী করবার মতো কাউকে না কাউকে পেয়ে যায়। কিন্তু নিজের আসল দুর্বলতার উৎসটির দিকে একবারও দৃষ্টিপাত করে না।
বাঙালী মুসলমানের মন যে এখনো আদি অবস্থায়, তা বাঙালী হওয়ার জন্যও নয় এবং মুসলমান হওয়ার জন্যও নয়। সুদীর্ঘকাল একটি ঐতিহাসিক পদ্ধতির দরুণ তার মনের ওপর একটি গাঢ় মায়াজাল বিস্তৃত হয়ে রয়েছে, সজ্ঞানে, তার বাইরে সে আসতে পারে না। তাই এক পা যদি এগিয়ে আসে, তিন পা পিছিয়ে যেতে হয়। মানসিক ভীতিই এই সমাজকে চালিয়ে থাকে। দু-বছরে বা চার বছরে হয়তো এ অবস্থার অবসান ঘটানো যাবে না, কিন্তু বাঙালী মুসলমানের মনের ধরণ-ধারণ এবং প্রবণতাগুলো নির্মোহভাবে জানার চেষ্টা করলে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার একটা পথ হয়তো পাওয়াও যেতে পারে।১
আহমদ ছফার ‘বাঙালী মুসলমানের মন’ প্রবন্ধ নিয়ে আলোচনা এখানেই শেষ। যে বইগুলো ছফার মতামত (বাঙালি মুসলমানের মানসগঠন নিয়ে)গঠনে ভূমিকা রেখেছিল কয়েকটার নাম এখানে করা যায়। জয়া চ্যাটার্জীর ‘বেঙ্গল ডিভাইডেডঃ হিন্দু কম্যুনালিজম এণ্ড পার্টিশন, ১৯৩২-১৯৪৭’; রফিউদ্দীন আহমেদের ‘দা বেঙ্গল মুসলিমস্ ১৮৭১-১৯০৬: আ কুয়েস্ট ফর আইডেন্টিটি’; সুমিত সরকারের ‘দা স্বদেশী মুভমেন্ট ইন বেঙ্গল ১৯০৩-১৯০৮’ ; জনসন গর্ডনের ‘পার্টিশন, এজিটেইশন্ এণ্ড কংগ্রেসঃ বেঙ্গল ১৯০৪-১৯০৮’; ছফা এই বইগুলো থেকে তথ্য নিয়ে বাঙালি মুসলমান সমাজের বিশ্লেষণ করেছেন নির্মোহ ভাবে। কোটেশন দিয়ে কথা না বলে শুধুমাত্র কোন কোন ক্ষেত্রে বইয়ের নাম উল্লেখ করে নিজের ভাষায় নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে কোন ঘটনাকে গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছেন।
জয়া চ্যাটার্জীর ‘বেঙ্গল ডিভাইডেডঃ হিন্দু কম্যুনালিজম এণ্ড পার্টিশন, ১৯৩২-১৯৪৭’ বইয়ে পঞ্চম অধ্যায়ের নাম ‘হিন্দু ইউনিটি এণ্ড মুসলিম টিরানিঃ এসপেকটস্ অভ হিন্দু ভদ্রলোক পলিটিকস্, ১৯৩৬-৪৭’; হিন্দু রাষ্ট্রের স্বপ্ন নিয়ে সে কালের ঘটনার ধারাবিবরণী পাওয়া যায় তাঁর লেখায়। … শতাব্দীর শুরুতে হিন্দু রাজনৈতিক ঐক্যের লক্ষ্যে হরিজনদের উত্থানের দিকে নজর দেয়া হয় এবং বর্ণাশ্রম ভেঙ্গে দেয়ার ভাবনাও ওঠে। স্বামী বিবেকানন্দ সত্যযুগের মতো ‘এক গোত্র(ব্রাহ্মণ), এক বেদ’ প্রণয়নের মাধ্যমে শান্তির চিন্তাভাবনা করছিলেন। কিন্তু ১৯২৬ সালের লেখায় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এই স্বপ্ন অলীক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাঁর ‘বর্তমান হিন্দু-মুসলমান সমস্যা’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন- হিন্দুদের সমস্যা তাদের নিজের গোত্রের মধ্যে ঐক্যহীনতা; কিছু লোককে নিচু জাতের বলে দূরে সরিয়ে রাখাই ছিল হিন্দুত্বের ভাঙ্গনের জন্য দায়ী। এই রীতির সমাপ্তি ঘটাতে হবে। যদিও ভারতের অন্য স্থানের বর্ণাশ্রমের মতো বাংলার বর্ণাশ্রম এতোটা চরমপন্থী নয়।২ … জয়া চ্যাটার্জী ভালো গবেষক। অনেক তথ্য উপাত্তের সমারোহ দেখা যায় তাঁর লেখায়। ১৯৩৬ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত যেসব রাজনৈতিক প্রধান ঘটনা ঘটেছে তিনি তাঁর প্রবন্ধে সেগুলোর উল্লেখ করেছেন।
কলকাতা বইমেলা’৯৯ উপলক্ষ্যে কলকাতার স্বাধীন বাংলা সাময়িকীর পক্ষ থেকে আহমদ ছফার একটা দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাবাজার পত্রিকা সাক্ষাৎকারটি তিন কিস্তিতে পুনরায় ছাপে। পরে সেই লেখা আবার ছাপানো হয় মাসিক চিন্তার আহমদ ছফাকে নিয়ে করা সংখ্যায়। সাক্ষাৎকারটি নানান দিকে গুরুত্বপূর্ণ। আহমদ ছফার যে কয়টি সাক্ষাৎকার আমি পড়েছি তার মধ্যে এই সাক্ষাৎকারটিকে আমার সবচেয়ে ভালো মনে হয়। কবি ব্রাত্য রাইসুর উত্তর-আধুনিক-ছফা-সাক্ষাৎকারের কথা মনে পড়ে। যেখানে রাইসু সাহেব ছফাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন – ‘আচ্ছা ছফা ভাই, আপনি কি কখনো বেশ্যাগমন করছেন?’ ‘আপনি কি মাস্টারবেশান করছেন কখনো?’ ছফা সেইসব সাক্ষাৎকারেও নিজের জাত চিনিয়ে দেন। সে কথা থাক।
১৯৪৭ সালে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনে আবুল হাশিম এবং শরৎ বসুদের প্রচেষ্টা সফল না হওয়ার পেছনে তিন থেকে ছয় ভাগ বর্ণহিন্দুদের স্বার্থকে একমাত্র কারণ বলে মনে করেন না আহমদ ছফা। … প্রথমত প্রভাব প্রতিপত্তির দিক দিয়ে ১৯৩০ এর পর বাংলা ভাষা চতুর্থ ভাষা হয়ে গেল কোলকাতায়। প্রথম ভাষা ইংরেজি, দ্বিতীয় ভাষা হিন্দি, তৃতীয় ভাষা উর্দু। তারপর মহাযুদ্ধ, ওই যুদ্ধ বাঙালির অর্থনীতিকে সম্পূর্ণ ভেঙ্গে দিল এবং বাঙালির রাজনীতি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর হয়ে গেল পশ্চিমী অবাঙালিদের টাকার উপর। বাংলা ভাগের জন্য শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিদের অর্থটা দিয়ে ছিল টাটা। যে কারণে সুভাষ বোসকে কংগ্রেস ছাড়তে হল, এমনকি শেষ পর্যন্ত দেশও ছাড়তে হল। গান্ধী এবং নেহেরুকে টাকা দিত মারোয়ারি এবং গুজরাটিরা। একজন বাঙালি সভাপতিকে তারা টাকা দিতে রাজি ছিল না এবং গান্ধী-নেহেরু কখনই চান নি সুভাষ বসুর মত একজন বাঙালি কংগ্রেস দলের সভাপতি হোন বা থাকুন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ না হলে এবং বাঙালির অর্থনীতিটা ভেঙ্গে না গেলে হয়তো বাঙালির এই পরিণাম হতো না।৩ …
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর করেছেন আহমদ ছফা এই আলাপে। এই কিস্তিতে কথা এগোবে এই বাৎচিত নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধে বামপন্থীদের ভূমিকা, শেখ মুজিব, আনন্দবাজার পত্রিকা- এই তিনটা বিষয়ে ছফার কথাবার্তা নিয়ে আলোচনা হবে পরের কিস্তিতে। আর আহমদ ছফার ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক জটিলতা’ ছফাগিরির পরের পর্বের প্রধান আলোচ্য প্রবন্ধ।
পাকিস্তান হয়েছে বলেই পূর্ব বাংলার মানুষ বাংলাদেশ পেয়েছে- এই যুক্তিকে ছফা পুরোপুরি সমর্থন করেন না। … পশ্চিম বাংলার অর্থনীতিবিদ এবং চিন্তাশীল লেখক ড. অশোক মিত্র বলেছেন, ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ রদ না হলে, অর্থাৎ তখন যদি বঙ্গ বিভাগ হত তবে বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্তের বিকাশ ঘটতো এবং বিকশিত বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্ত বাঙালি হিন্দুদের সাথে একটা সমঝোতা করে নিত।ফলে ১৯৪৭ এর দেশভাগের কোনও প্রয়োজন ঘটত না। বাংলা ভাগ না হলে ভারত ভাগও হত না। কারণ বাংলার বাইরে পাকিস্তানের অস্তিত্ব কোথাও ছিল না। মুসলিম লীগ এখানেই হয়েছে এবং এখানেই ছিল পাকিস্তানের পক্ষে মুসলিম লীগের জনভিত্তি। এছাড়া চিত্তরঞ্জন দাশের ‘বেঙ্গল প্যাক্ট’ যদি কার্যকর হত, তাহলেও বাংলা ভাগ হত না। তারপর ধরুন ক্যাবিনেট মিশন প্ল্যান, যাতে আসামকে একটা জোন করা হবে বলা হয়েছিল। এটা মেনে নেয়া হলেও বাংলা ভাগ হত না। অর্থাৎ কিছু ঐতিহাসিক অনিবার্যতা দীর্ঘকাল ধরে যা হয়ে আসছিল তার চূড়ান্ত অভিঘাতে বাংলা ভাগ হয়েছে।৪… বাংলা ভাগ নিয়ে ছফার যুক্তিগুলো আরও পর্যালোচনা করার দরকার আছে। পাকিস্তান ভাঙ্গার পেছনের ঐতিহাসিক অনিবার্যতা প্রসঙ্গে বাঙালি মুসলমানদের জাতীয়তাবোধ প্রধানত কাজ করেছে বলে ছফার ধারণা। …বাঙালি মুসলমানদের জাতীয়তাবোধ। কিন্তু শুন্য থেকে তো জাতীয়তাবোধ জন্মায় না। এখানে (পূর্ব বাংলা) যে মধ্যবিত্ত শ্রেণী গড়ে উঠল তারাই প্রথম অনুভব করল রাজনীতি,অর্থনীতি, ভাষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানি আধিপত্য প্রতিরোধ করতে না পারলে, বাঙালি হিসেবে তাদের বিকাশ সম্ভব নয়। মওলানা ভাসানী, সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিব এঁরা ছিলেন পাকিস্তান আন্দোলনের নেতা। পরে পাকিস্তানকে ও ভাঙ্গতে হয়েছিল, কারণ ভাগে মিলছিল না। এটা একটা হিসাব, আর একটা হিসাব আছে। অর্থাৎ একটা জাতি কোন উপলক্ষে জেগে উঠে, কত গভীরে তার প্রভাব পড়ে, অতি তুচ্ছ কারণেও কোন ঘটনা ঘটতে পারে- কিন্তু তার প্রভাব অনেক দীর্ঘস্থায়ী হয়। সেই দিক থেকে বাঙালি জাতির ইতিহাসে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে প্রভাবসঞ্চারী বড় কোন ঘটনা নেই।৫ …
ভৌগোলিক মানচিত্রে অষ্টম আশ্চর্য হিসেবে বিবেচিত তৎকালীন পাকিস্তানের শাসকরা পূর্ব বাংলার লোকজনকে ইসলাম এবং মুসলমান এই দুই মিষ্টি বুলি দিয়ে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা চালাতো। পাকিস্তানি সংহতির আসল চেহারা বাংলার লোক বুঝে ফেলায় সংগ্রাম অনিবার্য হয়ে দাঁড়ালো। আর মুসলিম লীগকে সেই কালের নেতাদের সমর্থনের ব্যাপারটাও ছফা পরিষ্কার করেছেন।… বৈষম্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকল, চাকরিতে বৈষম্য, সামরিক বাহিনীতে বৈষম্য, অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৈষম্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে পূর্ব বাংলার বৈষম্য ছিল। এই বৈষম্যগুলোকেই রাজনৈতিক বিষয় হিসেবে পূর্ব বাংলার মানুষের সামনে তুলে ধরা হলো এবং তাতে মানুষ ব্যাপকভাবে সাড়া দিলেন এবং শেষ পর্যায়ে অস্ত্র তুলে ধরলেন পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন করার জন্য। তবে পূর্ব বাংলার প্রতি নানা বৈষম্যের প্রতিবাদে যারা পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংগ্রাম-আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন একসময় এঁরা ছিলেন পাকিস্তান আন্দোলনের নেতা।৬ …মুসলিম লীগের রাজনীতিতে শেখ মুজিব ছিলেন সোহরাওয়ার্দীর শিষ্য এবং গুরু শিষ্য দুজনেই ছিলেন পাকিস্তান আন্দোলনের নেতা। বাংলাদেশ যারা স্বাধীন করেছেন এক সময় তাদের বেশির ভাগই ছিলেন মুসলিম লীগে।৭ …
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবসঞ্চারী ঘটনা হিসেবে দেখেন আহমদ ছফা। একাত্তর সালে লেখক শিবির কিভাবে গড়ে উঠেছিল বর্ণনা করেছেন ‘একাত্তরঃ মহাসিন্ধুর কল্লোল’ প্রবন্ধে। আহমদ ছফার অনুভূতি জানা যায় তাঁর লেখায়। … ইতিহাসে কোন কোন সময় আসে যখন এক একটা মিনিটের ব্যাপ্তি, গভীরতা এবং ঘনত্ব হাজার বছরকে ছাড়িয়ে যায়। আমাদের জীবনে একাত্তর সাল সে রকম। একাত্তর সাল যারা দেখেছে, ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে যারা বড় হয়েছে, একাত্তর সালের মর্মবাণী মোহন সুন্দর বজ্রনিনাদে যাদের বুকে বেজেছে, তারা ছাড়া অন্য কেউ একাত্তরের তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।৮… একাত্তর সালে যা কিছু ঘটেছে, আমি যা কিছু দেখেছি- যে সকল ঘটনা এবং কর্মকাণ্ডে আমি এবং আমার বন্ধুরা অংশ নিয়েছি; আমার জাতির যে জাগরণ, যে প্রতিরোধ, যে বোকামি এবং উন্মাদনা আমি দেখেছি- সবকিছুকে একটা বিরাট সত্তার অবিভাজ্য অংশ মনে হয়। চোখ বুঁজে একাত্তরের কথা চিন্তা করলে আমার কানে মহাসিন্ধুর কল্লোল ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হতে থাকে।৯… মুক্তিযুদ্ধের পর অনেক স্বপ্নের দেশ আমরা পেলাম। স্বপ্নের বাস্তবায়ন সেখানে কতটুকু হয়েছে? দেশকে আমরা স্বাধীন করেছি। কিন্তু ধনী বা ক্ষমতাশালীদের শোষণ কি আদৌ শেষ হয়েছে? একাত্তরের ঘাতক দালালদের আমরা সংসদে বসিয়েছি, মন্ত্রী পর্যন্ত বানিয়েছি। আমাদের স্খলন অনেক জায়গায় মাত্রা ছাড়িয়ে এমন জায়গায় পৌঁছেছে, ভাবতে গেলে কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পাই না। ছফা তাঁর মতো ব্যাখ্যা করেছেন। … প্রথম স্বপ্ন তো সত্যি হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। স্বাধীনতার আগে পর্যন্ত বাংলার রাজনীতিকে যারা পরিচালনা করতেন তারা ছিলেন উচ্চবর্গীয় অভিজাত। এখন সন অফ দি সয়েলেরা রাজনীতিতে আসছেন। অন্যদিকে আশংকার দিক হলো এখানে একটা রাতারাতি একটা ইকোনোমিক ক্লাস গ্রো করছে। এই ইকোনোমিক ক্লাসটি গড়ে উঠেছে ইকোনোমিক প্লানডার এবং লুণ্ঠন থেকে। লুণ্ঠনটা হয়েছে ব্যাপক হারে। এমন কয়েকজনকে আমি জানি, মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের পঁচিশ’শ টাকা ছিল না, এখন তাঁদের ক্যাপিটাল পঁচিশ’শ কোটি টাকা। রাজনৈতিক ক্ষমতাকে প্রয়োগ করে তারা এই টাকা আয় করেছে।১০ … বাংলাদেশের ক্ষমতার রাজনীতিটা একটা দুষ্টচক্রের মিউজিকাল চেয়ারে পরিণত হয়েছে।১১ … ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা ঘটনা। ভাষাভিত্তিক একটা রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হলেও আন্দোলনের প্রথম দিকে স্বাধীন রাষ্ট্রের চিন্তা কারো মাথায় ছিল না। বাংলাকে এখানকার রাষ্ট্রভাষা করার দাবী উঠেছিল প্রথমে। পরে অন্য ইস্যুগুলো সবার কাছে স্পষ্ট হলো। … যারা ভাষা আন্দোলন করেছিলেন, তারা ছিলেন মধ্যবিত্ত ছাত্র, বেশীর ভাগ মুসলমান। আওয়ামী মুসলিম লীগের সকল নেতৃবৃন্দ এককালে ছিল পাকিস্তানি। আমার শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক সেদিন কথা প্রসঙ্গে আমাকে বললেন, তাঁর কাছে শেখ মুজিবের কিছু ছবি আছে, সেই সব ছবিতে জিন্নাহ মারা যাবার পর শেখ মুজিব হাউমাউ করে কাঁদছেন। হিন্দ-মুসলমানের ভিত্তিতে দেশটা ভাগ হলো। তারপর পশ্চিমাদের সাথে লড়াই করতে গিয়ে তারা (বাঙালি মুসলমান)পারে না। এল সোহরাওয়ার্দীর যুক্ত নির্বাচন। এভাবেই একটা প্রেক্ষিত তৈরি হল এবং বাঙালি মুসলমান বাঙালি হিন্দুদের টেনে আনলেন। এ ক্ষেত্রে প্রেমের চাইতে যে জিনিসটা বেশি কাজ করেছে, তা হল তাদের বাস্তব প্রয়োজন। অর্থাৎ যে অর্থে অসাম্প্রদায়িক ইত্যাদি বলতে আমরা যা চিন্তা করি, একটা আইডিয়াল সিচুয়্যেশন, সেটা বোধ হয় এ ক্ষেত্রে কল্পনা করা ঠিক হবে না।১২ …
এপার বাংলা ওপার বাংলার সাহিত্য নিয়ে ছফা অনেক জায়গায় আলোচনা করেছেন, প্রবন্ধ লিখেছেন। একুশের বইমেলায় আনন্দবাজারের বই বিক্রি বন্ধের জন্য ছফা আন্দোলনে পর্যন্ত নেমেছিলেন। বাংলাদেশের লেখকদের ঠিকমতো বিকশিত করার পেছনে ছফার অনেক অবদান আছে। আনন্দবাজার পত্রিকা বাংলাদেশকে একটা মৌলবাদী রাষ্ট্রের তকমা সেঁটে গেছে দীর্ঘদিন ধরে। ছফা সেসবের প্রতিবাদ করে গেছেন। বাংলাদেশের লোকজনের কাছে পশ্চিম বাংলার লেখকরা ঠিক যতোটা পরিচিত আমাদের লেখকরা তাঁদের কাছে ঠিক ততোটাই অপরিচিত। পশ্চিম বাংলার তথাকথিত বোদ্ধারা আহমদ ছফার মতো দ্রোহী লেখককে তাঁদের পাঠকের সাথে পরিচয় করান না, পরিচিত করান হুমায়ূন আহমেদ বা তসলিমা নাসরিনকে। এর পেছনে তাঁদের হেজিমোনি কাজ করে। … বাংলাদেশের সাহিত্য এখানকার পরিবেশ, প্রতিবেশ, এখানকার জীবন, সংগ্রাম, রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা এসব নিয়ে লেখা হবে। পশ্চিম বাংলার সাহিত্য সেখানকার মতো বিকশিত হবে। তবে বাংলা ভাষার প্রশ্নটা স্বতন্ত্র। বাংলা এখানে রাষ্ট্রভাষা, জাতীয় ভাষা। সেই কারণে বাংলা ভাষা এখানে যে পেট্রোনাইজেশন পাচ্ছে, পশ্চিম বাংলায় বাংলা ভাষা পাচ্ছে না। বাংলা ভাষা ওখানে একটা প্রাদেশিক ভাষা, এবং হিন্দির কারণে চূড়ান্তভাবে কোণঠাসা। পশ্চিম বাংলার বাংলা ভাষার জন্য যে পেট্রোনাইজেশন দরকার আর্থিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক কোন ক্ষেত্রেই বাংলা ভাষা সেখানে তা পাচ্ছে না কারণ জাতিগতভাবে বাঙালি সেখানে স্বাধীন নয়। বাংলাদেশের সাহিত্যের ক্ষেত্রে যারা খুব পরিচিত, একটা সময় পর্যন্ত তার এখানকার সাহিত্যকে সার্ভ করেছেন, সাহিত্যক্ষেত্রে একটা সময় যারা জ্বলে উঠেছিলেন তাদের অনেকেই এখন বর্জ্য পদার্থের কাছাকাছি এসে গেছেন। নতুন প্রজন্মের মধ্যে পলিটিক্যাল ডেসটিনি না থাকলে, পলিটিক্যাল গোল ক্লিয়ার না থাকলে, শিল্প সাহিত্য তার প্রধান ভিক্টিম হয়। এখন বাংলাদেশের চিত্র কোনদিকে যাবে তার দিশা নেই। হাজার হাজার পাতা পত্রপত্রিকা ছাপা হচ্ছে। কিন্তু স্পর্শ করার মতো পঞ্চাশটি পাতা সেখানে পাবেন না। তবে বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনা আছে, সেই সম্ভাবনাকে যদি এক্সপ্লয়েট করতে পারি, তবে বাংলার এই অংশের সাহিত্যে একটা নতুন যুগ আসতে পারে। ১৩ …
সাহিত্য কতোটা ভিক্টিম হচ্ছে সেটা চারপাশে একটু ভালো করে তাকালে দেখা মিলে। কিছু ব্যতিক্রম বাদে কয়েকজন বর্ণচোরা স্কলার, কতিপয় উপরসর্বস্ব লেখক, হাতে গোনা উত্তর-উত্তর আধুনিক কবি, মুষ্টিমেয় চটকদার গল্পকার, এক দুইজন নামকাওয়াস্তে প্রবন্ধ-লিখিয়ে আশে পাশে খুঁজলে পাওয়া যাবে। কিন্তু শক্ত শিরদাঁড়ার ছফার আকাল একালে। এদেশে।
সূত্রঃবাঙালী মুসলমান সমাজ স্বাধীন চিন্তাকেই সবচেয়ে ভয় করে। তার মনের আদিম সংস্কারগুলো কাটেনি। সে কিছুই গ্রহণ করে না মনের গভীরে। ভাসা ভাসা ভাবে, অনেক কিছু জানার ভান করে, আসলে তার জানাশোনার পরিধি খুবই সঙ্কুচিত। বাঙালী মুসলমানের মন এখনো একেবারে অপরিণত, সবচেয়ে মজার কথা এ-কথাটা ভুলে থাকার জন্যই সে প্রাণান্তকর চেষ্টা করতে কসুর করে না। যেহেতু আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান এবং প্রসারমান যান্ত্রিক কৃতকৌশল স্বাভাবিকভাবে বিকাশ লাভ করছে এবং তার একাংশ সুফলগুলোও ভোগ করছে, ফলে তার অবস্থা দাঁড়িয়েছে এঁচড়ে পাকা শিশুর মতো। অনেক কিছুরই সে সংবাদ জানে, কিন্তু কোনো কিছুকে চিন্তা দিয়ে, যুক্তি দিয়ে, মনীষা দিয়ে আপনার করতে জানে না। যখনই কোন ব্যবস্থার মধ্যে কোন রকম অসংগতি দেখা দেয়, গোঁজামিল দিয়েই সবচেয়ে বেশি আনন্দ পায় এবং গোঁজামিল দিতে পারাটাকে রীতিমতো প্রতিভাবানের কর্ম বলে মনে করে। শিশুর মতো যা কিছু হাতের কাছে, চোখের সামনে আসে, তাই নিয়ে সে সন্তুষ্ট। দূরদর্শিতা তার একেবারেই নেই, কেননা একমাত্র চিন্তাশীল মনই আগামী কাল কি ঘটবে সে বিষয়ে চিন্তা করতে জানে। বাঙালী মুসলমান বিমূর্ত চিন্তা করতেই জানে না এবং জানে না এই কথাটি ঢেকে রাখার যাবতীয় প্রয়াসকে তার কৃষ্টি কালচার বলে পরিচিত করতে কুণ্ঠিত হয় না।
বাঙালী মুসলমানের সামাজিক সৃষ্টি, সাংস্কৃতিক সৃষ্টি, দার্শনিক এবং বৈজ্ঞানিক সৃষ্টি সমূহের প্রতি চোখ বুলালেই তা প্রতিভাত হয়ে উঠবে। সাবালক মন থেকেই উন্নত স্তরের সাহিত্য, দর্শন ও বিজ্ঞানের উদ্ভব এবং বিকাশ সম্ভব।এই সকল ক্ষেত্রে তার মনের সাবালকত্বের কোনো পরিচয় রাখতে পারেনি। যে জাতি উন্নত বিজ্ঞান, দর্শন এবং সংস্কৃতির স্রষ্টা হতে পারে না, অথবা সেগুলোকে উপযুক্ত মূল্য দিয়ে গ্রহণ করতে পারেনা, তাকে দিয়ে উন্নত রাষ্ট্র সৃষ্টিও সম্ভব নয়। যে নিজের বিষয় নিজে চিন্তা করতে জানে না, নিজের ভালোমন্দ নিরূপন করতে অক্ষম, অপরের পরামর্শ এবং শোনা কথায় যার সমস্ত কাজ কারবার চলে,তাকে খোলা থেকে আগুনে কিংবা আগুন থেকে খোলা, এইভাবে পর্যায়ক্রমে লাফ দিতেই হয়। সুবিধার কথা হলো নিজের পঙ্গুত্বের জন্য সব সময়েই দায়ী করবার মতো কাউকে না কাউকে পেয়ে যায়। কিন্তু নিজের আসল দুর্বলতার উৎসটির দিকে একবারও দৃষ্টিপাত করে না।
বাঙালী মুসলমানের মন যে এখনো আদি অবস্থায়, তা বাঙালী হওয়ার জন্যও নয় এবং মুসলমান হওয়ার জন্যও নয়। সুদীর্ঘকাল একটি ঐতিহাসিক পদ্ধতির দরুণ তার মনের ওপর একটি গাঢ় মায়াজাল বিস্তৃত হয়ে রয়েছে, সজ্ঞানে, তার বাইরে সে আসতে পারে না। তাই এক পা যদি এগিয়ে আসে, তিন পা পিছিয়ে যেতে হয়। মানসিক ভীতিই এই সমাজকে চালিয়ে থাকে। দু-বছরে বা চার বছরে হয়তো এ অবস্থার অবসান ঘটানো যাবে না, কিন্তু বাঙালী মুসলমানের মনের ধরণ-ধারণ এবং প্রবণতাগুলো নির্মোহভাবে জানার চেষ্টা করলে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার একটা পথ হয়তো পাওয়াও যেতে পারে।১
আহমদ ছফার ‘বাঙালী মুসলমানের মন’ প্রবন্ধ নিয়ে আলোচনা এখানেই শেষ। যে বইগুলো ছফার মতামত (বাঙালি মুসলমানের মানসগঠন নিয়ে)গঠনে ভূমিকা রেখেছিল কয়েকটার নাম এখানে করা যায়। জয়া চ্যাটার্জীর ‘বেঙ্গল ডিভাইডেডঃ হিন্দু কম্যুনালিজম এণ্ড পার্টিশন, ১৯৩২-১৯৪৭’; রফিউদ্দীন আহমেদের ‘দা বেঙ্গল মুসলিমস্ ১৮৭১-১৯০৬: আ কুয়েস্ট ফর আইডেন্টিটি’; সুমিত সরকারের ‘দা স্বদেশী মুভমেন্ট ইন বেঙ্গল ১৯০৩-১৯০৮’ ; জনসন গর্ডনের ‘পার্টিশন, এজিটেইশন্ এণ্ড কংগ্রেসঃ বেঙ্গল ১৯০৪-১৯০৮’; ছফা এই বইগুলো থেকে তথ্য নিয়ে বাঙালি মুসলমান সমাজের বিশ্লেষণ করেছেন নির্মোহ ভাবে। কোটেশন দিয়ে কথা না বলে শুধুমাত্র কোন কোন ক্ষেত্রে বইয়ের নাম উল্লেখ করে নিজের ভাষায় নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে কোন ঘটনাকে গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছেন।
জয়া চ্যাটার্জীর ‘বেঙ্গল ডিভাইডেডঃ হিন্দু কম্যুনালিজম এণ্ড পার্টিশন, ১৯৩২-১৯৪৭’ বইয়ে পঞ্চম অধ্যায়ের নাম ‘হিন্দু ইউনিটি এণ্ড মুসলিম টিরানিঃ এসপেকটস্ অভ হিন্দু ভদ্রলোক পলিটিকস্, ১৯৩৬-৪৭’; হিন্দু রাষ্ট্রের স্বপ্ন নিয়ে সে কালের ঘটনার ধারাবিবরণী পাওয়া যায় তাঁর লেখায়। … শতাব্দীর শুরুতে হিন্দু রাজনৈতিক ঐক্যের লক্ষ্যে হরিজনদের উত্থানের দিকে নজর দেয়া হয় এবং বর্ণাশ্রম ভেঙ্গে দেয়ার ভাবনাও ওঠে। স্বামী বিবেকানন্দ সত্যযুগের মতো ‘এক গোত্র(ব্রাহ্মণ), এক বেদ’ প্রণয়নের মাধ্যমে শান্তির চিন্তাভাবনা করছিলেন। কিন্তু ১৯২৬ সালের লেখায় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এই স্বপ্ন অলীক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাঁর ‘বর্তমান হিন্দু-মুসলমান সমস্যা’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন- হিন্দুদের সমস্যা তাদের নিজের গোত্রের মধ্যে ঐক্যহীনতা; কিছু লোককে নিচু জাতের বলে দূরে সরিয়ে রাখাই ছিল হিন্দুত্বের ভাঙ্গনের জন্য দায়ী। এই রীতির সমাপ্তি ঘটাতে হবে। যদিও ভারতের অন্য স্থানের বর্ণাশ্রমের মতো বাংলার বর্ণাশ্রম এতোটা চরমপন্থী নয়।২ … জয়া চ্যাটার্জী ভালো গবেষক। অনেক তথ্য উপাত্তের সমারোহ দেখা যায় তাঁর লেখায়। ১৯৩৬ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত যেসব রাজনৈতিক প্রধান ঘটনা ঘটেছে তিনি তাঁর প্রবন্ধে সেগুলোর উল্লেখ করেছেন।
কলকাতা বইমেলা’৯৯ উপলক্ষ্যে কলকাতার স্বাধীন বাংলা সাময়িকীর পক্ষ থেকে আহমদ ছফার একটা দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাবাজার পত্রিকা সাক্ষাৎকারটি তিন কিস্তিতে পুনরায় ছাপে। পরে সেই লেখা আবার ছাপানো হয় মাসিক চিন্তার আহমদ ছফাকে নিয়ে করা সংখ্যায়। সাক্ষাৎকারটি নানান দিকে গুরুত্বপূর্ণ। আহমদ ছফার যে কয়টি সাক্ষাৎকার আমি পড়েছি তার মধ্যে এই সাক্ষাৎকারটিকে আমার সবচেয়ে ভালো মনে হয়। কবি ব্রাত্য রাইসুর উত্তর-আধুনিক-ছফা-সাক্ষাৎকারের কথা মনে পড়ে। যেখানে রাইসু সাহেব ছফাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন – ‘আচ্ছা ছফা ভাই, আপনি কি কখনো বেশ্যাগমন করছেন?’ ‘আপনি কি মাস্টারবেশান করছেন কখনো?’ ছফা সেইসব সাক্ষাৎকারেও নিজের জাত চিনিয়ে দেন। সে কথা থাক।
১৯৪৭ সালে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনে আবুল হাশিম এবং শরৎ বসুদের প্রচেষ্টা সফল না হওয়ার পেছনে তিন থেকে ছয় ভাগ বর্ণহিন্দুদের স্বার্থকে একমাত্র কারণ বলে মনে করেন না আহমদ ছফা। … প্রথমত প্রভাব প্রতিপত্তির দিক দিয়ে ১৯৩০ এর পর বাংলা ভাষা চতুর্থ ভাষা হয়ে গেল কোলকাতায়। প্রথম ভাষা ইংরেজি, দ্বিতীয় ভাষা হিন্দি, তৃতীয় ভাষা উর্দু। তারপর মহাযুদ্ধ, ওই যুদ্ধ বাঙালির অর্থনীতিকে সম্পূর্ণ ভেঙ্গে দিল এবং বাঙালির রাজনীতি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর হয়ে গেল পশ্চিমী অবাঙালিদের টাকার উপর। বাংলা ভাগের জন্য শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিদের অর্থটা দিয়ে ছিল টাটা। যে কারণে সুভাষ বোসকে কংগ্রেস ছাড়তে হল, এমনকি শেষ পর্যন্ত দেশও ছাড়তে হল। গান্ধী এবং নেহেরুকে টাকা দিত মারোয়ারি এবং গুজরাটিরা। একজন বাঙালি সভাপতিকে তারা টাকা দিতে রাজি ছিল না এবং গান্ধী-নেহেরু কখনই চান নি সুভাষ বসুর মত একজন বাঙালি কংগ্রেস দলের সভাপতি হোন বা থাকুন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ না হলে এবং বাঙালির অর্থনীতিটা ভেঙ্গে না গেলে হয়তো বাঙালির এই পরিণাম হতো না।৩ …
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর করেছেন আহমদ ছফা এই আলাপে। এই কিস্তিতে কথা এগোবে এই বাৎচিত নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধে বামপন্থীদের ভূমিকা, শেখ মুজিব, আনন্দবাজার পত্রিকা- এই তিনটা বিষয়ে ছফার কথাবার্তা নিয়ে আলোচনা হবে পরের কিস্তিতে। আর আহমদ ছফার ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক জটিলতা’ ছফাগিরির পরের পর্বের প্রধান আলোচ্য প্রবন্ধ।
পাকিস্তান হয়েছে বলেই পূর্ব বাংলার মানুষ বাংলাদেশ পেয়েছে- এই যুক্তিকে ছফা পুরোপুরি সমর্থন করেন না। … পশ্চিম বাংলার অর্থনীতিবিদ এবং চিন্তাশীল লেখক ড. অশোক মিত্র বলেছেন, ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ রদ না হলে, অর্থাৎ তখন যদি বঙ্গ বিভাগ হত তবে বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্তের বিকাশ ঘটতো এবং বিকশিত বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্ত বাঙালি হিন্দুদের সাথে একটা সমঝোতা করে নিত।ফলে ১৯৪৭ এর দেশভাগের কোনও প্রয়োজন ঘটত না। বাংলা ভাগ না হলে ভারত ভাগও হত না। কারণ বাংলার বাইরে পাকিস্তানের অস্তিত্ব কোথাও ছিল না। মুসলিম লীগ এখানেই হয়েছে এবং এখানেই ছিল পাকিস্তানের পক্ষে মুসলিম লীগের জনভিত্তি। এছাড়া চিত্তরঞ্জন দাশের ‘বেঙ্গল প্যাক্ট’ যদি কার্যকর হত, তাহলেও বাংলা ভাগ হত না। তারপর ধরুন ক্যাবিনেট মিশন প্ল্যান, যাতে আসামকে একটা জোন করা হবে বলা হয়েছিল। এটা মেনে নেয়া হলেও বাংলা ভাগ হত না। অর্থাৎ কিছু ঐতিহাসিক অনিবার্যতা দীর্ঘকাল ধরে যা হয়ে আসছিল তার চূড়ান্ত অভিঘাতে বাংলা ভাগ হয়েছে।৪… বাংলা ভাগ নিয়ে ছফার যুক্তিগুলো আরও পর্যালোচনা করার দরকার আছে। পাকিস্তান ভাঙ্গার পেছনের ঐতিহাসিক অনিবার্যতা প্রসঙ্গে বাঙালি মুসলমানদের জাতীয়তাবোধ প্রধানত কাজ করেছে বলে ছফার ধারণা। …বাঙালি মুসলমানদের জাতীয়তাবোধ। কিন্তু শুন্য থেকে তো জাতীয়তাবোধ জন্মায় না। এখানে (পূর্ব বাংলা) যে মধ্যবিত্ত শ্রেণী গড়ে উঠল তারাই প্রথম অনুভব করল রাজনীতি,অর্থনীতি, ভাষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানি আধিপত্য প্রতিরোধ করতে না পারলে, বাঙালি হিসেবে তাদের বিকাশ সম্ভব নয়। মওলানা ভাসানী, সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিব এঁরা ছিলেন পাকিস্তান আন্দোলনের নেতা। পরে পাকিস্তানকে ও ভাঙ্গতে হয়েছিল, কারণ ভাগে মিলছিল না। এটা একটা হিসাব, আর একটা হিসাব আছে। অর্থাৎ একটা জাতি কোন উপলক্ষে জেগে উঠে, কত গভীরে তার প্রভাব পড়ে, অতি তুচ্ছ কারণেও কোন ঘটনা ঘটতে পারে- কিন্তু তার প্রভাব অনেক দীর্ঘস্থায়ী হয়। সেই দিক থেকে বাঙালি জাতির ইতিহাসে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে প্রভাবসঞ্চারী বড় কোন ঘটনা নেই।৫ …
ভৌগোলিক মানচিত্রে অষ্টম আশ্চর্য হিসেবে বিবেচিত তৎকালীন পাকিস্তানের শাসকরা পূর্ব বাংলার লোকজনকে ইসলাম এবং মুসলমান এই দুই মিষ্টি বুলি দিয়ে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা চালাতো। পাকিস্তানি সংহতির আসল চেহারা বাংলার লোক বুঝে ফেলায় সংগ্রাম অনিবার্য হয়ে দাঁড়ালো। আর মুসলিম লীগকে সেই কালের নেতাদের সমর্থনের ব্যাপারটাও ছফা পরিষ্কার করেছেন।… বৈষম্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকল, চাকরিতে বৈষম্য, সামরিক বাহিনীতে বৈষম্য, অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৈষম্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে পূর্ব বাংলার বৈষম্য ছিল। এই বৈষম্যগুলোকেই রাজনৈতিক বিষয় হিসেবে পূর্ব বাংলার মানুষের সামনে তুলে ধরা হলো এবং তাতে মানুষ ব্যাপকভাবে সাড়া দিলেন এবং শেষ পর্যায়ে অস্ত্র তুলে ধরলেন পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন করার জন্য। তবে পূর্ব বাংলার প্রতি নানা বৈষম্যের প্রতিবাদে যারা পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংগ্রাম-আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন একসময় এঁরা ছিলেন পাকিস্তান আন্দোলনের নেতা।৬ …মুসলিম লীগের রাজনীতিতে শেখ মুজিব ছিলেন সোহরাওয়ার্দীর শিষ্য এবং গুরু শিষ্য দুজনেই ছিলেন পাকিস্তান আন্দোলনের নেতা। বাংলাদেশ যারা স্বাধীন করেছেন এক সময় তাদের বেশির ভাগই ছিলেন মুসলিম লীগে।৭ …
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবসঞ্চারী ঘটনা হিসেবে দেখেন আহমদ ছফা। একাত্তর সালে লেখক শিবির কিভাবে গড়ে উঠেছিল বর্ণনা করেছেন ‘একাত্তরঃ মহাসিন্ধুর কল্লোল’ প্রবন্ধে। আহমদ ছফার অনুভূতি জানা যায় তাঁর লেখায়। … ইতিহাসে কোন কোন সময় আসে যখন এক একটা মিনিটের ব্যাপ্তি, গভীরতা এবং ঘনত্ব হাজার বছরকে ছাড়িয়ে যায়। আমাদের জীবনে একাত্তর সাল সে রকম। একাত্তর সাল যারা দেখেছে, ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে যারা বড় হয়েছে, একাত্তর সালের মর্মবাণী মোহন সুন্দর বজ্রনিনাদে যাদের বুকে বেজেছে, তারা ছাড়া অন্য কেউ একাত্তরের তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।৮… একাত্তর সালে যা কিছু ঘটেছে, আমি যা কিছু দেখেছি- যে সকল ঘটনা এবং কর্মকাণ্ডে আমি এবং আমার বন্ধুরা অংশ নিয়েছি; আমার জাতির যে জাগরণ, যে প্রতিরোধ, যে বোকামি এবং উন্মাদনা আমি দেখেছি- সবকিছুকে একটা বিরাট সত্তার অবিভাজ্য অংশ মনে হয়। চোখ বুঁজে একাত্তরের কথা চিন্তা করলে আমার কানে মহাসিন্ধুর কল্লোল ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হতে থাকে।৯… মুক্তিযুদ্ধের পর অনেক স্বপ্নের দেশ আমরা পেলাম। স্বপ্নের বাস্তবায়ন সেখানে কতটুকু হয়েছে? দেশকে আমরা স্বাধীন করেছি। কিন্তু ধনী বা ক্ষমতাশালীদের শোষণ কি আদৌ শেষ হয়েছে? একাত্তরের ঘাতক দালালদের আমরা সংসদে বসিয়েছি, মন্ত্রী পর্যন্ত বানিয়েছি। আমাদের স্খলন অনেক জায়গায় মাত্রা ছাড়িয়ে এমন জায়গায় পৌঁছেছে, ভাবতে গেলে কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পাই না। ছফা তাঁর মতো ব্যাখ্যা করেছেন। … প্রথম স্বপ্ন তো সত্যি হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। স্বাধীনতার আগে পর্যন্ত বাংলার রাজনীতিকে যারা পরিচালনা করতেন তারা ছিলেন উচ্চবর্গীয় অভিজাত। এখন সন অফ দি সয়েলেরা রাজনীতিতে আসছেন। অন্যদিকে আশংকার দিক হলো এখানে একটা রাতারাতি একটা ইকোনোমিক ক্লাস গ্রো করছে। এই ইকোনোমিক ক্লাসটি গড়ে উঠেছে ইকোনোমিক প্লানডার এবং লুণ্ঠন থেকে। লুণ্ঠনটা হয়েছে ব্যাপক হারে। এমন কয়েকজনকে আমি জানি, মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের পঁচিশ’শ টাকা ছিল না, এখন তাঁদের ক্যাপিটাল পঁচিশ’শ কোটি টাকা। রাজনৈতিক ক্ষমতাকে প্রয়োগ করে তারা এই টাকা আয় করেছে।১০ … বাংলাদেশের ক্ষমতার রাজনীতিটা একটা দুষ্টচক্রের মিউজিকাল চেয়ারে পরিণত হয়েছে।১১ … ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা ঘটনা। ভাষাভিত্তিক একটা রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হলেও আন্দোলনের প্রথম দিকে স্বাধীন রাষ্ট্রের চিন্তা কারো মাথায় ছিল না। বাংলাকে এখানকার রাষ্ট্রভাষা করার দাবী উঠেছিল প্রথমে। পরে অন্য ইস্যুগুলো সবার কাছে স্পষ্ট হলো। … যারা ভাষা আন্দোলন করেছিলেন, তারা ছিলেন মধ্যবিত্ত ছাত্র, বেশীর ভাগ মুসলমান। আওয়ামী মুসলিম লীগের সকল নেতৃবৃন্দ এককালে ছিল পাকিস্তানি। আমার শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক সেদিন কথা প্রসঙ্গে আমাকে বললেন, তাঁর কাছে শেখ মুজিবের কিছু ছবি আছে, সেই সব ছবিতে জিন্নাহ মারা যাবার পর শেখ মুজিব হাউমাউ করে কাঁদছেন। হিন্দ-মুসলমানের ভিত্তিতে দেশটা ভাগ হলো। তারপর পশ্চিমাদের সাথে লড়াই করতে গিয়ে তারা (বাঙালি মুসলমান)পারে না। এল সোহরাওয়ার্দীর যুক্ত নির্বাচন। এভাবেই একটা প্রেক্ষিত তৈরি হল এবং বাঙালি মুসলমান বাঙালি হিন্দুদের টেনে আনলেন। এ ক্ষেত্রে প্রেমের চাইতে যে জিনিসটা বেশি কাজ করেছে, তা হল তাদের বাস্তব প্রয়োজন। অর্থাৎ যে অর্থে অসাম্প্রদায়িক ইত্যাদি বলতে আমরা যা চিন্তা করি, একটা আইডিয়াল সিচুয়্যেশন, সেটা বোধ হয় এ ক্ষেত্রে কল্পনা করা ঠিক হবে না।১২ …
এপার বাংলা ওপার বাংলার সাহিত্য নিয়ে ছফা অনেক জায়গায় আলোচনা করেছেন, প্রবন্ধ লিখেছেন। একুশের বইমেলায় আনন্দবাজারের বই বিক্রি বন্ধের জন্য ছফা আন্দোলনে পর্যন্ত নেমেছিলেন। বাংলাদেশের লেখকদের ঠিকমতো বিকশিত করার পেছনে ছফার অনেক অবদান আছে। আনন্দবাজার পত্রিকা বাংলাদেশকে একটা মৌলবাদী রাষ্ট্রের তকমা সেঁটে গেছে দীর্ঘদিন ধরে। ছফা সেসবের প্রতিবাদ করে গেছেন। বাংলাদেশের লোকজনের কাছে পশ্চিম বাংলার লেখকরা ঠিক যতোটা পরিচিত আমাদের লেখকরা তাঁদের কাছে ঠিক ততোটাই অপরিচিত। পশ্চিম বাংলার তথাকথিত বোদ্ধারা আহমদ ছফার মতো দ্রোহী লেখককে তাঁদের পাঠকের সাথে পরিচয় করান না, পরিচিত করান হুমায়ূন আহমেদ বা তসলিমা নাসরিনকে। এর পেছনে তাঁদের হেজিমোনি কাজ করে। … বাংলাদেশের সাহিত্য এখানকার পরিবেশ, প্রতিবেশ, এখানকার জীবন, সংগ্রাম, রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা এসব নিয়ে লেখা হবে। পশ্চিম বাংলার সাহিত্য সেখানকার মতো বিকশিত হবে। তবে বাংলা ভাষার প্রশ্নটা স্বতন্ত্র। বাংলা এখানে রাষ্ট্রভাষা, জাতীয় ভাষা। সেই কারণে বাংলা ভাষা এখানে যে পেট্রোনাইজেশন পাচ্ছে, পশ্চিম বাংলায় বাংলা ভাষা পাচ্ছে না। বাংলা ভাষা ওখানে একটা প্রাদেশিক ভাষা, এবং হিন্দির কারণে চূড়ান্তভাবে কোণঠাসা। পশ্চিম বাংলার বাংলা ভাষার জন্য যে পেট্রোনাইজেশন দরকার আর্থিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক কোন ক্ষেত্রেই বাংলা ভাষা সেখানে তা পাচ্ছে না কারণ জাতিগতভাবে বাঙালি সেখানে স্বাধীন নয়। বাংলাদেশের সাহিত্যের ক্ষেত্রে যারা খুব পরিচিত, একটা সময় পর্যন্ত তার এখানকার সাহিত্যকে সার্ভ করেছেন, সাহিত্যক্ষেত্রে একটা সময় যারা জ্বলে উঠেছিলেন তাদের অনেকেই এখন বর্জ্য পদার্থের কাছাকাছি এসে গেছেন। নতুন প্রজন্মের মধ্যে পলিটিক্যাল ডেসটিনি না থাকলে, পলিটিক্যাল গোল ক্লিয়ার না থাকলে, শিল্প সাহিত্য তার প্রধান ভিক্টিম হয়। এখন বাংলাদেশের চিত্র কোনদিকে যাবে তার দিশা নেই। হাজার হাজার পাতা পত্রপত্রিকা ছাপা হচ্ছে। কিন্তু স্পর্শ করার মতো পঞ্চাশটি পাতা সেখানে পাবেন না। তবে বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনা আছে, সেই সম্ভাবনাকে যদি এক্সপ্লয়েট করতে পারি, তবে বাংলার এই অংশের সাহিত্যে একটা নতুন যুগ আসতে পারে। ১৩ …
সাহিত্য কতোটা ভিক্টিম হচ্ছে সেটা চারপাশে একটু ভালো করে তাকালে দেখা মিলে। কিছু ব্যতিক্রম বাদে কয়েকজন বর্ণচোরা স্কলার, কতিপয় উপরসর্বস্ব লেখক, হাতে গোনা উত্তর-উত্তর আধুনিক কবি, মুষ্টিমেয় চটকদার গল্পকার, এক দুইজন নামকাওয়াস্তে প্রবন্ধ-লিখিয়ে আশে পাশে খুঁজলে পাওয়া যাবে। কিন্তু শক্ত শিরদাঁড়ার ছফার আকাল একালে। এদেশে।
১। আহমদ ছফার প্রবন্ধ – (ষ্টুডেণ্ট ওয়েজ , জানুয়ারী ২০০০) [পৃষ্ঠা ৬৭-৬৮]
২। Bengal divided: Hindu communalism and partition, 1932-1947 - Joya Chatterji (Cambridge University Press, 1994) [Page 191-192]
৩। মাসিক চিন্তা (সংখ্যা ৬-৮, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০০১) [পৃষ্ঠা ২৮]
৪। [পৃষ্ঠা ২৮] ৫।[পৃষ্ঠা ২৮] ৬। [পৃষ্ঠা ২৮] ৭। [পৃষ্ঠা ২৮]
৮। আহমদ ছফা মহাফেজখানা , প্রথম খণ্ড , বেহাত বিপ্লব ১৯৭১ – সলিমুল্লাহ খান সম্পাদিত (অন্বেষা প্রকাশন, ফেব্রুয়ারি ২০০৭) [পৃষ্ঠা ২৫]
৯। [পৃষ্ঠা ২৫]
১০। মাসিক চিন্তা (সংখ্যা ৬-৮, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০০১) [পৃষ্ঠা ২৯-৩০]
১১। [পৃষ্ঠা ৩০] ১২। [পৃষ্ঠা ৩১] ১৩। [পৃষ্ঠা ৩২]
লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: মঙ্গল, ২০০৯-১২-১৫ ০৮:৪০)
উদ্ধৃতি | শুভাশীষ দাশ এর ব্লগ | ৭১টি মন্তব্য | ৯৯০বার পঠিত
শেয়ার4
উদ্ধৃতি | শুভাশীষ দাশ এর ব্লগ | ৭১টি মন্তব্য | ৯৯০বার পঠিত
শেয়ার4
প্রকাশিত লেখা ও মন্তব্যের দায় একান্তই সংশ্লিষ্ট লেখক বা মন্তব্যকারীর, সচলায়তন কর্তৃপক্ষ এজন্য কোনভাবেই দায়ী নন।
লেখকের এবং মন্তব্যকারীর লেখায় অথবা প্রোফাইলে পরিষ্কারভাবে লাইসেন্স প্রসঙ্গে কোন উল্লেখ না থাকলে স্ব-স্ব লেখার এবং মন্তব্যের সর্বস্বত্ব সম্পূর্ণভাবে সংশ্লিষ্ট লেখকের বা মন্তব্যকারী কর্তৃক সংরক্ষিত থাকবে। লেখকের বা মন্তব্যকারীর অনুমতি ব্যতিরেকে লেখার বা মন্তব্যের আংশিক বা পূর্ণ অংশ কোন ধরনের মিডিয়ায় পুনঃপ্রকাশ করা যাবে না।
২
পাঁচ তারা দাগাইলাম।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
৩
যে সচল এক দান করেছেন তাঁকে পেন্নাম।
৪
আমি অনেক সময় নিয়ে লেখাটা পড়লাম। আসলে এই লেখাটা দেখেই ব্যস্ততার মধ্যেও লগানো হলো। চমৎকার লিখেছেন শুভাশীষদা। অনেক কিছু জানলাম, প্রতিটি পর্বেই নতুন কিছু জানছি।
আর যেই মহাত্মা সচল চুপকে চুপকে এক তারা দিয়ে বাউল সাজলেন তাহার সমীপে করজোরে অনুরোঢ, দয়া করে যুক্তি তর্ক দিয়ে লেখাটির বিশ্লেষণ করুন, ভুল ধরিয়ে দিন, আমরা প্রানবন্ত একটা আলোচনা উপভোগ করি। তা না করে লুঙ্গি মাথায় উঠিয়ে হেঁটে গেলেন একেলা একেলা , কোন দরকার ছিল?
আর যেই মহাত্মা সচল চুপকে চুপকে এক তারা দিয়ে বাউল সাজলেন তাহার সমীপে করজোরে অনুরোঢ, দয়া করে যুক্তি তর্ক দিয়ে লেখাটির বিশ্লেষণ করুন, ভুল ধরিয়ে দিন, আমরা প্রানবন্ত একটা আলোচনা উপভোগ করি। তা না করে লুঙ্গি মাথায় উঠিয়ে হেঁটে গেলেন একেলা একেলা , কোন দরকার ছিল?
৫
কাপুরুষের মতো গোপনে গোপনে এক তারা দিয়ে যাওয়াটা দুঃখজনক। আশা করি যে সচল এক তারা দিয়েছেন, তিনি একটু কী জিনিষটি ভালো লাগেনি তা ব্যাখ্যা দিয়ে যাবেন। এর আগেও পোস্ট দেয়া মাত্র ১ তারা রেটিং দেয়ার ঘটনা ঘটেছে (সিরাতের পোস্টে)। যথাযত তর্কে না গিয়ে এমন কাজ করাটা ভুলিয়ে দেয় এটা সচলায়তন ...
----------------
গণক মিস্তিরি
মায়ানগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | কুহুকুহু
----------------
গণক মিস্তিরি
মায়ানগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | কুহুকুহু
৬
ব্যাপারটা খুবই দু:খজনক। যিনি একতারা দাগিয়েছেন আশা করছি তিনি তার কারণটার ব্যাখ্যা করবেন।
সেই সাথে নিজের ব্যর্থতার দায়টা স্বীকার করে নিচ্ছি। সময়াভাবে আপনার ছফাগিরি-র প্রথম কিস্তির পরের কোনোটাই পড়া হয়নি। আশা করছি ব্যস্ততা খুব শীঘ্রই কাটিয়ে উঠে আবার নিয়মিত হবো।
সেই সাথে নিজের ব্যর্থতার দায়টা স্বীকার করে নিচ্ছি। সময়াভাবে আপনার ছফাগিরি-র প্রথম কিস্তির পরের কোনোটাই পড়া হয়নি। আশা করছি ব্যস্ততা খুব শীঘ্রই কাটিয়ে উঠে আবার নিয়মিত হবো।
৭
আমিও পাঁচ তারা দাগাইলাম, অনেক খেটেখুটে চমৎকার একটা সিরিজ আমাদের উপহার দেয়ার জন্য। দয়া করে থামাবেন না, পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি।
৮
ব্যাপারটা সত্যিই খুব দুঃখজনক। আমি কখনোই তারা নিয়া মাথা ঘামাই না। কারণ আমি যা লিখি সেটা তারার যোগ্য না।
কিন্তু এরকম একটা লেখায় একতারা দেখলে খারাপ লাগে। লেখাটা কারো পছন্দ নাই হতে পারে। এটা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করতে পারে। কিন্তু চোরের মতো একতারা দিয়ে যাওয়াটাকে ভালো লাগলো না। তারাধারীর অধিকার আছে যেমন দেওয়ার, আমার অধিকারটুকু প্রকাশ করলাম এর প্রতি ধিক্কার জানিয়ে।
শুভাশীষদাকে অনুরোধ করবো লেখাটি চালিয়ে যেতে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
কিন্তু এরকম একটা লেখায় একতারা দেখলে খারাপ লাগে। লেখাটা কারো পছন্দ নাই হতে পারে। এটা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করতে পারে। কিন্তু চোরের মতো একতারা দিয়ে যাওয়াটাকে ভালো লাগলো না। তারাধারীর অধিকার আছে যেমন দেওয়ার, আমার অধিকারটুকু প্রকাশ করলাম এর প্রতি ধিক্কার জানিয়ে।
শুভাশীষদাকে অনুরোধ করবো লেখাটি চালিয়ে যেতে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
৯
কালকে ছফাগিরি আপ হবার পরে প্রথমেই এক তারা দেখে বেশ মেজাজ গরম হয়ে গেছিল। এতোগুলো বই নিয়ে একটা পর্যালোচনা হয়েছে। তর্কের দিকে না গিয়ে দুম করে এক মেরে পালিয়ে গেল। পরে ভেবে দেখলাম। ঠিকাছে। তারায় কি আসে যায়।
লেখা চালু থাকবে।
মামুন ভাই/ নজরুল ভাই/ মানিক ভাই/ শাওনদা,
আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
রাগিব,
তোকেও থ্যাংকস।
লেখা চালু থাকবে।
মামুন ভাই/ নজরুল ভাই/ মানিক ভাই/ শাওনদা,
আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
রাগিব,
তোকেও থ্যাংকস।
১০
আমারই বুঝার অক্ষমতা নিশ্চয়। ছফা আমার কাছে স্পষ্ট হননা ঠিক এ জায়গায়- তিনি কি বাঙ্গালী মুসলমান কিংবা পূর্ব বাংলার মুসলমানকে আলাদা জাতিস্বত্বা বলতে চেয়েছেন? অথবা পূর্ব বাংলার মানুষদেরকে মুসলমান এবং অমুসলমান এই দুই পরিচয়ে আলাদা করে মুসলমানদের মন নিয়ে বিচার বিশ্লেষন করেছেন?
আলাদা জাতিস্বত্বা ভাবলে তো আর কোন কথাই নেই এমনকি মুসলমানিত্ব( কিংবা হিন্দুত্ব) কে জনগোষ্ঠীর পরিচয়ের একটি উপাদান হিসেবে বললে ও দ্বি-জাতি তত্ব থেকে এই ভাবনার দূরত্ব ঠিক কতোদূরে থাকে আমি বুঝতে পারিনা।
কেউ বুঝাতে পারলে কৃতার্থ হবো।
শুভাশীষ,
আপনার এই ধারাবাহিকটি অনেক ঋদ্ধ হচ্ছে। অভিনন্দন। তারা টারা নিয়ে না ভাবার অনুরোধ রইলো।
এক তারা দেয়া ও পাঠকের অধিকার। কেনো দেয়া হলো সেটা ব্যাখ্যা করলে লেখকের জন্য স্বস্তিকর হয়।
অধিকারের সাথে দায়িত্বটুকু যদি কেউ বোধ না করেন সেটা আপনার দায় নয় মোটে ও।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আলাদা জাতিস্বত্বা ভাবলে তো আর কোন কথাই নেই এমনকি মুসলমানিত্ব( কিংবা হিন্দুত্ব) কে জনগোষ্ঠীর পরিচয়ের একটি উপাদান হিসেবে বললে ও দ্বি-জাতি তত্ব থেকে এই ভাবনার দূরত্ব ঠিক কতোদূরে থাকে আমি বুঝতে পারিনা।
কেউ বুঝাতে পারলে কৃতার্থ হবো।
শুভাশীষ,
আপনার এই ধারাবাহিকটি অনেক ঋদ্ধ হচ্ছে। অভিনন্দন। তারা টারা নিয়ে না ভাবার অনুরোধ রইলো।
এক তারা দেয়া ও পাঠকের অধিকার। কেনো দেয়া হলো সেটা ব্যাখ্যা করলে লেখকের জন্য স্বস্তিকর হয়।
অধিকারের সাথে দায়িত্বটুকু যদি কেউ বোধ না করেন সেটা আপনার দায় নয় মোটে ও।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
১১
শুভাশীষকে করা তোমার প্রশ্নটায় অযাচিতভাবে আমার কিছু বিশ্লেষণ যোগ করি মোরশেদ। দেখো উত্তরটা পাওয়া যায় কি না
০১. আর্য (ইরানি) কাঠামোর ভারতে চতুবর্ণপ্রথার কারণে দেশীয়/আদিবাসী মানুষের নিম্নবর্গে স্থান আর একটু ভালোর আশায় বারবার ধর্ম পরিবর্তন
আর্যেদের বিধানমতে প্রথমতো সবাই হিন্দু/বৈদিক/সনাতন
সেখান থেকে বৌদ্ধ
তারপর হিন্দু বৌদ্ধ থেকে মুসলিম/ নেস্টোরিয়ান খ্রিস্টান
তারপর আবার হিন্দু বৌদ্ধ মুসলিম খ্রিস্টান থেকে দ্বিতীয়দফা পারস্য (ইরান/আর্য) প্রভাবে ফকির/সুফি
এবং সবকিছুর জগাখিচুড়িতে আধা পৌত্তলিক আধা একেশ্বরবাদী আধাভাববাদী এক বিশ্বাসের উত্তরসূরী
০২. দাপ্তরিকভাষা সংস্কৃত থেকে ফার্সি ইংরেজি হিন্দি উর্দু এবং পরে বাংলা... এবং পরবর্তীতে বেশিরভাগ বিদেশী শব্দের স্টক ভোক্যাব দিয়ে তৈরি একটি স্বকীয় ভাষাসংগঠন
০৩. বঙ্গভঙ্গ দেশ বিভাগ এবং মুক্তিযুদ্ধ.... তিনটার ওলটপালট শেষে এক জায়গায় থিতু হওয়া
উপরের তিনটা ফ্যাক্টর ধারণ করে যে জনগোষ্ঠী বর্তমান ৫৫ বর্গমাইলের বাংলাদেশে বসবাস করছে তাদের বেশিরভাগের প্রচলিত ধর্ম মুসলমান
এবং জাতে বাঙালি
ছফা বাঙালি মুসলমান/পূর্ববাংলার মুসলমান বলতে এদেরকেই বোঝান
কী কারণে এই ৫৫হাজার বর্গমাইলে মুসলমানের সংখ্যা বেশি হলো আর কী করলে হিন্দু কিংবা অন্য ধর্মের সংখ্যা ক্রমাগত কমা বন্ধ করা যেত কিংবা যাবে; ছফা সেদিকে নির্দেশ করেন না তার 'বাঙলি মুসলমান' কথাটিকে
কারণ সেটা অন্যপাঠ্য
ছফার পাঠ্য ছিল ঘটনা/দুর্ঘটনায় জড়ো হওয়া এই অঞ্চলের মানুষ যাদেরকে তিনি বলতেন বাঙালি মুসলমান
কারণ সমর্থন করি কিংবা না করি এদেরকে শুধু বাঙালি বললে পরিচয় পরিষ্কার হয় না
শুধু মুসলমান বললেও হয় না
আর স্বাধীনতার পর থেকে অন্য ধর্মের/জাতিসত্তার প্রতি রাষ্ট্রের আচরণের কারণে আজকে বাইরে বাংলাদেশের পরিচয় একটা মুসলিম দেশ
যার শুরু হয়েছিল- চাকমা মারমা বুঝি না তোরা সবাই বাঙালি হয়ে যা' শেখ মুজিবের সেই বক্তব্য দিয়ে...
আর তারপর তো শুরুতে বিসমিল্লা আর শেষে আলহামদুলিল্লা করার ব্যবস্থা প্রতিক্ষণেই হয়েছে
আমরা অনেকেই সচেতনভাবে বাংলাদেশকে মুসলমানদের দেশ বলি না কারণ বলতে চাই না/ বলতে ঘৃণা করি/ বলা উচিত না মনে করি/ কিংবা ব্যালেন্স করতে চাই/ কিংবা নিজেদের প্রতিশিলত্ব খণ্ডিত হবার ভয় করি এবং এবং এবং বিভিন্ন কারণ
কিন্তু বাস্তব হিসাবটা ছফা ক্যালকুলেটারের মতোই
পার্থক্য শুধু এই ছফা বাস্তবকে আড়াল করতেন না
আমরা এড়িয়ে যেতে চাই বিভিন্ন কারণে
০২
ছফার মুসলমানের মন
লেখাটা যদি আমার মতো কম সাহসী কেউ লিখতো তাহলে হয়তো এর নাম হতো- বাংলাদেশের বাঙালিদের মনস্তত্ত্ব
কিন্তু ভেতরের মাল মসলা থাকতো একই
পার্থক্য এটুকুই
০৩
তিনি বিভিন্ন কারণে আলাদা হয়ে পূর্ব বাংলায় জড়ো হওয়া মুসলমানদের বিশ্লেষণ করেছেন
০১. আর্য (ইরানি) কাঠামোর ভারতে চতুবর্ণপ্রথার কারণে দেশীয়/আদিবাসী মানুষের নিম্নবর্গে স্থান আর একটু ভালোর আশায় বারবার ধর্ম পরিবর্তন
আর্যেদের বিধানমতে প্রথমতো সবাই হিন্দু/বৈদিক/সনাতন
সেখান থেকে বৌদ্ধ
তারপর হিন্দু বৌদ্ধ থেকে মুসলিম/ নেস্টোরিয়ান খ্রিস্টান
তারপর আবার হিন্দু বৌদ্ধ মুসলিম খ্রিস্টান থেকে দ্বিতীয়দফা পারস্য (ইরান/আর্য) প্রভাবে ফকির/সুফি
এবং সবকিছুর জগাখিচুড়িতে আধা পৌত্তলিক আধা একেশ্বরবাদী আধাভাববাদী এক বিশ্বাসের উত্তরসূরী
০২. দাপ্তরিকভাষা সংস্কৃত থেকে ফার্সি ইংরেজি হিন্দি উর্দু এবং পরে বাংলা... এবং পরবর্তীতে বেশিরভাগ বিদেশী শব্দের স্টক ভোক্যাব দিয়ে তৈরি একটি স্বকীয় ভাষাসংগঠন
০৩. বঙ্গভঙ্গ দেশ বিভাগ এবং মুক্তিযুদ্ধ.... তিনটার ওলটপালট শেষে এক জায়গায় থিতু হওয়া
উপরের তিনটা ফ্যাক্টর ধারণ করে যে জনগোষ্ঠী বর্তমান ৫৫ বর্গমাইলের বাংলাদেশে বসবাস করছে তাদের বেশিরভাগের প্রচলিত ধর্ম মুসলমান
এবং জাতে বাঙালি
ছফা বাঙালি মুসলমান/পূর্ববাংলার মুসলমান বলতে এদেরকেই বোঝান
কী কারণে এই ৫৫হাজার বর্গমাইলে মুসলমানের সংখ্যা বেশি হলো আর কী করলে হিন্দু কিংবা অন্য ধর্মের সংখ্যা ক্রমাগত কমা বন্ধ করা যেত কিংবা যাবে; ছফা সেদিকে নির্দেশ করেন না তার 'বাঙলি মুসলমান' কথাটিকে
কারণ সেটা অন্যপাঠ্য
ছফার পাঠ্য ছিল ঘটনা/দুর্ঘটনায় জড়ো হওয়া এই অঞ্চলের মানুষ যাদেরকে তিনি বলতেন বাঙালি মুসলমান
কারণ সমর্থন করি কিংবা না করি এদেরকে শুধু বাঙালি বললে পরিচয় পরিষ্কার হয় না
শুধু মুসলমান বললেও হয় না
আর স্বাধীনতার পর থেকে অন্য ধর্মের/জাতিসত্তার প্রতি রাষ্ট্রের আচরণের কারণে আজকে বাইরে বাংলাদেশের পরিচয় একটা মুসলিম দেশ
যার শুরু হয়েছিল- চাকমা মারমা বুঝি না তোরা সবাই বাঙালি হয়ে যা' শেখ মুজিবের সেই বক্তব্য দিয়ে...
আর তারপর তো শুরুতে বিসমিল্লা আর শেষে আলহামদুলিল্লা করার ব্যবস্থা প্রতিক্ষণেই হয়েছে
আমরা অনেকেই সচেতনভাবে বাংলাদেশকে মুসলমানদের দেশ বলি না কারণ বলতে চাই না/ বলতে ঘৃণা করি/ বলা উচিত না মনে করি/ কিংবা ব্যালেন্স করতে চাই/ কিংবা নিজেদের প্রতিশিলত্ব খণ্ডিত হবার ভয় করি এবং এবং এবং বিভিন্ন কারণ
কিন্তু বাস্তব হিসাবটা ছফা ক্যালকুলেটারের মতোই
পার্থক্য শুধু এই ছফা বাস্তবকে আড়াল করতেন না
আমরা এড়িয়ে যেতে চাই বিভিন্ন কারণে
০২
ছফার মুসলমানের মন
লেখাটা যদি আমার মতো কম সাহসী কেউ লিখতো তাহলে হয়তো এর নাম হতো- বাংলাদেশের বাঙালিদের মনস্তত্ত্ব
কিন্তু ভেতরের মাল মসলা থাকতো একই
পার্থক্য এটুকুই
০৩
উদ্ধৃতি
না
তিনি কি বাঙ্গালী মুসলমান কিংবা পূর্ব বাংলার মুসলমানকে আলাদা জাতিস্বত্বা বলতে চেয়েছেন?
তিনি বিভিন্ন কারণে আলাদা হয়ে পূর্ব বাংলায় জড়ো হওয়া মুসলমানদের বিশ্লেষণ করেছেন
উদ্ধৃতি
আমার জানা মতে ছফা ওদিকে যাননি। অমুসলমানদের আলাপ তিনি করেননি এখানে। আবার তার পুথিকারদের প্রসঙ্গে যাদের বিশ্লেষণ করেছন তারা অনেকেই ভৌগলিকভাবে পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসী। কিন্তু তাদেরও একই রুট অথবা পূর্ব বাংলার মানুষদেরকে মুসলমান এবং অমুসলমান এই দুই পরিচয়ে আলাদা করে মুসলমানদের মন নিয়ে বিচার বিশ্লেষন করেছেন?
উদ্ধৃতি
ছফার আলোচনা ছিল এই দ্বিজাতিতত্ত্বের ফলাফল থেকে তৈরি হওয়া প্রধান জনগোষ্ঠী
আলাদা জাতিস্বত্বা ভাবলে তো আর কোন কথাই নেই এমনকি মুসলমানিত্ব( কিংবা হিন্দুত্ব) কে জনগোষ্ঠীর পরিচয়ের একটি উপাদান হিসেবে বললে ও দ্বি-জাতি তত্ব থেকে এই ভাবনার দূরত্ব ঠিক কতোদূরে থাকে আমি বুঝতে পারিনা।
১২
লীলেন ভাই, শুভাশীষের চমৎকার ছফাগিরিতে আপনার এই মন্তব্য একটা অনন্য সংযোজন।
তবে এই জাতি ব্যাপার টা নিয়ে আমি কিছুটা দ্বিধার মধ্যে আছি। জাতির সংজ্ঞা যে আসলে কি, সেটা ঠিক ভেবে কূল পাইনা। রাজনীতি বিজ্ঞান কিম্বা সমাজতত্ত্বে প্রাতিষ্ঠানিক কোন জ্ঞান নেই, সেটা একটা কারণ হতে পারে।
কিন্ত আপাত জ্ঞানে যা বুঝি, জাতি ব্যাপারটার কোনো চিরন্তন অস্তিত্ব নেই। কালের চক্রে বিশেষ স্থানে বিশেষ ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাতে একটা জাতিত্বের সমাজানুভুতি তৈরী হয় মাত্র। সেটা কাল-পরিক্রমায় বৈবাহিক, অর্থনৈতিক, ভৌগলিক, রাজনৈতিক শৃঙ্খলে বাঁধা পড়ে ভাষা, সংস্কৃতি, আচার-অভ্যাস, এমনকি নৃতাত্বিক সম-বৈশিষ্ট সম্পন্ন একটা গোষ্ঠী তৈরি করে। কথা হচ্ছে নিকট অতীত এবং বর্তমান ও যে এই কাল-পরিক্রমার একটা অংশ, এটা অনেক সময়ে আমাদের ভাবনায় স্থান পায় না।
এই যে আপনার মন্তব্যে ১-২-৩ নম্বরে যে সব ঐতিহাসিক এবং বাস্তব ওলট-পালটের ভুক্তভোগী একটা আধা পৌত্তলিক আধা একেশ্বরবাদী আধাভাববাদী বিশ্বাসের উত্তরসূরী জগাখিচুড়ি একটা ভাষার অধিকারী যে গোষ্ঠীর কথা বললেন সেটা বাঙালীত্বের মত গভীর-প্রোথিত না হলেও কোন স্বল্পতর মাত্রার জাতিত্বের অধিকারী কিনা, সেই প্রশ্নটা রয়ে যায়।
আর যে বাঙালি নামক জাতিসত্ত্বার কথা বলছি, সেটাও তো চিরন্তন কোন কিছু নয়। যে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীকে পৃথক জাতিসত্ত্বা বলি তার সমসাময়িক কিছু ভিন্ন ভিন্ন জনগোষ্ঠী যেমন চন্ডাল, কুচ এরাই তো লাঙলে ধানচাষের জীবিকা গ্রহণ করে কেউ আর্যত্ব বরণ করেছে, কেউ মুসলমান নাম ধারণ করেছে। তাহলে বাঙালী বলতে যে একক জাতিসত্ত্বার কথা বলছি, এর অস্তিত্ত্ব ইতিহাসে আসলে কতটা গভীর? এর উত্তর ইতিহাসবিদেরাই ভাল দিতে পারবেন।
তবে এই জাতি ব্যাপার টা নিয়ে আমি কিছুটা দ্বিধার মধ্যে আছি। জাতির সংজ্ঞা যে আসলে কি, সেটা ঠিক ভেবে কূল পাইনা। রাজনীতি বিজ্ঞান কিম্বা সমাজতত্ত্বে প্রাতিষ্ঠানিক কোন জ্ঞান নেই, সেটা একটা কারণ হতে পারে।
কিন্ত আপাত জ্ঞানে যা বুঝি, জাতি ব্যাপারটার কোনো চিরন্তন অস্তিত্ব নেই। কালের চক্রে বিশেষ স্থানে বিশেষ ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাতে একটা জাতিত্বের সমাজানুভুতি তৈরী হয় মাত্র। সেটা কাল-পরিক্রমায় বৈবাহিক, অর্থনৈতিক, ভৌগলিক, রাজনৈতিক শৃঙ্খলে বাঁধা পড়ে ভাষা, সংস্কৃতি, আচার-অভ্যাস, এমনকি নৃতাত্বিক সম-বৈশিষ্ট সম্পন্ন একটা গোষ্ঠী তৈরি করে। কথা হচ্ছে নিকট অতীত এবং বর্তমান ও যে এই কাল-পরিক্রমার একটা অংশ, এটা অনেক সময়ে আমাদের ভাবনায় স্থান পায় না।
এই যে আপনার মন্তব্যে ১-২-৩ নম্বরে যে সব ঐতিহাসিক এবং বাস্তব ওলট-পালটের ভুক্তভোগী একটা আধা পৌত্তলিক আধা একেশ্বরবাদী আধাভাববাদী বিশ্বাসের উত্তরসূরী জগাখিচুড়ি একটা ভাষার অধিকারী যে গোষ্ঠীর কথা বললেন সেটা বাঙালীত্বের মত গভীর-প্রোথিত না হলেও কোন স্বল্পতর মাত্রার জাতিত্বের অধিকারী কিনা, সেই প্রশ্নটা রয়ে যায়।
আর যে বাঙালি নামক জাতিসত্ত্বার কথা বলছি, সেটাও তো চিরন্তন কোন কিছু নয়। যে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীকে পৃথক জাতিসত্ত্বা বলি তার সমসাময়িক কিছু ভিন্ন ভিন্ন জনগোষ্ঠী যেমন চন্ডাল, কুচ এরাই তো লাঙলে ধানচাষের জীবিকা গ্রহণ করে কেউ আর্যত্ব বরণ করেছে, কেউ মুসলমান নাম ধারণ করেছে। তাহলে বাঙালী বলতে যে একক জাতিসত্ত্বার কথা বলছি, এর অস্তিত্ত্ব ইতিহাসে আসলে কতটা গভীর? এর উত্তর ইতিহাসবিদেরাই ভাল দিতে পারবেন।
১৩
বর্তমানে জাতি শব্দটার দু ধরনের ব্যবহার প্রচলিত আছে বাংলা ভাষায় এবং বাংলা সমাজে
এর একটা রাস্ট্রবিজ্ঞান এবং সমাজ বিজ্ঞানের ধারায় (এই ধারাটি সাম্প্রতিক সংযোজন)
আর আরেকটা প্রচলিত ধারায়। এই ধারায় জাতির প্রতিশব্দ হচ্ছে জাত (এটা প্রাচীন)
প্রচলিত ধারায় যে সব জায়গায় জাতি শব্দটা ব্যবহার হয়/হয়েছে/হচ্ছে সেগুলো একটু খেয়াল করা দরকার
ছোটজাত= ছোটলোক/নীচুবর্ণ/নিচুবংশ/দরিদ্র। ভাষা- ধর্ম- ভূগোল-জাতিসত্তা এখানে গণ্য নয়
ভালোজাত/(জাতের মেয়ে?)= ছোটজাতের বিপরীত শব্দ+ নিজ গোত্র
জাতিতে মুসলমান/জাতিতে হিন্দু/মুসলমান জাতি/হিন্দু জাতি= ধর্ম পরিচয়। অন্য পরিচয় নগণ্য
জাতিতে কামার/কুমার= পেশা/বর্ণ। অন্য পরিচয় নগণ্য
ভালো জাতের মাছ/মুরগি/গরু= প্রজাতি
জাত মারা= গোত্র (বংশ) নষ্ট করা/ গোত্রকে অসম্মান করা
ম্লেচ্ছ জাতি= ঘৃণিত সম্প্রদায়। অন্য পরিচয় নগণ্য
যবন জাতি= গ্রিক।
রামায়ণ এবং মহাভারতে এই জাত এবং জাতি শব্দটার ব্যবহার একটু খেয়াল করা দরকার
নিষাদ জাতি/ শবর জাতি/ ক্ষত্রিয় জাতি/বংশ
বাংলা/ভারতীয় সমাজে এবং ভাষায় জাত/জাতি কোনোদিনও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জাত/জাতির প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহার হয়নি
এবং হয় না
এর মূল প্রতিশব্দ হলো গোত্র। জাত= হইতে (ক্ষত্রিয় বংশজাত= ক্ষত্রিয় হইতে জাত/জন্নানো। নীচজাত= নীচ বংশ/গোত্র হইতে জন্মানো)
জাতি শব্দটা ভারতীয় সমাজে জাত-এর বহুবচন/গোত্র নির্দেশ হিসেবেই ব্যবহার হয় (অনেকগুলো শবর জাতের লোক মিলে হয় শবর জাতি)
ভাষা সংস্কৃতি জাতিসত্তা দিয়ে প্রচলিত ধারায় কোনোদিনও জাতি/জাত শব্দের ব্যবহার হয়েছে বলে আমার মনে হয় না
যদিও সাঁওতাল জাতি। মুণ্ডা জাতি। গারো জাতি ব্যবহার হয় কিন্তু এর সাথে ব্যবহারিক দিক থেকে হিন্দু জাতি। মুসলমান জাতি কিংবা নিষাদ জাতির ব্যবহারের কোনো ফারাক নেই
আর রাষ্ট্র বিজ্ঞান কিংবা সমাজ বিজ্ঞানের সংজ্ঞা অনুসারে যে জাতির (+ উপজাতি) সংজ্ঞা (ভাষা সংস্কৃতি সমাজ কাঠামো/সামাজিক প্রসাশন) এই সংজ্ঞাটা আমার হিসেবে এখন পর্যন্ত বেশ ঝাঁপসা এবং প্রায় ক্ষেত্রেই জাতি আর জাতীয়তার ঠোকাঠুকি লাগে সংজ্ঞায় ফেলতে গেলে
কোথায় কোথাও দুটোর অর্থ প্রায় মিলে যায়
কোথাও কোথাও গিয়ে লাগে টক্কর
ইংরেজ জাতি/ইংলিশম্যন। কারা? শুধু বৃটিশরা কারণ ইউকের স্কটিশ- আইরিশদের আলাদা জাতি আছে। তাহলে আমেরিকান কানাডিয়ান অস্ট্রেলিয়ানদের জাতি কী?
অনেকগুলো দেশে (জাতীয়তায়) ছড়ানো আরব জাতি যদি হতে পারে তাহলে সেই হিসাবে আমেরিকান অস্ট্রেলিয়ান কানাডিয়ানরাও ইংলিশ জাতি হবার কথা
০২
বাঙালি জাতি যখন বলা হয়; আমার ধারণা আমরা প্রচলিত ধারা এবং সমাজ বিজ্ঞানের ধারা; দুটো ধারাকেই পাশ কাটিয়ে কিংবা দুটো ধারাকেই ব্লেন্ড করে বলি
কারণ বাঙালি জাতি বলতে মূলত বাংলা ভাষাভাষী মানুষকেই বোঝায়
যার মধ্যে বিভিন্ন ধর্ম/গোত্র বর্ণ/সংস্কৃতি/জাতিসত্তার মিশ্রণ এবং অসংখ্য জাতীয়তা অন্তুর্ভুক্ত হয়ে যায়
এবং ভাষা ছাড়া তাদের মধ্যে অন্য কোথাও কোনো মিল নেই। যদিও এর মধ্যে রয়েছে অসংখ্য উপভাষা (অনেকগুলো আবার অনুবাদ ছাড়া অন্য বাঙালি বুঝতে পারে না)
সাংস্কৃতিকভাবে বাঙালি জাতি কথাটা ব্যবহার করলে এর ব্যাপ্তি অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু প্রায়োগিক দিক থেকে অনেক সমস্যাও থেকে যায় কোনো কিছুকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে
এই ঝামেলাকে এড়ানোর জন্য ব্যক্তিগতভাবে আমি একটা অন্যপথ ব্যবহার করি
আমি ইউজ করি- বাংলাদেশি বাঙালি- ভারতীয় বাঙালি- বৃটিশ বাঙালি- সিলেটি বাঙালি- চাটগেঁয়ে বাঙালি। আসামী বাঙালি- ত্রিপুরি বাঙালি
আর কোনো কারণে ধর্মীয় ভাগ দিয়ে কোনো কথা বলতে হলে আমি ব্যবহার করি বাঙালি মুসলমান- বাঙালি হিন্দু- বাঙালি খ্রিস্টান...
আর যদি কোথাও কোনো কিছু নির্দিষ্ট করার দরকার না পড়ে কিংবা সার্বিক ভাবে বলতে হয় তাহলে শুধু বলি বাঙালি (জাতি শব্দটা আমি এড়িয়ে যাই নিজের বিভিন্ন কনফিউশনের কারণে)
০৩
বাঙালিরা জাতিত্বের অধিকারী কি না সেটা নিয়ে বোধহয় কোনো প্রশ্ন নেই কোথাও
০৪
বাঙালিদের ইতিহাস নিয়েও কোথাও কোনো প্রশ্ন আছে বলে আমার মনে হয় না
বারবার ধর্ম- দেশ বদলালেও কিংবা রক্ত মিশ্রণ ঘটলেও ভাষার জার্নিটা সব সময়ই তাদের কাছে ছিল
আর ছিল বলেই এখন লেখ্য পাঠ্য কথ্য একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাষা তৈরি হতে পেরেছে
এর একটা রাস্ট্রবিজ্ঞান এবং সমাজ বিজ্ঞানের ধারায় (এই ধারাটি সাম্প্রতিক সংযোজন)
আর আরেকটা প্রচলিত ধারায়। এই ধারায় জাতির প্রতিশব্দ হচ্ছে জাত (এটা প্রাচীন)
প্রচলিত ধারায় যে সব জায়গায় জাতি শব্দটা ব্যবহার হয়/হয়েছে/হচ্ছে সেগুলো একটু খেয়াল করা দরকার
ছোটজাত= ছোটলোক/নীচুবর্ণ/নিচুবংশ/দরিদ্র। ভাষা- ধর্ম- ভূগোল-জাতিসত্তা এখানে গণ্য নয়
ভালোজাত/(জাতের মেয়ে?)= ছোটজাতের বিপরীত শব্দ+ নিজ গোত্র
জাতিতে মুসলমান/জাতিতে হিন্দু/মুসলমান জাতি/হিন্দু জাতি= ধর্ম পরিচয়। অন্য পরিচয় নগণ্য
জাতিতে কামার/কুমার= পেশা/বর্ণ। অন্য পরিচয় নগণ্য
ভালো জাতের মাছ/মুরগি/গরু= প্রজাতি
জাত মারা= গোত্র (বংশ) নষ্ট করা/ গোত্রকে অসম্মান করা
ম্লেচ্ছ জাতি= ঘৃণিত সম্প্রদায়। অন্য পরিচয় নগণ্য
যবন জাতি= গ্রিক।
রামায়ণ এবং মহাভারতে এই জাত এবং জাতি শব্দটার ব্যবহার একটু খেয়াল করা দরকার
নিষাদ জাতি/ শবর জাতি/ ক্ষত্রিয় জাতি/বংশ
বাংলা/ভারতীয় সমাজে এবং ভাষায় জাত/জাতি কোনোদিনও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জাত/জাতির প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহার হয়নি
এবং হয় না
এর মূল প্রতিশব্দ হলো গোত্র। জাত= হইতে (ক্ষত্রিয় বংশজাত= ক্ষত্রিয় হইতে জাত/জন্নানো। নীচজাত= নীচ বংশ/গোত্র হইতে জন্মানো)
জাতি শব্দটা ভারতীয় সমাজে জাত-এর বহুবচন/গোত্র নির্দেশ হিসেবেই ব্যবহার হয় (অনেকগুলো শবর জাতের লোক মিলে হয় শবর জাতি)
ভাষা সংস্কৃতি জাতিসত্তা দিয়ে প্রচলিত ধারায় কোনোদিনও জাতি/জাত শব্দের ব্যবহার হয়েছে বলে আমার মনে হয় না
যদিও সাঁওতাল জাতি। মুণ্ডা জাতি। গারো জাতি ব্যবহার হয় কিন্তু এর সাথে ব্যবহারিক দিক থেকে হিন্দু জাতি। মুসলমান জাতি কিংবা নিষাদ জাতির ব্যবহারের কোনো ফারাক নেই
আর রাষ্ট্র বিজ্ঞান কিংবা সমাজ বিজ্ঞানের সংজ্ঞা অনুসারে যে জাতির (+ উপজাতি) সংজ্ঞা (ভাষা সংস্কৃতি সমাজ কাঠামো/সামাজিক প্রসাশন) এই সংজ্ঞাটা আমার হিসেবে এখন পর্যন্ত বেশ ঝাঁপসা এবং প্রায় ক্ষেত্রেই জাতি আর জাতীয়তার ঠোকাঠুকি লাগে সংজ্ঞায় ফেলতে গেলে
কোথায় কোথাও দুটোর অর্থ প্রায় মিলে যায়
কোথাও কোথাও গিয়ে লাগে টক্কর
ইংরেজ জাতি/ইংলিশম্যন। কারা? শুধু বৃটিশরা কারণ ইউকের স্কটিশ- আইরিশদের আলাদা জাতি আছে। তাহলে আমেরিকান কানাডিয়ান অস্ট্রেলিয়ানদের জাতি কী?
অনেকগুলো দেশে (জাতীয়তায়) ছড়ানো আরব জাতি যদি হতে পারে তাহলে সেই হিসাবে আমেরিকান অস্ট্রেলিয়ান কানাডিয়ানরাও ইংলিশ জাতি হবার কথা
০২
বাঙালি জাতি যখন বলা হয়; আমার ধারণা আমরা প্রচলিত ধারা এবং সমাজ বিজ্ঞানের ধারা; দুটো ধারাকেই পাশ কাটিয়ে কিংবা দুটো ধারাকেই ব্লেন্ড করে বলি
কারণ বাঙালি জাতি বলতে মূলত বাংলা ভাষাভাষী মানুষকেই বোঝায়
যার মধ্যে বিভিন্ন ধর্ম/গোত্র বর্ণ/সংস্কৃতি/জাতিসত্তার মিশ্রণ এবং অসংখ্য জাতীয়তা অন্তুর্ভুক্ত হয়ে যায়
এবং ভাষা ছাড়া তাদের মধ্যে অন্য কোথাও কোনো মিল নেই। যদিও এর মধ্যে রয়েছে অসংখ্য উপভাষা (অনেকগুলো আবার অনুবাদ ছাড়া অন্য বাঙালি বুঝতে পারে না)
সাংস্কৃতিকভাবে বাঙালি জাতি কথাটা ব্যবহার করলে এর ব্যাপ্তি অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু প্রায়োগিক দিক থেকে অনেক সমস্যাও থেকে যায় কোনো কিছুকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে
এই ঝামেলাকে এড়ানোর জন্য ব্যক্তিগতভাবে আমি একটা অন্যপথ ব্যবহার করি
আমি ইউজ করি- বাংলাদেশি বাঙালি- ভারতীয় বাঙালি- বৃটিশ বাঙালি- সিলেটি বাঙালি- চাটগেঁয়ে বাঙালি। আসামী বাঙালি- ত্রিপুরি বাঙালি
আর কোনো কারণে ধর্মীয় ভাগ দিয়ে কোনো কথা বলতে হলে আমি ব্যবহার করি বাঙালি মুসলমান- বাঙালি হিন্দু- বাঙালি খ্রিস্টান...
আর যদি কোথাও কোনো কিছু নির্দিষ্ট করার দরকার না পড়ে কিংবা সার্বিক ভাবে বলতে হয় তাহলে শুধু বলি বাঙালি (জাতি শব্দটা আমি এড়িয়ে যাই নিজের বিভিন্ন কনফিউশনের কারণে)
০৩
বাঙালিরা জাতিত্বের অধিকারী কি না সেটা নিয়ে বোধহয় কোনো প্রশ্ন নেই কোথাও
০৪
বাঙালিদের ইতিহাস নিয়েও কোথাও কোনো প্রশ্ন আছে বলে আমার মনে হয় না
বারবার ধর্ম- দেশ বদলালেও কিংবা রক্ত মিশ্রণ ঘটলেও ভাষার জার্নিটা সব সময়ই তাদের কাছে ছিল
আর ছিল বলেই এখন লেখ্য পাঠ্য কথ্য একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাষা তৈরি হতে পেরেছে
১৪
লীলেন ভাই,
তোমার যুক্তির ফ্রেম আসলে কি ধারন করছে? অথবা ছফা এবং তার উত্তরসূরীদের চিন্তার মুল সূত্র এবং পরিনতি কি?
ব্যক্তি জীবনে ছফা কতোটুকু অসাম্প্রদায়িক ছিলেন আমি সেই ঠিকুজিতে যাচ্ছিনা কারন ছফা'র চিন্তা ব্যক্তির সীমানা পেরিয়েছে, পেরিয়েছে বলেই তার চিন্তা নিয়ে কথা চলছে যখন ব্যক্তি ছফা নেই আর।
এই যে ইতিহাস এবং সমকালীন প্রেক্ষাপট বিশ্লেষন- বাঙ্গালী 'মুসলমান' বলে একটা জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিতকরন তার মানে কি এই দাঁড়ায়না যে 'মুসলমানিত্ব' একটি চিহ্ন বটে! 'মুসলমানিত্ব' চিহ্ন হলে এর বাইরে যা 'অমুসলমানিত্ব'সেটা ও একটা চিহ্ন।
অর্থ্যাৎ মুসলমানিত্ব ও অমুসলমানিত্ব বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর ভেতরের আরো দুই আইডেন্টিটি। বাঙ্গালী মুসলমানের মন, বাঙ্গালী মুসলমানের সংস্কৃতি আলাদা? কার থেকে আলাদা তবে? বাঙ্গালী অমুসলমানের কাছ থেকে? আলাদা বলেই তো আলাদা করে 'মুসলমানের মন' বিশ্লেষন হয়।
আমি বুঝতে চাইছি- 'বাঙ্গালী'কে যদি একটা জাতি বলে স্বীকার করি তাহলে তার ভিত্তি কি? ভাষা, সংস্কৃতি, নৃতাত্বিক সাদৃশ্য ইত্যাদি ইত্যাদি( একদিনে তো আর এসব স্থিত হয়নি সেটা তুমিই বলেছো)। এই উপাদান গুলো একটা জাতিগোষ্ঠী সন্নিহিত করছে আবার যখন ধর্ম আসছে সেই জাতিগোষ্ঠী ভাগ হয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো- ধর্মকে তুমি আইডেন্টি মানছো কিনা? আমি মানছিনা। মানছি ভাষা,সংস্কৃতি,নৃতাত্বিক সাদৃশ্য এসব ও চিরস্থায়ী নয়, সময়ে বদলায় তবে ধর্মের মতো সহজে বদলযোগ্য নয়। আমি মুসলমানের পোলা চাইলে আজকেই ধর্ম বদলাতে পারি কিন্তু ভাষা, আচরন, গায়ের রঙ সহজে পারিনা।
আমি বারবার একটা জায়গাতেই ঘোরপাক খাচ্ছি। ছফা এবং তার চিন্তার উত্তরাধিকাররা পূর্ববাংলার জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে ধর্মকে 'ওয়ান অফ দ্যা আইডেনটিটি' বলতে চেয়েছেন কিনা?
কে কতোটা প্রগতি ধারন করেন আসলেই সেই সিদ্ধান্তে আসতে এই উত্তরটা আমার কাছে জরুরী।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
তোমার যুক্তির ফ্রেম আসলে কি ধারন করছে? অথবা ছফা এবং তার উত্তরসূরীদের চিন্তার মুল সূত্র এবং পরিনতি কি?
ব্যক্তি জীবনে ছফা কতোটুকু অসাম্প্রদায়িক ছিলেন আমি সেই ঠিকুজিতে যাচ্ছিনা কারন ছফা'র চিন্তা ব্যক্তির সীমানা পেরিয়েছে, পেরিয়েছে বলেই তার চিন্তা নিয়ে কথা চলছে যখন ব্যক্তি ছফা নেই আর।
এই যে ইতিহাস এবং সমকালীন প্রেক্ষাপট বিশ্লেষন- বাঙ্গালী 'মুসলমান' বলে একটা জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিতকরন তার মানে কি এই দাঁড়ায়না যে 'মুসলমানিত্ব' একটি চিহ্ন বটে! 'মুসলমানিত্ব' চিহ্ন হলে এর বাইরে যা 'অমুসলমানিত্ব'সেটা ও একটা চিহ্ন।
অর্থ্যাৎ মুসলমানিত্ব ও অমুসলমানিত্ব বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর ভেতরের আরো দুই আইডেন্টিটি। বাঙ্গালী মুসলমানের মন, বাঙ্গালী মুসলমানের সংস্কৃতি আলাদা? কার থেকে আলাদা তবে? বাঙ্গালী অমুসলমানের কাছ থেকে? আলাদা বলেই তো আলাদা করে 'মুসলমানের মন' বিশ্লেষন হয়।
আমি বুঝতে চাইছি- 'বাঙ্গালী'কে যদি একটা জাতি বলে স্বীকার করি তাহলে তার ভিত্তি কি? ভাষা, সংস্কৃতি, নৃতাত্বিক সাদৃশ্য ইত্যাদি ইত্যাদি( একদিনে তো আর এসব স্থিত হয়নি সেটা তুমিই বলেছো)। এই উপাদান গুলো একটা জাতিগোষ্ঠী সন্নিহিত করছে আবার যখন ধর্ম আসছে সেই জাতিগোষ্ঠী ভাগ হয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো- ধর্মকে তুমি আইডেন্টি মানছো কিনা? আমি মানছিনা। মানছি ভাষা,সংস্কৃতি,নৃতাত্বিক সাদৃশ্য এসব ও চিরস্থায়ী নয়, সময়ে বদলায় তবে ধর্মের মতো সহজে বদলযোগ্য নয়। আমি মুসলমানের পোলা চাইলে আজকেই ধর্ম বদলাতে পারি কিন্তু ভাষা, আচরন, গায়ের রঙ সহজে পারিনা।
আমি বারবার একটা জায়গাতেই ঘোরপাক খাচ্ছি। ছফা এবং তার চিন্তার উত্তরাধিকাররা পূর্ববাংলার জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে ধর্মকে 'ওয়ান অফ দ্যা আইডেনটিটি' বলতে চেয়েছেন কিনা?
কে কতোটা প্রগতি ধারন করেন আসলেই সেই সিদ্ধান্তে আসতে এই উত্তরটা আমার কাছে জরুরী।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
১৫
মোরশেদ
আমার ধারণা আমরা ঘুরপাক খাচ্ছি দুটো প্রান্তে
তোমার প্রসঙ্গটা হলো বাঙালিকে মুসলমান বাঙালি আর হিন্দু কিংবা অমুসলমান বাঙালি হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত কিংবা গ্রহণযোগ্য কি না
কিংবা এ ধরনের চিহ্নিতকরণকে সমর্থন করা যায় কি না কিংবা উচিত কি না
আর আমার প্রসঙ্গটা হলো মানি বা না মানি পূর্ব বাংলায়/বাংলাদেশে এরকম একটা চিহ্নরেখা তৈরি হয়ে গেছে। আর তৈরির হয়ে যাওয়ার কারণেই আচার আচরণ সংস্কৃতির অনেক বিষয়ই আলাদা। কারণ দৈনন্দিন আচার ও সংস্কৃতিতে ধর্মের প্রভাব যে (মানি বা না মানি) তো একটা বিশাল বিষয়
এই চিহ্ন রেখার দুই পাশের মানুষগুলোর বর্তমান পর্যন্ত রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক সামাজিক জার্নি কিন্তু এক রকম নয়। সম্পূর্ণ দুই রকম অভিযাত্রায় এরা এসেছে এই পর্যন্ত
একদল অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বারবার ধর্ম (এবং তার সাথে আচরণ) বদলাতে বদলাতে এখন এসে এক জায়গায় থিতু হয়েছে (মুসলমান)
আর আরেকদল নিজেদের প্রাচীন ধর্ম আর আচরণ ধরে রেখে আজ পর্যন্ত টিকে আছে
বাঙালি খ্রিস্টানরাও মুসলমানদের মতো একই জার্নির অভিজ্ঞতার অধিকারী (আরেক ধাপ বাড়তি জার্নির অভিজ্ঞতা তাদের)
কিন্তু তাদের সর্বশেষ জার্নিটা তুলনামূলক সাম্প্রতিক হওয়ার কারণে এবং কম জনসংখ্যার কারণে সেটা এখনও যেমন ইউনিফর্ম হয়নি তেমনি গোটা বাঙালি সংস্কৃতিতে এর প্রভাবও উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠেনি
এখন আমি যদি বাঙালিদের মধ্যে খ্রিস্টান ধর্মের লোকজনকে নিয়ে কিছু লিখতে চাই তাহলে নিশ্চয়ই শুধু বাঙালি বললে আমার লেখাটাকে নির্দিষ্ট করতে পারবো না। তাই না?
আমাকে বলতে হবে বাঙালিদের মধ্যে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী। অথবা সংক্ষেপে বাঙালি খ্রিস্টান কিংবা খ্রিস্টান বাঙালি
এই ক্ষেত্রে কি আর কোনো বিকল্প শব্দবন্ধ আছে? আমার জানা নেই
(বিষয়টা অনেকটা সবাইকে বাঙালি ধরে নিয়েও সিলেটিদের আলোচনা করার সময় শুধু সিলেটি আর বরিশালিদের আলোচনার করার সময় শুধু বরিশালি বলার মতো)
০২
আমরা মানি বা না মানি
ধর্ম পরিচয় কিন্তু ঐতিহাসিক কাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত একটা প্রকট আইডেন্টিটি হয়েই আছে
গত সাড়ে চার হাজার বছর ধরে সচেতন অসচেতনভাবে একটা শব্দ ব্যবহার করা হয়- ইহুদি। কী সেটা? ধর্ম পরিচয় মাত্র
সম্রাট অশোকের যুদ্ধ- হিন্দু বৌদ্ধের যুদ্ধ
ক্রসেড- খ্রিস্টান মুসলিম যুদ্ধ
ইসরাইলের প্রতিষ্ঠা- ধর্ম পরিচয়ের দেশ
ভারত বিভাগ- ধর্ম পরিচয়ের বিভাজন
যুগোস্লাভিয়ার ভাঙন- ধর্ম পরিচয়ের বিভাজন (৪৭ এর ভারতের মতো)
যতই যাই বলি না কেন। রাজনৈতিক- সাংস্কৃতিক ভাবে ধর্মকে একটা বিভাজনের চিহ্নরেখা কিন্তু ধরা হচ্ছে- হয়েছে
এবং ধর্মকে বিভাজনের চিহ্নরেখা না ধরার উপায় নিয়ে এখন পর্যন্ত আমাদের সামনে কোনো পরিষ্কার রূপরেখা নেই
যা আছে তা হচ্ছে কিছু মানবিক আবেদন আর বিচ্ছিন্ন চিন্তার কিছু গাইডলাইন। এবং কিছু ব্যক্তি মানুষের অনুশীলন
০৩
ভাষার ধারাবাহিকতায় যে বাঙালিত্ব সেখানে কিন্তু কোনো বিতর্ক নেই মোরশেদ। অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ভাষা তার স্বকীয়তা বজায় রেখেছিল বলেই কিন্তু বাঙালি বলতে সবাইকেই বোঝানো হচ্ছে
কিন্তু এই বাঙালিদের মধ্যে উপভাগগুলোকে বোঝাতে গিয়ে দরকার পড়ছে আরো কিছু স্পেসিফিক বিশেষণ- ভারতীয় বাঙালি- বাংলাদেশি বাঙালি- ভারতীয় মুসলিম বাঙালি- বাংলাদেশি খ্রিস্টান বাঙালি
০৪
ছফাকে অভিযোগ করা যেতে পারে যে তিনি কেন সার্বিক বাঙালির মন বিশ্লেষণ না করে শুধু বাঙালিদের মধ্যে মুসলমানদের মন বিশ্লেষণ করতে গেলেন। কিন্তু এখানেও লেখকের নিজস্ব ইচ্ছা এবং স্বাধীনভাবে বিষয় নির্বাচনের অধিকারকে স্বীকার করে নিলে বোধহয় বিষয়টার আর কোনো বিতর্ক থাকে না
যেমন আমি মনে করি- আমি যদি আজকে 'সিলেটের সাহিত্য চর্চা' লিখি তাহলে সেখানে বরিশালের কোনো লেখকের নাম উল্লেখ না করলে কারো কিছু বলার নেই। যদিও বরিশাল এবং সিলেট দু জায়গার লেখকরাই একই বাংলা ভাষায় লিখেন
কারণ আলোচনা করার সময় আমি ঠিক কোনটাকে নিয়ে আলোচনা করব (করতে পারব/করার দরকার মনে করব) সেটা নির্বাচনের অধিকার আমার আছে)
০৫
শেষ ধাক্কাটা ছিল সাম্প্রতিক কালে করা আমার বিয়ের দলিল নিয়ে। বাংলাদেশে নাকি ধর্মের রেফারেন্স ছাড়া বিয়ে হয় না। নোটারিদের সাথে মারামারি করে। অনেক অনেকটাকা বেশি দিয়ে সেই দলিলটাকেও ধর্মপরিচয় মুক্ত রাখা গেছে
এখন মরার পরে আমাকে পোড়াবে কি গোর দেবে সেটা নিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে মারামারি করতে না পারলেও একটা দলিলের ড্রাফট করা আছে
(কেউ না মানলে ওখানে আমার কিছু করার নেই)
০৬
ওয়ান অব দ্যা মোস্ট প্রমিনেন্ট আইডেনটিটি
০৭
প্রগতি ধারণ করার চেয়ে আমার কাছে জরুরি প্রগতিহীনতার ময়লাগুলো ঝেড়ে ফেলা
যেটাকে আমি বলি অর্জনের চেষ্টা
আমার ধারণা আমরা ঘুরপাক খাচ্ছি দুটো প্রান্তে
তোমার প্রসঙ্গটা হলো বাঙালিকে মুসলমান বাঙালি আর হিন্দু কিংবা অমুসলমান বাঙালি হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত কিংবা গ্রহণযোগ্য কি না
কিংবা এ ধরনের চিহ্নিতকরণকে সমর্থন করা যায় কি না কিংবা উচিত কি না
আর আমার প্রসঙ্গটা হলো মানি বা না মানি পূর্ব বাংলায়/বাংলাদেশে এরকম একটা চিহ্নরেখা তৈরি হয়ে গেছে। আর তৈরির হয়ে যাওয়ার কারণেই আচার আচরণ সংস্কৃতির অনেক বিষয়ই আলাদা। কারণ দৈনন্দিন আচার ও সংস্কৃতিতে ধর্মের প্রভাব যে (মানি বা না মানি) তো একটা বিশাল বিষয়
এই চিহ্ন রেখার দুই পাশের মানুষগুলোর বর্তমান পর্যন্ত রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক সামাজিক জার্নি কিন্তু এক রকম নয়। সম্পূর্ণ দুই রকম অভিযাত্রায় এরা এসেছে এই পর্যন্ত
একদল অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বারবার ধর্ম (এবং তার সাথে আচরণ) বদলাতে বদলাতে এখন এসে এক জায়গায় থিতু হয়েছে (মুসলমান)
আর আরেকদল নিজেদের প্রাচীন ধর্ম আর আচরণ ধরে রেখে আজ পর্যন্ত টিকে আছে
বাঙালি খ্রিস্টানরাও মুসলমানদের মতো একই জার্নির অভিজ্ঞতার অধিকারী (আরেক ধাপ বাড়তি জার্নির অভিজ্ঞতা তাদের)
কিন্তু তাদের সর্বশেষ জার্নিটা তুলনামূলক সাম্প্রতিক হওয়ার কারণে এবং কম জনসংখ্যার কারণে সেটা এখনও যেমন ইউনিফর্ম হয়নি তেমনি গোটা বাঙালি সংস্কৃতিতে এর প্রভাবও উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠেনি
এখন আমি যদি বাঙালিদের মধ্যে খ্রিস্টান ধর্মের লোকজনকে নিয়ে কিছু লিখতে চাই তাহলে নিশ্চয়ই শুধু বাঙালি বললে আমার লেখাটাকে নির্দিষ্ট করতে পারবো না। তাই না?
আমাকে বলতে হবে বাঙালিদের মধ্যে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী। অথবা সংক্ষেপে বাঙালি খ্রিস্টান কিংবা খ্রিস্টান বাঙালি
এই ক্ষেত্রে কি আর কোনো বিকল্প শব্দবন্ধ আছে? আমার জানা নেই
(বিষয়টা অনেকটা সবাইকে বাঙালি ধরে নিয়েও সিলেটিদের আলোচনা করার সময় শুধু সিলেটি আর বরিশালিদের আলোচনার করার সময় শুধু বরিশালি বলার মতো)
০২
আমরা মানি বা না মানি
ধর্ম পরিচয় কিন্তু ঐতিহাসিক কাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত একটা প্রকট আইডেন্টিটি হয়েই আছে
গত সাড়ে চার হাজার বছর ধরে সচেতন অসচেতনভাবে একটা শব্দ ব্যবহার করা হয়- ইহুদি। কী সেটা? ধর্ম পরিচয় মাত্র
সম্রাট অশোকের যুদ্ধ- হিন্দু বৌদ্ধের যুদ্ধ
ক্রসেড- খ্রিস্টান মুসলিম যুদ্ধ
ইসরাইলের প্রতিষ্ঠা- ধর্ম পরিচয়ের দেশ
ভারত বিভাগ- ধর্ম পরিচয়ের বিভাজন
যুগোস্লাভিয়ার ভাঙন- ধর্ম পরিচয়ের বিভাজন (৪৭ এর ভারতের মতো)
যতই যাই বলি না কেন। রাজনৈতিক- সাংস্কৃতিক ভাবে ধর্মকে একটা বিভাজনের চিহ্নরেখা কিন্তু ধরা হচ্ছে- হয়েছে
এবং ধর্মকে বিভাজনের চিহ্নরেখা না ধরার উপায় নিয়ে এখন পর্যন্ত আমাদের সামনে কোনো পরিষ্কার রূপরেখা নেই
যা আছে তা হচ্ছে কিছু মানবিক আবেদন আর বিচ্ছিন্ন চিন্তার কিছু গাইডলাইন। এবং কিছু ব্যক্তি মানুষের অনুশীলন
০৩
ভাষার ধারাবাহিকতায় যে বাঙালিত্ব সেখানে কিন্তু কোনো বিতর্ক নেই মোরশেদ। অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ভাষা তার স্বকীয়তা বজায় রেখেছিল বলেই কিন্তু বাঙালি বলতে সবাইকেই বোঝানো হচ্ছে
কিন্তু এই বাঙালিদের মধ্যে উপভাগগুলোকে বোঝাতে গিয়ে দরকার পড়ছে আরো কিছু স্পেসিফিক বিশেষণ- ভারতীয় বাঙালি- বাংলাদেশি বাঙালি- ভারতীয় মুসলিম বাঙালি- বাংলাদেশি খ্রিস্টান বাঙালি
০৪
ছফাকে অভিযোগ করা যেতে পারে যে তিনি কেন সার্বিক বাঙালির মন বিশ্লেষণ না করে শুধু বাঙালিদের মধ্যে মুসলমানদের মন বিশ্লেষণ করতে গেলেন। কিন্তু এখানেও লেখকের নিজস্ব ইচ্ছা এবং স্বাধীনভাবে বিষয় নির্বাচনের অধিকারকে স্বীকার করে নিলে বোধহয় বিষয়টার আর কোনো বিতর্ক থাকে না
যেমন আমি মনে করি- আমি যদি আজকে 'সিলেটের সাহিত্য চর্চা' লিখি তাহলে সেখানে বরিশালের কোনো লেখকের নাম উল্লেখ না করলে কারো কিছু বলার নেই। যদিও বরিশাল এবং সিলেট দু জায়গার লেখকরাই একই বাংলা ভাষায় লিখেন
কারণ আলোচনা করার সময় আমি ঠিক কোনটাকে নিয়ে আলোচনা করব (করতে পারব/করার দরকার মনে করব) সেটা নির্বাচনের অধিকার আমার আছে)
০৫
উদ্ধৃতি
নিজের ব্যাপারে আমি অতটুকু জানি যত জায়গায় ধর্মের ঘর পূরণ করতে হয় তত জায়গায় ৯২ সাল থেকে আমি হয় লিখি ধর্মহীন না হলে লিখি নট এপ্লিকেবলপ্রশ্ন হলো- ধর্মকে তুমি আইডেন্টি মানছো কিনা?
শেষ ধাক্কাটা ছিল সাম্প্রতিক কালে করা আমার বিয়ের দলিল নিয়ে। বাংলাদেশে নাকি ধর্মের রেফারেন্স ছাড়া বিয়ে হয় না। নোটারিদের সাথে মারামারি করে। অনেক অনেকটাকা বেশি দিয়ে সেই দলিলটাকেও ধর্মপরিচয় মুক্ত রাখা গেছে
এখন মরার পরে আমাকে পোড়াবে কি গোর দেবে সেটা নিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে মারামারি করতে না পারলেও একটা দলিলের ড্রাফট করা আছে
(কেউ না মানলে ওখানে আমার কিছু করার নেই)
০৬
উদ্ধৃতি
তাই তোছফা এবং তার চিন্তার উত্তরাধিকাররা পূর্ববাংলার জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে ধর্মকে 'ওয়ান অফ দ্যা আইডেনটিটি' বলতে চেয়েছেন কিনা?
ওয়ান অব দ্যা মোস্ট প্রমিনেন্ট আইডেনটিটি
০৭
উদ্ধৃতি
কেউ কেউ হয়ত প্রগতি ধারণ করেন। কিন্তু আমি চেষ্টা করি অর্জনের। কারণ আমি পরিষ্কার জানি প্রগতি বিরোধী বহু ইতিহাসের ময়লা থেকে যেমন আমার জন্ম। তেমনি প্রগতি বিরোধী বহু চিন্তার আস্তাকূড়ে আমার বসবাসকে কতোটা প্রগতি ধারন করেন আসলেই সেই সিদ্ধান্তে আসতে এই উত্তরটা আমার কাছে জরুরী।
প্রগতি ধারণ করার চেয়ে আমার কাছে জরুরি প্রগতিহীনতার ময়লাগুলো ঝেড়ে ফেলা
যেটাকে আমি বলি অর্জনের চেষ্টা
১৬
হাসান মোরশেদ,
যদি বুঝতে না ভুল করে থাকি আপনি বিষয়টা একটা নরম্যাটিভ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে চাচ্ছেন । ছফা ঠিক এই নর্ম্যাটিভ দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টা দেখেননি । সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলমানের মনসংস্কৃতি কিভাবে ঐতিহাসিকভাবে এগিয়েছে সেটার একটা বর্ননা ছফা করেছেন ।
যদি বুঝতে না ভুল করে থাকি আপনি বিষয়টা একটা নরম্যাটিভ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে চাচ্ছেন । ছফা ঠিক এই নর্ম্যাটিভ দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টা দেখেননি । সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলমানের মনসংস্কৃতি কিভাবে ঐতিহাসিকভাবে এগিয়েছে সেটার একটা বর্ননা ছফা করেছেন ।
১৭
@লীলেন ভাই, হাসিব
আমি আলোচনা থেকে বের করতে আনতে চাচ্ছি ছফার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গী- ছফা নিজে বাঙ্গালী জাতিগোষ্ঠী'র ধর্মভিত্তিক বিভাজনকে সত্য মানতেন কিনা?
ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির সাংস্কৃতিক পার্থক্য থাকে, একই ঘরের দুজন মানুষের আচরনে ভিন্নতা থাকে- পূর্ব বাংলার মুসলমানদের সাথে অমুসলমানদের সাংস্কৃতিক পার্থক্য যতোটুকু-অতোটুকুতে হিন্দু মুসলমান আলাদা জাতি বলা যায় কিনা?
দ্বিজাতি তত্বওয়ালারা বলেছিলেন- হ্যাঁ, আলাদা জাতি। আশ্চর্য্য হলে ও সত্যি কোন কোন বামপন্থী তাত্বিককে ও এটা বলতে শুনেছি। মুসলিম জাতীয়তাবাদের সমর্থকদের ছফা কোট করতে দেখেছি।
জীবিত ছফা'র রাজনৈতিক অবস্থান আমার জানা আছে, আমি বুঝতে আগ্রহী মৃত ছফার কাজ তার রাজনৈতিক অবস্থান বিরোধী কারো পারপাস সার্ভ করে কিনা।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আমি আলোচনা থেকে বের করতে আনতে চাচ্ছি ছফার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গী- ছফা নিজে বাঙ্গালী জাতিগোষ্ঠী'র ধর্মভিত্তিক বিভাজনকে সত্য মানতেন কিনা?
ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির সাংস্কৃতিক পার্থক্য থাকে, একই ঘরের দুজন মানুষের আচরনে ভিন্নতা থাকে- পূর্ব বাংলার মুসলমানদের সাথে অমুসলমানদের সাংস্কৃতিক পার্থক্য যতোটুকু-অতোটুকুতে হিন্দু মুসলমান আলাদা জাতি বলা যায় কিনা?
দ্বিজাতি তত্বওয়ালারা বলেছিলেন- হ্যাঁ, আলাদা জাতি। আশ্চর্য্য হলে ও সত্যি কোন কোন বামপন্থী তাত্বিককে ও এটা বলতে শুনেছি। মুসলিম জাতীয়তাবাদের সমর্থকদের ছফা কোট করতে দেখেছি।
জীবিত ছফা'র রাজনৈতিক অবস্থান আমার জানা আছে, আমি বুঝতে আগ্রহী মৃত ছফার কাজ তার রাজনৈতিক অবস্থান বিরোধী কারো পারপাস সার্ভ করে কিনা।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
১৮
উদ্ধৃতি
এটা হতেই পারে । যেমন ধরেন টিপাইমুখ ইস্যুটা আনু মুহাম্মদেরা একটা ইস্যু হিসেবে দাড় করালো । এখন সেই ভিত্তিটার ওপর দাড়িয়ে চরমোনাইয়ের পীর লংমার্চ করে ! এরকমভাবে আপনি ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে যা কিছুই করতে যাবেন সেটা ছাগুগোষ্ঠি নিজেদের কাজে ব্যবহার করতে চাইবে ।মৃত ছফার কাজ তার রাজনৈতিক অবস্থান বিরোধী কারো পারপাস সার্ভ করে কিনা।
আমার কথা হলো একটা রাজনৈতিক দর্শনকে কেউ যদি খারাপ কাজে ব্যবহার করতে চায় তাহলে দোষটা সেই রাজনৈতিক দর্শনের উপর কতটুকু পড়ে ?
আরোও একটু উদাহরণ -
এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় । আমরা উঠতে বসতে তাদের সমালোচনা করে লেখালেখি করি । এখন কোন জামাতি এই কোট/পয়েন্টগুলো ধরে যদি নিজেদের আর্গুমেন্ট দাড় করায় তখন কি সেটার জন্য আমাদের লেখালেখিকে দোষি করা চলবে ? বা এই সম্ভাবনা থাকে বলে কি আমরা আমাদের সমালোচনা বন্ধ করবো ?
১৯
উদ্ধৃতি
আমার কথা হলো একটা রাজনৈতিক দর্শনকে কেউ যদি খারাপ কাজে ব্যবহার করতে চায় তাহলে দোষটা সেই রাজনৈতিক দর্শনের উপর কতটুকু পড়ে ?
হ্যাঁ, না উত্তর দিয়ে বোধ করি এটা বলা যাবেনা। কোন মতাদর্শের এফেক্ট এর দায় সেই মতাদর্শ এড়াতে পারে কিনা- এই আলোচনা দীর্ঘ বিস্তার দাবী করে। ধর্মবিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করার দায় ধর্মের নাকি ধার্মিকের এটা চিন্তার বিষয়। আমি এখনো নিশ্চিত হতে পারছিনা- ছফা তার গুরু রাজ্জাক সাহেবের মতো ধর্মভিত্তিক জাতীয়তায় প্রতীতি করতেন কিনা? আপাততঃ এই সিদ্ধান্তটুকু দরকার আমার।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
২০
উদ্ধৃতি আমি এখনো নিশ্চিত হতে পারছিনা- ছফা তার গুরু রাজ্জাক সাহেবের মতো ধর্মভিত্তিক জাতীয়তায় প্রতীতি করতেন কিনা?
করতেন না। করলে রাজ্জাক সাহেবের অবস্থানটা সঠিক না বেঠিক এটা বিচারের ভার আমাদের ওপর ছেড়ে না দিয়ে নিজেই খণ্ডন করতেন। জাতীয়তার শরীরে ধর্ম কিভাবে ঢোকে আমি এই পাঁচ কিস্তিতে কিছু হলেও পরিষ্কার করেছি। আরো পরিষ্কার করবো। পরের কিস্তিগুলোয়।
লীলেন ভাই অনেক সংক্ষেপে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। বিষয়টাকে ক্লিয়ার করানোর জন্য।
আপনাকে ধন্যবাদ।
করতেন না। করলে রাজ্জাক সাহেবের অবস্থানটা সঠিক না বেঠিক এটা বিচারের ভার আমাদের ওপর ছেড়ে না দিয়ে নিজেই খণ্ডন করতেন। জাতীয়তার শরীরে ধর্ম কিভাবে ঢোকে আমি এই পাঁচ কিস্তিতে কিছু হলেও পরিষ্কার করেছি। আরো পরিষ্কার করবো। পরের কিস্তিগুলোয়।
লীলেন ভাই অনেক সংক্ষেপে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। বিষয়টাকে ক্লিয়ার করানোর জন্য।
আপনাকে ধন্যবাদ।
২১
আমি বিভিন্ন বাংলা ব্লগে ঢুঁ মারি অবসর পেলেই। এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা কিভাবে চিন্তা-ভাবনা করে তা ব্লগে পড়লে বোঝা যায়। আমি প্রায় প্রতিদিন সচলায়তন খুলে আশা করে থাকি আজ হয়তো ছফাগিরির একটা কিস্তি পড়তে পারবো। ছফাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে মননশীল ব্যক্তিত্ব বলে আমি মনে করি। তাঁর দর্শন কি ভাবনা আমাদের চিন্তাশক্তিকে উসকে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাছে কৃতজ্ঞ এই অসাধারণ রকমের ভাল একটা সিরিজ দিয়ে বাংলা ব্লগকে উপহার দেয়ার জন্য। আপনি আমার একজন অতি প্রিয় ব্লগারে পরিণত হয়েছেন অল্প কয়েকদিনের মধ্যে।
আপনার লেখালেখির মধ্যে আপনার নিজের কথা উঠে আসে। তবে সেটাকে আপনি ছফার দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করেন। যে সচল এই লেখা পড়ে (অবশ্য পড়ে বুঝেছেন এটা দাবী করা যাবে না, এখানে কিছু কিছু বিষয়ে মতৈক্য হলেও তার আনুষঙ্গিক রেফারেন্স না পড়ে দুম করে বুঝে নেয়া প্রায় অসম্ভব) লেখাটাকে ২০% দেয়ার যোগ্য মনে করেছেন তিনি ছফাদ্বেষী। ছফাকে তিনি গালি পাড়েন বেহুদা। অজ্ঞানতা থেকে কিংবা লোকমুখে শুনে। সচল হয়ে গিয়েও তিনি অন্ধ ও প্রতিক্রিয়াশীল। ছফাকে নিয়ে নানা রকম তর্ক হতে পারেন কিন্তু তাঁর ভাবনাকে ২০% রেটিং দেয়ার সাহস যে সচলের তার অসীম ক্ষমতার আমরা ছোঁয়া পেতে আগ্রহী। এই ঔদ্ধত্য ক্ষমার অযোগ্য। আর পড়ে বুঝি নাই ,ক্ষমতা আছে তাই দাপট দেখালাম এই মানসিকতা নিয়ে করলাম তাহলে সেই সচল মানসিকভাবে অচল।
হে মান্যবর সচল, চোরের মতো নিজের দুর্বল শিরদাঁড়া লুকোচ্ছেন কেন? আত্মপ্রকাশ করুন প্লিজ। ছফাভাবনাকে ২০% দিয়ে চোরের মতো গা ডাকছেন কেন?
ছফাগিরির আগের পর্বগুলোতে যেভাবে সুন্দর একটা তর্কের পরিবেশ ছিল এখানে তা আরো ভালো করে ফিরে আসুক। আসুন সবাই মিলে কদাকার না করে পরিবেশ সুন্দর করি।
আপনার লেখালেখির মধ্যে আপনার নিজের কথা উঠে আসে। তবে সেটাকে আপনি ছফার দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করেন। যে সচল এই লেখা পড়ে (অবশ্য পড়ে বুঝেছেন এটা দাবী করা যাবে না, এখানে কিছু কিছু বিষয়ে মতৈক্য হলেও তার আনুষঙ্গিক রেফারেন্স না পড়ে দুম করে বুঝে নেয়া প্রায় অসম্ভব) লেখাটাকে ২০% দেয়ার যোগ্য মনে করেছেন তিনি ছফাদ্বেষী। ছফাকে তিনি গালি পাড়েন বেহুদা। অজ্ঞানতা থেকে কিংবা লোকমুখে শুনে। সচল হয়ে গিয়েও তিনি অন্ধ ও প্রতিক্রিয়াশীল। ছফাকে নিয়ে নানা রকম তর্ক হতে পারেন কিন্তু তাঁর ভাবনাকে ২০% রেটিং দেয়ার সাহস যে সচলের তার অসীম ক্ষমতার আমরা ছোঁয়া পেতে আগ্রহী। এই ঔদ্ধত্য ক্ষমার অযোগ্য। আর পড়ে বুঝি নাই ,ক্ষমতা আছে তাই দাপট দেখালাম এই মানসিকতা নিয়ে করলাম তাহলে সেই সচল মানসিকভাবে অচল।
হে মান্যবর সচল, চোরের মতো নিজের দুর্বল শিরদাঁড়া লুকোচ্ছেন কেন? আত্মপ্রকাশ করুন প্লিজ। ছফাভাবনাকে ২০% দিয়ে চোরের মতো গা ডাকছেন কেন?
ছফাগিরির আগের পর্বগুলোতে যেভাবে সুন্দর একটা তর্কের পরিবেশ ছিল এখানে তা আরো ভালো করে ফিরে আসুক। আসুন সবাই মিলে কদাকার না করে পরিবেশ সুন্দর করি।
২২
পড়লাম। তারা নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। তারা দিয়ে কি হয়? আপনার লেখাই আপনার পরিচয়।
২৩
শুভাশীষ,
আপনার দৃষ্টিটা ঐ তারার দিকে নেবেন না প্লীজ ! বরং এখানেও গবেষণার বিষয় উপ্ত রয়েছে মনে করে একবিংশ শতকের আধুনিক অন্তর্জালিক বাঙালি মনের গতিবিধিও বুঝতে চেষ্টা করুন। অতি নগন্য হলেও এটা একটা পয়েন্ট যে, আমাদের মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা কমপ্রেক্সিটিটা কোথায় কিভাবে প্রকাশিত হয়। আপনার বিষয়ের সাথে চমৎকার সাজুয্যপূর্ণ এসব ঘটনাগুলোর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দিয়ে ঘটনার স্বতঃস্ফূর্ততা নষ্ট করে আরেকটা গবেষণার সম্ভাবনাও বন্ধ করে দিচ্ছেন। হা হা হা ! লেখা দুর্দান্ত হচ্ছে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আপনার দৃষ্টিটা ঐ তারার দিকে নেবেন না প্লীজ ! বরং এখানেও গবেষণার বিষয় উপ্ত রয়েছে মনে করে একবিংশ শতকের আধুনিক অন্তর্জালিক বাঙালি মনের গতিবিধিও বুঝতে চেষ্টা করুন। অতি নগন্য হলেও এটা একটা পয়েন্ট যে, আমাদের মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা কমপ্রেক্সিটিটা কোথায় কিভাবে প্রকাশিত হয়। আপনার বিষয়ের সাথে চমৎকার সাজুয্যপূর্ণ এসব ঘটনাগুলোর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দিয়ে ঘটনার স্বতঃস্ফূর্ততা নষ্ট করে আরেকটা গবেষণার সম্ভাবনাও বন্ধ করে দিচ্ছেন। হা হা হা ! লেখা দুর্দান্ত হচ্ছে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
২৪
১.
আপনি ছফার প্রথম যে কথাগুলো উদ্ধৃত করলেন, বিশেষ করে চিন্তার স্বাধীনতা বা স্বাধীন চিন্তা নিয়ে, আমি যতদূর জানি, ছফা এ ব্যাপারে পাওলো ফ্রেইরির কাছ থেকে অনেক কিছু ধার করেছেন। ফ্রেইরি এ বিষয়গুলো মূলত শিক্ষা, সমাজ সংস্কার এবং উন্নয়ন-ধারণার সাথে সম্পর্কিত করে দেখিয়েছেন। ছফা ফ্রেইরির এ দর্শনের সাথে পুরোপুরি একমত ছিলেন যে, নিপীড়িত বা অত্যাচারিত বা বঞ্চিত মানুষ স্বাধীন চিন্তা ও চিন্তার স্বাধীনতাকে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে ভয় পায়। ফলে যা তার মুক্তির উপায়, সেটাকেই সে অনেক সময় গ্রহণ করতে অনীহা দেখায় বা দ্বিধান্বিত থাকে। ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় ছফা একবার আমাকে এটা বলেছিলেন। তিনিই প্রথম আমাকে পাওলো ফ্রেইরি ধরিয়েছিলেন। সুতরাং ছফার মতামত গঠনে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে এই নামটাও জুড়ে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে পাওলো ফ্রেইরির 'পেডাগজি অব দ্য অপ্রেসড' বইটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
২.
অনুরোধ থাকবে- সিরিজ শেষ করার পর সবগুলো লেখাকে এক মলাটে নিয়ে আসবেন- পিডিএফ-এ। তাতে পাঠকের পক্ষে সুবিধা হবে এবং লেখাটি কম আয়াসে ছড়িয়ে দেয়া যাবে।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
আপনি ছফার প্রথম যে কথাগুলো উদ্ধৃত করলেন, বিশেষ করে চিন্তার স্বাধীনতা বা স্বাধীন চিন্তা নিয়ে, আমি যতদূর জানি, ছফা এ ব্যাপারে পাওলো ফ্রেইরির কাছ থেকে অনেক কিছু ধার করেছেন। ফ্রেইরি এ বিষয়গুলো মূলত শিক্ষা, সমাজ সংস্কার এবং উন্নয়ন-ধারণার সাথে সম্পর্কিত করে দেখিয়েছেন। ছফা ফ্রেইরির এ দর্শনের সাথে পুরোপুরি একমত ছিলেন যে, নিপীড়িত বা অত্যাচারিত বা বঞ্চিত মানুষ স্বাধীন চিন্তা ও চিন্তার স্বাধীনতাকে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে ভয় পায়। ফলে যা তার মুক্তির উপায়, সেটাকেই সে অনেক সময় গ্রহণ করতে অনীহা দেখায় বা দ্বিধান্বিত থাকে। ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় ছফা একবার আমাকে এটা বলেছিলেন। তিনিই প্রথম আমাকে পাওলো ফ্রেইরি ধরিয়েছিলেন। সুতরাং ছফার মতামত গঠনে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে এই নামটাও জুড়ে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে পাওলো ফ্রেইরির 'পেডাগজি অব দ্য অপ্রেসড' বইটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
২.
অনুরোধ থাকবে- সিরিজ শেষ করার পর সবগুলো লেখাকে এক মলাটে নিয়ে আসবেন- পিডিএফ-এ। তাতে পাঠকের পক্ষে সুবিধা হবে এবং লেখাটি কম আয়াসে ছড়িয়ে দেয়া যাবে।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
২৫
সম্পূর্ণ সহমত !! আমরা যারা ছফার সম্পর্কে কম জানি, বলতে গেলে জানিই না- তাদের জন্যে কাজটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে। বলতে লজ্জা নাই- এই চমৎকার সিরিজটি টানা পড়িনি কেবল মাত্র কিস্তির কারণেই; সুতরাং একটা পিডিএফ করা হলে আমার মত আরো বহু পাঠকের সুবিধে হতো।
_________________________________________
সেরিওজা
_________________________________________
সেরিওজা
২৬
ছফাগিরির কিস্তি এক থেকে পাঁচ পিডিয়েফ করে দিলাম। কিছু গুরুত্বপূর্ণ কমেন্ট সহ। যাদের লাগবে ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
ছফাগিরি (কিস্তি এক-পাঁচ)
৫১৪ কেবি
বইয়ের লিঙ্কের মন্তব্যের নিচে প্রতি-মন্তব্য না করার জন্য অনুরোধ রইল। পিডিয়েফটা আরো এডিট করা হবে।
ছফাগিরি (কিস্তি এক-পাঁচ)
৫১৪ কেবি
বইয়ের লিঙ্কের মন্তব্যের নিচে প্রতি-মন্তব্য না করার জন্য অনুরোধ রইল। পিডিয়েফটা আরো এডিট করা হবে।
২৭
শিক্ষাতাত্ত্বিক হিসাবে আপনার অবশ্যই ফ্রেইরির দর্শনের সাথে ভাল পরিচয় আছে। আমি এব্যপারে অজ্ঞ, কেবল তার পেডাগজি অফ অপ্রেসড বইটার অনলাইন একটা কপি (অসম্পূর্ণ) খুজে পেলাম এখানে।
উদ্ধৃতি
তা মানলাম। ফ্রেইরির বইটিতে নিশ্চই এই ভয় অতিক্রম করার একটা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা আছে। সেবিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতা থেকে আলোকপাত করবেন কি? বিশেষত বাংলাদেশ প্রেক্ষিতে? যদি আগে এবিষয়ে কোথাও লিখে থাকেন, তার লিংক দিতে পারেন। বিষয়টা এই পোস্টের সাথে পুরোপুরি সম্পর্কিত নয় হয়ত। সেক্ষেত্রে আগে লেখা না থাকলে আলাদা পোস্ট দিতে পারেন।ছফা ফ্রেইরির এ দর্শনের সাথে পুরোপুরি একমত ছিলেন যে, নিপীড়িত বা অত্যাচারিত বা বঞ্চিত মানুষ স্বাধীন চিন্তা ও চিন্তার স্বাধীনতাকে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে ভয় পায়। ফলে যা তার মুক্তির উপায়, সেটাকেই সে অনেক সময় গ্রহণ করতে অনীহা দেখায় বা দ্বিধান্বিত থাকে।
২৮
ফ্রেইরি ওই বইতেই ভয় অতিক্রম করার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। যেহেতু সফট কপিটি দেখেছেন, সুতরাং সেটা পড়ে নিতে পারেন।
না, এ ব্যাপারে আগে কোথাও কিছু লিখি নি। একটা কিছু লেখার কথা ভাবছি। ধন্যবাদ।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
না, এ ব্যাপারে আগে কোথাও কিছু লিখি নি। একটা কিছু লেখার কথা ভাবছি। ধন্যবাদ।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
২৯
৩০
গৌতমদা,
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ছফার মানসিক চিন্তার মাপ বড় হবার পেছনে বই বিশাল ভূমিকা রেখেছে। বিচার করার ক্ষমতা ভাল বলে ভাল বইয়ের পেছনে সময় ও দিয়েছেন অনেক। পাওলো ফ্রেইরির 'পেডাগজি অব দা অপ্রেসড্' আমি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। আরো কয়েকবার পড়ব। তাঁর ইকোপেডাগজি নিয়ে আমি কিছুদিন হাতড়াচ্ছি। ছফার চিন্তায় পাওলো কিঞ্চিৎ ভর করেছেন- আমি সহমত এই কথায়। ফ্রেইরির বঞ্চিতদের শিখানোর পদ্ধতি নিয়ে এখন আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এডুকেশন থিয়োরি এণ্ড প্র্যাক্টিস বিভাগগুলোয় ব্যাপক গবেষণা চলছে। আমি আপনার আর ইশতিয়াক রউফের শিক্ষা বিষয়ক লেখাগুলো ভাল করে পড়ি। কমেন্টানোর জন্য রসদ নিচ্ছি। আরেকটা বই আছে। আন্তন ম্যাকারেঙ্কোর। ‘রোড টু লাইফ’। মীর না প্রগতি বাংলা করেছে। বাংলা বোধহয় ‘জীবনের পথে’। উনার আরো একটা বইয়ের বাংলা অনুবাদ পাওয়া যেত। ‘বাঁচতে শেখা’।
ছফার ‘পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গপুরাণ’ বইতে ‘রোড টু লাইফ’ পড়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে বিস্তর কথা আছে।
একটু অন্য কথা। সিনেমা নিয়ে আমার লেখাগুলোতে লিঙ্কের বহর দেখে পাঠক আমার লেখা ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন। আমি জ্ঞান কপচানোর চেষ্টা করি বলে ভেবে নিতেন হয়তো। আমি দিতাম অন্য কারণে। পরে যাতে লিঙ্কগুলো খুঁজে পাই এজন্যে। এক জায়গায় সব থাকল- এই রকম আর কি। আমি নিজের জন্য লিখি। ঠিকাছে। কিন্তু পাঠকের জন্য লিখি- এটা ও একদম ঠিক। তাঁরা অপছন্দ করেন, তাই আর সিনেমা নিয়ে লিখছি না। লিঙ্ক ও কম দিই লেখালেখিতে। ;)
ছফার ‘পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গপুরাণ’ বইতে ‘রোড টু লাইফ’ পড়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে বিস্তর কথা আছে।
একটু অন্য কথা। সিনেমা নিয়ে আমার লেখাগুলোতে লিঙ্কের বহর দেখে পাঠক আমার লেখা ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন। আমি জ্ঞান কপচানোর চেষ্টা করি বলে ভেবে নিতেন হয়তো। আমি দিতাম অন্য কারণে। পরে যাতে লিঙ্কগুলো খুঁজে পাই এজন্যে। এক জায়গায় সব থাকল- এই রকম আর কি। আমি নিজের জন্য লিখি। ঠিকাছে। কিন্তু পাঠকের জন্য লিখি- এটা ও একদম ঠিক। তাঁরা অপছন্দ করেন, তাই আর সিনেমা নিয়ে লিখছি না। লিঙ্ক ও কম দিই লেখালেখিতে। ;)
৩১
উদ্ধৃতি
ইয়ে -....... এখানে ঘৃণা শব্দটা অন্য কোন শব্দ দিয়ে রিপ্লেস করা যায় হয়তো ....সিনেমা নিয়ে আমার লেখাগুলোতে লিঙ্কের বহর দেখে পাঠক আমার লেখা ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
৩২
'ঘৃণা ভরে' রিপ্লেস করলাম 'বিরক্ত হয়ে' .....................
৩৩
উদ্ধৃতি
ভাই, বেশি বেশি করে লিংক দিও। আমার মতন আলসে লোকের তাতে অনেক লাভ।তাঁরা অপছন্দ করেন, তাই আর সিনেমা নিয়ে লিখছি না। লিঙ্ক ও কম দিই লেখালেখিতে।
৩৪
কারা বিরক্ত হন জানি না, কিন্তু লিঙ্ক দিলে আমার মতো অলস মানুষদের কাজে লাগে।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
৩৫
এই পর্বটা পড়ে আমার মনে হচ্ছে সম্পূর্ণ আহমদ ছফাকে আমি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি
০২
যে লেখক এই লেখা লিখতে পারেন তিনি যদি একতারা দুইতারা নিয়ে ভাবেন তাকে আমার ছফা বর্ণিত মুসলমান পুথিকারদের থেকে বেশি ভাবার সুযোগ থাকে না
০২
যে লেখক এই লেখা লিখতে পারেন তিনি যদি একতারা দুইতারা নিয়ে ভাবেন তাকে আমার ছফা বর্ণিত মুসলমান পুথিকারদের থেকে বেশি ভাবার সুযোগ থাকে না
৩৬
তারা নিয়ে খানিক ভ্যানতারা হওয়ায় দুঃখপ্রকাশ করছি।
৩৭
চমৎকার সিরিজ হচ্ছে। প্রবন্ধগুলোর সফট কপি কোন ভাবে পাওয়া যাবে? যা যা পাওয়া যায় বা যা যা আপনার কাছে আছে অনুগ্রহ করে mmali@ualberta.ca এই ঠিকানায় পাঠালে খুশি হব। আর কপি রাইটের যদি ঝামেলা না থাকে তাহলে আমি বলবো প্রবন্ধগুলো একে একে উইকি সঙ্কলনে যুক্ত করে দিলে সবাই প্রবন্ধগুলো পড়তে পারতো। এ ক্ষেত্রে কাজ ভাগাভাগি করে নিতে পারি। রাগীব বারবার উইকিকে সমৃদ্ধ করার কথা বলে যাচ্ছে। আমারও মনে হয় আমরা যারা ব্লগে সময় দিই, তাঁরা পনেরো থেকে ত্রিশ মিনিট করে উইকিকে সময় দিলে পরবর্তী এবং এই প্রজন্মের জন্য ভাল একটি কাজ হবে। যা প্রকান্তরে দেশের জন্য কিছু করা হবে।
@ লীলেন ভাই
@ লীলেন ভাই
উদ্ধৃতি
এটা লেখককে তারা কত দিয়েছে সেটা নিয়ে লেখক যতটা না বেশি চিন্তিত তার চেয়ে বেশি চিন্তিত আমাদের মাঝে এমন কেউ আছে যিনি প্রতিক্রিয়াশীল এবং সামনে আসার সৎ সাহস নেই। কারোর ছফা বা লেখকের লেখা ভাল না লাগতেই পারে, তবে সেটা মন্তব্যে বলার মত সাহস থাকা উচিৎ। অন্তত লেখক যখন জানতে চান কি কারণে লেখাটিতে এক দেওয়া হয়েছে। সমালোচনা পেলে লেখকের নিজের উন্নতি করার সুযোগ থাকে। যে লেখক এই লেখা লিখতে পারেন তিনি যদি একতারা দুইতারা নিয়ে ভাবেন তাকে আমার ছফা বর্ণিত মুসলমান পুথিকারদের থেকে বেশি ভাবার সুযোগ থাকে না
৩৮
স্বাধীন ভাই,
সম্ভবত আহমদ ছফার ভাইয়ের ছেলে নূরুল আনোয়ার ছফার লেখাগুলোর কপিরাইট নিয়েছেন। ছফার লেখাগুলো এতো গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো অনলাইনে পাওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে যাঁরা আছেন তাঁরা নূরুল আনোয়ারের সাথে কথা বলে দেখতে পারেন। ছফার লেখালেখি আট খণ্ডে প্রকাশিত। আমার কাছে ছফাসমগ্র নেই। বাংলাদেশ থেকে শীঘ্রই আমার কাছে ছফাসমগ্র এসে পৌঁছাবে। দেখা যাক।
সম্ভবত আহমদ ছফার ভাইয়ের ছেলে নূরুল আনোয়ার ছফার লেখাগুলোর কপিরাইট নিয়েছেন। ছফার লেখাগুলো এতো গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো অনলাইনে পাওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে যাঁরা আছেন তাঁরা নূরুল আনোয়ারের সাথে কথা বলে দেখতে পারেন। ছফার লেখালেখি আট খণ্ডে প্রকাশিত। আমার কাছে ছফাসমগ্র নেই। বাংলাদেশ থেকে শীঘ্রই আমার কাছে ছফাসমগ্র এসে পৌঁছাবে। দেখা যাক।
৩৯
ছফা এভাবে কেন লিখলেন? ছফা এটা কেন লিখলেন?.......
আমার ধারণা, ছফা যদি 'এভাবে' আর 'এরকম' না লিখতেন তাহলে বর্তমানের চেয়ে আরও কয়েকগুন বেশ প্রশ্ন ছফার দিকে ধেয়ে আসতো।
আমার ধারণা, ছফা যদি 'এভাবে' আর 'এরকম' না লিখতেন তাহলে বর্তমানের চেয়ে আরও কয়েকগুন বেশ প্রশ্ন ছফার দিকে ধেয়ে আসতো।
৪০
আপনার বিশ্লেষণ ভালো লাগছে। ছফার লেখাও (লিংক থেকে ডাউনলোড করে পড়লাম)। তবে শুরুতে যেটা বলেছেন ‘বাঙালী মুসলমানের মন’ পড়তে গিয়ে রেফারেন্সের অভাব অনুভব করেছি। সে হিসেবে ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বেশ সাবলীল। ‘বাঙালী মুসলমানের মনে’ ছফার পুঁথিসাহিত্যের বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের (বিশেষ করে চট্টগ্রামের) ‘মাজার/দরগা' সংস্কৃতির কথা মনে পড়লো। এই ভক্তিরসও বাঙালী ইসলাম ধর্মে আমদানী করেছে। এমনটি আর কোথাও নেই।
অবিভক্ত বাংলার মুসলিম জনসংখ্যার ম্যাপটা ইন্টারেস্টিং। মালদা, মুর্শিদাবাদ মুসলিম অধ্যুষিত হয়েও দেখছি পূর্ব পাকিস্তানে পড়ে নি। গণভোটে আসাম থেকে যেমন সিলেট পাকিস্তানে যোগ দিয়েছিল তেমনি এরাও কি ভারতের সাথে থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল? অবশ্য ১৯৪৭-এ সিলেট আর উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ছাড়া আর কোথাও গণভোট হয়েছে বলে খুঁজে পেলাম না।
আওয়ামী মুসলিম লীগের সকল নেতৃবৃন্দ এককালে ছিল পাকিস্তানি। আমার শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক সেদিন কথা প্রসঙ্গে আমাকে বললেন, তাঁর কাছে শেখ মুজিবের কিছু ছবি আছে, সেই সব ছবিতে জিন্নাহ মারা যাবার পর শেখ মুজিব হাউমাউ করে কাঁদছেন।
অবিভক্ত বাংলার মুসলিম জনসংখ্যার ম্যাপটা ইন্টারেস্টিং। মালদা, মুর্শিদাবাদ মুসলিম অধ্যুষিত হয়েও দেখছি পূর্ব পাকিস্তানে পড়ে নি। গণভোটে আসাম থেকে যেমন সিলেট পাকিস্তানে যোগ দিয়েছিল তেমনি এরাও কি ভারতের সাথে থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল? অবশ্য ১৯৪৭-এ সিলেট আর উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ছাড়া আর কোথাও গণভোট হয়েছে বলে খুঁজে পেলাম না।
আওয়ামী মুসলিম লীগের সকল নেতৃবৃন্দ এককালে ছিল পাকিস্তানি। আমার শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক সেদিন কথা প্রসঙ্গে আমাকে বললেন, তাঁর কাছে শেখ মুজিবের কিছু ছবি আছে, সেই সব ছবিতে জিন্নাহ মারা যাবার পর শেখ মুজিব হাউমাউ করে কাঁদছেন।
৪১
উদ্ধৃতি
সিলেট আর উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত এলাকাটা তখন রাজনৈতিকভাবে অনেক বেশি সক্রিয় আর সচেতন ছিল বলেই এই জায়গাগুলোতে গণভোটের আয়োজন হয়েছিলমালদা, মুর্শিদাবাদ মুসলিম অধ্যুষিত হয়েও দেখছি পূর্ব পাকিস্তানে পড়ে নি। গণভোটে আসাম থেকে যেমন সিলেট পাকিস্তানে যোগ দিয়েছিল তেমনি এরাও কি ভারতের সাথে থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল? অবশ্য ১৯৪৭-এ সিলেট আর উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ছাড়া আর কোথাও গণভোট হয়েছে বলে খুঁজে পেলাম না।
মূলত অন্য এলাকার মতামতকে তখন পাত্তা দেয়া হয়নি রাজনৈতিক সক্রিয়তার অভাবে
৪৭ এ দেশ বিভাগের সময় মণিপুর স্বাধীনতা চেয়েছিল। আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে
কিন্তু দেশ বিভাগের পরে নেহেরু মিলিটারি পাঠিয়ে তা ঠাণ্ডা করে দেন
৪২
ঐ গনভোট নিয়ে ও ঘটনা আছে। কাছাড়ের আদিবাসীদের ভোটকেন্দ্রে আসতেই দেয়া হয়নি পাকিস্তান কায়েমের দ্বীনি জোশে
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
৪৩
মোরশেদ ভাই,
আমি যদ্দূর জানি সিলেটের গণভোটে ভোট দিয়েছিল জনতার আঠারো শতাংশের ও কম। পাকিস্তান কায়েমের দ্বীনি জোশ কাজ করা সত্ত্বেও কিভাবে কাছাড় ভারতের মধ্যে পড়ে গেল- এই ইতিহাস আমি ঠিক জানি না।
একটু জানালে খুশি হবো।
একটু জানালে খুশি হবো।
৪৪
বৃহত্তর সিলেটের ৭ মহকুমা'র তিনটি ভারত দেয়নি- কাছাড়, হাইলাকান্দি, করিমগঞ্জ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
৪৫
লীলেনদা,
সেই সময়ে মনিপুরের স্বাধীনতা নিয়ে যা হয়েছিল একটু ডিটেইলে জানালে ভালো হয়।
সেই সময়ে মনিপুরের স্বাধীনতা নিয়ে যা হয়েছিল একটু ডিটেইলে জানালে ভালো হয়।
৪৬
তানভীর ভাই,
মন্তব্যের জন্য থ্যাংকস। একটু বলি।
মন্তব্যের জন্য থ্যাংকস। একটু বলি।
মুর্শিদাবাদ আর মালদা ১৯৪৭ সালে প্রথমে পাকিস্তানের অধীনে ছিল। দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ বিভাগ হয়। মুর্শিদাবাদ আর মালদা মুসলমান অধ্যুষিত হওয়ায় পূর্ব বাংলার অধীনে ছিল প্রথম। সাতচল্লিশ সালের ১৭ আগস্ট পর্যন্ত সেখানে পাকিস্তানের পতাকা ওড়ে। পরে ১৭ আগস্ট রেডক্লিফ লাইন ঘোষণা করা হয়। সেখানে দেখা যায় মুর্শিদাবাদ আর মালদা ভারতের ভাগে পড়েছে। আবার সেই কালে পার্বত্য চট্টগ্রামে মুসলমান ছিল না বললেই চলে। সেটা গিয়ে পড়লো পূর্ব বাংলার ভাগে। নেহেরু এতে খানিক গোস্বা করেছিলেন শোনা যায়।
গণভোটের মাধ্যমে ১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ জুলাই সিলেট আসাম থেকে বিভক্ত হয়ে পূর্ব বাংলার দিকে ঝুঁকে পড়ে। ভোট পড়েছিল মোট জনসংখ্যার আঠারো শতাংশের নিচে। দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে হিন্দুপ্রধান এবং মুসলিমপ্রধান অঞ্চলগুলো যথাক্রমে ভারত ও পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তি চলছিল। যেসব জায়গায় সুরাহা হচ্ছিল না সেখানে গণভোটের আয়োজন হয়েছিল।
আসাম সাথে সিলেট, কাছার আর করিমগঞ্জ নিয়ে একটা লিংক পেলাম। পড়তে পারেন।
গণভোটের মাধ্যমে ১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ জুলাই সিলেট আসাম থেকে বিভক্ত হয়ে পূর্ব বাংলার দিকে ঝুঁকে পড়ে। ভোট পড়েছিল মোট জনসংখ্যার আঠারো শতাংশের নিচে। দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে হিন্দুপ্রধান এবং মুসলিমপ্রধান অঞ্চলগুলো যথাক্রমে ভারত ও পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তি চলছিল। যেসব জায়গায় সুরাহা হচ্ছিল না সেখানে গণভোটের আয়োজন হয়েছিল।
আসাম সাথে সিলেট, কাছার আর করিমগঞ্জ নিয়ে একটা লিংক পেলাম। পড়তে পারেন।
৪৭
জানা হলো অনেক কিছু। ধন্যবাদ। ভোট আঠারো শতাংশের কম পড়লেও সিলেট মোটামুটি বাধ্য হয়েই বোধহয় পাকিস্তানে যোগ দিয়েছে। কারণ একই ভাষাভাষী স্বাধীন আসাম প্রতিষ্ঠার জন্য আসামীয়রা বাংলাভাষী সিলেটকে বাদ দিতে চেয়েছিল। আপনার দেয়া লিংক পড়ে যা বুঝলাম।
"It was indeed the lifetime opportunity for the Assamese leadership "to get rid of Sylhet" and carve out a linguistically more homogenous province. When the results of the referendum were declared, there was a feeling of relief in the Brahmaputra valley."
"It was indeed the lifetime opportunity for the Assamese leadership "to get rid of Sylhet" and carve out a linguistically more homogenous province. When the results of the referendum were declared, there was a feeling of relief in the Brahmaputra valley."
৪৮
লিংকটা থেকে কাজের বিষয় কিছু পাইনি। অহমীয়া জাতীয়তাবাদী চেতনায় ভরা।
আমার দৃষ্টিতে আদি ব্রহ্মপূত্রের পূর্ব পাড়ের কাছাড়-করিমগঞ্জ-সিলেট সহ সম্পূর্ণ বরাক-উপত্যকা ভূপ্রাকৃতিক এবং ভাষাগত উভয় দিক থেকে একটা একক স্বত্বা।
এটা ব্রিটিশ-আমলে প্রশাসনিক সুবিধার জন্য আসাম প্রদেশের অংশ ছিল বটে। কিন্তু ভু-প্রাকৃতিক/ভাষাগত বিচারে এটা কোনভাবেই মেঘালয়-উত্তর ব্রহ্মপূত্র উপত্যকার অহম রাজ্যের অংশ নয়।
৪৭ এর দেশ বিভাগে সিলেট পাকিস্তানে যোগ দেয়ায় কাছাড়-করিমগঞ্জ বলতে গেলে অহমীয়া জাতিয়তাবাদের কবলে পড়ে বিধ্বস্তই হয়েছে। এলাকার কেউ কৃষিজীবি বাংলা/সিলেটী ভাষী হলেই সে হয়ে যায় পাকিস্তান/বাংলাদেশের রেফুজি। লিংকে দেয়া প্রবন্ধটা অন্তত তাই প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে।
(সিলেট অঞ্চলের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা-ধারী হাসানভাই/লীলেন ভাই এব্যপারে ভাল বলতে পারবেন)
আমার দৃষ্টিতে আদি ব্রহ্মপূত্রের পূর্ব পাড়ের কাছাড়-করিমগঞ্জ-সিলেট সহ সম্পূর্ণ বরাক-উপত্যকা ভূপ্রাকৃতিক এবং ভাষাগত উভয় দিক থেকে একটা একক স্বত্বা।
এটা ব্রিটিশ-আমলে প্রশাসনিক সুবিধার জন্য আসাম প্রদেশের অংশ ছিল বটে। কিন্তু ভু-প্রাকৃতিক/ভাষাগত বিচারে এটা কোনভাবেই মেঘালয়-উত্তর ব্রহ্মপূত্র উপত্যকার অহম রাজ্যের অংশ নয়।
৪৭ এর দেশ বিভাগে সিলেট পাকিস্তানে যোগ দেয়ায় কাছাড়-করিমগঞ্জ বলতে গেলে অহমীয়া জাতিয়তাবাদের কবলে পড়ে বিধ্বস্তই হয়েছে। এলাকার কেউ কৃষিজীবি বাংলা/সিলেটী ভাষী হলেই সে হয়ে যায় পাকিস্তান/বাংলাদেশের রেফুজি। লিংকে দেয়া প্রবন্ধটা অন্তত তাই প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে।
(সিলেট অঞ্চলের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা-ধারী হাসানভাই/লীলেন ভাই এব্যপারে ভাল বলতে পারবেন)
৪৯
আপনার ধারনাই ঠিক। প্রশাসনিক কারনে সিলেটকে আসামের অংশ করা হলেও তার আগে বৃহত্তর সিলেট সবসময়ই বাংলার অংশ ছিলো। আঞ্চলিক সাহচর্য্যের কারনে অহমিয়া'দের সাথে কিছুটা সাংস্কৃতিক মিল থাকলেও সিলেট অঞ্চলের মানুষেরা জাতিগতভাবে বাঙ্গালীই। সিলেটী কথ্য ভাষা বাংলা ভাষারই একটা ডায়ালেক্ট।
ভারতের দখলে থেকে যাওয়া সিলেটের তিনমহকুমার সিংহভাগ মানুষ সিলেটী, এখনো তারা সিলেটী সংস্কৃতি ধারন করেন।এতো বছর পর ও সুরমা উপত্যকার সাথে বরাক উপত্যকার চমৎকার হৃদ্যতা রয়ে গেছে।
আমাদের একজন অতিথি সচল শুভপ্রসাদ নন্দী ঐ অঞ্চলের মানুষ। তিনি আরো ভালো বলতে পারবেন।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ভারতের দখলে থেকে যাওয়া সিলেটের তিনমহকুমার সিংহভাগ মানুষ সিলেটী, এখনো তারা সিলেটী সংস্কৃতি ধারন করেন।এতো বছর পর ও সুরমা উপত্যকার সাথে বরাক উপত্যকার চমৎকার হৃদ্যতা রয়ে গেছে।
আমাদের একজন অতিথি সচল শুভপ্রসাদ নন্দী ঐ অঞ্চলের মানুষ। তিনি আরো ভালো বলতে পারবেন।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
৫০
তানভীর ভাই, আসাদ ভাই, মোরশেদ ভাই, আপনাদের মন্তব্যের জন্য থ্যাংকস।
লিংক দেয়ার পেছনে কারণ ছিল। ইতিহাসকে কিভাবে নিজের মতো লেখা যায় সেটার উপলব্ধি খুবই জরুরি। ছাপার অক্ষরে যা আসে তার কতটুকু আপনি বিশ্বাস করবেন সেটা আপনার ব্যক্তিগত পড়াশোনা, প্রজ্ঞা আর কাণ্ডজ্ঞানের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে।
সুজিত চৌধুরি ভাল ভাল বই থেকে রেফারেন্স টুকেছেন। কিন্তু উপস্থাপনে তাঁর অহমিয়া উন্নাসিকতা চাপা পড়ে থাকে নি।
কাছার এবং করিমগঞ্জের অনেক লোক এখনো সিলেটি ভাষায় কথা বলে। রেডক্লিফ সীমারেখা তাঁদেরকে মানসিকভাবে সিলেট থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে নি।
নবাব সিরাজদ্দৌলাকে নিয়ে লেখা বিভিন্নজনের ইতিহাস পড়ার পর এক বিচিত্র অনুভূতি মাথায় আসবে। ব্যক্তি সিরাজদ্দৌলাকে চিনে নিতে খুব সমস্যা হবে। কেউ কেউ তাঁকে মাথায় তুলে ফেলেছেন আবার অনেকেই তার চরিত্রে পৃথিবীর যাবতীয় স্যাডিজম এক সাথে এনে জড়ো করেছেন। নির্মোহ দৃষ্টি নিয়ে এই ঐতিহাসিক চরিত্রের বিচার করা হয়নি।
আমার মতে ইতিহাস লিখে যেতে আপনাকে নির্লোভ হতে হবে, নির্মোহ হতে হবে। আবেগকে পুরো বাদ দিতে হবে।
সিলেট রেফারেন্ডাম নিয়ে একটা সঠিক এবং পুরো সত্য লেখা আশা করছি। যে কারো কাছ থেকে।
একটা তথ্য। বিদ্যুৎ চক্রবর্তী রচিত ‘দা পার্টিশান অভ বেঙ্গল এণ্ড আসাম, ১৯৩২-১৯৪৭’ বইতে সিলেট রেফারেন্ডাম নিয়ে কিছু তথ্য আছে।
লিংক দেয়ার পেছনে কারণ ছিল। ইতিহাসকে কিভাবে নিজের মতো লেখা যায় সেটার উপলব্ধি খুবই জরুরি। ছাপার অক্ষরে যা আসে তার কতটুকু আপনি বিশ্বাস করবেন সেটা আপনার ব্যক্তিগত পড়াশোনা, প্রজ্ঞা আর কাণ্ডজ্ঞানের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে।
সুজিত চৌধুরি ভাল ভাল বই থেকে রেফারেন্স টুকেছেন। কিন্তু উপস্থাপনে তাঁর অহমিয়া উন্নাসিকতা চাপা পড়ে থাকে নি।
কাছার এবং করিমগঞ্জের অনেক লোক এখনো সিলেটি ভাষায় কথা বলে। রেডক্লিফ সীমারেখা তাঁদেরকে মানসিকভাবে সিলেট থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে নি।
নবাব সিরাজদ্দৌলাকে নিয়ে লেখা বিভিন্নজনের ইতিহাস পড়ার পর এক বিচিত্র অনুভূতি মাথায় আসবে। ব্যক্তি সিরাজদ্দৌলাকে চিনে নিতে খুব সমস্যা হবে। কেউ কেউ তাঁকে মাথায় তুলে ফেলেছেন আবার অনেকেই তার চরিত্রে পৃথিবীর যাবতীয় স্যাডিজম এক সাথে এনে জড়ো করেছেন। নির্মোহ দৃষ্টি নিয়ে এই ঐতিহাসিক চরিত্রের বিচার করা হয়নি।
আমার মতে ইতিহাস লিখে যেতে আপনাকে নির্লোভ হতে হবে, নির্মোহ হতে হবে। আবেগকে পুরো বাদ দিতে হবে।
সিলেট রেফারেন্ডাম নিয়ে একটা সঠিক এবং পুরো সত্য লেখা আশা করছি। যে কারো কাছ থেকে।
একটা তথ্য। বিদ্যুৎ চক্রবর্তী রচিত ‘দা পার্টিশান অভ বেঙ্গল এণ্ড আসাম, ১৯৩২-১৯৪৭’ বইতে সিলেট রেফারেন্ডাম নিয়ে কিছু তথ্য আছে।
৫২
উদ্ধৃতি
কথাটার বিশ্লেষণ মাহবুব লীলেনের মন্তব্যে কিছুটা পাওয়া যায়। বাঙ্গালী মুসলমানের মন প্রবন্ধে ছফা বলেছেন; নিম্ন বর্ণের হিন্দুরা বাঙ্গালী মুসলমানের সিংহ ভাগ। তার উপরে কিছু আছে, যারা আমাদের মুসলমান করেছে, কিছু আছে যারা মুসলমান হতে বাধ্য হয়েছে।বাঙালী মুসলমানের মন যে এখনো আদি অবস্থায়, তা বাঙালী হওয়ার জন্যও নয় এবং মুসলমান হওয়ার জন্যও নয়। সুদীর্ঘকাল একটি ঐতিহাসিক পদ্ধতির দরুণ তার মনের ওপর একটি গাঢ় মায়াজাল বিস্তৃত হয়ে রয়েছে, সজ্ঞানে, তার বাইরে সে আসতে পারে না। তাই এক পা যদি এগিয়ে আসে, তিন পা পিছিয়ে যেতে হয়। মানসিক ভীতিই এই সমাজকে চালিয়ে থাকে। দু-বছরে বা চার বছরে হয়তো এ অবস্থার অবসান ঘটানো যাবে না, কিন্তু বাঙালী মুসলমানের মনের ধরণ-ধারণ এবং প্রবণতাগুলো নির্মোহভাবে জানার চেষ্টা করলে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার একটা পথ হয়তো পাওয়াও যেতে পারে।১
এই শংকর জাতিটা ভাষা আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটা পরিচয়ের নীচে এসেছে। স্বাধীনতা উত্তর রাজনৈতিক ওলট-পালটের কারণে আবার কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। আমার ধারণা এইটা একটা প্রক্রিয়া।
আমাদের সাহিত্য বিকাশের অন্তরায় আপনার মতে;
উদ্ধৃতি
তার সাথে যোগ হয়েছে কোলকাতা কেন্দ্রীক লেখালেখীর প্রতি আমাদের অতিভক্তি।বাংলাদেশের লোকজনের কাছে পশ্চিম বাংলার লেখকরা ঠিক যতোটা পরিচিত আমাদের লেখকরা তাঁদের কাছে ঠিক ততোটাই অপরিচিত। পশ্চিম বাংলার তথাকথিত বোদ্ধারা আহমদ ছফার মতো দ্রোহী লেখককে তাঁদের পাঠকের সাথে পরিচয় করান না, পরিচিত করান হুমায়ূন আহমেদ বা তসলিমা নাসরীনকে।
ছফা সাহেবের কয়েকটা অনুবাদ পড়ে রাগ হয়েছিল। আপনার ছফাগিরি পড়ে আসল ছফাকে কিছুটা চিনতে পারলাম। আরো অনেক কিছু জানার অপেক্ষায় রইলাম।
তারা দেয়ার ব্যপারে মনে হয় না নতুন কিছু আর বলার দরকার আছে।
এই নেন মিল্কওয়ের যত তারা আপনাকে দিলাম।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!
৫৩
@লীলেন ভাই -
০১- আপনার মন্তব্যের ১ম অংশ থেকে প্রচলিত বাংলায় এবং ভারত বর্ষে ব্যবহৃত 'জাতি' শব্দের কিছুটা ধারণা পাওয়া গেল। আমি জাতি/জাতীয়তা বলতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অর্থেই বলছিলাম (Nation/Nationality)। এবং আপনার মন্তব্য থেকে বুঝলাম স্বয়ং রাষ্ট্রবিজ্ঞানেই Nation এর ধারণাটা সম্পূর্ণ নয়। আমি সেই জায়গাতেই প্রশ্নটা করছিলাম।
০৩- আমি যেটা বলতে চাইছিলাম, স্বয়ং রাষ্ট্রবিজ্ঞানই যদি জাতি রাষ্ট্র তৈরি করে এই ধারণা থেকে ক্রমশঃ রাষ্ট্র জাতি তৈরি করে এই ধারণার দিকে সরে আসে, এবং জাতির চিরন্তন অস্তিত্বকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে, তাহলে ঐতিহাসিক কোনরকম ঘাত-প্রতিঘাত-ওলট-পালটের মাধ্যমে 'বাঙালী' যদি একটি একক এবং স্বকীয় জাতি হয়ে থাকে (এর সীমানাটাও যদিওবা ঝাপসা) , ঠিক সেরকম বর্তমান বাংলাদেশের বাঙালীরাও (তাকে বাঙাল কিম্বা যে নামেই ডাকেন) কোদাল-ছেড়ে-লাঙলে-চাষ, কিম্বা মুক্তিযুদ্ধের মত যেসব গভীর সংকট/সম্ভাবনার সন্ধিক্ষণ পেরিয়ে এসেছে তাতে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে তারা একটা স্বকীয় জাতি নয় কেন? (আমি বিভক্তির সপক্ষে/বিপক্ষে বলছি না, বাস্তবতার কথা বলছি)। বলছিলাম জাতি যদি ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ায় গঠিতই হয়, তাহলে নিকট অতীত বা বর্তমানও তো সে ইতিহাসেরই অংশ।
আমি আসলে national identity ব্যাপারটার মধ্যেই অস্পষ্টতা দেখি। একমাত্র সাধারণ্যে অলংঘ্য ভূপ্রাকৃতিক সীমানা (যেমন হিমালয়, মহাসাগর) ছাড়া জাতির সীমানা অস্পষ্ট। ভাষাভিত্তিক সীমারেখাটাও জনগোষ্ঠীর মাঝে প্রমিত ভাষায় শিক্ষা বিস্তারের সাথে সম্পর্কিত, এটার আগে গেলে তার প্রাকৃতিক সীমারেখা নিতান্তই তরল এবং অস্পষ্ট।
@শুভাশীষ, এব্যপারে ছফার অবস্থানও আমার কাছে স্পষ্ট না। আপনি ব্যাখা করলে ভাল হয়। আলোচনা বিষয়বস্তু বাইরে মনে হলে থাক্।
০১- আপনার মন্তব্যের ১ম অংশ থেকে প্রচলিত বাংলায় এবং ভারত বর্ষে ব্যবহৃত 'জাতি' শব্দের কিছুটা ধারণা পাওয়া গেল। আমি জাতি/জাতীয়তা বলতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অর্থেই বলছিলাম (Nation/Nationality)। এবং আপনার মন্তব্য থেকে বুঝলাম স্বয়ং রাষ্ট্রবিজ্ঞানেই Nation এর ধারণাটা সম্পূর্ণ নয়। আমি সেই জায়গাতেই প্রশ্নটা করছিলাম।
উদ্ধৃতি
০২- বাঙালী জাতি প্রশ্নে আপনার মন্তব্য দেখে মনে হল আপনি কোন কারণে পলিটিকালি কারেক্ট মন্তব্য করতে চাচ্ছেন। স্বয়ং জাতির সংজ্ঞাকেই যদি ঝাপসা বলেন, তাহলে প্রশ্নাতীত ভাবে বাঙালী জাতির ঐতিহাসিক অস্তিত্ত্বের কথা বললেন কিসের ভিত্তিতে?
আর রাষ্ট্র বিজ্ঞান কিংবা সমাজ বিজ্ঞানের সংজ্ঞা অনুসারে যে জাতির (+ উপজাতি) সংজ্ঞা (ভাষা সংস্কৃতি সমাজ কাঠামো/সামাজিক প্রসাশন) এই সংজ্ঞাটা আমার হিসেবে এখন পর্যন্ত বেশ ঝাঁপসা
০৩- আমি যেটা বলতে চাইছিলাম, স্বয়ং রাষ্ট্রবিজ্ঞানই যদি জাতি রাষ্ট্র তৈরি করে এই ধারণা থেকে ক্রমশঃ রাষ্ট্র জাতি তৈরি করে এই ধারণার দিকে সরে আসে, এবং জাতির চিরন্তন অস্তিত্বকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে, তাহলে ঐতিহাসিক কোনরকম ঘাত-প্রতিঘাত-ওলট-পালটের মাধ্যমে 'বাঙালী' যদি একটি একক এবং স্বকীয় জাতি হয়ে থাকে (এর সীমানাটাও যদিওবা ঝাপসা) , ঠিক সেরকম বর্তমান বাংলাদেশের বাঙালীরাও (তাকে বাঙাল কিম্বা যে নামেই ডাকেন) কোদাল-ছেড়ে-লাঙলে-চাষ, কিম্বা মুক্তিযুদ্ধের মত যেসব গভীর সংকট/সম্ভাবনার সন্ধিক্ষণ পেরিয়ে এসেছে তাতে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে তারা একটা স্বকীয় জাতি নয় কেন? (আমি বিভক্তির সপক্ষে/বিপক্ষে বলছি না, বাস্তবতার কথা বলছি)। বলছিলাম জাতি যদি ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ায় গঠিতই হয়, তাহলে নিকট অতীত বা বর্তমানও তো সে ইতিহাসেরই অংশ।
আমি আসলে national identity ব্যাপারটার মধ্যেই অস্পষ্টতা দেখি। একমাত্র সাধারণ্যে অলংঘ্য ভূপ্রাকৃতিক সীমানা (যেমন হিমালয়, মহাসাগর) ছাড়া জাতির সীমানা অস্পষ্ট। ভাষাভিত্তিক সীমারেখাটাও জনগোষ্ঠীর মাঝে প্রমিত ভাষায় শিক্ষা বিস্তারের সাথে সম্পর্কিত, এটার আগে গেলে তার প্রাকৃতিক সীমারেখা নিতান্তই তরল এবং অস্পষ্ট।
@শুভাশীষ, এব্যপারে ছফার অবস্থানও আমার কাছে স্পষ্ট না। আপনি ব্যাখা করলে ভাল হয়। আলোচনা বিষয়বস্তু বাইরে মনে হলে থাক্।
৫৪
উদ্ধৃতি
জাতি আর জাতীয়তা রাষ্ট্রবিজ্ঞান/সমাজবিজ্ঞানে কিন্তু এখন আলাদা অর্থে ব্যবহার হয়। জাতীয়তা (Nationality) নেশন স্টেট/দেশ/ রাষ্ট্রীয় পরিচয়আমি জাতি/জাতীয়তা বলতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অর্থেই বলছিলাম (Nation/Nationality)। এবং আপনার মন্তব্য থেকে বুঝলাম স্বয়ং রাষ্ট্রবিজ্ঞানেই Nation এর ধারণাটা সম্পূর্ণ নয়। আমি সেই জায়গাতেই প্রশ্নটা করছিলাম।
বা নাগরিকত্ব। যেমন ভারতে বসবাসকারী বাঙালি অবাঙালি সবার জাতীয়তা ভারতীয় আর বাংলাদেশে বসবাসকারী বাঙালি অবাঙালি সবার জাতীয়তা বাংলাদেশী। একইভাবে আমেরিকান বৃটিশ কানাডিয়ান....
জাতীয়তার সংজ্ঞা কিন্তু খুবই সুনির্দিষ্ট
আর জাতি কথাটা মূলত সমাজবিজ্ঞানের পাঠ্য (রাজনীতি বিজ্ঞান কি এটা নিয়ে কথা বলে?) সমাজবিজ্ঞান অনুসারে এই জাতি পরিচয় কিন্তু ভূগোল বা রাষ্ট্র সীমানা মানে না কিংবা ছাড়িয়ে যায়
কিন্তু এই সংজ্ঞার ইনডিকেটরগুলো এখনও অনেকটা হাইপোথিসিস কিংবা প্রস্তাব কিংবা কনসেপ্ট আকারেই আছে। এখনও সর্বজন গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেনি
আবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতি আর জাতীয়তা বেশ গুলিয়ে ব্যবহার করা হয়
আমরা যখন বলি শেখ মুজিব জাতির পিতা। তখন কিন্তু শেখ মুজিবকে বাঙালি জাতির পিতা বা জাতির প্রতিষ্ঠাতা বোঝাই না। আমরা বোঝাই বাংলাদেশের ফাউন্ডার বা বাংলাদেশী জাতি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা কিংবা বাংলাদেশি জাতীয়তার প্রতিষ্ঠাতা (যদিও শেষ কথাটা বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে অন্য অর্থে ব্যবহার হয়)
জাতির পিতা কথাটা কিন্তু রাজনীতি বিজ্ঞান অনুসারে বলা হয় না
বলা হয় সামাজিক বিজ্ঞানের ধারায়
০২
উদ্ধৃতি
আমি বিন্দু মাত্র পলিটিক্যালি কারেক্টনেসের দিকে যেতে চাইনি। আমার নিজের কাছে কোথায় বিষয়টা ঝাঁপসা মনে হয় (মানে বুঝি না) সেটা বলতে চাচ্ছিলাম। আর সেটা বলতে গিয়ে জাতি শব্দটা ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহারের একটা তালিকা দিয়ে দেখাতে চাচ্ছিলাম যে বর্তমানে (রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়া লোকরা) জাতি কথাটা যে অর্থে ব্যবহার করে অতিতে কিংবা সমাজে সেটা সেই অর্থে ব্যবহার হয় নাবাঙালী জাতি প্রশ্নে আপনার মন্তব্য দেখে মনে হল আপনি কোন কারণে পলিটিকালি কারেক্ট মন্তব্য করতে চাচ্ছেন। স্বয়ং জাতির সংজ্ঞাকেই যদি ঝাপসা বলেন, তাহলে প্রশ্নাতীত ভাবে বাঙালী জাতির ঐতিহাসিক অস্তিত্ত্বের কথা বললেন কিসের ভিত্তিতে?
তাহলে এর সংকলিত অর্থ কী দাঁড়ায়? এটা ছিল আমার এক্টা প্রশ্ন
আর বাঙালি জাতি বলতে আমার কাছে যেহেতু স্রেফ বাংলা ভাষায় কথা বলা জনগোষ্ঠী সেহেতু ভাষার বয়স হিসাবেই এরা অনেক দীর্ঘ ইতিহাসের উত্তরাধিকারী
০৩
উদ্ধৃতি
জাতি রাষ্ট্র কনসেপ্টটা কিন্তু অতি সাম্প্রতিক। অনেক জায়গায় এক জাতি নিয়ে একটা জাতি রাস্ট্র হয়েছে আবার অনেক জায়গায় অনেকগুলো জাতির মিশ্রণে একটা জাতি রাস্ট্র তৈরি হয়েছে। আর তৈরি হবার পরে সেটা এক জাতি হোক আর বহু জাতিই হোক; সবাই ঢুকে গেছে এক জাতীয়তার ভেতরে (জাতিরাষ্ট্রের ভেতরে ঢুকে যাবার পরে আর জাতি সামনে থাকেনি)
আমি যেটা বলতে চাইছিলাম, স্বয়ং রাষ্ট্রবিজ্ঞানই যদি জাতি রাষ্ট্র তৈরি করে এই ধারণা থেকে ক্রমশঃ রাষ্ট্র জাতি তৈরি করে এই ধারণার দিকে সরে আসে, এবং জাতির চিরন্তন অস্তিত্বকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে, তাহলে ঐতিহাসিক কোনরকম ঘাত-প্রতিঘাত-ওলট-পালটের মাধ্যমে 'বাঙালী' যদি একটি একক এবং স্বকীয় জাতি হয়ে থাকে (এর সীমানাটাও যদিওবা ঝাপসা) , ঠিক সেরকম বর্তমান বাংলাদেশের বাঙালীরাও (তাকে বাঙাল কিম্বা যে নামেই ডাকেন) কোদাল-ছেড়ে-লাঙলে-চাষ, কিম্বা মুক্তিযুদ্ধের মত যেসব গভীর সংকট/সম্ভাবনার সন্ধিক্ষণ পেরিয়ে এসেছে তাতে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে তারা একটা স্বকীয় জাতি নয় কেন? (আমি বিভক্তির সপক্ষে/বিপক্ষে বলছি না, বাস্তবতার কথা বলছি)। বলছিলাম জাতি যদি ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ায় গঠিতই হয়, তাহলে নিকট অতীত বা বর্তমানও তো সে ইতিহাসেরই অংশ।
যেমন; আরব- ওলন্দাজ- ডাচ - যবন- গ্রিক- পারসিক- ইরানি- ইংলিশ- বৃটিশ- আমেরিকান- চায়না- জাপানী- বাঙালি- বাংলাদেশি- হিন্দু- ইন্ডিয়ান- মোগল- মোঙ্গলিয়ান
এইবার হিসেব করে দেখেন তো কোন কোনটা জাতি পরিচয় আর কোন কোনটা জাতীয়তা পরিচয়?
আর একটু খেয়াল করলেই দেখবেন যে জাতিরাষ্ট্র কনসেপ্ট তৈরি হবার আগের পরিচয়গুলো কিন্তু জাতি পরিচয় আর পরেরগুলো জাতীয়তা পরিচয়
০৪
উদ্ধৃতি
এটার মধ্যে এখন আর কোনো অস্পস্টতা নেই। স্রেফ আপনার পাসপোর্টে জাতীয়তার ঘরে যা লেখা থাকে সেটা আপনার ন্যাশনাল আইডেন্টিটিআমি আসলে national identity ব্যাপারটার মধ্যেই অস্পষ্টতা দেখি।
এর সঙ্গে সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের কোনো সম্পর্ক নেই
৫৫
আমরা যখন বলি শেখ মুজিব জাতির পিতা। তখন কিন্তু শেখ মুজিবকে বাঙালি জাতির পিতা বা জাতির প্রতিষ্ঠাতা বোঝাই না। আমরা বোঝাই বাংলাদেশের ফাউন্ডার বা বাংলাদেশী জাতি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা কিংবা বাংলাদেশি জাতীয়তার প্রতিষ্ঠাতা
এই 'আমরা' বলতে মনে হয় শুধু অল্প কয়জনরেই পাবেন। বিম্পির কথা বাদ, কিন্তু আমি যতগুলা আওয়ামী লোকজন দেখছি তারা তাঁকে 'বাঙালি জাতির পিতা' হিসেবেই বুঝে ও হুদাই তর্ক করে। শেখ মুজিব 'বাংলাদেশি জাতীয়তার জনক' এইরকম কোন কিছু কি কখনো তাদের বলতে শুনছেন? আমি শুনি নাই।
৫৬
উদ্ধৃতি
আমিও শুনিনি। এবং আশাও করি না তারা কোনোদিন যুক্তিসংগত কথা বলা শিখবেশেখ মুজিব 'বাংলাদেশি জাতীয়তার জনক' এইরকম কোন কিছু কি কখনো তাদের বলতে শুনছেন? আমি শুনি নাই।
শেখ মুজিবকে বাংলাদেশি জাতীয়তার জনক কিংবা বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের জনক না বুঝিয়ে বাঙালি জাতির পিতা বলতে গিয়ে যে তারা বড়ো ধরনের কয়েকটা ভুল (এবং অপরাধ) করে বেশিরভাগেরই সেই বোধ আছে বলে আমার মনে হয় না
কারণ শেখ মুজিবকে বাঙালি জাতির পিতা বললে বোঝায় যে তার আগে বাঙালি জাতি ছিল না। এবং বাঙালি জাতি হচ্ছে বনি-মুজিব (বনি আদম- বনি ইব্রাহিম- বনি ইস্রাইল; এই জাতীয় সমীকরণ)
দ্বিতীয়ত তাকে বাঙালি জাতির পিতা হিসেবে যুক্তি দাঁড় করাতে গেলে যে বাংলাদেশের জন্মকে (এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে) অস্বীকার করা হয় এটাও তারা বোঝে বলে মনে হয় না
তৃতীয়ত বাংলাদেশের বাইরে বসবাসকারী বাঙালিদের তারা আর বাঙালি বলে স্বীকারই করে না। এটাও বোঝে বলে মনে হয় না
০২
তবে এরকম গোড়া কারো সামনে পড়লে আমি একেবারে মুখ বন্ধ করে বেক্কলের মতো দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করি কখন তার লেকচার শেষ হবে
এটাকেই আমি ধরে নেই সবচে বুদ্ধিমানের কাজ
৫৭
লীলেন ভাই,
প্রশ্নোত্তরে আপনার সক্রিয়তা দেখে খুবই ভাল লাগছে। ধারণা সবকিছু পরিষ্কার না হলেও, ধারণার পরিধি বাড়ছে অবশ্যই। আপনাকে অনেকদিন পরে পেয়ে বেশি বেশি জানার আগ্রহ থেকেই একটু খুঁচিয়েছি, এবং আপনি অবশ্যই সেটাকে আঘাত হিসেবে নেননি।
বাংলায় সাধারণ ব্যবহারে জাতি শব্দটায় আসলেই যে অনেক অস্পষ্টতা আছে সেটা পরিষ্কার হল। সেতুলনায় ইংরেজীতে অনেকগুলো ভিন্ন শব্দ ব্যবহার হয় মনে হয়, অবশ্য সেগুলোও পারিভাষিক। Nation, Race, Class সবগুলো অর্থেই বাংলায় জাতি শব্দটার ঐতিহাসিক ব্যবহার আছে। যদিও বর্তমান একাডেমিক পরিভাষায় Nation = জাতি, Race=গোত্র, আর Class=শ্রেণী।
বোঝা গেল রাষ্ট্রবিজ্ঞানে, অন্ততঃ বর্তমান আন্তর্জাতিক আইনগত কাঠামোতে, Nationality এবং Citizenship একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে আমার ব্যক্তিগত অভিমতে Citizenship শব্দটা কম দ্ব্যর্থবোধক।
আরো যেটা বোঝা গেল, সমাজতত্ত্বে জাতি (=Nation) এর ধারণাটি এখনও সর্বজনগ্রাহ্য নয়। আমার মনে হয় Nation এর অস্তিত্ত্ব কেউ অস্বীকার করতে পারে না, কিন্তু এর সীমানা নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। আচ্ছা, একথা বললে কেমন হয়-- Nation এর কেন্দ্র আছে, প্রভাব বলয় আছে, কিন্তু সীমানা নেই (কিম্বা অস্পষ্ট)।
ইতিহাসের বিভিন্ন সন্ধিক্ষণে পৃথিবীর কোন স্থানে কোন বিশেষ জাগরণ/ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাঝেই এই Nation এর অস্তিত্ব।
এখানে একটা প্রশ্ন আছে। আপনি যে বললেন,
তাহলে বাংলা ভাষার বয়স আসলে কত? ভাষা-সাহিত্যের ইতিহাসে আমার অজ্ঞতাই প্রশ্নটার কারণ হয়ত, তবে প্রশ্নটা স্বতস্ফুর্ত ভাবেই মাথায় এল।
প্রশ্নোত্তরে আপনার সক্রিয়তা দেখে খুবই ভাল লাগছে। ধারণা সবকিছু পরিষ্কার না হলেও, ধারণার পরিধি বাড়ছে অবশ্যই। আপনাকে অনেকদিন পরে পেয়ে বেশি বেশি জানার আগ্রহ থেকেই একটু খুঁচিয়েছি, এবং আপনি অবশ্যই সেটাকে আঘাত হিসেবে নেননি।
বাংলায় সাধারণ ব্যবহারে জাতি শব্দটায় আসলেই যে অনেক অস্পষ্টতা আছে সেটা পরিষ্কার হল। সেতুলনায় ইংরেজীতে অনেকগুলো ভিন্ন শব্দ ব্যবহার হয় মনে হয়, অবশ্য সেগুলোও পারিভাষিক। Nation, Race, Class সবগুলো অর্থেই বাংলায় জাতি শব্দটার ঐতিহাসিক ব্যবহার আছে। যদিও বর্তমান একাডেমিক পরিভাষায় Nation = জাতি, Race=গোত্র, আর Class=শ্রেণী।
বোঝা গেল রাষ্ট্রবিজ্ঞানে, অন্ততঃ বর্তমান আন্তর্জাতিক আইনগত কাঠামোতে, Nationality এবং Citizenship একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে আমার ব্যক্তিগত অভিমতে Citizenship শব্দটা কম দ্ব্যর্থবোধক।
আরো যেটা বোঝা গেল, সমাজতত্ত্বে জাতি (=Nation) এর ধারণাটি এখনও সর্বজনগ্রাহ্য নয়। আমার মনে হয় Nation এর অস্তিত্ত্ব কেউ অস্বীকার করতে পারে না, কিন্তু এর সীমানা নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। আচ্ছা, একথা বললে কেমন হয়-- Nation এর কেন্দ্র আছে, প্রভাব বলয় আছে, কিন্তু সীমানা নেই (কিম্বা অস্পষ্ট)।
ইতিহাসের বিভিন্ন সন্ধিক্ষণে পৃথিবীর কোন স্থানে কোন বিশেষ জাগরণ/ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাঝেই এই Nation এর অস্তিত্ব।
এখানে একটা প্রশ্ন আছে। আপনি যে বললেন,
উদ্ধৃতি
ভাষাতাত্ত্বিক বিবেচনায় আধুনিক বাংলার সম-কাঠামোর একটা ভাষা প্রায় দু'হাজার বছর সময় ধরে (চর্যাপদের সময়কাল ধরলে) এ অঞ্চলে প্রচলিত ছিল। এর সীমানাটা কিন্তু অস্পষ্ট। আধুনিক বাংলার বিকাশকালে (ইংরেজ আমল থেকে বর্তমান) ব্রহ্মপুত্রের অপর পাড়ে সুদুর বরাক উপত্যকা পর্যন্ত বাংলার প্রভাব বলয়ে আসল, কিন্তু খুব কাছেই কোশী উপত্যকা (বিহার) এর বাইরে রয়ে গেল। এর পেছনে নিশ্চই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক/সমাজিক বিকাশ-কেন্দ্রের প্রতি আনুগত্যের কার্যকারণ আছে।আর বাঙালি জাতি বলতে আমার কাছে যেহেতু স্রেফ বাংলা ভাষায় কথা বলা জনগোষ্ঠী সেহেতু ভাষার বয়স হিসাবেই এরা অনেক দীর্ঘ ইতিহাসের উত্তরাধিকারী
তাহলে বাংলা ভাষার বয়স আসলে কত? ভাষা-সাহিত্যের ইতিহাসে আমার অজ্ঞতাই প্রশ্নটার কারণ হয়ত, তবে প্রশ্নটা স্বতস্ফুর্ত ভাবেই মাথায় এল।
৫৮
এইবার আপনি আরেকটা ঝাঁপসা ধাক্কায় ফেলে দিলেন। অন্তত আমি নিজের বিষয়টার ঝাঁপসাত্বে বেশ হাবুডুবু খাই
একাডেমিকভাবে বাংলা ভাষার বয়স খুঁজতে হলে এখন আর কোনো বেগ পেতে হয় না। গুগলে টোকা দিলেই বের হয়ে আসে। আর বইপত্রও প্রচুর। এ বিষয়ে জানা লোকও অনেক
কিন্তু লেখাগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাংলা ভাষার সময়বিভাগগুলো দেখা যায় প্রাপ্ত লিখিত ডকুমেন্টের বয়সকে ধরে নির্ধারণ করা
আর তার আগের কথ্য বাংলাকে তার সোর্স ভাষা দিয়ে এক আধটু বিশ্লেষণ
আমার জানা মতে ৫০০ খ্রিপূ: কে বাংলা ভাষার অস্তিত্বের সবচে পুরোনো কাল ধরা হয় (অন্য মতামতও থাকতে পারে)
ঝাঁপসা জায়গাটা এখানেই
ভাষা আগে তৈরি হয় না জাতি আগে তৈরি হয়?
ভাষার বয়স দিয়ে জাতির বয়স হিসেব করলে বাঙালি জাতির বয়স ২৫০০ বছর (কিছু বেশি কিংবা কম)
আর যদি জাতি আগে তৈরি হয়ে পরে তাদের ভাষার গঠন তৈরি করে তবে আরো বেশি
এখন বোধহয় আলোচনাটা পুরো এনথ্রোপলজির দিকে চলে গেলো
এ বিষয়ে প্রশ্ন ছাড়া আমার কাছে বাকি সবকিছুই ঝাঁপসা (কিংবা না জানা)
একাডেমিকভাবে বাংলা ভাষার বয়স খুঁজতে হলে এখন আর কোনো বেগ পেতে হয় না। গুগলে টোকা দিলেই বের হয়ে আসে। আর বইপত্রও প্রচুর। এ বিষয়ে জানা লোকও অনেক
কিন্তু লেখাগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাংলা ভাষার সময়বিভাগগুলো দেখা যায় প্রাপ্ত লিখিত ডকুমেন্টের বয়সকে ধরে নির্ধারণ করা
আর তার আগের কথ্য বাংলাকে তার সোর্স ভাষা দিয়ে এক আধটু বিশ্লেষণ
আমার জানা মতে ৫০০ খ্রিপূ: কে বাংলা ভাষার অস্তিত্বের সবচে পুরোনো কাল ধরা হয় (অন্য মতামতও থাকতে পারে)
ঝাঁপসা জায়গাটা এখানেই
ভাষা আগে তৈরি হয় না জাতি আগে তৈরি হয়?
ভাষার বয়স দিয়ে জাতির বয়স হিসেব করলে বাঙালি জাতির বয়স ২৫০০ বছর (কিছু বেশি কিংবা কম)
আর যদি জাতি আগে তৈরি হয়ে পরে তাদের ভাষার গঠন তৈরি করে তবে আরো বেশি
এখন বোধহয় আলোচনাটা পুরো এনথ্রোপলজির দিকে চলে গেলো
এ বিষয়ে প্রশ্ন ছাড়া আমার কাছে বাকি সবকিছুই ঝাঁপসা (কিংবা না জানা)
৫৯
উদ্ধৃতি ভাষা আগে তৈরি হয় না জাতি আগে তৈরি হয়?
খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন।
জাঁক লাঁকার একটা বিখ্যাত কথা আছে।
অজ্ঞান ভাষার আকারে গঠিত।
'অন্তর্জগতে যাহা না মিশিলে কোন সহজই জন্মায় না সেই পরকীয়া বা গঠনের কথা' শীর্ষক জাঁক লাঁকার এই বক্তৃতার অনুবাদ করেছেন সলিমুল্লাহ খান। ভাষার গঠন বুঝতে গেলে লেখাটা উপকারে আসবে।
অন্য প্রসঙ্গ।
History of Bengali Language and Literature (A series of lectures delivered as Reader to Calcutta University) – Dinesh Chandra Sen, Calcutta University,1911
এই বইয়ের কি কোন অনুবাদ আছে?
খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন।
জাঁক লাঁকার একটা বিখ্যাত কথা আছে।
অজ্ঞান ভাষার আকারে গঠিত।
'অন্তর্জগতে যাহা না মিশিলে কোন সহজই জন্মায় না সেই পরকীয়া বা গঠনের কথা' শীর্ষক জাঁক লাঁকার এই বক্তৃতার অনুবাদ করেছেন সলিমুল্লাহ খান। ভাষার গঠন বুঝতে গেলে লেখাটা উপকারে আসবে।
অন্য প্রসঙ্গ।
History of Bengali Language and Literature (A series of lectures delivered as Reader to Calcutta University) – Dinesh Chandra Sen, Calcutta University,1911
এই বইয়ের কি কোন অনুবাদ আছে?
৬০
অনেকদিন পর গুরু লীলেনকে সচলে সক্রিয় মিথস্ক্রিয়ায় দেখে ভাল্লাগছে ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
৬১
লীলেনদা, আপনার মন্তব্যগুলো আমি গোগ্রাসে গিলছি। অনেক অনেক থ্যাংকস।
মোরশেদ ভাই, আসাদ ভাই, হাসিব ভাই,
আপনাদের সবাইকে মিথস্ক্রিয়ায় অংশ নেয়ায় অনেক ধন্যবাদ।
ছফার যেসব লেখালেখি আমার কাছে আছে সেখানে বঙ্গভঙ্গ এবং বঙ্গভঙ্গ রদ নিয়ে খুব প্রিসাইজ কিছু কথা আছে। কিন্তু আমার বিশদ তথ্য প্রয়োজন।
৬২
তারা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, এনিয়ে আর কথা বলার দরকার নেই। আমি লেখায় তারা গুনে দেখার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা।
আন্তন মাকারেঙ্কোর বইটার বাংলা সংস্করণের নাম (প্রগতি প্রকাশনের) "জীবন জয়ের পথে"। প্রথম খণ্ড পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। জদোরভ, ভোলখভ, শেলাপুতিনদের গল্পের অবশিষ্ট আর জানা হলনা। আফসোস।
ধরে নিচ্ছি ছফাগিরি এখানে শেষ নয়। ছফার উপন্যাসের উপর আলোচনা না করেই কি ছফাগিরি শেষ হতে পারে? অবশ্যই না। বিশেষতঃ অলাতচক্র বা তার পরবর্তী উপন্যাসগুলো নিয়ে আলোচনা তো হতেই হবে। প্রয়াত লেখকের সব লেখা নিয়ে আলোচনা করলেই কেবল আলোচনা সম্পূর্ণ হতে পারে। ছফার কোন অংশ ইতিহাস গ্রহন করবে আর কোন অংশ বর্জন করবে সেটা সময়ের হাতে থাক। সব মানুষ কখনোই কোন ব্যাপারে একমত হবেন না। তবে এই বিতর্কটা থাকা শুভ লক্ষণ।
স্পেশাল থ্যাংকস টু হাসান মোরশেদ এন্ড মাহবুব লীলেন। লীলেন আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে প্রমাণ করলেন তিনি "মারা" যাননি, প্রবলভাবে বেঁচে আছেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আন্তন মাকারেঙ্কোর বইটার বাংলা সংস্করণের নাম (প্রগতি প্রকাশনের) "জীবন জয়ের পথে"। প্রথম খণ্ড পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। জদোরভ, ভোলখভ, শেলাপুতিনদের গল্পের অবশিষ্ট আর জানা হলনা। আফসোস।
ধরে নিচ্ছি ছফাগিরি এখানে শেষ নয়। ছফার উপন্যাসের উপর আলোচনা না করেই কি ছফাগিরি শেষ হতে পারে? অবশ্যই না। বিশেষতঃ অলাতচক্র বা তার পরবর্তী উপন্যাসগুলো নিয়ে আলোচনা তো হতেই হবে। প্রয়াত লেখকের সব লেখা নিয়ে আলোচনা করলেই কেবল আলোচনা সম্পূর্ণ হতে পারে। ছফার কোন অংশ ইতিহাস গ্রহন করবে আর কোন অংশ বর্জন করবে সেটা সময়ের হাতে থাক। সব মানুষ কখনোই কোন ব্যাপারে একমত হবেন না। তবে এই বিতর্কটা থাকা শুভ লক্ষণ।
স্পেশাল থ্যাংকস টু হাসান মোরশেদ এন্ড মাহবুব লীলেন। লীলেন আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে প্রমাণ করলেন তিনি "মারা" যাননি, প্রবলভাবে বেঁচে আছেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
৬৩
পাণ্ডবদা,
ছফাগিরিতে আপনার ও সক্রিয় অংশগ্রহণ চাই। দূরে সরে অথবা পাশে থেকে অনেক দূরে মন্তব্য করলে চলবে না। আমি বইটার নাম ভুলে গেছিলাম। জীবন জয়ের পথে। থ্যাংকস। ‘বাঁচতে শেখা’ এখনো নীলক্ষেতে পাওয়া যায়। আমি যদ্দূর জানি।
৬৪
পাণ্ডবদা, ছফাগিরির লেখাগুলোতে ছফার উপন্যাস নিয়ে আলোচনা আসবে বেশ কয়েক কিস্তি পর। তবে একটা উপন্যাস 'অলাতচক্র' নিয়ে আলোচনা হবে শী্ঘ্রই।
৬৫
আসাদ ভাই,
আপনার জানার আগ্রহ এবং মন্তব্যে সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখে আমি মুগ্ধ। লীলেনদা আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিবেন -আশা রাখি। আপনারা চালাতে থাকেন। জাতির সংজ্ঞা, জাতিসত্ত্বা, বাংলা ভাষার ইতিহাস এসব বিষয়ে আমি মন্তব্যে অংশ নিবো। পরে।
আপনার একটু পরিচয় জানালে খুব ভালো হয়। অতিথি হিসেবে আপনি কিন্তু লেখা ও পোস্ট করতে পারেন। অথবা করেছেন কী? হয়তো আমার চোখ এড়িয়ে গেছে।
আপনার জানার আগ্রহ এবং মন্তব্যে সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখে আমি মুগ্ধ। লীলেনদা আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিবেন -আশা রাখি। আপনারা চালাতে থাকেন। জাতির সংজ্ঞা, জাতিসত্ত্বা, বাংলা ভাষার ইতিহাস এসব বিষয়ে আমি মন্তব্যে অংশ নিবো। পরে।
আপনার একটু পরিচয় জানালে খুব ভালো হয়। অতিথি হিসেবে আপনি কিন্তু লেখা ও পোস্ট করতে পারেন। অথবা করেছেন কী? হয়তো আমার চোখ এড়িয়ে গেছে।
৬৬
উদ্ধৃতি
আপনার একটু পরিচয় জানালে খুব ভালো হয়।
নিশ্চই। যোগাযোগ থাকলে আমিই বরং উপকৃত হব।
ইমেইলঃ asdzaman@yahoo.com
তুমি আর আমি বোধকরি একই কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র।
৬৭
শুভাষীশ ভাই,
ছফাগিরি-র প্রথম থেকে পর্বগুলো পড়তে গিয়ে আমার মনে হল, আপনার লেখায় উল্লেখিত কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে। কিছু বিষয় আপনি শুধু উদ্ধৃত করেছেন কিন্তু ব্যাখ্যা দেননি। কিন্তু সেগুলোর ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণের প্রয়োজন আমাদের এই উপমহাদেশের ইতিহাস-সমাজ ব্যবস্থা-বর্তমান বোঝার জন্য।
প্রথমত
প্রথম পর্বে উল্লেখ করছেন যে, প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন,
ইন্ডিয়ার অন্যান্য প্রোভিন্সে যেটুকু ফিউডালিজমের চিহ্ন খুঁইজ্যা পাওন যায়, বেঙ্গলে তার ছিটাফোঁটাও পাইবেন না
প্রশ্ন হল, কি ভাবে চলত সেই সময়ের সমাজ? কি ব্যবস্থা ছিল?
দ্বিতীয়ত
আর এক জায়গায় বলেছেন,
সেক্যুলারাইজেশন ইফেক্ট অব ইসলাম অন ইন্ডিয়া ওয়াজ রিয়ালি ইনারমাস।
এই জায়গাটা। সেক্যুলারাইজেশন ইফেক্ট অব ইসলাম বলতে কি বোঝাচ্ছেন?
এখান থেকেই আর একটা বিষয় আলোচনায় আসা উচিত সেটা হল, মুসলিমদের আগমন তখনকার ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক কাঠামো, উৎপাদন সম্পর্কে-কাঠামোতে কি ধরণের পরিবর্তন এনেছিল?
তৃতীয়ত
কিস্তি তিন-এ উল্লেখ করছেন, ছফা মুসলমান পুঁথিলেখকদের মনোজগৎ বুঝে নেবার জন্য লিখতে গিয়ে শুরু করছেন এভাবে –
হিন্দুদের দেব-দেবী এবং কাব্যোক্ত নায়ক-নায়িকাদের প্রতি মনে মনে একটি বিদ্বেষের দূরস্মৃতিও সক্রিয় ছিলো। কেননা এই দেব-দেবীর পূজারীদের অত্যাচার এবং ঘৃণা থেকে অব্যাহতি পাবার আশায় তাঁদের পূর্বপুরুষেরা প্রথমে বৌদ্ধ ধর্ম এবং পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।
আপনিও ৪র্থ পর্বে লিখছেন,
মুসলমান রাজ্যের প্রতিষ্ঠা লাভের সাথে সাথে ধর্মান্তরিত এসব বৌদ্ধরা দলে দলে ইসলাম ধর্মের আশ্রয় লাভ করেন। এতে তাঁদের সামাজিক প্রভুত্ব লাভের কিছুটা দিশা হলেও জাগতিক সব কষ্টের সুরাহা মিলেনি।
এখন প্রশ্ন আসে, এই ভূখন্ডের মানুষের মধ্যে ইসলামের বিস্তারের এর কারণ কি? দেব-দেবীর পূজারীদের অত্যাচারে এবং ঘৃণা থেকে অব্যাহতি পাওয়াই কি প্রধান কারণ?
এবং একটা কথা যেটা আপনি যোগ করেছেন, ‘সামাজিক প্রভুত্ব লাভের কিছুটা দিশা হল’ এটা কি ব্যাখ্যা করবেন? নিম্নবর্ণের হিন্দু একজন মানুষ, বৌদ্ধ হলেন, তারপরে মুসলমান হলেন এবং তিনি সামাজিক প্রভুত্ব লাভ করলেন – কিভাবে?
এখানে যা যতটুকু বিষয়ের উল্লেখ করেছি তার ব্যাপ্তি অনেক বিশাল। এখান থেকে আলোচনা শুরু করলে আরও অনেক বিষয়ও আসবে পরে।
আর, এগুলো লেখার জন্য ৫ম পর্ব বেছে নেওয়ার কারণ এখানেই মূলত আপনি ‘বাঙালী মুসলমানের মন’ নিয়ে আলোচনা শেষ করেছেন।
আশা করি কথা হবে...
ছফাগিরি-র প্রথম থেকে পর্বগুলো পড়তে গিয়ে আমার মনে হল, আপনার লেখায় উল্লেখিত কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে। কিছু বিষয় আপনি শুধু উদ্ধৃত করেছেন কিন্তু ব্যাখ্যা দেননি। কিন্তু সেগুলোর ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণের প্রয়োজন আমাদের এই উপমহাদেশের ইতিহাস-সমাজ ব্যবস্থা-বর্তমান বোঝার জন্য।
প্রথমত
প্রথম পর্বে উল্লেখ করছেন যে, প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন,
ইন্ডিয়ার অন্যান্য প্রোভিন্সে যেটুকু ফিউডালিজমের চিহ্ন খুঁইজ্যা পাওন যায়, বেঙ্গলে তার ছিটাফোঁটাও পাইবেন না
প্রশ্ন হল, কি ভাবে চলত সেই সময়ের সমাজ? কি ব্যবস্থা ছিল?
দ্বিতীয়ত
আর এক জায়গায় বলেছেন,
সেক্যুলারাইজেশন ইফেক্ট অব ইসলাম অন ইন্ডিয়া ওয়াজ রিয়ালি ইনারমাস।
এই জায়গাটা। সেক্যুলারাইজেশন ইফেক্ট অব ইসলাম বলতে কি বোঝাচ্ছেন?
এখান থেকেই আর একটা বিষয় আলোচনায় আসা উচিত সেটা হল, মুসলিমদের আগমন তখনকার ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক কাঠামো, উৎপাদন সম্পর্কে-কাঠামোতে কি ধরণের পরিবর্তন এনেছিল?
তৃতীয়ত
কিস্তি তিন-এ উল্লেখ করছেন, ছফা মুসলমান পুঁথিলেখকদের মনোজগৎ বুঝে নেবার জন্য লিখতে গিয়ে শুরু করছেন এভাবে –
হিন্দুদের দেব-দেবী এবং কাব্যোক্ত নায়ক-নায়িকাদের প্রতি মনে মনে একটি বিদ্বেষের দূরস্মৃতিও সক্রিয় ছিলো। কেননা এই দেব-দেবীর পূজারীদের অত্যাচার এবং ঘৃণা থেকে অব্যাহতি পাবার আশায় তাঁদের পূর্বপুরুষেরা প্রথমে বৌদ্ধ ধর্ম এবং পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।
আপনিও ৪র্থ পর্বে লিখছেন,
মুসলমান রাজ্যের প্রতিষ্ঠা লাভের সাথে সাথে ধর্মান্তরিত এসব বৌদ্ধরা দলে দলে ইসলাম ধর্মের আশ্রয় লাভ করেন। এতে তাঁদের সামাজিক প্রভুত্ব লাভের কিছুটা দিশা হলেও জাগতিক সব কষ্টের সুরাহা মিলেনি।
এখন প্রশ্ন আসে, এই ভূখন্ডের মানুষের মধ্যে ইসলামের বিস্তারের এর কারণ কি? দেব-দেবীর পূজারীদের অত্যাচারে এবং ঘৃণা থেকে অব্যাহতি পাওয়াই কি প্রধান কারণ?
এবং একটা কথা যেটা আপনি যোগ করেছেন, ‘সামাজিক প্রভুত্ব লাভের কিছুটা দিশা হল’ এটা কি ব্যাখ্যা করবেন? নিম্নবর্ণের হিন্দু একজন মানুষ, বৌদ্ধ হলেন, তারপরে মুসলমান হলেন এবং তিনি সামাজিক প্রভুত্ব লাভ করলেন – কিভাবে?
এখানে যা যতটুকু বিষয়ের উল্লেখ করেছি তার ব্যাপ্তি অনেক বিশাল। এখান থেকে আলোচনা শুরু করলে আরও অনেক বিষয়ও আসবে পরে।
আর, এগুলো লেখার জন্য ৫ম পর্ব বেছে নেওয়ার কারণ এখানেই মূলত আপনি ‘বাঙালী মুসলমানের মন’ নিয়ে আলোচনা শেষ করেছেন।
আশা করি কথা হবে...
৬৮
অনুপম, সরাসরি তুমিতে যাচ্ছি। তুমি অনেক ভাল করে ছফাগিরি পড়েছ। জানি না মন্তব্যে কতটা উত্তর করতে পারি। যে প্রশ্নগুলো করেছ সেগুলোর উত্তরের জন্য আশেপাশের অনেক কথা এসে যায়। শুধু বেঙ্গলের ফিউডালিজম নিয়ে এখানে কিছু তথ্য দিচ্ছি।
ইন্ডিয়ার অন্যান্য প্রোভিন্সে যেটুকু ফিউডালিজমের চিহ্ন খুঁইজ্যা পাওন যায়, বেঙ্গলে তার ছিটাফোঁটাও পাইবেন না।
ফিউডালিজমের বাংলা হল সামন্ততন্ত্র। এটা নিয়ে ‘যদ্যপি আমার গুরু’ তে বিস্তারিত আছে।
ইন দ্যা স্ট্রিকটেস্ট সেন্স অভ দ্যা টার্ম ইন্ডিয়াতে কোন ফিউডালিজম আছিল না। বেঙ্গলের কথা ত এক্কেরে আলাদা। বেঙ্গলের কথায় পরে আইতাছি। তার আগে রেস্ট অভ দি ইন্ডিয়ার খবর লই। ফিডালিজম অইল একটা ক্লোজড সিস্টেম। বংশপরম্পরা একটা পরিবার স্থায়ী অইয়া একটা জায়গায় বাস করব। তার ধোপা, নাপিত, কামার, কুমার সব আলাদা। এক জায়গার মানুষ অন্য জায়গায় যাইবার পারব না। কাঁঠালের যেমন কোয়া ফিউডাল সিস্টেমে সামন্তের জমির সঙ্গে সকলের তেমন সস্পর্ক। সামন্তরা অইল নিজের জমিদারিতে সমস্ত দণ্ডমুণ্ডের মালিক। রাজসভায় ঠিকমতো হাজিরা দিতে পারলে আর যুদ্ধের সময় ঠিকমতো সৈন্য পাঠাইবার পারলে এক্কেরে সাত খুন মাফ। ইন্ডিয়াতে মোগল আমলের কথা ধরেন, জমিদারি এখানে বংশানুক্রমিক আছিল না। সম্রাট ইচ্ছা করলে জমিদারের পোলারে জমিদার নাও বানাইতে পারতেন। আর যদি বেঙ্গলের কথায় আইয়েন, তাইলে এক্কেরে অন্য কথা বলতে অয়। পুরানা বাংলা পুঁথিতে দেখা যায় বাংলার বাণিজ্যবহর জাভা সুমাত্রা এইসকল অঞ্চলে যাওয়া-আসা করছে। যেখানে বাণিজ্য এইরকম সচল থাকে সেই সমাজটারে অন্য যা ইচ্ছা কইবার চান কন, কিন্তু ফিউডালিজম বলবার পারবেন না।[পৃষ্ঠা ৪৭] … গ্রামগুলার ফরমেশন দেখলেই বুঝতে পারবেন। এইখান থেইক্যা বিহারে যান, দেখবেন সীন এক্কেরে পালটাইয়া গেছে। ফিউডালের অবস্থানের চাইর পাশে গোটা গ্রামবাসীর বসবাস। বেঙ্গলে সেইসব আপনি পাইবেন না।[পৃষ্ঠা ৪৭] …
পূর্ব বাংলা আধা-সামন্তবাদী আধা-উপনিবেশবাদী ছিল বলে চালু ধারণাটা প্রফেসর রাজ্জাক এক কথায় নাকচ করে দিয়েছেন।
পার্থ চ্যাটার্জীর দুইটা বইয়ে এই বিষয়ে কথা আছে। বেঙ্গলের ফিডালিজম নিয়ে অবশ্য সরাসরি কথা নাই। ‘ন্যাশনালিস্ট থট এন্ড দা কলোনিয়াল ওয়ার্ল্ডঃ আ ডেরিভেটিভ ডিসকোর্স’। ‘দা ন্যাশন এণ্ড ইটস ফ্র্যাগমেন্টস’। প্রথম বইয়ের পৃষ্ঠা ১৪৫ থেকে কিছু কোট করি-
The colonial state in India had consistently propped up an obsolete feudal order in the countryside and was thus preventing a solution of the massive agrarian problem without which no country can industrialize on a stable basis. Hence, the most desirable national policy of industrialization would be, first of all, to replace the colonial state with a truly national state; second, to eradicate feudalism in the countryside and undertake fundamental land reforms; and third, to carefully plan the industrial development of the country ……
বিজয় কুমার ঠাকুরের একটা লেখা পড়েছিলাম। ‘বিগীনিংস অভ ফিউডালিজম ইন বেঙ্গল’। এখানে অবশ্য দেখান হয়েছে বাংলায় কিভাবে ফিউডালিজম ঢুকে পড়েছিল। আমি যা পড়েছি এই বিষয়ে তাতে রাজ্জাক সাহেবের ধারণার সাথে আমার দ্বিমত নেই। তবে ফিউডালিজম এক্কেরে ছিল না আমি তা জোর গলায় বলতে পারব না। বিজয় ঠাকুরের কিছু কথা এখানে উল্লেখ করছি।
The growing feudalisation of the administrative apparatus of the state in Bengal from the Gupta period onwards is also reflected in the existence of feudatories. In the Gupta period we come across two feudatories of Nainyagupta (AD 501-9) in Bengal Maharaja Rudradeva and Maharaja Vijayasena. A growth in the number of feudatories in the post-Gupta period can be inferred from contemporary epigraphic records. Sasanka started his career as a mahasamanta and when he became independent he himself came to have a number of feudatories. Lokanatha was also a feudatory before becoming independent. The institution of feudatories was further strengthened during the Pala period. The royal officials mentioned in the Pala and the Sena records include rajan, rajanaka, rajanyaka, ranaka, samanta and mahasamanta. The Khalimpur Copper-plate Inscription of Dharmapala refers to a mahasa-matadhipati Srinarayanavarman who presided over a certain janapada." The same inscription refers to various kings who came to the court to pay homage to the Pala king. Mahipala II and Ramapala also had a number of feudatories and even the decline of the Pala dynasty was brought about by its numerous feudatories.4' From the Khalimpur record it is obvious that the king summoned occasional meetings of his feudatories, many of whom were very powerful and practically independent. Naturally the king, when in distress, had to bend down before them as in the case of Ramapala who was in need of help against his adversary Bhima. The administration was further feudalised by the growing hereditary character of official positions from the Gupta period onwards. ---
The independent and self-sufficient economic units, which were the hallmark of medieval European feudalism, also came into existence in medieval Bengal. The various economic and political rights conferred upon the beneficiaries sapped the economic ties between the central authority and the primary cultivators of the donated areas which made the beneficiaries more dependent on the local artisans and cultivators than on the royal officials for the continuity and development of their economy. If the two forged copper plates of the 7th century AD ascribed to Samudragupta, are to be relied upon, then it becomes clear that the tax-paying peasants were prohibited from leaving their own villages, a situation which definitely encouraged localisms. Moreover due to the rise of local units of production and administration even irrigation tended to become a local responsibility in Bengal by the time of the Palas. This development naturally undermined the central authority and helped the rise of independent economic units. The emergence of local units of production is also evidenced by the paucity of coins from the Gupta period onwards. Not even a single silver coin of the immediate successors of the Guptas in Bengal have been discovered. Even the few gold coins bearing the legends of Sasanka, Jaya (-naga?), Samacha (radeva) and other kings found in different parts of Bengal are badly debased. The succeeding period up to the rise of the Palas has yet to yield a coin. Even the Palas, who seem to have tried to re-introduce minted currency in Bengal failed in this endeavor. A few copper and silver coins of doubtful authenticity have been ascribed to them which are extremely scarce and badly debased. When we think of the long rule of the Pala dynasty and the extent of its kingdom, the lack of a currency system becomes more conspicuous. In fact, in this period the coins were being replaced by cowries, indicating a decline in monetization. The above survey makes it clear that there was a general paucity of coins in this period which was probably a direct outcome of the feudalisation of tile economic structure and the state and the decline of trade in this period. The rise of local units of production resulted in the growth of local production for local consumption, thereby rendering obsolete internal exchange on any considerable scale which explains the absence of coins and prevalence of cowries.
That internal trade was not prospering in early medieval Bengal is attested by various developments. Mithilc in North Bihar was touched by eight trade routes in ancient times one of which was the Mithila- Tamralipti route. But surprisingly not a single reference is made about them during the early medieval period, suggesting perhaps that it had become defunct by that time. Even the references to internal trading activities in the inscriptions and literature of Bengal are few and far bet-ween and they mainly refer to local periodical hatas (markets). We can surmise that the trade routes declined because internal trade itself was declining. Another indication of this trend is an inscription of Dharma-pala, who handed over to the grantees even the markets attached to the villages. These grantees naturally would not have allowed the traders to operate as freely as the state would have done. The very idea of granting a village along with its market place underlines the strictly local character of internal trade in this period. The process of disintegration of internal trade was further facilitated by tile decline of foreign trade in this period. The foreign trade of Bengal which was prospering up to the 6th- 7th centuries AD subsequently started to decline. This process had already started from the middle of the 7th century AD and the commercial activities of Tamralipti must have declined sometime during this century. Both Hsuen Tsang and I-tsing have referred to the prosperity of this port in the 7th century AD, but there is no reference to Tamralipti as a sea port from the 8th century AD onwards. Moreover, not even a single commercial center sprang up in Bengal between the 8th and the 13th centuries AD and it appears that Bengal had no place in external trade for at least 500 years. The decline in foreign trade must have weakened the economic links between the coastal towns and interior towns as well as between towns and villages and this might have acted as another adverse influence on the already languishing internal trade. The decline in trade and commerce is also indicated by a lowering of the status of merchants, traders and craftsmen. The sarthavaha, who is mentioned in our sources as an important figure till the Gupta period is no longer heard of and it seems that the average vaisya found his status comparatively lowered in a society which was dominated by the landed aristocracy. Nihar Ranjan Ray draws attention to a significant passage in this connection. In the reign of Laksmanasena in connection with the unfurling ceremony of the trader's banner, called sacradhvaja, a writer says, "O Sakradvaja! Where are the traders who once held you aloft? The people are trying to use you as plough or animal-post." This passage clearly indicates the decline and even total collapse of the commercial class in this period. It seems that the lower section of the business community came to be gradually bracketed with the sudras. The artisans and craftsmen had a similar fate in store. Thus, whereas in earlier times the various crafts and industries were ordained for the sudras,, in the early medieval period the artisan class came to be despised.'? It is to be noted that in the feudal societies of Japan, China and Europe also artisans occupied a very low status. The decline of crafts and commerce is also indicated by the changing meanings of certain technical terms which formed part of the vocabulary of this branch of economic activity. The terms sreni, nigama, vithi and vaidehaka or vaideha lost their economic connotation and generally came to signify social groups (generally untouchables) or rural units.---
তোমার প্রথম প্রশ্নের কিছুটা উত্তর করলাম। বাকিগুলো আরও সময় নিয়ে করব। আপাতত একটু দৌড়ের উপর আছি।
ইন্ডিয়ার অন্যান্য প্রোভিন্সে যেটুকু ফিউডালিজমের চিহ্ন খুঁইজ্যা পাওন যায়, বেঙ্গলে তার ছিটাফোঁটাও পাইবেন না।
ফিউডালিজমের বাংলা হল সামন্ততন্ত্র। এটা নিয়ে ‘যদ্যপি আমার গুরু’ তে বিস্তারিত আছে।
ইন দ্যা স্ট্রিকটেস্ট সেন্স অভ দ্যা টার্ম ইন্ডিয়াতে কোন ফিউডালিজম আছিল না। বেঙ্গলের কথা ত এক্কেরে আলাদা। বেঙ্গলের কথায় পরে আইতাছি। তার আগে রেস্ট অভ দি ইন্ডিয়ার খবর লই। ফিডালিজম অইল একটা ক্লোজড সিস্টেম। বংশপরম্পরা একটা পরিবার স্থায়ী অইয়া একটা জায়গায় বাস করব। তার ধোপা, নাপিত, কামার, কুমার সব আলাদা। এক জায়গার মানুষ অন্য জায়গায় যাইবার পারব না। কাঁঠালের যেমন কোয়া ফিউডাল সিস্টেমে সামন্তের জমির সঙ্গে সকলের তেমন সস্পর্ক। সামন্তরা অইল নিজের জমিদারিতে সমস্ত দণ্ডমুণ্ডের মালিক। রাজসভায় ঠিকমতো হাজিরা দিতে পারলে আর যুদ্ধের সময় ঠিকমতো সৈন্য পাঠাইবার পারলে এক্কেরে সাত খুন মাফ। ইন্ডিয়াতে মোগল আমলের কথা ধরেন, জমিদারি এখানে বংশানুক্রমিক আছিল না। সম্রাট ইচ্ছা করলে জমিদারের পোলারে জমিদার নাও বানাইতে পারতেন। আর যদি বেঙ্গলের কথায় আইয়েন, তাইলে এক্কেরে অন্য কথা বলতে অয়। পুরানা বাংলা পুঁথিতে দেখা যায় বাংলার বাণিজ্যবহর জাভা সুমাত্রা এইসকল অঞ্চলে যাওয়া-আসা করছে। যেখানে বাণিজ্য এইরকম সচল থাকে সেই সমাজটারে অন্য যা ইচ্ছা কইবার চান কন, কিন্তু ফিউডালিজম বলবার পারবেন না।[পৃষ্ঠা ৪৭] … গ্রামগুলার ফরমেশন দেখলেই বুঝতে পারবেন। এইখান থেইক্যা বিহারে যান, দেখবেন সীন এক্কেরে পালটাইয়া গেছে। ফিউডালের অবস্থানের চাইর পাশে গোটা গ্রামবাসীর বসবাস। বেঙ্গলে সেইসব আপনি পাইবেন না।[পৃষ্ঠা ৪৭] …
পূর্ব বাংলা আধা-সামন্তবাদী আধা-উপনিবেশবাদী ছিল বলে চালু ধারণাটা প্রফেসর রাজ্জাক এক কথায় নাকচ করে দিয়েছেন।
পার্থ চ্যাটার্জীর দুইটা বইয়ে এই বিষয়ে কথা আছে। বেঙ্গলের ফিডালিজম নিয়ে অবশ্য সরাসরি কথা নাই। ‘ন্যাশনালিস্ট থট এন্ড দা কলোনিয়াল ওয়ার্ল্ডঃ আ ডেরিভেটিভ ডিসকোর্স’। ‘দা ন্যাশন এণ্ড ইটস ফ্র্যাগমেন্টস’। প্রথম বইয়ের পৃষ্ঠা ১৪৫ থেকে কিছু কোট করি-
The colonial state in India had consistently propped up an obsolete feudal order in the countryside and was thus preventing a solution of the massive agrarian problem without which no country can industrialize on a stable basis. Hence, the most desirable national policy of industrialization would be, first of all, to replace the colonial state with a truly national state; second, to eradicate feudalism in the countryside and undertake fundamental land reforms; and third, to carefully plan the industrial development of the country ……
বিজয় কুমার ঠাকুরের একটা লেখা পড়েছিলাম। ‘বিগীনিংস অভ ফিউডালিজম ইন বেঙ্গল’। এখানে অবশ্য দেখান হয়েছে বাংলায় কিভাবে ফিউডালিজম ঢুকে পড়েছিল। আমি যা পড়েছি এই বিষয়ে তাতে রাজ্জাক সাহেবের ধারণার সাথে আমার দ্বিমত নেই। তবে ফিউডালিজম এক্কেরে ছিল না আমি তা জোর গলায় বলতে পারব না। বিজয় ঠাকুরের কিছু কথা এখানে উল্লেখ করছি।
The growing feudalisation of the administrative apparatus of the state in Bengal from the Gupta period onwards is also reflected in the existence of feudatories. In the Gupta period we come across two feudatories of Nainyagupta (AD 501-9) in Bengal Maharaja Rudradeva and Maharaja Vijayasena. A growth in the number of feudatories in the post-Gupta period can be inferred from contemporary epigraphic records. Sasanka started his career as a mahasamanta and when he became independent he himself came to have a number of feudatories. Lokanatha was also a feudatory before becoming independent. The institution of feudatories was further strengthened during the Pala period. The royal officials mentioned in the Pala and the Sena records include rajan, rajanaka, rajanyaka, ranaka, samanta and mahasamanta. The Khalimpur Copper-plate Inscription of Dharmapala refers to a mahasa-matadhipati Srinarayanavarman who presided over a certain janapada." The same inscription refers to various kings who came to the court to pay homage to the Pala king. Mahipala II and Ramapala also had a number of feudatories and even the decline of the Pala dynasty was brought about by its numerous feudatories.4' From the Khalimpur record it is obvious that the king summoned occasional meetings of his feudatories, many of whom were very powerful and practically independent. Naturally the king, when in distress, had to bend down before them as in the case of Ramapala who was in need of help against his adversary Bhima. The administration was further feudalised by the growing hereditary character of official positions from the Gupta period onwards. ---
The independent and self-sufficient economic units, which were the hallmark of medieval European feudalism, also came into existence in medieval Bengal. The various economic and political rights conferred upon the beneficiaries sapped the economic ties between the central authority and the primary cultivators of the donated areas which made the beneficiaries more dependent on the local artisans and cultivators than on the royal officials for the continuity and development of their economy. If the two forged copper plates of the 7th century AD ascribed to Samudragupta, are to be relied upon, then it becomes clear that the tax-paying peasants were prohibited from leaving their own villages, a situation which definitely encouraged localisms. Moreover due to the rise of local units of production and administration even irrigation tended to become a local responsibility in Bengal by the time of the Palas. This development naturally undermined the central authority and helped the rise of independent economic units. The emergence of local units of production is also evidenced by the paucity of coins from the Gupta period onwards. Not even a single silver coin of the immediate successors of the Guptas in Bengal have been discovered. Even the few gold coins bearing the legends of Sasanka, Jaya (-naga?), Samacha (radeva) and other kings found in different parts of Bengal are badly debased. The succeeding period up to the rise of the Palas has yet to yield a coin. Even the Palas, who seem to have tried to re-introduce minted currency in Bengal failed in this endeavor. A few copper and silver coins of doubtful authenticity have been ascribed to them which are extremely scarce and badly debased. When we think of the long rule of the Pala dynasty and the extent of its kingdom, the lack of a currency system becomes more conspicuous. In fact, in this period the coins were being replaced by cowries, indicating a decline in monetization. The above survey makes it clear that there was a general paucity of coins in this period which was probably a direct outcome of the feudalisation of tile economic structure and the state and the decline of trade in this period. The rise of local units of production resulted in the growth of local production for local consumption, thereby rendering obsolete internal exchange on any considerable scale which explains the absence of coins and prevalence of cowries.
That internal trade was not prospering in early medieval Bengal is attested by various developments. Mithilc in North Bihar was touched by eight trade routes in ancient times one of which was the Mithila- Tamralipti route. But surprisingly not a single reference is made about them during the early medieval period, suggesting perhaps that it had become defunct by that time. Even the references to internal trading activities in the inscriptions and literature of Bengal are few and far bet-ween and they mainly refer to local periodical hatas (markets). We can surmise that the trade routes declined because internal trade itself was declining. Another indication of this trend is an inscription of Dharma-pala, who handed over to the grantees even the markets attached to the villages. These grantees naturally would not have allowed the traders to operate as freely as the state would have done. The very idea of granting a village along with its market place underlines the strictly local character of internal trade in this period. The process of disintegration of internal trade was further facilitated by tile decline of foreign trade in this period. The foreign trade of Bengal which was prospering up to the 6th- 7th centuries AD subsequently started to decline. This process had already started from the middle of the 7th century AD and the commercial activities of Tamralipti must have declined sometime during this century. Both Hsuen Tsang and I-tsing have referred to the prosperity of this port in the 7th century AD, but there is no reference to Tamralipti as a sea port from the 8th century AD onwards. Moreover, not even a single commercial center sprang up in Bengal between the 8th and the 13th centuries AD and it appears that Bengal had no place in external trade for at least 500 years. The decline in foreign trade must have weakened the economic links between the coastal towns and interior towns as well as between towns and villages and this might have acted as another adverse influence on the already languishing internal trade. The decline in trade and commerce is also indicated by a lowering of the status of merchants, traders and craftsmen. The sarthavaha, who is mentioned in our sources as an important figure till the Gupta period is no longer heard of and it seems that the average vaisya found his status comparatively lowered in a society which was dominated by the landed aristocracy. Nihar Ranjan Ray draws attention to a significant passage in this connection. In the reign of Laksmanasena in connection with the unfurling ceremony of the trader's banner, called sacradhvaja, a writer says, "O Sakradvaja! Where are the traders who once held you aloft? The people are trying to use you as plough or animal-post." This passage clearly indicates the decline and even total collapse of the commercial class in this period. It seems that the lower section of the business community came to be gradually bracketed with the sudras. The artisans and craftsmen had a similar fate in store. Thus, whereas in earlier times the various crafts and industries were ordained for the sudras,, in the early medieval period the artisan class came to be despised.'? It is to be noted that in the feudal societies of Japan, China and Europe also artisans occupied a very low status. The decline of crafts and commerce is also indicated by the changing meanings of certain technical terms which formed part of the vocabulary of this branch of economic activity. The terms sreni, nigama, vithi and vaidehaka or vaideha lost their economic connotation and generally came to signify social groups (generally untouchables) or rural units.---
তোমার প্রথম প্রশ্নের কিছুটা উত্তর করলাম। বাকিগুলো আরও সময় নিয়ে করব। আপাতত একটু দৌড়ের উপর আছি।
৬৯
তুমিতে যাওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আর আমিও সরাসরি আলোচনায় যাচ্ছি -
পার্থ চ্যাটার্জি যা বলছেন:
ভারতের ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা ক্রমাগতভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছিল অপ্রোয়জনীয়(স্থবির) সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাঁচিয়ে রাখার।
ঔপনিবেশিক ভারত বলছেন যখন তারমানে উনি ইউরোপীয় শক্তি এই অঞ্চলের শাসনভার গ্রহণের পরের সময়ের কথা বলছেন নিশ্চয়। কেন বাঁচিয়ে রাখতে চাচ্ছিল? সেটার জবাবও দিচ্ছেন:
[i]তারা [শাসক শ্রেণী i.e. ঔপনিবেশিক শক্তি] ভূমির মালিকানাকে কেন্দ্র করে যে সমস্যা তৈরি হয়েছিল তা থেকে রক্ষা পাবার জন্য।
কিন্তু এই সমস্যা যে সামন্ততান্ত্রিক অবস্থা থেকে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা প্রত্যাবর্তনের প্রাথমিক অবস্থায় আসে এবং আসা উচিত তা পার্থ চ্যাটার্জি উপলব্ধি করেছেন। আর উৎপাদনমুখী পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় যাওয়ার জন্য কোন পথে চলা উচিত তাও উল্লেখ করেছেন। এই অংশটুকু গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এই আলোচনায় না। যে বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে তা হল বাংলায় তথা ভারতে সামন্ততন্ত্র ছিল কিনা?
পার্থ চ্যাটার্জি কিন্তু আপনার মতের সাথে অনৈক্য প্রকাশ করেছেন। উনি বলছেন, সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তির নিয়ে আসা পুঁজিবাদের প্রবেশের ফলে ভূমির মালিকানা এবং একে ঘিরে যে উৎপাদন ব্যবস্থা তার ভেতরে তৈরি হওয়া দ্বন্দ্বের কথা। সেই অর্থে উনি বাংলায় বা ভারতে যে সামন্ততান্ত্রিক কাঠামোর অস্তিত্ব ছিল তা স্বীকার করে নিয়েছেন।
বিজয়কুমার ঠাকুরের যে বড় অংশ কোট করেছেন সেখানেও কিন্তু আপনার মতের পক্ষে কোন রায় উনি দেননি বরং সামন্তবাদের উপস্থিতির কথাই বলেছেন।
আমি মোটাদাগে সামন্ততন্ত্রের মূল বৈশিষ্টগুলো নিচে লিখছি –
১. ভূসম্পদের ওপর ভূস্বামীদের দখল ও নিয়ন্ত্রণ
২. উৎপাদনের উপকরণ ও উৎপন্ন সামগ্রীর ওপর ভূস্বামীদের নিয়ন্ত্রণ
৩. ভূস্বামীদের নিচে অবস্থান ভূমিদাসের (এদের ভেতরের সম্পর্ক মূলত আধিপত্য এবং অধীনতার, ভূমিদাসরা তাদের ভূমিতে স্থায়ীভাবে থাকতেন, কিন্তু জমির মালিকানা তাদের না, ভূসম্পদের মালিকানা বদলের সাথে সাথে ভূমিদাসও হস্তান্তরিত হতেন)
৪. রাজস্ব ব্যবস্থা দ্বারা উদ্বৃত্ত আহরণ
৫. উৎপন্ন পণ্য মূলত ভোগের(ভূস্বামীর) উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়
৬. অতিরিক্ত পণ্য বাণিজ্যের জন্য ব্যবহৃত হয়, তবে তার প্রভাব খুবই সামান্য (এই ব্যবস্থায় বাণিজ্যের সংকোচন ঘটাটাই স্বাভাবিক। বরং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা একটা আঞ্চলিক চরিত্র পায়)
৭. একটা আবদ্ধ অর্থনৈতিক কাঠামো
এটা গেল ঊৎপাদন সম্পর্কের ভিত্তিতে মূল বৈশিষ্ট। এখন সামন্ততন্ত্রের রাজনৈতিক-প্রশাসনিক চেহারাটা একটু দেখেন –
মূলত ব্যবস্থাটা পিরামিডের মত। এখানে ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণ ঘটে।
১. মাথায় থাকেন রাজা। কিন্তু তিনি সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী নন!
২. রাজার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা সামন্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাগ হয়। এরা এই অধিকার ও কর্তৃত্ব লাভ করেন শর্তের ভিত্তিতে; প্রথমত – রাজাকে যুদ্ধের সময় সৈন্য ও রসদ সরবরাহ করবে এবং দ্বিতীয়ত – রাজস্ব, মন্ত্রণা ও পরামর্শ দেওয়াও তার কর্তব্য।
৩. এভাবেই রাজা থেকে প্রধান সামন্ত, তার থেকে মধ্য সামন্ত ও মধ্য সামন্ত থেকে ক্ষুদ্র সামন্তে বিতরণ করা হয়।
এখানে বিশেষ বৈশিষ্ট যেটা লিখেছি, 'বিকেন্দ্রীকরণ' সেটা এভাবেই হয়। প্রধান সামন্তের আনুগত্য থাকে রাজার প্রতি। মধ্যজনের প্রধানের প্রতি। ক্ষুদ্রজনের মধ্যজনের প্রতি। আর এভাবেই প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতাও আঞ্চলিকতার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অঞ্চল থেকে অঞ্চল ভেদেও কিছু পার্থক্য থাকবেই। যেমন – সব জায়গায়ই যে উৎপাদনের উপকরণ ভূস্বামীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল তা না। আবার মধ্য সামন্তের সংখ্যা সব জায়গায়ই একই সংখ্যক ছিল না।
রাজ্জাক সাহেব বাংলা-বিহারের কথা যা বলেছেন তাতে মাথায় রাখতে হবে ভৌগোলিক অবস্থানটাও। বাংলার পাশে যে সমুদ্র ব্যবহারের সুযোগ ছিল বিহারের কিন্তু তা ছিল না বা নাই। সেই জন্য দুই অঞ্চলের ব্যবস্থাতেও ফারাক থাকবেই। তাই সবকিছুকে একটা ছকে ফেলার চেষ্টা না করে আলাদা ভাবে পরিপ্রেক্ষিত বোঝার চেষ্টা করা উচিত।
আর একটা বিষয় আমাদের মাথায় রাখা উচিত, সেটা হল এই ভূখন্ডে একটা ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল সেটা একান্তই ভারতীয়। ইউরোপীয় সংজ্ঞা দিয়ে তাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা কখনই সম্পূর্ণতা পায়না। যাই হোক এখানে মানে ভারতে প্রচলিত ছিল একটা শ্রমবিভাজনের ব্যাপার – যেখানে একেক গোষ্ঠি এক একটি নির্দিষ্ট কর্মে যুক্ত ছিল। এর উপরে ভিত্তি করেই ভারতের শাসকের ও শোষকের উৎপাদন সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। সেখান থেকেই তৈরি হয়েছিল চাতুর্বর্ণ্য ব্যবস্থা।
ইউরোপীয় ক্রীতদাসপ্রথা ও ভারতীয় জাতপাতপ্রথার পার্থক্য ছিল, ইউরোপে ঘোষণা দিয়ে মানুষকে ক্রীতদাস বানিয়ে শোষণ করা হত। আর এখানে শোষণটা চলত জাতিভেদ ব্যবস্থার মুখোশে। ইউরোপে যেমন ক্রীতদাস প্রথাকে গ্রহণযোগ্যতা দেওয়ার জন্য দর্শনভিত্তিক চিন্তার কাঠামো দাঁড় করানো হয়েছিল তেমনি ভারতবর্ষেও ধর্ম, সামাজিক কাঠামোর ভেতরে ব্যবস্থাটাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই দুই জায়গার দুটো ব্যবস্থার মধ্যে চিন্তাগত কোন পার্থক্য নেই। দুটোরই মূল কথা ‘শোষক’ ও ‘শোষিত’-এর দ্বন্দ্ব।
তেমনি ভাবে সামন্তব্যবস্থাটারও একটা উন্মেষ কাল ছিল, তারপরে এটা আস্তে আস্তে প্রসার ঘটিয়েছে এবং একটা সময়ে এসে এর চরম বিকাশ ঘটেছে। তার চেহারা সব সময় সব জায়গায় ইউরোপের সামন্ততন্ত্রের প্রতিটা স্তরের সাথে মেলেনা। কিন্তু ভারতীয় চেহারা নিয়ে সামন্ততন্ত্রের উপস্থিতি ছিল।
বিজয় কুমার ঠাকুরের লেখা নিয়ে কিছু লিখলাম না কারণ উনার দেওয়া তথ্য-উপাত্ত সব সঠিক কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। কিছু বই ঘাঁটতে হবে – বাংলায় বাণিজ্যের অবস্থা কিরকম ছিল দেখার জন্য। উনার মতের সাথে মেলে এরকম মানুষের লেখা পড়েছি কিন্তু উনাদের মতের বিরোধী মতও আছে।
আমিও আগামী ৩-৪ দিন ব্যস্ত থাকব, লিখতে পারব না। আশা করি এই বিষয়টা এবং অন্য বিষয়গুলো নিয়ে আরও কথা হবে।
পার্থ চ্যাটার্জি যা বলছেন:
ভারতের ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা ক্রমাগতভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছিল অপ্রোয়জনীয়(স্থবির) সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাঁচিয়ে রাখার।
ঔপনিবেশিক ভারত বলছেন যখন তারমানে উনি ইউরোপীয় শক্তি এই অঞ্চলের শাসনভার গ্রহণের পরের সময়ের কথা বলছেন নিশ্চয়। কেন বাঁচিয়ে রাখতে চাচ্ছিল? সেটার জবাবও দিচ্ছেন:
[i]তারা [শাসক শ্রেণী i.e. ঔপনিবেশিক শক্তি] ভূমির মালিকানাকে কেন্দ্র করে যে সমস্যা তৈরি হয়েছিল তা থেকে রক্ষা পাবার জন্য।
কিন্তু এই সমস্যা যে সামন্ততান্ত্রিক অবস্থা থেকে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা প্রত্যাবর্তনের প্রাথমিক অবস্থায় আসে এবং আসা উচিত তা পার্থ চ্যাটার্জি উপলব্ধি করেছেন। আর উৎপাদনমুখী পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় যাওয়ার জন্য কোন পথে চলা উচিত তাও উল্লেখ করেছেন। এই অংশটুকু গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এই আলোচনায় না। যে বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে তা হল বাংলায় তথা ভারতে সামন্ততন্ত্র ছিল কিনা?
পার্থ চ্যাটার্জি কিন্তু আপনার মতের সাথে অনৈক্য প্রকাশ করেছেন। উনি বলছেন, সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তির নিয়ে আসা পুঁজিবাদের প্রবেশের ফলে ভূমির মালিকানা এবং একে ঘিরে যে উৎপাদন ব্যবস্থা তার ভেতরে তৈরি হওয়া দ্বন্দ্বের কথা। সেই অর্থে উনি বাংলায় বা ভারতে যে সামন্ততান্ত্রিক কাঠামোর অস্তিত্ব ছিল তা স্বীকার করে নিয়েছেন।
বিজয়কুমার ঠাকুরের যে বড় অংশ কোট করেছেন সেখানেও কিন্তু আপনার মতের পক্ষে কোন রায় উনি দেননি বরং সামন্তবাদের উপস্থিতির কথাই বলেছেন।
আমি মোটাদাগে সামন্ততন্ত্রের মূল বৈশিষ্টগুলো নিচে লিখছি –
১. ভূসম্পদের ওপর ভূস্বামীদের দখল ও নিয়ন্ত্রণ
২. উৎপাদনের উপকরণ ও উৎপন্ন সামগ্রীর ওপর ভূস্বামীদের নিয়ন্ত্রণ
৩. ভূস্বামীদের নিচে অবস্থান ভূমিদাসের (এদের ভেতরের সম্পর্ক মূলত আধিপত্য এবং অধীনতার, ভূমিদাসরা তাদের ভূমিতে স্থায়ীভাবে থাকতেন, কিন্তু জমির মালিকানা তাদের না, ভূসম্পদের মালিকানা বদলের সাথে সাথে ভূমিদাসও হস্তান্তরিত হতেন)
৪. রাজস্ব ব্যবস্থা দ্বারা উদ্বৃত্ত আহরণ
৫. উৎপন্ন পণ্য মূলত ভোগের(ভূস্বামীর) উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়
৬. অতিরিক্ত পণ্য বাণিজ্যের জন্য ব্যবহৃত হয়, তবে তার প্রভাব খুবই সামান্য (এই ব্যবস্থায় বাণিজ্যের সংকোচন ঘটাটাই স্বাভাবিক। বরং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা একটা আঞ্চলিক চরিত্র পায়)
৭. একটা আবদ্ধ অর্থনৈতিক কাঠামো
এটা গেল ঊৎপাদন সম্পর্কের ভিত্তিতে মূল বৈশিষ্ট। এখন সামন্ততন্ত্রের রাজনৈতিক-প্রশাসনিক চেহারাটা একটু দেখেন –
মূলত ব্যবস্থাটা পিরামিডের মত। এখানে ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণ ঘটে।
১. মাথায় থাকেন রাজা। কিন্তু তিনি সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী নন!
২. রাজার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা সামন্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাগ হয়। এরা এই অধিকার ও কর্তৃত্ব লাভ করেন শর্তের ভিত্তিতে; প্রথমত – রাজাকে যুদ্ধের সময় সৈন্য ও রসদ সরবরাহ করবে এবং দ্বিতীয়ত – রাজস্ব, মন্ত্রণা ও পরামর্শ দেওয়াও তার কর্তব্য।
৩. এভাবেই রাজা থেকে প্রধান সামন্ত, তার থেকে মধ্য সামন্ত ও মধ্য সামন্ত থেকে ক্ষুদ্র সামন্তে বিতরণ করা হয়।
এখানে বিশেষ বৈশিষ্ট যেটা লিখেছি, 'বিকেন্দ্রীকরণ' সেটা এভাবেই হয়। প্রধান সামন্তের আনুগত্য থাকে রাজার প্রতি। মধ্যজনের প্রধানের প্রতি। ক্ষুদ্রজনের মধ্যজনের প্রতি। আর এভাবেই প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতাও আঞ্চলিকতার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অঞ্চল থেকে অঞ্চল ভেদেও কিছু পার্থক্য থাকবেই। যেমন – সব জায়গায়ই যে উৎপাদনের উপকরণ ভূস্বামীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল তা না। আবার মধ্য সামন্তের সংখ্যা সব জায়গায়ই একই সংখ্যক ছিল না।
রাজ্জাক সাহেব বাংলা-বিহারের কথা যা বলেছেন তাতে মাথায় রাখতে হবে ভৌগোলিক অবস্থানটাও। বাংলার পাশে যে সমুদ্র ব্যবহারের সুযোগ ছিল বিহারের কিন্তু তা ছিল না বা নাই। সেই জন্য দুই অঞ্চলের ব্যবস্থাতেও ফারাক থাকবেই। তাই সবকিছুকে একটা ছকে ফেলার চেষ্টা না করে আলাদা ভাবে পরিপ্রেক্ষিত বোঝার চেষ্টা করা উচিত।
আর একটা বিষয় আমাদের মাথায় রাখা উচিত, সেটা হল এই ভূখন্ডে একটা ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল সেটা একান্তই ভারতীয়। ইউরোপীয় সংজ্ঞা দিয়ে তাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা কখনই সম্পূর্ণতা পায়না। যাই হোক এখানে মানে ভারতে প্রচলিত ছিল একটা শ্রমবিভাজনের ব্যাপার – যেখানে একেক গোষ্ঠি এক একটি নির্দিষ্ট কর্মে যুক্ত ছিল। এর উপরে ভিত্তি করেই ভারতের শাসকের ও শোষকের উৎপাদন সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। সেখান থেকেই তৈরি হয়েছিল চাতুর্বর্ণ্য ব্যবস্থা।
ইউরোপীয় ক্রীতদাসপ্রথা ও ভারতীয় জাতপাতপ্রথার পার্থক্য ছিল, ইউরোপে ঘোষণা দিয়ে মানুষকে ক্রীতদাস বানিয়ে শোষণ করা হত। আর এখানে শোষণটা চলত জাতিভেদ ব্যবস্থার মুখোশে। ইউরোপে যেমন ক্রীতদাস প্রথাকে গ্রহণযোগ্যতা দেওয়ার জন্য দর্শনভিত্তিক চিন্তার কাঠামো দাঁড় করানো হয়েছিল তেমনি ভারতবর্ষেও ধর্ম, সামাজিক কাঠামোর ভেতরে ব্যবস্থাটাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই দুই জায়গার দুটো ব্যবস্থার মধ্যে চিন্তাগত কোন পার্থক্য নেই। দুটোরই মূল কথা ‘শোষক’ ও ‘শোষিত’-এর দ্বন্দ্ব।
তেমনি ভাবে সামন্তব্যবস্থাটারও একটা উন্মেষ কাল ছিল, তারপরে এটা আস্তে আস্তে প্রসার ঘটিয়েছে এবং একটা সময়ে এসে এর চরম বিকাশ ঘটেছে। তার চেহারা সব সময় সব জায়গায় ইউরোপের সামন্ততন্ত্রের প্রতিটা স্তরের সাথে মেলেনা। কিন্তু ভারতীয় চেহারা নিয়ে সামন্ততন্ত্রের উপস্থিতি ছিল।
বিজয় কুমার ঠাকুরের লেখা নিয়ে কিছু লিখলাম না কারণ উনার দেওয়া তথ্য-উপাত্ত সব সঠিক কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। কিছু বই ঘাঁটতে হবে – বাংলায় বাণিজ্যের অবস্থা কিরকম ছিল দেখার জন্য। উনার মতের সাথে মেলে এরকম মানুষের লেখা পড়েছি কিন্তু উনাদের মতের বিরোধী মতও আছে।
আমিও আগামী ৩-৪ দিন ব্যস্ত থাকব, লিখতে পারব না। আশা করি এই বিষয়টা এবং অন্য বিষয়গুলো নিয়ে আরও কথা হবে।
৭০
আমি পার্থ চ্যাটার্জীর যে কয়টা বই উল্টিয়েছি সেখানে ভারতের সামন্ততন্ত্রের কথা আছে। বাংলাকে সেই অখণ্ড ভারতের ব্যত্যয় হিসেবে তিনি দেখাননি। আমি মন্তব্যে লিখেছি বেঙ্গলের ফিউডালিজম নিয়ে উনার সরাসরি কোন কথা নাই। মন্তব্যে লিখেছিলাম-
বিজয় কুমার ঠাকুরের একটা লেখা পড়েছিলাম। ‘বিগীনিংস অভ ফিউডালিজম ইন বেঙ্গল’। এখানে অবশ্য দেখান হয়েছে বাংলায় কিভাবে ফিউডালিজম ঢুকে পড়েছিল। আমি যা পড়েছি এই বিষয়ে তাতে রাজ্জাক সাহেবের ধারণার সাথে আমার দ্বিমত নেই। তবে ফিউডালিজম এক্কেরে ছিল না আমি তা জোর গলায় বলতে পারব না।
আমি যা পড়েছি ......... বলতে বুঝিয়েছি বাংলায় সামন্ততন্ত্র চালু ছিল কিনা সেটা নিয়ে আনুষঙ্গিক বই ঘাঁটাঘাঁটি করার ব্যাপারকে। বিজয় কুমার ঠাকুরের লেখায় প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হয়েছে বাংলায় সামন্ততন্ত্র চালু ছিল।
সামন্তুতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য লিখে দেয়ার জন্য থ্যাংকস।
এই বিষয়ে আর কি জানতে পারলে মন্তব্যে জানিও। অথবা লিখে পোস্টাও।
বিজয় কুমার ঠাকুরের একটা লেখা পড়েছিলাম। ‘বিগীনিংস অভ ফিউডালিজম ইন বেঙ্গল’। এখানে অবশ্য দেখান হয়েছে বাংলায় কিভাবে ফিউডালিজম ঢুকে পড়েছিল। আমি যা পড়েছি এই বিষয়ে তাতে রাজ্জাক সাহেবের ধারণার সাথে আমার দ্বিমত নেই। তবে ফিউডালিজম এক্কেরে ছিল না আমি তা জোর গলায় বলতে পারব না।
আমি যা পড়েছি ......... বলতে বুঝিয়েছি বাংলায় সামন্ততন্ত্র চালু ছিল কিনা সেটা নিয়ে আনুষঙ্গিক বই ঘাঁটাঘাঁটি করার ব্যাপারকে। বিজয় কুমার ঠাকুরের লেখায় প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হয়েছে বাংলায় সামন্ততন্ত্র চালু ছিল।
সামন্তুতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য লিখে দেয়ার জন্য থ্যাংকস।
এই বিষয়ে আর কি জানতে পারলে মন্তব্যে জানিও। অথবা লিখে পোস্টাও।
৭১
প্রথম বিষয়টাতে আপনার মতামত জানানোর জন্য ধন্যবাদ।
নিজে যা-যতটুকু পড়েছি এবং বুঝেছি তাতে, ভারতে এবং বাংলায় সামন্ততন্ত্র ছিল না, এমন মতের সাথে আমি সহমত না। ভারতের বিভিন্ন অংশে, কিছু পার্থক্য নিয়ে, সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাই যে চালু ছিল - সেটাই বিভিন্ন ঐতিহাসিকের লেখায় দেখি।
যাহোক, আশা করি বাকি বিষয়গুলোতেও আপনার মতামত জানাবেন।
নিজে যা-যতটুকু পড়েছি এবং বুঝেছি তাতে, ভারতে এবং বাংলায় সামন্ততন্ত্র ছিল না, এমন মতের সাথে আমি সহমত না। ভারতের বিভিন্ন অংশে, কিছু পার্থক্য নিয়ে, সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাই যে চালু ছিল - সেটাই বিভিন্ন ঐতিহাসিকের লেখায় দেখি।
যাহোক, আশা করি বাকি বিষয়গুলোতেও আপনার মতামত জানাবেন।
এই পর্বটা ফাটাফাট হইছে।
স্বপ্নদ্রোহ