দুরত্বের সৌন্দর্য যারা বোঝেন না, তারা কখনো জানবেন না পৃথিবীর প্রতিটি ভাষাতেই কেন কথ্য আর লেখ্য ভাষার রুপ ভিন্ন ভিন্ন হয়।
আপনার তাবৎ লেখায় (http://arts.bdnews24.com/?p=2794) আমি আবেগপূর্ণ ক্ষোভ আর অহেতুক পান্ডিত্য ছাড়া কোনো যুক্তি খূজে পেলাম না।ক্ষমা করবেন।সর্ব প্রথমে- যে ভাষায় লিখেছেন, দয়া করে বলবেন কি বাংলাদেশের মানচিত্রে এ ভাষার অবস্থান কোথায়? মানে ঠিক কোন অঞ্চলের ভাষা এটা? ঢাকা? কুমিল্লা? নোয়াখালি? সিলেটী? আমি ঠিক খুজে পাচ্ছি না। যদি এটা কোনো আঞ্চলিক ভাষা না হয়ে আপনি বা কতিপয় আপনাদের সৃষ্ট ভাষা হয়, যা জোরপূর্বক আপনারা বাঙালী জাতির গলাধঃকরন করানোর চেষ্টা করছেন তাহলে জেনে রাখুন এই অপচেষ্টা কোনোদিনও সফল হবার নয়। আর যদি নেহায়তই বলে বসেন যে- না, এটা আমার কথ্য ভাষা তাহলে শুনুন।
ছবিঃ বৃহত্তর বাংলা ভাষাভাষী
গুড় অনেক খাবারকে মিষ্টতা প্রদান করে সাধারনের জিভের স্বাদ বাড়ায় কিন্ত শুধু গুড় খুব কম মানুষেরই পছন্দের, আর এটা ঠিক স্বাস্থকরও না! কথ্যভাষাও তেমনী এই গুড়েরই মতো যূগে যূগে তা সাহিত্যের শোভা বৃদ্ধি করেছে কিন্তু শুধু কথ্যভাষা সাহিত্যের সাথে সাধারনের দুরত্বই তৈরী করে মাত্র!
ভাষা মিশ্রন নিশ্চয়ই হবে, আমরা অন্যান্য ভাষা থেকে শব্দ নিশ্চয়ই নেব, যেমনটা নেব আঞ্চলিক ভাষা থেকেও কিন্তু এর মানে এই নয় RJ দের ভাষার ব্যবহার এর মতো অন্যান্য ভাষা আমার ভাষাকে কুমিরের মতো গিলে খেতে শুরু করবে!
নৃবৈজ্ঞানিক গবেষণা বলে, প্রতি ২২ কিলোমিটার অন্তর অন্তর মানুষের মুখের ভাষা পরিবর্তিত হয়। তাহলে কি প্রতি ২২ কিলোমিটার অন্তর অন্তর ভিন ভিন্ন সাহিত্যগোষ্ঠী গড়ে উঠবে! যদি গড়ে উঠেও ভেবে দেখেছেন তার ব্যাপ্তি বা স্থায়িত্ব কতোটা হবে?
প্রতিযোগীতার ক্ষেত্র যতটা বড় হয়, এর ফলাফলও ততটা মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য হয়।আমার কানাডিয়ান বন্ধু 'ইয়েন'(native English speaker) ইংলেন্ডে যাওয়ার পর এক ইংরেজ তাকে বলছে- "what are you speaking! try to speak some English"(কি বলছো তুমি! ইংরেজী বলার চেষ্টা করো!)।
কিন্তু এর আগে ওরা যখন ই-মেইলে কথা বলছিল লেখ্যভাষায় তখন কিন্তু কেউ কাউকে বুঝতে কোনো সমস্যা ছিল না! একই ভাবে স্কটিশরা পাশাপাশি দেশ হলেও ওদের কথ্য ইংরেজী ইংরেজদের বোধগম্য নয়! সিঙ্গাপুরের কথ্য ইংরেজীর আলাদা নামই হয়ে গেছে 'সিংলিশ'।
কিন্তু কথ্যভাষার স্বাধীনতার পাশাপাশি লেখ্যভাষার ঐক্যর কারনে ইংরেজীর বিস্তার বাড়ছে, কমছে না! পৃথিবীর তাবৎ সেরা সাহিত্যের ৮০ ভাগই রচিত হচ্ছে হয় ইংরেজীতে অথবা ইংরেজীতে অনুবাদের পরই মিলছে সেরার স্বীকৃতি। একবার কি ভেবে দেখেছেন সয়ং রবীন্দ্রনাথকেও কেন নোবেল পুরষ্কার এর জন্য গীতাঞ্জলী ইংরেজীতে অনুবাদ করতে হয়!
ছবিঃ এর ভিতরেও আছে অনেক বিভাজন
মানুষ এখন বিশ্বগ্রাম এর বাসিন্দা, এখানে গর্তবদ্ধ হয়ে থাকার কোনো সুযোগ নেই।
কুমিল্লা শহর থেকে আমার গ্রামের বাড়ি মাত্র ১২ মাইল পশ্চিমে। অথচ এই ১২ মাইল দুরত্বেই 'যাব-খাব' পরিবর্তিত হয়ে 'যাইতাম-খাইতাম' এবং 'যায়াম-খায়াম' দুটি ভিন্নরুপে আবির্ভুত হয়! এখন আমার গ্রামের ৫ বর্গমাইলের জনগনের দায়িত্ব কে নেবে? সমগ্র বাংলা ভাষাকে অনুবাদ করে 'যাব-খাব' কে 'যায়াম-খায়াম' কে করে দেবে! অথবা এই ৫ বর্গমাইলের ২/৪ জন সাহিত্যিকের 'যায়াম-খায়াম' কে অনুবাদ করে কে সমগ্র বাংলায় পৌছাবে!
আমার কখনোই সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া হত না, যদি ইংরেজীর IELTS এর মতো কোনো ISLTS দিয়ে আমাকে পড়তে যেতে হতো! আপনি যে কোলকাতার কথা বলছেন, কোলকাতায়ও কিন্তু কথ্য ও লেখ্য রুপ ভিন্ন!
ছবিঃ সিলেটী ভাষা শিখুন।
কথ্যভাষার এক্সপেরিমেন্ট করছেন, করতেই পারেন! তবে, অভাজনের অভিজ্ঞতার কথা শুনুন আমার নোয়াখালির বন্ধু সালাহ উদ্দিন শুভ্র'র নোয়াখালির ভাষায় লেখা গল্প আরেক নোয়াখালির বন্ধু পড়ে আমাকে বললো- ভালো। আমি আগ্রহ নিয়ে পড়তে গিয়েও পড়তে পারিনি, কারন নোয়াখালির ভাষা আমি বুঝি না। অপেক্ষা করছি যদি কোনোদিন ঐ গল্পের বঙ্গানুবাদ হয়!
আপনাদের কথ্যভাষার লেখা আমাকে এড়িয়ে যেতে হয় কারন আপনার আমার কথ্যভাষা ভিন্ন, পড়ে ঠিক বুঝি না বা আরাম পাই না। আর পড়ার আরাম ছাড়া সাহিত্যের রস-আস্বাদন কি করে সম্ভব!
ভাষা 'এমিবা' না। বিভাজনে এর বিকাশ হয় না বরং মৃত্যু হয়।
[আমার নাম কথ্য ভাষায় যেমন 'মামুন' থেকে 'মামুইন্যা', আমি নিশ্চিত আপনার নামও হয় 'রেজাউইল্লা' বা 'করিম্মা'।
আপনার লেখার মতো নামেরও কথ্যরুপ ব্যবহার করলে আপনার লেখার প্রতি আমার শ্রদ্ধা বাড়তো, কমতো না!]
http://www.facebook.com/porimanob#!/note.php?note_id=382010978284
No comments:
Post a Comment