লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: সোম, ২০১০-০৯-০৬ ১১:২২)
ক্যাটেগরী: ব্লগরব্লগর | অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক | ছফাগিরি | সববয়সী
লেখাটির মূল লিংক-
http://www.sachalayatan.com/subasish/34893
লেখাটির মূল লিংক-
http://www.sachalayatan.com/subasish/34893
ছফাগিরির শুরুর কিস্তিতে আহমদ ছফার ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইটা নিয়ে কিছুটা আলোচনা শুরু করি। প্রফেসর আবদুর রাজ্জাককে নিয়ে পরের কিস্তিগুলোতে প্রসঙ্গক্রমে কথাবার্তা এসেছে। আবদুর রাজ্জাকের বাঙালি মুসলমান মানস বোঝার জন্য আরেকটা বই সাথে নিতে পারি। সরদার ফজলুল করিমের সাথে তাঁর আলাপচারিতা। বইটির নাম ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজ- অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক-এর আলাপচারিতা’। সরদার ফজলুল করিম রাজ্জাক স্যারের কথাবার্তা রেকর্ড করে পরে বই আকারে প্রকাশ করেন। ছফা নিজেকে বাঙালি মুসলমান লেখক পরিচয় দিতেন। এতে অনেকে প্রতিক্রিয়াশীলতার চিহ্ন খুঁজে ফিরেন। ছফার সাথে আবদুর রাজ্জাকের মনোজগৎ বুঝে নিলে কথাটার কিছু মোকাবেলা সম্ভব। রাজ্জাক সাহেবের মৃত্যুর পর এক স্মরণ সভায় ছফা বলেছিলেন- ...আমাদের দেশে মানুষ যতো বুড়ো হয় তত বানর হয়। খুব কম মানুষই সুন্দরভাবে বুড়ো হতে জানে। রাজ্জাক স্যার আমার চোখে একমাত্র মানুষ যিনি সুন্দরভাবে বুড়ো হতে জেনেছিলেন। … রাজ্জাক সাহেবের কাছ থেকে যখন আসতাম কোন কোন সময়ে আমার মনে হত আমার মেরুদণ্ডটি তিনি হীরে দিয়ে বাঁধিয়ে দিয়েছেন। আমাকে তিনি হীরের মত কঠিন এবং দীপ্তিমান করে সৃষ্টি করেছেন।… ১
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের মানুষের চিন্তার বিবর্তনে শুরু থেকেই ভূমিকা রেখেছে। ( ছফা ‘যদ্যপি আমার গুরু’তে উল্লেখ করেছেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি প্রধান অবদানের একটি হল পাকিস্তান আন্দোলনের মনস্তাত্ত্বিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ভিতটি তৈরি করা। দ্বিতীয় অবদান বাংলা ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্বদান এবং তৃতীয় অবদান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সংকল্প ও কর্মপন্থার দিক নির্দেশনা। এই জনগোষ্ঠীর জীবনে এই তিনটিই অনেক তাৎপর্যময় ঘটনা। কিন্তু জ্ঞানচর্চার যে বৈশ্বিক মানদণ্ড রয়েছে তাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান বিশেষ কিছু নেই। বিশেষত পাকিস্তান সৃষ্টির পরে জ্ঞানচর্চার উত্তাপ আরও অবসিত হয়েছিলো। … ২) এর প্রথম যুগের ইতিহাস নিয়ে বিস্তারিত তথ্য নাই। আবদুর রাজ্জাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গোড়ার দিকের অনেক ইতিহাস জানতেন। কিন্তু লিখে রাখার ব্যাপার তাঁর ধাতে ছিল না। সরদার ফজলুল করিম তাঁর আলাপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিককার কথা রাজ্জাক স্যারের কথা থেকে টুকে নিয়েছেন। সেখান থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ছাত্রাবাস সলিমুল্লাহ হলের পেছনে ঢাকার নওয়াব পরিবারের কোন আর্থিক কন্ট্রিবিউশান ছিল না। সেকালে কোনো মুসলমান ধনীর কাছ থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি কোন আর্থিক সাহায্য পায় নি। আরো জানতে পারি, ১৮৫৭ সালের পরে ইংরেজরা মুসলমানদের প্রতি সন্দেহপরায়ণ হয়ে তাদের সমস্ত ক্ষেত্র থেকে বাদ দেয়- এই তথ্য সঠিক নয়। ১৮৬৫ সালেও ৫০% উকিল ছিল মুসলমান। তারপর থেকে একেবারে শেষ হয়ে যাওয়া শুরু হলো। এর মূল কারণ ছিল ইংরেজি শিক্ষার দিকে এই শিক্ষিত মুসলমানেদের একেবারেই না ঝোঁকা। রবিনসনের ‘ সেপারেটিজম এমাং ইন্ডিয়ান মুসলিমস: দা পলিটিকস্ অব ইউনাইটেড প্রভিন্সেস’ বইতে এই সম্পর্কে কিছু পরিসংখ্যান আছে।
Source: Francis Robinson, Separatism Among Indian Muslims: The Politics of the United Provinces ( Cambridge University Press, 1974)[23]
Source: Francis Robinson, Separatism Among Indian Muslims: The Politics of the United Provinces ( Cambridge University Press, 1974)[22]
আবদুর রাজ্জাকের এই তথ্যের বিপরীতে সরদার ফজলুল করিম জিজ্ঞেস করেন, মুসলমানদের সেই কালে ইংরেজি শিক্ষার প্রতি অনীহার কারণ কী ছিল? আবদুর রাজ্জাক বলেন, এই রিডলের ঠিক কোনো কারণ তাঁর জানা নেই। ইউপির স্যার সৈয়দ আহমদ সম্পর্কে আবদুর রাজ্জাক বলেন-
... ভারতবর্ষের যে অঞ্চলে স্যার সৈয়দ আহমেদের জন্ম সেখানে মুসলমানের সংখ্যা ১৬% আর এই ১৬% মুসলমানের ৮০%-ই ডাউন টু ১৯২০ ইংরেজের চাকরি করেছে, বড় বড় চাকরি সবই তাদের দখলে ছিল অথচ আপনাদের ধারণা যে, ইংরেজের সাথে মুসলমানদের নন কো-অপারেশন স্যার সৈয়দ আহমেদ দূর করলেন? কিসের নন কো-অপারেশন? ১০০%-এর উপরে যদি কোন কো-অপারেশন দেওয়ার থাকে মুসলমানেরা তাই দিয়েছে।… ৩
ইংরেজি শেখার ব্যাপারে আপত্তির পেছনে ধর্মীয় গোঁড়ামি একটা কারণ ছিল। হার্ডির ‘দা মুসলিমস্ অব ব্রিটিশ ইন্ডিয়া’ বইতে এই ধরনের তথ্য আছে।
Source: P. Hardy, The Muslims of British India (Cambridge University Press, 1972) [93]
Source: P. Hardy, The Muslims of British India (Cambridge University Press, 1972) [121]
Source: P. Hardy, The Muslims of British India (Cambridge University Press, 1972) [92]
একটা কথা বলে নেয়া ভালো। মাহবুব লীলেনের একটা নোট ( ৭১ এ ভূগোলে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের মনস্তাত্ত্বিক সীমারেখা নির্ধারণের জন্য ছফা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যবহার করেছেন আব্দুর রাজ্জাকের মহাকাব্যিক জীবনকে আর আব্দুর রাজ্জাক তার মহাকাব্যিক ভাবনাকে স্বেচ্ছায় অনুদিত হতে দিয়েছেন ছফার ভাষায়… )আমাকে বেশ ভাবিয়েছিল। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজ- অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক-এর আলাপচারিতা’ বইটা খুঁটিয়ে পড়ার পেছনে লীলেনের ফেসবুক নোটটার অবদান কম নয়। যাই হোক প্রসঙ্গে ফিরি।
বঙ্কিম, মাইকেল, রামমোহন রায়ের বাংলায় লেখালেখির প্রসঙ্গে আবদুর রাজ্জাকের কথাগুলো নতুন শোনায়। তবে একটু ভালোমতো ভাবলে বোঝা যায়, ইংরেজিতে সুবিধা করতে পারলে বাংলায় লেখালেখিতে ফেরার প্রশ্ন ছিল না। অন্তত ব্রিটিশ রাজের অধীনে থাকার সময়।
… বঙ্কিমচন্দ্র, মাইকেল মধুসূদন ইংরেজিতে লেখা শুরু করলেন। But in time they came back to Bengali. And therefore they became Bankim Chandra and Michael. যদি তাঁরা কেবল ইংরেজিতেই লিখতেন তাহলে অবস্থাটা কি হতো, চিন্তা করে দেখুন। এই যে তাদের চেঞ্জ, এটা যে তাঁরা খুব বুঝেসুঝে করেছেন, তা নয়। এই চিন্তা থেকে তাঁরা বাংলা লেখেননি যে বাংলার ভবিষ্যৎটা তাঁদের হাতে, তাঁরা না লিখলে বাংলার ভবিষ্যৎটা নষ্ট হয়ে যাবে। তাঁরা বাংলাতে এলেন বিকজ দে ফেইলড্ টু ফাইন্ড্ সেলফ্ এক্সপ্রেশন ইন ইংলিশ।…৪
বাঙালি মুসলমানদের নিয়ে নানারকম রাজনীতি হয়েছে। বাংলা তাদের মুখের ভাষা কিন্তু পাদ্রীরা এসে প্যাঁচ কষল। বাংলাকে তারা সংস্কৃতের দুহিতা বলে চালিয়ে দিয়ে মুসলমানদের দূরে সরানোর চেষ্টা করল। মুসলমানেরা পুঁথি সাহিত্যের দিকে ঝুঁকে থেকে আধুনিক বাংলা দিয়ে সাহিত্য চর্চা করতে আগ্রহী হল না।
… বাঙালি মুসলমান আধুনিক বাংলার দিকে ঘেঁষেছে বেশ পরে। এর পেছনে সেইকালের পাদ্রীদের অবদান কম নয়। অথচ বাংলা ভাষার সঙ্গে মুসলমানদের সম্বন্ধ ছিল হিন্দুদের চেয়ে অনেক নিকটতর। … পাদ্রীরা বললো, বাংলা সংস্কৃতের দুহিতা। ‘সমাচার দর্পণ’-এর সম্পাদকীয় ছিল: আমরা কি জন্য বাংলা ভাষার সমর্থন করি? কারণ মুসলমানরা ইহা পছন্দ করে না। ইহারা কখনো বাংলা শিখিতে পারিবে না।… ৫
মুসলমানদের প্রতি পাদ্রীদের ক্ষোভের কারণ ছিল পাদ্রীরা যখন ধর্ম নিয়ে পলিথিস্টিক টাইপের কথা মুসলমানদের সামনে বলতো তখন তারা হাসাহাসি করত। এসব কথা পাত্তা দিত না। হিন্দুরা শুনে খুব একটা নারাজ হতো না। ফলে পাদ্রীরা মুসলমানদের আচরণে ক্ষেপে যেত।
ছফার স্মৃতি থেকে লেখা রাজ্জাক কোষ ( ছফার ভাষ্যে- রচনাটি দাঁড়াচ্ছে মহাকবি আলাওলের ভাষায় ‘গুরু মুহম্মদে করি ভক্তি, স্থানে স্থানে প্রকাশিব নিজ মনোউক্তি’) পড়তে বেশ আরামদায়ক। ছফার দুর্দান্ত গদ্যে মিশে থাকে হাসি তামাশা ঠিসারা। রাজ্জাক সাহেবের ইন্টেলেকচুয়াল দিকের সাথে সাথে একজন অতি সাধারণ মানুষের দেখা মিলে। যে মানুষ একাধারে খাদ্যরসিক, কিসিঞ্জারের কলিগ, লাস্কির ছাত্র, ঘরোয়া আড্ডায় কিংবদন্তি, সেই সাথে লিখতে নারাজ।
পিএইচডির সুপারভাইজার হিসেবে আবদুর রাজ্জাককে অনুরোধ করার জন্য তাঁর বাসায় হাজির হন ছফা। সেই থেকে শুরু। আবদুর রাজ্জাকের মৃত্যু পর্যন্ত ছফা তাঁর সঙ্গ ছাড়েননি। আবদুর রাজ্জাকের না লেখার ব্যাপারে ছফার উপপাদ্য চমৎকার।
… পরবর্তীকালে রাজ্জাক সাহেব সমাজবিজ্ঞান, রাজনীতি, সাহিত্য, নন্দনতাত্ত্বিক যেসব কথাবার্তা বলেছেন আমার কাছে, আমি মনে মনে সেগুলোকে অবন ঠাকুরের ‘বাংলার ব্রত’ এবং ট্রটস্কির ‘থিয়োরি অব পার্মানেন্ট রেভ্যুল্যুশন’ –এর মধ্যিখানে রেখে একটা গড় করে গ্রহণ করেছি। রাজ্জাক সাহেব সারাজীবন কিছু লেখেননি কেনো, এই নালিশ আমি সকলের কাছে অহরহ শুনে আসছি। … যৌবনে যে মানুষ ট্রটস্কির থিয়োরি অব পার্মানেন্ট রেভ্যুল্যুশনের বাংলা এবং অবন ঠাকুরের ইংরেজি অনুবাদ করেছেন, সেই মানুষের পক্ষে অন্য কোন মামুলি বিষয়ে কাজ করা অসম্ভব ছিলো। তাঁর মানসিক সূক্ষ্ণতার এমন একটা সমুন্নত উত্তরণ ঘটেছিল, সেখান থেকে তৎকালীন বিদ্যাচর্চার স্তরটিতে নেমে আসা দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। জ্ঞানচর্চার সামাজিক প্রেক্ষিতটির কথা অবশ্যই ধর্তব্যের মধ্যে আনতে হবে। … ৬
রাজ্জাক সাহেবকে মুসলিম লীগের গোঁড়া সমর্থক বলে অনেক রায় দেন। ছফা এই রায়কে একটু অন্য চোখে দেখেন-
তাঁর অবস্থান কিছু অংশে মুসলিম লীগের পাটাতনে ছিল একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তিনি যদি মুসলিম লীগ না করতেন, তাঁকে অবশ্যই কমিউনিস্টদের সঙ্গে যেতে হতো। কিন্তু সেখানেও একটা বড় অসুবিধা ছিল। কৃষিপ্রশ্নে লেনিন এবং কাউটস্কির মধ্যে যে বিতর্ক হয়েছিলো তাতে রাজ্জাক সাহেবের সায় ছিল কাউটস্কির অনুকূলে। লেনিন রেনিগেড কাউটস্কি শিরোনামে একটি পুস্তিকা লিখে কাউটস্কিকে কষে গালাগাল দিয়েছিলেন। এখন অনেকেই মনে করছেন কৃষিপ্রশ্নে লেনিন-কাউটস্কি যে বিতর্ক হয়েছিলো, তাতে কাউটস্কির অবস্থানটিই সঠিক ছিল। রাজ্জাক সাহেবকে এভাবে বোধ হয় বিচার করা যায়, এ ট্রটস্কিয়াইট এমাং দা মুসলিম লীগারস্। …৭
‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইয়ের অধ্যায় আটে আবদুর রাজ্জাকের মুসলিম লীগের সমর্থনের পেছনে যুক্তি নিয়ে কথা আছে। ছফাগিরির বেশ কয়েক কিস্তিতে ঘুরে ফিরে আবদুর রাজ্জাকের প্রসঙ্গ নিয়ে তর্ক বিতর্ক হয়েছে। অধ্যায় আট নিয়ে বিস্তারিত কথাবার্তা সেখানে এসেছে। ফলে এখানে আর প্রসঙ্গ টানলাম না। হিন্দুরা গরু পূজা করে। আর মুসলমানেরা গরু খায়। এই পর্যন্ত হিন্দু-মুসলমান রায়টের পেছনে এই সূক্ষ্ণ গড়মিল অনেক জায়গায় কাজ করেছে। খোদ অহিংস আন্দোলনের গুরু গান্ধী তাঁর ‘ইয়াং ইন্ডিয়া’ ( মে ঊনত্রিশ, ১৯২৪) প্রবন্ধে বলেছেন-
"There is no doubt in my mind that in the majority of quarrels the Hindus come out second best. But my own experience confirms the opinion that the Mussalman as a rule is a bully, and the Hindu as a rule is a coward. I have noticed this in railway trains, on public roads, and in the quarrels which I had the privilege of settling. Need the Hindu blame the Mussalman for his cowardice? Where there are cowards, there will always be bullies. They say that in Saharanpur the Mussalmans looted houses, broke open safes and, in one case, a Hindu woman's modesty was outraged. Whose fault was this? Mussalmans can offer no defence for the execrable conduct, it is true. But I, as a Hindu, am more ashamed of Hindu cowardice than I am angry at the Mussalman bullying. Why did not the owners of the houses looted die in the attempt to defend their possessions? Where were the relatives of the outraged sister at the time of the outrage? Have they no account to render of themselves? My non-violence does not admit of running away from danger and leaving dear ones unprotected. Between violence and cowardly flight, I can only prefer violence to cowardice."
রাজ্জাক সাহেবের এক কালে পাকিস্তান সমর্থনের পেছনের কারণও সূক্ষ্ণ। বাংলায় মুসলমানের সংখ্যা অর্ধেকের বেশি অথচ আধুনিক সোশ্যাল ডিসকোর্স উপন্যাসে (হিন্দু লেখকদের লেখা) মুসলমানদের জায়গা পাঁচ পার্সেন্টের বেশি না। ফলে নিজের অস্তিত্বের পেছনে জোয়াল জুড়তে মুসলিম লীগ সমর্থনের ব্যতিক্রম ঘটেনি। ( সলিমুল্লাহ খানের পয়েন্টটা গুরুত্বের- অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক সম্বন্ধে প্রচার আছে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের স্থপতিগণের মধ্যে পড়েন। কেহ কেহ বলেন আওয়ামী লীগ প্রণীত ছয়দফার মূল ধারণা তাঁহারই চিন্তার ফসল। এই সত্যের স্বীকৃতি পরোক্ষে পাওয়া যায় সারা পাকিস্তান যুগে তাঁহার পদোন্নতি না হওয়ার ঘটনায়। সবচেয়ে বড় কথা, পাওয়া যায় দেশ স্বাধীন হইবার পর তাঁহাকে মানবিক বিদ্যায় জাতীয় অধ্যাপক পদে বরণ করিবার সরকারি সিদ্ধান্তেও।…৮ )
এখন চলছে এই সময়ের উল্টাপুরাণ। ভাষায় হিন্দুয়ানি ঢোকা রোধে এক শ্রেণীর লেখক-কবি ইদানীং জেহাদে রত। আরবি-ফারসি ভাষার শব্দকে জোর করে বাংলায় ঢোকানোর প্রচেষ্টা তাঁরা চালাচ্ছেন। সংস্কৃত দুহিতা হিসেবে বাংলা ভাষার অপবাদ ঘুচেছে অনেক কাল আগে। বাংলা এখন নিজে স্বকীয় সমর্থ একটা ভাষা। সময়ে সময়ে অনেকেই চেষ্টা করে যাবেন ভাষা নিয়ে নিজের মতো করে নিরীক্ষা করার। কিছু টিকে যাবে। বাকি প্রচেষ্টা আস্তানা গাড়বে আস্তাকুঁড়ে।
আবদুর রাজ্জাক ছফার গ্যোতে অনুবাদের পেছনে অনেক উৎসাহ দিয়েছিলেন। হাজেরান মজলিশের সামনে প্রায়শ ছফাকে গ্যোতের অনুবাদ থেকে পড়তে বলতেন। এই কিস্তিতে ভেবেছিলাম ছফার সেই চাঁড়াল অনুবাদ নিয়ে কথা আরম্ভ করব। বারোতম কিস্তি লিখতে গিয়ে ভাবলাম শুরুর কথা আবার পুনর্পাঠ করি। করাই। তাই ফাউস্ট নিয়ে কথাবার্তা পরের পর্বে।
সূত্রঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের মানুষের চিন্তার বিবর্তনে শুরু থেকেই ভূমিকা রেখেছে। ( ছফা ‘যদ্যপি আমার গুরু’তে উল্লেখ করেছেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি প্রধান অবদানের একটি হল পাকিস্তান আন্দোলনের মনস্তাত্ত্বিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ভিতটি তৈরি করা। দ্বিতীয় অবদান বাংলা ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্বদান এবং তৃতীয় অবদান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সংকল্প ও কর্মপন্থার দিক নির্দেশনা। এই জনগোষ্ঠীর জীবনে এই তিনটিই অনেক তাৎপর্যময় ঘটনা। কিন্তু জ্ঞানচর্চার যে বৈশ্বিক মানদণ্ড রয়েছে তাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান বিশেষ কিছু নেই। বিশেষত পাকিস্তান সৃষ্টির পরে জ্ঞানচর্চার উত্তাপ আরও অবসিত হয়েছিলো। … ২) এর প্রথম যুগের ইতিহাস নিয়ে বিস্তারিত তথ্য নাই। আবদুর রাজ্জাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গোড়ার দিকের অনেক ইতিহাস জানতেন। কিন্তু লিখে রাখার ব্যাপার তাঁর ধাতে ছিল না। সরদার ফজলুল করিম তাঁর আলাপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিককার কথা রাজ্জাক স্যারের কথা থেকে টুকে নিয়েছেন। সেখান থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ছাত্রাবাস সলিমুল্লাহ হলের পেছনে ঢাকার নওয়াব পরিবারের কোন আর্থিক কন্ট্রিবিউশান ছিল না। সেকালে কোনো মুসলমান ধনীর কাছ থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি কোন আর্থিক সাহায্য পায় নি। আরো জানতে পারি, ১৮৫৭ সালের পরে ইংরেজরা মুসলমানদের প্রতি সন্দেহপরায়ণ হয়ে তাদের সমস্ত ক্ষেত্র থেকে বাদ দেয়- এই তথ্য সঠিক নয়। ১৮৬৫ সালেও ৫০% উকিল ছিল মুসলমান। তারপর থেকে একেবারে শেষ হয়ে যাওয়া শুরু হলো। এর মূল কারণ ছিল ইংরেজি শিক্ষার দিকে এই শিক্ষিত মুসলমানেদের একেবারেই না ঝোঁকা। রবিনসনের ‘ সেপারেটিজম এমাং ইন্ডিয়ান মুসলিমস: দা পলিটিকস্ অব ইউনাইটেড প্রভিন্সেস’ বইতে এই সম্পর্কে কিছু পরিসংখ্যান আছে।
Source: Francis Robinson, Separatism Among Indian Muslims: The Politics of the United Provinces ( Cambridge University Press, 1974)[23]
Source: Francis Robinson, Separatism Among Indian Muslims: The Politics of the United Provinces ( Cambridge University Press, 1974)[22]
আবদুর রাজ্জাকের এই তথ্যের বিপরীতে সরদার ফজলুল করিম জিজ্ঞেস করেন, মুসলমানদের সেই কালে ইংরেজি শিক্ষার প্রতি অনীহার কারণ কী ছিল? আবদুর রাজ্জাক বলেন, এই রিডলের ঠিক কোনো কারণ তাঁর জানা নেই। ইউপির স্যার সৈয়দ আহমদ সম্পর্কে আবদুর রাজ্জাক বলেন-
... ভারতবর্ষের যে অঞ্চলে স্যার সৈয়দ আহমেদের জন্ম সেখানে মুসলমানের সংখ্যা ১৬% আর এই ১৬% মুসলমানের ৮০%-ই ডাউন টু ১৯২০ ইংরেজের চাকরি করেছে, বড় বড় চাকরি সবই তাদের দখলে ছিল অথচ আপনাদের ধারণা যে, ইংরেজের সাথে মুসলমানদের নন কো-অপারেশন স্যার সৈয়দ আহমেদ দূর করলেন? কিসের নন কো-অপারেশন? ১০০%-এর উপরে যদি কোন কো-অপারেশন দেওয়ার থাকে মুসলমানেরা তাই দিয়েছে।… ৩
ইংরেজি শেখার ব্যাপারে আপত্তির পেছনে ধর্মীয় গোঁড়ামি একটা কারণ ছিল। হার্ডির ‘দা মুসলিমস্ অব ব্রিটিশ ইন্ডিয়া’ বইতে এই ধরনের তথ্য আছে।
Source: P. Hardy, The Muslims of British India (Cambridge University Press, 1972) [93]
Source: P. Hardy, The Muslims of British India (Cambridge University Press, 1972) [121]
Source: P. Hardy, The Muslims of British India (Cambridge University Press, 1972) [92]
একটা কথা বলে নেয়া ভালো। মাহবুব লীলেনের একটা নোট ( ৭১ এ ভূগোলে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের মনস্তাত্ত্বিক সীমারেখা নির্ধারণের জন্য ছফা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যবহার করেছেন আব্দুর রাজ্জাকের মহাকাব্যিক জীবনকে আর আব্দুর রাজ্জাক তার মহাকাব্যিক ভাবনাকে স্বেচ্ছায় অনুদিত হতে দিয়েছেন ছফার ভাষায়… )আমাকে বেশ ভাবিয়েছিল। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজ- অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক-এর আলাপচারিতা’ বইটা খুঁটিয়ে পড়ার পেছনে লীলেনের ফেসবুক নোটটার অবদান কম নয়। যাই হোক প্রসঙ্গে ফিরি।
বঙ্কিম, মাইকেল, রামমোহন রায়ের বাংলায় লেখালেখির প্রসঙ্গে আবদুর রাজ্জাকের কথাগুলো নতুন শোনায়। তবে একটু ভালোমতো ভাবলে বোঝা যায়, ইংরেজিতে সুবিধা করতে পারলে বাংলায় লেখালেখিতে ফেরার প্রশ্ন ছিল না। অন্তত ব্রিটিশ রাজের অধীনে থাকার সময়।
… বঙ্কিমচন্দ্র, মাইকেল মধুসূদন ইংরেজিতে লেখা শুরু করলেন। But in time they came back to Bengali. And therefore they became Bankim Chandra and Michael. যদি তাঁরা কেবল ইংরেজিতেই লিখতেন তাহলে অবস্থাটা কি হতো, চিন্তা করে দেখুন। এই যে তাদের চেঞ্জ, এটা যে তাঁরা খুব বুঝেসুঝে করেছেন, তা নয়। এই চিন্তা থেকে তাঁরা বাংলা লেখেননি যে বাংলার ভবিষ্যৎটা তাঁদের হাতে, তাঁরা না লিখলে বাংলার ভবিষ্যৎটা নষ্ট হয়ে যাবে। তাঁরা বাংলাতে এলেন বিকজ দে ফেইলড্ টু ফাইন্ড্ সেলফ্ এক্সপ্রেশন ইন ইংলিশ।…৪
বাঙালি মুসলমানদের নিয়ে নানারকম রাজনীতি হয়েছে। বাংলা তাদের মুখের ভাষা কিন্তু পাদ্রীরা এসে প্যাঁচ কষল। বাংলাকে তারা সংস্কৃতের দুহিতা বলে চালিয়ে দিয়ে মুসলমানদের দূরে সরানোর চেষ্টা করল। মুসলমানেরা পুঁথি সাহিত্যের দিকে ঝুঁকে থেকে আধুনিক বাংলা দিয়ে সাহিত্য চর্চা করতে আগ্রহী হল না।
… বাঙালি মুসলমান আধুনিক বাংলার দিকে ঘেঁষেছে বেশ পরে। এর পেছনে সেইকালের পাদ্রীদের অবদান কম নয়। অথচ বাংলা ভাষার সঙ্গে মুসলমানদের সম্বন্ধ ছিল হিন্দুদের চেয়ে অনেক নিকটতর। … পাদ্রীরা বললো, বাংলা সংস্কৃতের দুহিতা। ‘সমাচার দর্পণ’-এর সম্পাদকীয় ছিল: আমরা কি জন্য বাংলা ভাষার সমর্থন করি? কারণ মুসলমানরা ইহা পছন্দ করে না। ইহারা কখনো বাংলা শিখিতে পারিবে না।… ৫
মুসলমানদের প্রতি পাদ্রীদের ক্ষোভের কারণ ছিল পাদ্রীরা যখন ধর্ম নিয়ে পলিথিস্টিক টাইপের কথা মুসলমানদের সামনে বলতো তখন তারা হাসাহাসি করত। এসব কথা পাত্তা দিত না। হিন্দুরা শুনে খুব একটা নারাজ হতো না। ফলে পাদ্রীরা মুসলমানদের আচরণে ক্ষেপে যেত।
ছফার স্মৃতি থেকে লেখা রাজ্জাক কোষ ( ছফার ভাষ্যে- রচনাটি দাঁড়াচ্ছে মহাকবি আলাওলের ভাষায় ‘গুরু মুহম্মদে করি ভক্তি, স্থানে স্থানে প্রকাশিব নিজ মনোউক্তি’) পড়তে বেশ আরামদায়ক। ছফার দুর্দান্ত গদ্যে মিশে থাকে হাসি তামাশা ঠিসারা। রাজ্জাক সাহেবের ইন্টেলেকচুয়াল দিকের সাথে সাথে একজন অতি সাধারণ মানুষের দেখা মিলে। যে মানুষ একাধারে খাদ্যরসিক, কিসিঞ্জারের কলিগ, লাস্কির ছাত্র, ঘরোয়া আড্ডায় কিংবদন্তি, সেই সাথে লিখতে নারাজ।
পিএইচডির সুপারভাইজার হিসেবে আবদুর রাজ্জাককে অনুরোধ করার জন্য তাঁর বাসায় হাজির হন ছফা। সেই থেকে শুরু। আবদুর রাজ্জাকের মৃত্যু পর্যন্ত ছফা তাঁর সঙ্গ ছাড়েননি। আবদুর রাজ্জাকের না লেখার ব্যাপারে ছফার উপপাদ্য চমৎকার।
… পরবর্তীকালে রাজ্জাক সাহেব সমাজবিজ্ঞান, রাজনীতি, সাহিত্য, নন্দনতাত্ত্বিক যেসব কথাবার্তা বলেছেন আমার কাছে, আমি মনে মনে সেগুলোকে অবন ঠাকুরের ‘বাংলার ব্রত’ এবং ট্রটস্কির ‘থিয়োরি অব পার্মানেন্ট রেভ্যুল্যুশন’ –এর মধ্যিখানে রেখে একটা গড় করে গ্রহণ করেছি। রাজ্জাক সাহেব সারাজীবন কিছু লেখেননি কেনো, এই নালিশ আমি সকলের কাছে অহরহ শুনে আসছি। … যৌবনে যে মানুষ ট্রটস্কির থিয়োরি অব পার্মানেন্ট রেভ্যুল্যুশনের বাংলা এবং অবন ঠাকুরের ইংরেজি অনুবাদ করেছেন, সেই মানুষের পক্ষে অন্য কোন মামুলি বিষয়ে কাজ করা অসম্ভব ছিলো। তাঁর মানসিক সূক্ষ্ণতার এমন একটা সমুন্নত উত্তরণ ঘটেছিল, সেখান থেকে তৎকালীন বিদ্যাচর্চার স্তরটিতে নেমে আসা দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। জ্ঞানচর্চার সামাজিক প্রেক্ষিতটির কথা অবশ্যই ধর্তব্যের মধ্যে আনতে হবে। … ৬
রাজ্জাক সাহেবকে মুসলিম লীগের গোঁড়া সমর্থক বলে অনেক রায় দেন। ছফা এই রায়কে একটু অন্য চোখে দেখেন-
তাঁর অবস্থান কিছু অংশে মুসলিম লীগের পাটাতনে ছিল একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তিনি যদি মুসলিম লীগ না করতেন, তাঁকে অবশ্যই কমিউনিস্টদের সঙ্গে যেতে হতো। কিন্তু সেখানেও একটা বড় অসুবিধা ছিল। কৃষিপ্রশ্নে লেনিন এবং কাউটস্কির মধ্যে যে বিতর্ক হয়েছিলো তাতে রাজ্জাক সাহেবের সায় ছিল কাউটস্কির অনুকূলে। লেনিন রেনিগেড কাউটস্কি শিরোনামে একটি পুস্তিকা লিখে কাউটস্কিকে কষে গালাগাল দিয়েছিলেন। এখন অনেকেই মনে করছেন কৃষিপ্রশ্নে লেনিন-কাউটস্কি যে বিতর্ক হয়েছিলো, তাতে কাউটস্কির অবস্থানটিই সঠিক ছিল। রাজ্জাক সাহেবকে এভাবে বোধ হয় বিচার করা যায়, এ ট্রটস্কিয়াইট এমাং দা মুসলিম লীগারস্। …৭
‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইয়ের অধ্যায় আটে আবদুর রাজ্জাকের মুসলিম লীগের সমর্থনের পেছনে যুক্তি নিয়ে কথা আছে। ছফাগিরির বেশ কয়েক কিস্তিতে ঘুরে ফিরে আবদুর রাজ্জাকের প্রসঙ্গ নিয়ে তর্ক বিতর্ক হয়েছে। অধ্যায় আট নিয়ে বিস্তারিত কথাবার্তা সেখানে এসেছে। ফলে এখানে আর প্রসঙ্গ টানলাম না। হিন্দুরা গরু পূজা করে। আর মুসলমানেরা গরু খায়। এই পর্যন্ত হিন্দু-মুসলমান রায়টের পেছনে এই সূক্ষ্ণ গড়মিল অনেক জায়গায় কাজ করেছে। খোদ অহিংস আন্দোলনের গুরু গান্ধী তাঁর ‘ইয়াং ইন্ডিয়া’ ( মে ঊনত্রিশ, ১৯২৪) প্রবন্ধে বলেছেন-
"There is no doubt in my mind that in the majority of quarrels the Hindus come out second best. But my own experience confirms the opinion that the Mussalman as a rule is a bully, and the Hindu as a rule is a coward. I have noticed this in railway trains, on public roads, and in the quarrels which I had the privilege of settling. Need the Hindu blame the Mussalman for his cowardice? Where there are cowards, there will always be bullies. They say that in Saharanpur the Mussalmans looted houses, broke open safes and, in one case, a Hindu woman's modesty was outraged. Whose fault was this? Mussalmans can offer no defence for the execrable conduct, it is true. But I, as a Hindu, am more ashamed of Hindu cowardice than I am angry at the Mussalman bullying. Why did not the owners of the houses looted die in the attempt to defend their possessions? Where were the relatives of the outraged sister at the time of the outrage? Have they no account to render of themselves? My non-violence does not admit of running away from danger and leaving dear ones unprotected. Between violence and cowardly flight, I can only prefer violence to cowardice."
রাজ্জাক সাহেবের এক কালে পাকিস্তান সমর্থনের পেছনের কারণও সূক্ষ্ণ। বাংলায় মুসলমানের সংখ্যা অর্ধেকের বেশি অথচ আধুনিক সোশ্যাল ডিসকোর্স উপন্যাসে (হিন্দু লেখকদের লেখা) মুসলমানদের জায়গা পাঁচ পার্সেন্টের বেশি না। ফলে নিজের অস্তিত্বের পেছনে জোয়াল জুড়তে মুসলিম লীগ সমর্থনের ব্যতিক্রম ঘটেনি। ( সলিমুল্লাহ খানের পয়েন্টটা গুরুত্বের- অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক সম্বন্ধে প্রচার আছে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের স্থপতিগণের মধ্যে পড়েন। কেহ কেহ বলেন আওয়ামী লীগ প্রণীত ছয়দফার মূল ধারণা তাঁহারই চিন্তার ফসল। এই সত্যের স্বীকৃতি পরোক্ষে পাওয়া যায় সারা পাকিস্তান যুগে তাঁহার পদোন্নতি না হওয়ার ঘটনায়। সবচেয়ে বড় কথা, পাওয়া যায় দেশ স্বাধীন হইবার পর তাঁহাকে মানবিক বিদ্যায় জাতীয় অধ্যাপক পদে বরণ করিবার সরকারি সিদ্ধান্তেও।…৮ )
এখন চলছে এই সময়ের উল্টাপুরাণ। ভাষায় হিন্দুয়ানি ঢোকা রোধে এক শ্রেণীর লেখক-কবি ইদানীং জেহাদে রত। আরবি-ফারসি ভাষার শব্দকে জোর করে বাংলায় ঢোকানোর প্রচেষ্টা তাঁরা চালাচ্ছেন। সংস্কৃত দুহিতা হিসেবে বাংলা ভাষার অপবাদ ঘুচেছে অনেক কাল আগে। বাংলা এখন নিজে স্বকীয় সমর্থ একটা ভাষা। সময়ে সময়ে অনেকেই চেষ্টা করে যাবেন ভাষা নিয়ে নিজের মতো করে নিরীক্ষা করার। কিছু টিকে যাবে। বাকি প্রচেষ্টা আস্তানা গাড়বে আস্তাকুঁড়ে।
আবদুর রাজ্জাক ছফার গ্যোতে অনুবাদের পেছনে অনেক উৎসাহ দিয়েছিলেন। হাজেরান মজলিশের সামনে প্রায়শ ছফাকে গ্যোতের অনুবাদ থেকে পড়তে বলতেন। এই কিস্তিতে ভেবেছিলাম ছফার সেই চাঁড়াল অনুবাদ নিয়ে কথা আরম্ভ করব। বারোতম কিস্তি লিখতে গিয়ে ভাবলাম শুরুর কথা আবার পুনর্পাঠ করি। করাই। তাই ফাউস্ট নিয়ে কথাবার্তা পরের পর্বে।
১। আহমদ ছফা রচনাবলি- চতুর্থ খণ্ড – সম্পাদনা নূরুল আনোয়ার (খান ব্রাদার্স এন্ড কোম্পানি , ফেব্রুয়ারি ২০১০) [১৬২-১৬৩]
২। আহমদ ছফা ,যদ্যপি আমার গুরু (মাওলা ব্রাদার্স , মে ২০০০) [৩৪]
৩। সরদার ফজলুল করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজ- অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক-এর আলাপচারিতা (সাহিত্য প্রকাশ, জুন ২০০০) [২০]
৪। সরদার ফজলুল করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজ- অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক-এর আলাপচারিতা (সাহিত্য প্রকাশ, জুন ২০০০) [২২]
৫। সরদার ফজলুল করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজ- অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক-এর আলাপচারিতা (সাহিত্য প্রকাশ, জুন ২০০০) [২৩]
৬। আহমদ ছফা ,যদ্যপি আমার গুরু (মাওলা ব্রাদার্স , মে ২০০০) [৩৩]
৭। আহমদ ছফা ,যদ্যপি আমার গুরু (মাওলা ব্রাদার্স , মে ২০০০) [৩৪-৩৫]
৮। সলিমুল্লাহ খান, আহমদ ছফা সঞ্জীবনী ( আগামী প্রকাশনী, এশীয় শিল্প ও সংস্কৃতি সভা, ফ্রেব্রুয়ারি ২০১০) [৫৪]
-------
ছফাগিরি সবসময়ই ভালো লাগে।
আরেকটু ভালো লাগানোর জন্য নিজেরও কিছু পড়াশোনা করতে হবে বলে মনে হচ্ছে
---আশফাক আহমেদ
ashfaq_polit@yahoo.com
২
দুর্দান্ত লাগল পড়তে । অনেক কৃতজ্ঞতা এমন শ্রমসাধ্য একটি সিরিজ এত সুন্দরভাবে চালিয়ে যাওয়ার জন্য ।
৩
হাজিরা ও পাঁচ তারা দিয়ে গেলাম ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
৪
ছফাগিরির মধ্যে এইটা সবচেয়ে কাজের লাগসে। ৫ দাগাইলাম।
আমাদের পোস্ট কলোনিয়াল আইডেন্টিটি ক্রাইসিসের অনেক সূত্র রাজ্জাক-ছফা কথালাপে খুঁজে পাওয়া যাবে। সরদারের বইটাও কাজের। আমি দুইটাকে জোড়-বই হিসাবে পড়সিলাম।
অ.ট : ভারতবর্ষে হিন্দু-মুসলাম সংঘর্ষের ইন্ধন সবার প্রথমে দিসিল পর্তুগিজরা। এই হার্মাদগুলাকে নিয়াও ভাবনার অবকাশ থাকে।
_________________________________
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
আমাদের পোস্ট কলোনিয়াল আইডেন্টিটি ক্রাইসিসের অনেক সূত্র রাজ্জাক-ছফা কথালাপে খুঁজে পাওয়া যাবে। সরদারের বইটাও কাজের। আমি দুইটাকে জোড়-বই হিসাবে পড়সিলাম।
অ.ট : ভারতবর্ষে হিন্দু-মুসলাম সংঘর্ষের ইন্ধন সবার প্রথমে দিসিল পর্তুগিজরা। এই হার্মাদগুলাকে নিয়াও ভাবনার অবকাশ থাকে।
_________________________________
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
৫
অট: পারলে এই সম্পর্কে একটা পোস্ট দিতে পারেন।
----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
৬
অনেকদিন পর আবার ছফাগিরি পড়ে ভাল লাগল। তবে ছফার একটা বক্তব্য এখানে ঠিক কেন জানি মানতে পারি না। উনি প্রফেসর রাজ্জাক সন্মন্ধে বলছেন-
"যৌবনে যে মানুষ ট্রটস্কির থিয়োরি অব পার্মানেন্ট রেভ্যুল্যুশনের বাংলা এবং অবন ঠাকুরের ইংরেজি অনুবাদ করেছেন, সেই মানুষের পক্ষে অন্য কোন মামুলি বিষয়ে কাজ করা অসম্ভব ছিলো। তাঁর মানসিক সূক্ষ্ণতার এমন একটা সমুন্নত উত্তরণ ঘটেছিল, সেখান থেকে তৎকালীন বিদ্যাচর্চার স্তরটিতে নেমে আসা দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। জ্ঞানচর্চার সামাজিক প্রেক্ষিতটির কথা অবশ্যই ধর্তব্যের মধ্যে আনতে হবে।"
কিন্তু প্রশ্ন হল প্রফেসর রাজ্জাক কে কিছু লেখার জন্য কেন ততকালীন বিদ্যাচর্চার স্তরে নেমে আসতে হবে, উনি উনার স্তরে থেকেই কি লিখতে পারতেন না? বিদ্যাচর্চার ততকালীন প্রেক্ষাপট কে আরেকটু উন্নত করতে পারতেন না? এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী শুভাশীষ দা?
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
"যৌবনে যে মানুষ ট্রটস্কির থিয়োরি অব পার্মানেন্ট রেভ্যুল্যুশনের বাংলা এবং অবন ঠাকুরের ইংরেজি অনুবাদ করেছেন, সেই মানুষের পক্ষে অন্য কোন মামুলি বিষয়ে কাজ করা অসম্ভব ছিলো। তাঁর মানসিক সূক্ষ্ণতার এমন একটা সমুন্নত উত্তরণ ঘটেছিল, সেখান থেকে তৎকালীন বিদ্যাচর্চার স্তরটিতে নেমে আসা দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। জ্ঞানচর্চার সামাজিক প্রেক্ষিতটির কথা অবশ্যই ধর্তব্যের মধ্যে আনতে হবে।"
কিন্তু প্রশ্ন হল প্রফেসর রাজ্জাক কে কিছু লেখার জন্য কেন ততকালীন বিদ্যাচর্চার স্তরে নেমে আসতে হবে, উনি উনার স্তরে থেকেই কি লিখতে পারতেন না? বিদ্যাচর্চার ততকালীন প্রেক্ষাপট কে আরেকটু উন্নত করতে পারতেন না? এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী শুভাশীষ দা?
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
৭
উদ্ধৃতি
জ্ঞানচর্চার সামাজিক প্রেক্ষিতটির কথা অবশ্যই ধর্তব্যের মধ্যে আনতে হবে।
এই কথাটা গুরুত্বের। যদি লিখতেন তবে প্রেক্ষিত অবশ্যই পাল্টাত। কিন্তু তিনি সেই চেষ্টা করেননি।
আবদুর রাজ্জাকের একটা সুবিধা ছিল। তাঁর কথা শোনার লোকের অভাব হত না। ফলে বই লেখা না হলেও তাঁর কথাবার্তা ঠিকই কিছু লোকের কাছে পৌঁছাত। আর সেটা লেখালেখির সাথে যুক্ত মানুষের কাছেই বেশি। তাঁকে সক্রেটিস কিংবা সস্যুরের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। সস্যুর কোনো কিছু লিখেননি। তাঁর ছাত্ররা তাঁর লেকচার শুনে সেই লেকচার নোট থেকে 'কোর্স ইন জেনারেল লিঙ্গুয়িস্টিকস' বই আকারে প্রকাশ করে। সস্যুরের খ্যাতি তখন ছড়িয়ে পড়ে।
আবদুর রাজ্জাকের একটা সুবিধা ছিল। তাঁর কথা শোনার লোকের অভাব হত না। ফলে বই লেখা না হলেও তাঁর কথাবার্তা ঠিকই কিছু লোকের কাছে পৌঁছাত। আর সেটা লেখালেখির সাথে যুক্ত মানুষের কাছেই বেশি। তাঁকে সক্রেটিস কিংবা সস্যুরের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। সস্যুর কোনো কিছু লিখেননি। তাঁর ছাত্ররা তাঁর লেকচার শুনে সেই লেকচার নোট থেকে 'কোর্স ইন জেনারেল লিঙ্গুয়িস্টিকস' বই আকারে প্রকাশ করে। সস্যুরের খ্যাতি তখন ছড়িয়ে পড়ে।
-------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
৮
জ্ঞানের অপ্রতুলতার জন্য কিছু কিছু ব্যাপারে মনটা খচখচ করতে লাগল।
-----------------------------------
আজি দুঃখের রাতে, সুখের স্রোতে ভাসাও তরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।
উদ্ধৃতি
লেনিন-কাউটস্কির মতদ্বৈধতা থেকেই কি এই সিদ্ধান্ত?তিনি যদি মুসলিম লীগ না করতেন, তাঁকে অবশ্যই কমিউনিস্টদের সঙ্গে যেতে হতো।
-----------------------------------
আজি দুঃখের রাতে, সুখের স্রোতে ভাসাও তরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।
৯
১০
কমিউনিষ্টদের সাথে গেলে কি সমস্যা ছিলো?
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
১১
কমিউনিস্টদের সাথে গেলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে হিটলারের সমর্থক (কারণ হিটলার ফ্রান্স ব্রিটেনের শত্রু) আর শেষ পর্যায়ে ব্রিটিশের সমর্থক; (কারণ ব্রিটেন সোভিয়েত ইউনিয়নের মিত্র) ভারতের কমিউনিস্টদের মতো রাজ্জাকেও যেদিকে বৃষ্টি সেদিকে ছাতা ধরতে হতো
১২
তাই তিনি গেলেন জিন্নাহ সাহেবের সাথে, দ্বিজাতি তত্বের ছাতার তলায়। ভালো।
হিটলার হিটলিষ্টে ইহুদী, নন-আর্য, জিপসীদের সাথে তার স্বজাতি কমিউনিষ্টরা ও ছিলো। গনহত্যার একেবারে শুরুতেই সাফ করা শুরু করেছিলে জার্মানের কমিউনিষ্টদের। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একেবারে শুরুর দিকেই হিটলুর ফ্রান্স দখল এবং ফ্রান্সের প্রতিরোধেযুদ্ধের সামনের সারিতে ছিলো কমিউনিষ্টরা।
এই ইতিহাস ভুল না হলে বিশ্বের কোন প্রান্তের কোন কমিউনিষ্টেরই তো সেসময় হিটলারের সমর্থক হওয়ার কথা নয়। অবশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়ের ভারতীয় কমিউনিষ্ট পার্টির গতিপ্রকৃতির ইতিহাস আমার জানা নেই। তুমি সম্ভব হলে আলাদা পোষ্ট দিও। এই অঞ্চলের কমিউনিষ্টদের ঐতিহ্যগত দিকভ্রান্তি জানা যাবে।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
হিটলার হিটলিষ্টে ইহুদী, নন-আর্য, জিপসীদের সাথে তার স্বজাতি কমিউনিষ্টরা ও ছিলো। গনহত্যার একেবারে শুরুতেই সাফ করা শুরু করেছিলে জার্মানের কমিউনিষ্টদের। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একেবারে শুরুর দিকেই হিটলুর ফ্রান্স দখল এবং ফ্রান্সের প্রতিরোধেযুদ্ধের সামনের সারিতে ছিলো কমিউনিষ্টরা।
এই ইতিহাস ভুল না হলে বিশ্বের কোন প্রান্তের কোন কমিউনিষ্টেরই তো সেসময় হিটলারের সমর্থক হওয়ার কথা নয়। অবশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়ের ভারতীয় কমিউনিষ্ট পার্টির গতিপ্রকৃতির ইতিহাস আমার জানা নেই। তুমি সম্ভব হলে আলাদা পোষ্ট দিও। এই অঞ্চলের কমিউনিষ্টদের ঐতিহ্যগত দিকভ্রান্তি জানা যাবে।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
১৩
অপেক্ষায় ছিলাম
পড়ছি
পড়ছি
১৪
অসাধারণ একটি লেখা
১৫
উদ্ধৃতি
সলিমুল্লাহ সাব ভালোই যুক্তি দিছেন। সারা পাকিস্তানযুগে পদোন্নতি না হওয়া আর স্বাধীন হবার পদোন্নতি পাওয়া সকলেই তাহলে ছয়দফার মুল চিন্তক আর স্বাধীনতার স্থপতি।আওয়ামী লীগ প্রণীত ছয়দফার মূল ধারণা তাঁহারই চিন্তার ফসল। এই সত্যের স্বীকৃতি পরোক্ষে পাওয়া যায় সারা পাকিস্তান যুগে তাঁহার পদোন্নতি না হওয়ার ঘটনায়। সবচেয়ে বড় কথা, পাওয়া যায় দেশ স্বাধীন হইবার পর তাঁহাকে মানবিক বিদ্যায় জাতীয় অধ্যাপক পদে বরণ করিবার সরকারি সিদ্ধান্তেও।
এই কথিত ফাউন্ডিং ফাদার্সদের খুঁজে বের করা তাহলে জাতীয় কর্তব্য।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
১৬
আরে্কটা তথ্য - তিনি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়েন, তখনও কিন্তু তিনি সহকারী অধ্যাপক। (সুত্রঃ প্রিয়জন, মুনতাসীর মামুন, পৃঃ ৩২)
১৭
আমি আমার সামান্যজ্ঞানে যা বুঝি, ব্যক্তিমানুষ যেমন সকল সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা, নানা কারনে বিভ্রান্ত হয় ঠিক তেমনি কোন কোন প্রজন্ম ও বিভ্রান্ত হয় কোন কোন ঐতিহাসিক মুহুর্তে।
বাস্তবতা যতো যাই থাকুক- ঐ হিন্দু লীগ, মুসলিম সকলই ছিলো সেই প্রজন্মের এক বিশাল বিভ্রান্তি। মাত্র গুটি কয়েক শুভবোধসম্পন্ন মানুষ ছাড়া ঐ প্রজন্মের প্রায় সকলেই ঐ বিভ্রান্তিতে জড়িয়েছিলেন।
আব্দুর রাজ্জাক সেই গুটি কয়েক শুভবোধসম্পন্নদের একজন ছিলেননা। তিনি ঐ সময়ের ঝাঁকের কইই ছিলেন।
পরবর্তীতে ঐ প্রজন্মের বড় অংশ সেই বিভ্রান্তি থেকে বের হয়ে এসেছিলেন, আসার চেষ্টা করেছিলেন- এর পরিনতিই মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ। আব্দুর রাজ্জাক ঐ বিভ্রান্তি কাটিয়ে বের হয়ে আসা দের দলে ছিলেন কিনা তেমন কোন তথ্য-প্রমান আমার জানা নেই।
মহাত্মা( তার ভক্তরা দেখি এই বিশেষন ব্যবহার করেন) সলিমুল্লাহ খানের মতো বালখিল্য যুক্তি দিয়ে এটা প্রমান করা যায়না। তাঁর জ্ঞান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তার অবদান সেসব নয় বরং এর জন্য জানা দরকার পুরো ষাটের দশকে এবং মুক্তিযুদ্ধচলাকালীন সময়ে তার ভূমিকা।
সলিড তথ্য প্রমান প্রদান ছাড়া ছফা- সলিমুল্লাহরা তাকে বাংলাদেশের অন্যতম স্থপতি, ছয়দফার মুল চিন্তক এইসব যতো কিছুই বলেন শেষপর্যন্ত এটা অন্ধগুরুভক্তি ছাড়া আর কিছুই প্রসব করেনা।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
বাস্তবতা যতো যাই থাকুক- ঐ হিন্দু লীগ, মুসলিম সকলই ছিলো সেই প্রজন্মের এক বিশাল বিভ্রান্তি। মাত্র গুটি কয়েক শুভবোধসম্পন্ন মানুষ ছাড়া ঐ প্রজন্মের প্রায় সকলেই ঐ বিভ্রান্তিতে জড়িয়েছিলেন।
আব্দুর রাজ্জাক সেই গুটি কয়েক শুভবোধসম্পন্নদের একজন ছিলেননা। তিনি ঐ সময়ের ঝাঁকের কইই ছিলেন।
পরবর্তীতে ঐ প্রজন্মের বড় অংশ সেই বিভ্রান্তি থেকে বের হয়ে এসেছিলেন, আসার চেষ্টা করেছিলেন- এর পরিনতিই মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ। আব্দুর রাজ্জাক ঐ বিভ্রান্তি কাটিয়ে বের হয়ে আসা দের দলে ছিলেন কিনা তেমন কোন তথ্য-প্রমান আমার জানা নেই।
মহাত্মা( তার ভক্তরা দেখি এই বিশেষন ব্যবহার করেন) সলিমুল্লাহ খানের মতো বালখিল্য যুক্তি দিয়ে এটা প্রমান করা যায়না। তাঁর জ্ঞান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তার অবদান সেসব নয় বরং এর জন্য জানা দরকার পুরো ষাটের দশকে এবং মুক্তিযুদ্ধচলাকালীন সময়ে তার ভূমিকা।
সলিড তথ্য প্রমান প্রদান ছাড়া ছফা- সলিমুল্লাহরা তাকে বাংলাদেশের অন্যতম স্থপতি, ছয়দফার মুল চিন্তক এইসব যতো কিছুই বলেন শেষপর্যন্ত এটা অন্ধগুরুভক্তি ছাড়া আর কিছুই প্রসব করেনা।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
১৮
উদ্ধৃতি
আবদুর রাজ্জাকের কাছে যাঁরা যাতায়াত করতেন তাঁদের অনেকেই লেখালেখির সাথে যুক্ত ছিলেন। এঁদের অনেকেই প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে যুক্ত ছিলেন। তাঁদের লেখালেখিতে কী আবদুর রাজ্জাকের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বিরূপতার কোনো আভাস আছে? রেফারেন্স থাকলে জানিয়েন।তাঁর জ্ঞান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তার অবদান সেসব নয় বরং এর জন্য জানা দরকার পুরো ষাটের দশকে এবং মুক্তিযুদ্ধচলাকালীন সময়ে তার ভূমিকা।
------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
১৯
না নেই। ঠিক তেমনি নেই- বাংলাদেশের অন্যতম স্থপতি কিংবা ছয়দফার প্রণেতা দাবী করার মতো কিছু। কেবল ছফা ও সলিমুল্লাহর অপ্রমানিত আভাস ছাড়া।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
২০
বাংলা উইকিতে লেখা আছে তিনি ছয়দফার প্রস্তাবকদের অন্যতম।
bn.wikipedia.org/wiki/আবদুর_রাজ্জাক_(বাংলাদেশের_জাতীয়_অধ্যাপক)
-----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
bn.wikipedia.org/wiki/আবদুর_রাজ্জাক_(বাংলাদেশের_জাতীয়_অধ্যাপক)
-----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
২১
দেখলাম। উইকি এন্ট্রি ইতিহাসের দলিল হিসেবে স্বীকৃত কি?
তাকে ঘিরে যে দাবী করা হয় সেটি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই এর যথাযথ তথ্যপ্রমান জরুরী বলে আমার কাছে মনে হয়, সে কারনেই বারংবার এই প্রশ্নউত্থাপন। আর কিছু নয়
তাকে ঘিরে যে দাবী করা হয় সেটি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই এর যথাযথ তথ্যপ্রমান জরুরী বলে আমার কাছে মনে হয়, সে কারনেই বারংবার এই প্রশ্নউত্থাপন। আর কিছু নয়
২২
শুভাশীষ, আরেকটি চমৎকার লেখা। খুব ভাল লাগল।
আপনার চমৎকার লেখাটা পড়ে, তাঁর উপর মুনতাসীর মামুনের লেখাটা শেলফ থেকে নামালাম অনেকদিন পর। যদিও তার রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনা তেমন কিছু বুঝা যায় না। এটা ঠিক জনাব মামুন তাঁর বড় ভক্ত ছিলেন এবং রাজনৈতিক দিকে তেমন আলোকপাত করেননি। তবুও কয়টা লাইন তুলে দেই…
(আউট অভ কন্টেস্ট কোট করলাম কিছু। অধ্যাপক আবদূর রাজ্জাককে একজন মানুষ হিসাবে এবং একজন অধ্যাপক হিসাবে আমার কাছে অনেক উচু মানের মনে হয়েছে। তবে এটাও ঠিক, তিনি হয়ত শক্ত ভাবে তার মতামত ব্যাক্ত করতেন না এবং সবার সাথেই তাঁর চমৎকার সম্পর্ক ছিল এবং লোকজন তাঁকে খুবই শ্রদ্ধা করত।)
আপনার চমৎকার লেখাটা পড়ে, তাঁর উপর মুনতাসীর মামুনের লেখাটা শেলফ থেকে নামালাম অনেকদিন পর। যদিও তার রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনা তেমন কিছু বুঝা যায় না। এটা ঠিক জনাব মামুন তাঁর বড় ভক্ত ছিলেন এবং রাজনৈতিক দিকে তেমন আলোকপাত করেননি। তবুও কয়টা লাইন তুলে দেই…
উদ্ধৃতি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজ বইটা পড়া হয়নি। কিন্তু জনাব মানুনের লেখা অনুসারে বিচিত্রায় এর অংশ বিশেষ প্রকাশের পর ভাষা আন্দোলন নিয়ে তাঁর কিছু মন্তব্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল।… রাজ্জাক স্যারের সাথে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা খুব কমই হতো। আলোচনা হলেও পাকিস্থান পর্বের রাজনীতি নিয়েই খানিকটা আলাপ হতো। … ১৯৭৫ সাল নিয়ে আলোচনা কখনোই তেমন হয়নি। বিষয়টি তাঁর জন্য বিব্রতকর ছিলো। কারণ, তাঁর ভাতিজাবৌয়ের ভাই ছিলো মেজর ডালিম। … মুহম্মদ আলী জিন্নাহর তিনি ভক্ত ছিলেন। আমাকে মাঝে মাঝে ১৯৪৭ সালের পূর্বের কিছু ঘটনা বলতেন। সবগুলির কথা ভুলে গেছি। প্রধানত হিন্দু-মুসলমান বৈষম্যের কথাই বলতেন যার সঙ্ঘে আমরা পরিচিত নই। দু’একটা ঘটনা বলেছিলেন বাল্য বা তরুণ বয়সের যখন হিন্দু ভদ্রলোকের সাথে তাঁকে নাজেহাল হতে হয়েছে। এসব বিষয়ে তাঁর মনে সে সময় হয়তো প্রবল অভিমানের সৃষ্টি হয়েছিলো।মুসলিক লীগ ও পাকিস্থান সমর্থন করেছিলেন কারণ জিন্নাহকে তাঁর অধিকতর সেক্যুলার মনে হয়েছে, গান্ধীর থেকেও। … পাকিস্থান আমলে মোহন মিয়া প্রমুখের সাথেও তাঁর যোগাযোগ ছিল। শাসনতন্ত্র রচনার বিষয়ে পূর্ব পাকিস্থানী নেতাদের ভূমিকা কী হবে সে বিষয়ে আলোচনার জন্য তাঁরা একবার তাঁকে করাচীও নিয়ে গিয়েছিলেন……।।
(আউট অভ কন্টেস্ট কোট করলাম কিছু। অধ্যাপক আবদূর রাজ্জাককে একজন মানুষ হিসাবে এবং একজন অধ্যাপক হিসাবে আমার কাছে অনেক উচু মানের মনে হয়েছে। তবে এটাও ঠিক, তিনি হয়ত শক্ত ভাবে তার মতামত ব্যাক্ত করতেন না এবং সবার সাথেই তাঁর চমৎকার সম্পর্ক ছিল এবং লোকজন তাঁকে খুবই শ্রদ্ধা করত।)
২৩
উদ্ধৃতি
রাজ্জাক সাহেব নাই। আল্লাহ তাঁকে বেহেশত নসির করুন। তাঁর গুনমুগ্ধ জ্ঞানী শিষ্যরা যদি জানাতে পারতেন কি করে দ্বিজাতি তত্বের জনক জিন্নাহ অধিকতর 'সেক্যুলার' ছিলেন- গান্ধীর থেকেও!মুসলিক লীগ ও পাকিস্থান সমর্থন করেছিলেন কারণ জিন্নাহকে তাঁর অধিকতর সেক্যুলার মনে হয়েছে, গান্ধীর থেকেও।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
২৪
উদ্ধৃতি
মুসলিক লীগ ও পাকিস্থান সমর্থন করেছিলেন কারণ জিন্নাহকে তাঁর অধিকতর সেক্যুলার মনে হয়েছে, গান্ধীর থেকেও।
বোঝা যাচ্ছে সাতচল্লিশ সালের দিকের স্মৃতিচারণ। এই বুড়ো যতোটা না বিপদজনক কথা বলে গেছেন, তাঁর ভক্তকুল সন তারিখ ছাড়া তাঁর মখে কথা বসিয়ে তাঁকে আরো বিপদজনক করে তুলেছেন বলে মনে হয়।
---------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
২৫
২৬
এই পর্বটা আসলেই খুব আকর্ষণীয় হয়েছে !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
২৭
হুমায়ূন আজাদ কর্তৃক আবদুর রাজ্জাকের সাক্ষাৎকার (ফটুক কৃতজ্ঞতা: অনিন্দ্য রহমান)
----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
২৮
আপনার ছফাগিরি একটা পছন্দের সিরিজ।
আর লিংকটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই সাক্ষাৎকার/কথোপকথন পড়ার সুযোগ আমার ক্ষুদ্র জীবনের এক বিরাট পাওয়া। দুই মহারথীর কথোপকথন; তাই হয়তো মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশকেই পড়ছি।
দূরের তেপান্তর
আর লিংকটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই সাক্ষাৎকার/কথোপকথন পড়ার সুযোগ আমার ক্ষুদ্র জীবনের এক বিরাট পাওয়া। দুই মহারথীর কথোপকথন; তাই হয়তো মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশকেই পড়ছি।
দূরের তেপান্তর
২৯
হ্যাঁ। দুই মহারথী। সাথে আবার হুমায়ুন আজাদের বিশেষায়ণ। ---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার