Thursday, October 21, 2010

ছফাগিরি। কিস্তি ছয়।

লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: মঙ্গল, ২০০৯-১২-২৯ ০০:০৪)

মূল লেখাটির লিংক--http://www.sachalayatan.com/subasish/29516

আগের কিস্তিগুলোতে আহমদ ছফার মুসলমান সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করার বিষয় আলোচনায় এসেছে। ছফার ভাষ্যে ছফাকে বিচার করা সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি। ‘প্রসঙ্গ বাঙালি মুসলমান’ প্রবন্ধে তিনি বলেছেন – সবদিক ভেবে আমি স্থির করেছি আমি যে সমাজ থেকে এসেছি সে বাঙালি মুসলমান সমাজটিকে যদি ন্যায়-নীতির দিকে, মানবতার দিকে, অসাম্প্রদায়িকতার দিকে এবং বিজ্ঞানদৃষ্টির দিকে আকৃষ্ট করতে চেষ্টা করি, তাহলে আমার কর্তব্য অধিকতর ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারবো। বাঙালি মুসলমান সমাজের বাইরে আরো একটা বৃহত্তর সমাজ রয়েছে, তার প্রতিও আমার একটা দায়িত্ব এবং অঙ্গীকারবোধ যেটি আমার পক্ষে অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু আমি ভেবে পাই না আমার আপন সমাজের কল্যাণের কথা চিন্তা না করলে বৃহত্তর বাঙালি সমাজ কিংবা অধিকতর ব্যাপক অর্থে বিশ্বসমাজের কল্যাণ কি করে আমি সম্পন্ন করতে পারি। … সম্প্রতি হাতে পেলাম বাংলাদেশের অক্সফোর্ড য়্যুনুভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর সুফিয়া আহমেদের ‘মুসলিম কম্যুনিটি ইন বেঙ্গল ১৮৮৪-১৯১২’ বইটি। ‘মুসলমানি বাঙলা সাহিত্য ১৮৮৪-১৯১২’ শীর্ষক অধ্যায়ে সেই সময়কার মুসলমান লেখকদের পুঁথির দিকে ঝুঁকে পড়ার কারণ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ছফা কেন ‘বাঙালী মুসলমানের মন’ লিখতে গিয়ে প্রথমে মুসলমান পুঁথি লেখকদের মনোবিশ্লেষণ করতে চেয়েছেন বইটি পড়ে সেই কারণ অনেক ভাল করে বুঝতে পারলাম। রফিউদ্দীন আহমেদের ‘দা বেঙ্গল মুসলিমস্ ১৮৭১-১৯০৬: আ কুয়েস্ট ফর আইডেন্টিটি’
বইতে বাঙালি মুসলমানদের নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা আছে। হিন্দুদের সাথে পাল্লা দিয়ে টিকতে না পেরে পুঁথি সাহিত্যিকেরা তাদের রাগের প্রকাশ ঘটিয়েছেন লিখিত শোলকে। সরাসরি। কোন ভনিতা ছাড়া। নির্যাতিত একটা জনগোষ্ঠীর এর বাইরে কিছু করার জন্য সাহস আর আস্থা দেয়ার মতো কেউ তাদের পাশে ছিলেন না। কিছুটা অনুমানের জন্য মুসলমানি পুঁথি থেকে (সংগৃহীতঃ রফিউদ্দীন আহমেদের ‘দা বেঙ্গল মুসলিমস্ ১৮৭১-১৯০৬: আ কুয়েস্ট ফর আইডেন্টিটি’ থেকে) কিছু জায়গা কোট করছি।
সিদ্দিক আলীর পুঁথি থেকে-
‘হিন্দু আনি লেখা পড়া খেলাফ হৈল মোর।
বেহুদা মেহনত গেল এগার বছছর।
হিন্দু মৈলে সর্গ পাব কিনা দিসা নাই।
মছলমান আলেম পাইলে জিজ্ঞাসিব চাই।।’

খোদাদাদের মকসুদনামা থেকে-
‘এক্ষেনে দেখি যে আমি খেয়াল করিয়া।
বহুত মোমিন লোক হিন্দি নাহি জানে।।
বাঙ্গলা দেসের লোক বাঙ্গলা জোবান।
একারনে লেখে দিনু বাঙ্গালা করিয়া।।’

মালি মুহম্মদের পুঁথি থেকে-
‘একেত বাঙ্গালা দেশে আমাদের জন্ম।
আরবি ফারসি সবে না জানে মরম।
তেকারণে বাঙ্গালায় লিখিনু কালাম।
বুজিয়া দেনের কাম করহে এছলাম। …
বাঙ্গালাতে সিখি কাম করহে দিনের।
কোন মতে হক চিন আল্লা রছুলের।’

আহমদ হিছাবুদ্দীনের পুঁথি থেকে-
‘আমাদের মোছলমানি বড়ই রোসনাই।
হামেসা হিন্দুর দিনে দেই মরা ছাই।।
এছা পছা আক্কেল তেরা সোনরে বেহায়া।
কাফিরের কথা সোন মোছলমান হইয়া।’

একটা সমাজের প্রতিনিধিত্ব করার সাথে সাথে সেই সমাজের ভুল ত্রুটিগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার কাজটুকু করেছেন আহমদ ছফা। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকে তিনি চেয়েছেন বাংলাদেশ নিজের মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। তাঁর লেখালেখির পেছনে মূল কারণ ছিল জনপ্রতিনিধিত্বের সুর লেখায় ফুটিয়ে তোলা।রচিত উপন্যাসগুলো সাহিত্যিক মান বিচারে আরো ভাল করতে পারতেন, কিন্তু ইতিহাস আর জাতীয় জীবনে মানুষের ভণ্ডামি দেখিয়ে দেবার মানসে খুব বেশি পরিশীলিত পথে তিনি এগোননি। আহমদ ছফা নিজে একা এগো্নোর খায়েশ করেন নাই। বাংলাদেশের দক্ষ লোকেরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাদের মতো এগিয়ে চলুক এটা মনেপ্রাণে চেয়েছেন। কামনা করেছেন দেশের লেখকেরা আরো পরিপক্ক হোক, শাণিত হোক । যখন চিত্রশিল্পী সুলতানকে তখনকার স্বনামধন্য চিত্রশিল্পীরা লাইমলাইটে আসতে দিচ্ছিলেন না, চিত্রকর্মবোদ্ধা না হয়েও ছফা লিখেন তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধ ‘বাংলার চিত্র ঐতিহ্যঃ সুলতানের সাধনা’। বাংলাদেশের তরুণ লেখকদের মধ্যে তাঁর চিন্তার স্ফুলিঙ্গ বিলানোর জন্য আজিজে দোকান খুলে বসেন। আন্তন ম্যাকারেঙ্কোর ‘রোড টু লাইফ’ পড়ে ‘শিল্পী সুলতান শিক্ষালয়’ গড়ে তোলেন সাংবাদিক নাজিমউদ্দিন মোস্তানকে সাথে নিয়ে। আর লেখালেখি জারি রাখেন তাঁর স্বকীয় ভঙ্গীতে। নিজের জীবনকে এভাবে দেশের মায়ায় বেঁধে ফেলার মতো লেখক একজনই। আমাদের সময়কার নায়ক আহমদ ছফা।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘চিলেকোঠার সেপাই’ ছফাকে বেশ মুগ্ধ করেছিল। স্বীকার করে নিয়েছেন এই একটা বই দিয়ে ইলিয়াস সাহেব আমাদের সাহিত্যকে একটানে বিশ্বসাহিত্যের কাছাকাছি নিয়ে গেছেন। ‘চিলেকোঠার সেপাই- বাঙালিকে ইলিয়াসের প্রতিভার রাজকর যোগাতেই হবে’ নামের প্রবন্ধে ছফা তাঁর পাঠ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।… প্রথম পাঠের রেশ আমার শিরা এবং স্নায়ুতন্ত্রীতে এখনো থরথর করে কাঁপছে। এক সময়ে সঙ্গীতশিল্পী রিচার্ড ভার্গনারের ‘ট্রিস্টান এণ্ড ইসোল্ডা’ অপেরার লং –প্লেইং রেকর্ডগুলো যখন আজ থেকে প্রায় আট বছর আগে প্রথম শুনি পুরো সপ্তাহ ধরে আমি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারিনি। আমার রক্তপ্রবাহের মধ্যে আমি যেন আফিমের প্রতিক্রিয়া অনুভব করেছি। তারপর উনিশশো ছিয়াত্তুর সালের দিকে এক জ্যোৎস্নালোকিত রাতে শিল্পকলা একাডেমীর গ্যালারি ঘরটিতে এস.এম.সুলতানকে যখন লুকিয়ে লুকিয়ে তাঁর সেই আশ্চর্য ছবিগুলো আঁকতে দেখি প্রায় পুরা মাস আমি কেমন যেন হয়ে গিয়েছিলাম। যখন একা একা চলাফেরা করতাম বিড়বিড় করে উচ্চারণ করতাম, ‘আহ্ সুন্দর, সুন্দর’। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘চিলেকোঠার সেপাই’ পাঠ করেও তেমন একটা অনুভূতি আমার মনে জন্মগ্রহণ করেছে। … আমাদের কালের সেরা লেখকদের নিয়ে আহমদ ছফার উচ্ছ্বাস কখনো চাপা পড়ে থাকে নি। সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধের কথা লিখতে গিয়ে বাংলাদেশের লেখকদের মানসিকতার গতিবিধি নিয়েও বলেছেন একই প্রবন্ধে। … আমাদের লেখক সাহিত্যিকেরা যেন ধনুক-ভাঙ্গা পণ করে বসে আছেন। ধর্ষণ আর হত্যার চিত্র যতো বীভৎসভাবে দেখানো হবে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক চিত্র ততো বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। আমাদের জাতীয় মানসের একটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ না করে পারছি না। আমরা সাধারণত অত্যাচার বলতে দুটি জিনিসকেই বুঝি, সেটা হল হত্যা ও ধর্ষণ। এই দুই বস্তু ছাড়া অত্যাচারের আরো হাজার রকমফের থাকতে পারে, সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা স্বচ্ছ নয়। সে কারণে আমাদের লেখক লেখিকারা মুক্তিযুদ্ধের চিত্র ফোটাতে গিয়ে হত্যা-ধর্ষণের চিত্রগুলো বড় করে দেখিয়েছেন। আমি বলতে চাই না পাকিস্তানি সৈন্য ব্যাপক গণহত্যা করেছে, ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের আয়োজন করেছে, নির্বিচারে নারী ধর্ষণ করেছে- এগুলো মিথ্যা। কিন্তু এগুলোর মধ্যে কেউ যদি মুক্তিযুদ্ধের ভাবসত্যকে খুঁজতে যায় তাহলে সেটাকে পণ্ডশ্রম বিবেচনা করতে হবে। ধার করা অভিজ্ঞতা সম্বলিত এই পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ এবং উনসত্তুরের অন্দোলনের ওপর যে সমস্ত গল্প-উপন্যাস আমি পড়েছি তার অনেকগুলোকে মনে হয়েছে উনিশশো উনসত্তুরের গণ-আন্দোলন এবং উনিশশো একাত্তরের মুক্তিসংগ্রামের ব্যঙ্গচিত্র। উনিশশো নব্বই কিংবা উনিশশো তিরানব্বই-এর হুজুগ অর্থাৎ যশোপ্রার্থী খর্বক্ষমতার লোকেরা মুক্তিযুদ্ধকে পুঁজি করে সমাজের সামনে ফুটে উঠতে চাইছেন। এসব ঘটছে এবং ঘটতে থাকবে। অন্তত আগামী একশ বছর পর্যন্ত এই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এন্তার তর্ক-বিতর্ক চলতে থাকবে। বাঙালি জাতির তিন হাজার বছরের ঐতিহাসিক অস্তিত্বের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধই তাদেরকে পৃথিবীর সামনে একটা ভাষাভিত্তিক জাতীয় পরিচয়ে চিহ্নিত করেছে।
ভাষাভিত্তিক একটা স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশের পর ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় থেকে পাল্টেছে। এর পেছনে অনেক কারণ আছে। বাংলাদেশের জন্ম প্রক্রিয়ায় ভারতের স্বার্থ ছিল বলেই ধাত্রীর কাজ করেছিল একথা মিথ্যা নয়। ‘ভাষাবিষয়ক চিন্তাভাবনা’ প্রবন্ধে আহমদ ছফার বক্তব্য বেশ প্রিসাইজড্। … ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেলো, এটা বিচ্ছিন্ন কোন আকস্মিক ঘটনা নয়। দীর্ঘদিন থেকে সমাজ শরীরের মধ্যে এই বিচ্ছিন্ন হওয়ার চিন্তাটা সক্রিয়ভাবে কাজ করে আসছিল। একটা পন্থা গ্রহণ করলে ভারতের খণ্ডিতকরণ হয়ত ঠেকান যেত। তা হল ভারতকে একটা জাতি ধরে না নিয়ে অনেক জাতি, অনেক ভাষার একটি দেশ বলে যদি মনে করতে পারতেন এবং প্রতিটি ভাষা এবং সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত এলাকাকে এক একটি রাজ্য বলে স্বীকার করে, সংবিধানে তাদের আলাদা আলাদা স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দিয়ে আধুনিক একটি যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা যদি করা যেত এবং জনমতকে এই খাতে প্রবাহিত করা যেত, তাহলে হয়ত ভারত বিভাগ ঠেকানো যেত। কিন্তু ইতিহাস প্রমাণ করেছে তা হয় নি। ভারতের যে ঐক্য- সাম্রাজ্যবাদী শক্তি নিজেদের সুবিধার জন্য করেছে। এতে জনগণের স্বেচ্ছাপ্রণোদিত কোন অংশগ্রহণ ছিল না। তাই ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে যে শ্রেণীটি নেতৃত্ব দিয়েছিল, তা বৃটিশদের পৃষ্ঠপোষকতায় সৃষ্ট। ব্রিটিশ ‘ডিভাইড এণ্ড রুল পলিসি’ অবলম্বন করে যে ভারতকে একটি শাসনের আওতাভুক্ত এলাকায় পরিণত করেছিল তারা সে ভারতকেই স্বাধীন করতে আগ্রহী ছিল। সাম্রাজ্যবাদী ভারতের একত্ববোধ সম্পূর্ণ ধ্বংস করে প্রতিটি ভাষা এবং জাতিসত্তাকে জাগরিত করে সকলের স্বেচ্ছামূলক অংশগ্রহণে যে যুক্তরাষ্ট্রীয় নির্যাতিত শোষিত মানুষের ভারত গড়ে তুললে বিভক্তকরণের প্রশ্ন উঠতো না, কংগ্রেস কিংবা মুসলিম লীগ সে পথ মাড়ায় নি। তাঁদের সে যোগ্যতাও ছিলনা। তার পেছনে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক নানাবিধ কারণ ছিল।
আমরা আমাদের সার্বজনীন জাতীয় যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। ভারত পাকিস্তানকে ভাঙ্গার জন্য আওয়ামী লীগকে সব ধরণের সাহায্য করেছে, রাশিয়া তার সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছে। আর এদেশের মানুষ ত্যাগ, তিতিক্ষা আর অমানুষিক কষ্টের ভেতর দিয়ে গিয়ে সর্বান্তকরণে সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েছিল। ফলশ্রুতিতে ভাষাভিত্তিক একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব।… ভূতপূর্ব পূর্ব পাকিস্তানে উনিশশো বায়ান্ন সালের ভাষা আন্দোলনের পর বাংলা ভাষা যখন পাকিস্তানে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে, তারপর থেকে ভারতের কতিপয় রাজ্যে ভাষা এবং সংস্কৃতির চেতনা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। আসাম, অন্ধ্র ইত্যাদি রাজ্যে আপনাপন ভাষা এবং সংস্কৃতিগত পরিচিতি বিকশিত করার আন্দোলনে বেগ এবং আবেগ সঞ্চারিত হতে থাকে। কতিপয় ভারতীয় রাজ্যের ভাষা এবং সংস্কৃতিতে তাদের আলাদা পরিচিতি অটুট রাখবার জন্য রাজনৈতিক আন্দোলনের পথ বেছে নেয়। এই ভাষাগুলো পূর্বের হিন্দু আমলে, মুসলমান আমলে, ইংরেজ আমলে স্বাতন্ত্র্যের দাবীতে কখনো এমন একরোখা হয়ে উঠতে পারেনি।বর্তমানে যে অনুরাগের তীব্রতা নিয়ে ভাষা এবং সংস্কৃতির দিকে তার তাকিয়েছে পূর্বে এমনভাবে তাকাবার সুযোগ আসে নি। হিন্দি ভাষার সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংঘাতে আসার ফলেই তাদের মধ্যে এই চেতনা বিকাশ লাভ করছে। তারা বুঝতে পারছে ভাষা এবং সংস্কৃতিগত স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করতে না পারা আত্মহত্যারই নামান্তর। … একাত্তরের যুদ্ধ প্রমাণ করেছে ভাষা এবং সংস্কৃতির জন্য আন্দোলন এক সময় জাতীয় সংগ্রামে পরিণত হয়। ভারতে হিন্দি ভাষাকে কেন্দ্র করে জাতীয়তা বিকাশের অপচেষ্টা চালান হচ্ছে দীর্ঘকাল ধরে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেটা আগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে। এর মধ্যে অর্থনৈতিক শোষণের বীজ লুকিয়ে আছে এই গভীর সত্য সব রাজ্যের লোক সমানভাবে বুঝতে পারছে না। ভারতীয় ঐক্যবোধের ফানুশ কতদিন টিকে থাকে সেটা সময় উত্তর দিবে। তামিল ভাষাভাষী অঞ্চলে ঐক্যবোধের ফাটল দেখা দেয়ার কিছু আলামত মিলেছে। রামায়নে আর্যদের অনুচিত জয় তামিলরা ঘৃণার চোখে দেখে।… ভারতীয় চেতনার কেন্দ্রবিন্দু বলে কথিত রামায়ন নামে যে সংস্কৃত মহাকাব্যের কথা বলা হয়, সে গ্রন্থ এবং আর্য হিন্দুদের সৃষ্টির প্রতি তাদের ঘৃণা এবং অবজ্ঞার অন্ত নেই। গ্রন্থে অনার্যদের পরাজয় এবং আর্যদের বিজয়ের কাহিনীই বর্ণিত হয়েছে। তারা যেহেতু অনার্য, তাই পরাজিত অনার্যদের প্রতি তারা মমতাবোধ অরে, তাদের দেশপ্রেমকে সন্মান করে। রামায়ণের রামচন্দ্র হিন্দু সমাজের একজন পূজ্যবীর কিন্তু সাম্প্রতিক কালের দক্ষিণ ভারতীয়েরা রামচন্দ্রকে মনে করে একজন পরদেশ আক্রমণকারী ঔপনিবেশিক এবং রাবণকে মনে করে বীর।
ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সহায়তার পেছনে দ্বি-জাতিতত্ত্ব ভুল প্রমাণের উল্লাস লুকিয়ে ছিল। পাকিস্তানের শাসকশ্রেণীর প্রতি ভারতের নেতৃবর্গের বিরূপ ধারণা ছিল।ভৌগোলিক অবস্থানে একটা অসঙ্গত রাষ্ট্রের প্রতি তাদের ছিল অনাস্থা । পাকিস্তানকে ভেঙ্গে দুই টুকরা করতে পারলে নতুন স্বাধীন দেশ হয়ে বাংলাদেশ ভারতের কাছাকাছি আসার চেষ্টা করবে বলে তাদের ধারণা ছিল। সর্বোপরি প্রচার মাধ্যমে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংস আচরণ দেখে ভারতের সাধারণ মানুষ বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকে সমর্থন করে। ফলে জনগণের একটা চাপ ও তৎকালীন ভারত সরকারের ওপর ছিল। কিন্তু ভাষাভিত্তিক একটা স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে বাংলাদেশ ভারতের মেকি জাতীয়তাবাদের মুখোশ খুলে দিবে এটা ভারতের তখনকার চিন্তানায়কদের মাথায় আসেনি। আহমদ ছফা বাংলাদেশের জাতীয়্তাকে জিন্নাহর দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভুল সংশোধন বলে কবুল করেন না। এবং বলতে চান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ভারতবর্ষের বহু জাতীয়তার সংগ্রামের পূর্বাভাস মাত্র।
ইতিহাস পড়তে গেলে কল্পগড়া ইতিহাস পড়ছি কিনা সেদিকে ভাল করে তাকানোর প্রয়োজন আছে। ইতিহাস বিকৃতির এক অদ্ভুত উটের পিঠে সওয়ার হওয়ার জাতীয় মানসিকতা আহমদ ছফার দৃষ্টি এড়ায় নি। ছফা এক সাক্ষাৎকারে এই বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেছেন। … এটা একটা মজার প্যারাডক্স। যেমন ধরুন বাংলার হিন্দুরা পানিকে জল বলেন, মুসলমানরা জলকে পানি। কিন্তু বাংলার বাইরে সবাই, হিন্দু-মুসলমান উভয়েই পানি বলেন। এই জল-পানি নিয়ে বাংলার হিন্দু-মুসলমানরা একশ বছর লড়াই করছে। যাহা জল তাহাই পানি। যাহা পানি তাহাই জল। এখন আমাদের এখানে কী হচ্ছে। দেশের প্রকৃত সমস্যাগুলো, লড়াইয়ের যে ক্ষেত্রগুলো আছে সেখানে কেউ যেতে চাইছে না বলে কতগুলো প্রতীক তৈরি করা হয়েছে। যে কোন ইতিহাসকে দলীয়করণ করার এই যে অনুদারতা, অসত্যতা – এর কারণ হচ্ছে ইতিহাস বলতে তারা জনগণের ইতিহাস বোঝেন না। বোঝেন দলের ইতিহাস, ব্যক্তির ইতিহাস। ইতিহাস তো জনগণের ইতিহাস হবে। কিন্তু এখানে নেতা এবং দলের ইতিহাস সবাই তুলে আনছেন। বাংলাদেশ সৃষ্টি এত বড় একটা ঘটনা, সেটা নিয়ে মতদ্বৈততা, বিতর্ক এসব থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। একাত্তরের যুদ্ধ বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে শ্রেষ্ঠ ঘটনা। কিন্তু এখানে সবাই মিথ্যে বলছেন কেন? মিথ্যেকে পুজো করছেন কেন? এর একমাত্র কারণ মিথ্যা বললে এখানে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যায়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা এদেশের সূর্য সন্তান হিসেবে। আহমদ ছফা মুজিবুর রহমানকে নিয়ে তাঁর ভাবনা অনেক লেখায় প্রকাশ করেছেন। ‘অলাতচক্র’ উপন্যাসে শেখ মুজিবের প্রসঙ্গ এসেছে অনেক কয়বার। ‘শেখ মুজিবুর রহমান’ শিরোনামে প্রবন্ধ ও লিখেছেন। নির্মোহ দৃষ্টিতে তাঁকে বিশ্লেষণ করেছেন। … বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং শেখ মুজিবুর রহমান এ দুটো যমজ শব্দ। একটা আরেকটার পরিপূরক এবং দুটো মিলে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের উজ্জ্বল-প্রোজ্জ্বল এক অচিন্তিতপূর্ব কালান্তরের সূচনা করেছে।১০ … স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিয়ে একটা দুর্ধষ হিংস্র সেনাবাহিনীর মুখে অপ্রস্তুত দেশবাসীকে ছেড়ে দেয়ার কারণে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হামাগুড়ি দিয়ে ভারতে ঢুকে পড়তে বাধ্য হয়েছিল। শেখ মুজিবের উত্থান নিয়েও কথা বলেছেন আহমদ ছফা।… তৎকালীন পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের দাবীতে যে-সকল বামপন্থী রাজনৈতিক দল প্রথমেই আন্দোলনের সূচনা করেছিল তাদের চূড়ান্ত ব্যর্থতা শেখ মুজিবর রহমানের অভূতপূর্ব সাফল্যের কারণ বললে খুব বেশি বলা হবে না। তারা জাতিসত্তার মুক্তির প্রশ্নটি উচ্চারণ করেছিলেন বটে। কিন্তু জাতি যখন ভেতর থেকে জাগ্রত হয়ে দাবী আদায়ের পথে প্রচণ্ড বেগে অগ্রসর হচ্ছিল, তারা কোন হাল ধরতে পারেননি। এই পরিস্থিতির সুযোগ পুরোপুরি গ্রহণ করেছেন শেখ মুজিব এবং তাঁর দল আওয়ামী লীগ।১১শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতীয়তার আসল প্রেক্ষিতটাই নির্ণয় করেননি। গোটা জাতি যখন চূড়ান্ত সংগ্রাম কাঁধে নেয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত, তিনি জনগণকে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য তৈরি না করে তাদেরকে একটার পর একটা তামাশার মধ্যে ঠেলে দিয়ে অনাবশ্যক সময় হরণ করেছেন। আর ইত্যবসরে পাকিস্তানিরা জাহাজে প্লেনে বোঝাই করে পশ্চিমাঞ্চল থেকে সৈন্য এবং মারণাস্ত্র এনে সেনা ছাউনিগুলো বোঝাই করে ফেলেছে। সেই সম্ভাবনাময় সময়ের কোন সুযোগ তিনি গ্রহণ করতে পারেননি। কারণ তাঁর ভয় ছিল, তা করতে গেলে মধ্যশ্রেণির নেতৃত্ব কাঁচের ঘরের মত চুরমার হয়ে ভেঙে পড়বে। তথাপি জনমতের প্রবল ঝড়ের ঠেলায় তাকে স্বাধীনতার নামটি উচ্চারণ করতে হয়েছিল। ব্যস ওইটুকুই।বস্তুত বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্য গীতাঞ্জলি নয়, বলাকা নয়, সোনার তরী নয়, ‘আর দাবায়ে রাখতে পারবা না’। সহস্রাধিক বছরের পরাধীন জীবনের অস্তিত্বের প্রতি সরাসরি অস্বীকৃতি জানিয়ে এই উচ্চারণের মাধ্যমে গোটা জাতির চিত্তলোকে তিনি এমন একটা অনমনীয় আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি করেছিলেন যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরাট এক প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। এই গৌরব শেখ মুজিবকে অবশ্যি দিতে হবে।১২ … ছফা মনে করেন শেখ মুজিব সময়ের সন্তান, পিতা নন। তাঁর দোদুল্যমান নেতৃত্বের কারণে পাকিস্তানিদের হাতে নির্মম মার খেয়ে অন্যের সহায়তা ছাড়া আমরা স্বাধীনতা অর্জনের পুরো কৃতিত্ব নিতে পারিনি। শেখ মুজিবুর রহমানকে সমালোচনার উর্ধ্বে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা সাধু উদ্দেশ্য নয়। সমালোচনা করা সত্ত্বেও শেখ মুজিবের প্রতি ছফার গভীর মমত্ববোধ লুকিয়ে থাকেনি। … বাংলার হাটের মানুষ, ঘাটের মানুষ, মাঠের মানুষ শেখ মুজিবকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রের মহান স্রষ্টা হিসাবে জ্ঞান করবে। দিনের পর দিন যাবে জনগণের অন্তর্লালিত এই শ্রদ্ধা ঘনীভূত হয়ে নিকষিত সোনার রূপ ধারণ করবে।১৩ … আজ থেকে অনেক দিন পর হয়ত কোন পিতা তার শিশু পুত্রকে বলবে, জানো খোকা! আমাদের দেশে একজন মানুষ জন্ম নিয়েছিলেন যার দৃঢ়তা ছিল, তেজ ছিল আর ছিল অসংখ্য দুর্বলতা। কিন্তু মানুষটির হৃদয় ছিল, ভালবাসতে জানতেন। দিবসের উজ্জ্বল সূর্যালোকে যে বস্তু চিকচিক করে জ্বলে তা হলো মানুষটির সাহস। আর জ্যোৎস্নারাতে রূপালী কিরণ ধারায় মায়ের স্নেহের মত যে বস্তু আমাদের অন্তরে শান্তি এবং নিশ্চয়তার বোধ জাগিয়ে তোলে তাহলো তার ভালবাসা। জানো খোকা তার নাম? শেখ মুজিবুর রহমান।১৪
আহমদ ছফার ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক জটিলতা’ বইটি প্রকাশ পায় ১৯৭৭ সনের পহেলা মে। বইটি দশটি অধ্যায় নিয়ে রচিত। ছফার ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও বাঙালি জাতি’ নামে প্রকাশিত গ্রন্থে ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক জটিলতা’ স্থান পায়। কিন্তু সেখানে দশ নাম্বার অধ্যায় ছাপা হয় নি। প্রফেসর সলিমুল্লাহ খান ‘বেহাত বিপ্লব ১৯৭১’ গ্রন্থে প্রবন্ধটির দশটি অধ্যায় পুণরায় হাজির করেন।বইটিতে আছে তাঁর নিজের দুটি প্রবন্ধ। ছফাচন্দ্রিকাঃ বেহাত বিপ্লব ১৯৭১। রাষ্ট্র ও বাসনাঃ আহমদ ছফার ‘বিষাদ-সিন্ধু’।প্রথমটির আলোচ্য প্রবন্ধ ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক জটিলতা’। দ্বিতীয়টির আলোচ্য বিষয় উপন্যাস ‘অলাতচক্র’। দুটো প্রবন্ধই সুখপাঠ্য এবং ভাবনা উদ্রেককারী।সলিমুল্লাহ খান আমার সরাসরি শিক্ষক। আমার সামান্য দর্শনজ্ঞানের হাতেখড়ি তাঁর কাছেই। গুরুভক্তি মাথায় রেখে আলোচনায় যাচ্ছি।
‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক জটিলতা’ প্রবন্ধের প্রথম দুটি অধ্যায়ে আলোচনায় এসেছে ন্যাশন্যাল আওয়ামী পার্টির দুটি অংশে ভাগ হয়ে যাওয়ার কথা। পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের জন্য এই দলটিই ছিল সবচেয়ে দরাজকণ্ঠ।কম্যুনিস্ট পার্টি সেই আমলে নিষিদ্ধ হওয়ায় পার্টির কর্মীরা ন্যাপের মধ্যে থেকেই কাজ করত। কম্যুনিস্ট পার্টি বিভক্ত হয়ে যাওয়ায় এখানেও মস্কো-সমর্থক এবং পিকিং-সমর্থক নামে দুটি উপদল হয়ে যায়। ন্যাপের পিকিং গ্রুপ আইয়ুব খানের দিকে ঝুঁকে পড়ে। পঁয়ষট্টির সতের দিনের পাক-ভারত যুদ্ধের সমাপ্তিতে রাশিয়ার ভূমিকা ছিল। কারণ ছিল চীনকে চাপে রাখা। পাক-ভারত মিলে যদি সোভিয়েত সমর্থিত একটা ব্লক হয় তবে সেটা চীনের মাথাব্যথার কারণ হবে। অন্যদিকে ন্যাপের দুই দলের কলহের মাঝে শেখ মুজিব আবির্ভূত হলেন ছয় দফা দাবি নিয়ে। দুটি দলের কারো পায়ের নিচে শক্ত মাটি না থাকার কারণে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থের একমাত্র পাহারাদার হিসেবে সুনাম অর্জন করে ফেলে। বাঙালি অর্থনীতিবিদরা পশ্চিম পাকিস্তানিদের আগ্রাসন থেকে বাঁচতে দুই অর্থনীতি প্রবর্তনের কথা বলে আসছিলেন। এই দুই অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ জাতীয় কর্মসূচী ছয়দফা পেশ করে। একটি ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ভারতের মধ্যবিত্ত মুসলমান শ্রেণী হিন্দুদের সাথে এঁটে উঠতে না পেরে স্বতন্ত্র পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের দিকে ঝুঁকে পড়েন, ঠিক একই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনেও। তবে এক্ষেত্রে ঘটনা ঘটে গেছে অকস্মাৎ। ঐতিহাসিক অন্তর্দৃষ্টির অভাব থাকায় আমাদের জাতিসত্তার স্বরূপ আমাদের সামনে উন্মোচিত হয় নি। ঘটনার ঘাত প্রতিঘাত আমাদের নিজেদের জাতিসত্তা চেনাতে সহায়তা করেছে। যাই হোক পূর্ব বাংলার মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় আওয়ামী লীগের দিকে ঝুঁকে পড়ে। … অবিভক্ত ভারতে মুসলিম লীগের পাকিস্তান দাবি যেমন এই অঞ্চলের মুসলিম জনগণের চোখে ‘সব পেয়েছি’র দেশ হিসেবে স্বপ্নের অঞ্জন মাখিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল, তেমনি আওয়ামী লীগের ছয়দফা দাবির অবিচ্ছিন্ন প্রচারণা এই একই জনগণের দৃষ্টিতে একটি কল্পস্বর্গ খাড়া করে তুলছিল।১৫ … ছয় দফা আন্দোলনের মূল দাবি ছিল বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসন অর্জন করা। আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ভাবতেই পারেন নি এই আন্দোলন একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম দিতে চলছে। ছাত্রদের এগারো দফা আন্দোলন, বুদ্ধিজীবিদের আন্দোলন, শ্রমিকদের সংগ্রাম সব মিলিয়ে বাঙালি জাতিসত্তার খুব দ্রুত বিকাশ ঘটে যাচ্ছিল। ফলে কোন আপোস নিষ্পত্তিতে না গিয়ে একটা সশস্ত্র আন্দোলনের দিকে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া কোন গতি রইল না। নেতৃবৃন্দের মানসিক জোর শক্ত ছিল না বলে পাকিস্তানের সেনাদের ঠেকানোর জন্য কোন সামরিক প্রস্তুতি না নিয়েই বীভৎস রকম হিংস্র পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হয় এদেশের মানুষ।… সুতরাং ‘যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা’র পরিণতিস্বরূপ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পায়ে হেঁটে সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয় ভিক্ষা করতে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হল। এতে কারো পূর্বপরিকল্পনা ছিল না, ঘটনার নিয়মে ঘটনা ঘটে গিয়েছে।১৬
এই প্রবন্ধ নিয়ে আলোচনা পরের কিস্তিতেও চলবে।
সূত্র
১। আমার কথা ও অন্যান্য প্রবন্ধ- আহমদ ছফা (উত্তরণ, জুলাই ২০০২) [পৃষ্ঠা ৬০]
২। [পৃষ্ঠা ৬৯] ৩। [পৃষ্ঠা ৭০] ৪। [পৃষ্ঠা ৭০-৭১]
৫। আহমদ ছফার প্রবন্ধ – (ষ্টুডেণ্ট ওয়েজ , জানুয়ারী ২০০০) [পৃষ্ঠা ১১২]
৬। [পৃষ্ঠা ১১২] ৭। [পৃষ্ঠা ১১৩]
৮। মাসিক চিন্তা (সংখ্যা ৬-৮, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০০১) [পৃষ্ঠা ৩১]
৯। [পৃষ্ঠা ৩১]
১০। রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক প্রবন্ধ- আহমদ ছফা ( জাগৃতি প্রকাশনী, জুন ২০০০)
[পৃষ্ঠা ২২]
১১। [পৃষ্ঠা ২৪] ১২। [পৃষ্ঠা ২৯] ১৩। [পৃষ্ঠা ৩৭] ১৪। [পৃষ্ঠা ৩৮]
১৫। আহমদ ছফা মহাফেজখানা , প্রথম খণ্ড , বেহাত বিপ্লব ১৯৭১ – সলিমুল্লাহ খান সম্পাদিত (অন্বেষা প্রকাশন, ফেব্রুয়ারি ২০০৭) [পৃষ্ঠা ৯৯]
১৬। [পৃষ্ঠা ১০০]

No comments:

Post a Comment