স্বদেশ রায়
দেশের নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শাহবাগকে কেন্দ্র করে একত্র হবার পর বাংলাদেশের সমগ্র সমাজ ও রাজনৈতিক জীবনে অনেক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। দৃশ্যত মনে হতে পারে এটা বিস্ময়কর, কিন্তু বাস্তবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ ১৯৭৫-এর পনেরো আগস্টের পর থেকে আপোসকামী এবং স্বাধীনতাবিরোধীদের দাপটে যে নষ্ট সমাজ গড়ে উঠেছে এ দেশে, শাহবাগই প্রথম তাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই এখন এ সমাজে অনেক কিছু ঘটবে। যার কোন কিছুতেই বিস্মিত হবার কোন কারণ নেই। বরং শুধু এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কঠিন নিক্তিতে ফেলে পরিমাপ করতে হবে কোনটি সঠিক আর কোনটি সঠিক নয়।
দেশের স্বাধীনতার সপক্ষের মানুষ এবং নতুন প্রজন্মের ৫ থেকে ৬ কোটি তরুণ-তরুণী মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করে শাহবাগকে প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করেছে সত্য, কিন্তু শাহবাগ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এই জাগ্রত রূপ বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে অনেককে। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ যাদের নেতা শেখ হাসিনা পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলেছেন, এখন আর আমার মারা গেলেও কোন দুঃখ নেই। কারণ দেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিচালিত হবে। তারপরও বলতে পারি, অনেক আওয়ামী লীগার ও আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে তারা ঠিক শতভাগ পছন্দ করতে পারছেন না শাহবাগের জাগরণকে। কারণ তাদের কাছে মনে হচ্ছে, এটা তারা এতদিন যে পথে চলছিল ওই পথে একটি বাধা হবে। সত্যি এটা বাধা হবে। কারণ শাহবাগের তরুণদের দাবি, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে বাংলাদেশে। অর্থাৎ এ দেশের মানুষের জন্য অর্থনীতি গড়তে হবে। গত প্রায় ৩৯ বছর ধরে জামায়াতে ইসলামী যে লাখ লাখ কোটি টাকার মৌলবাদী অর্থনীতি গড়ে তুলেছে ওই অর্থনীতি কোন মতেই টিকে থাকতে দেয়া হবে না। সেটাকে বন্ধ করে দিতে হবে। এটা আওয়ামী লীগের একটি অংশের জন্য খুবই সমস্যার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ওই অংশটি মৌলবাদীদের সঙ্গে মিলিতভাবে ব্যবসাবাণিজ্য করে। তাই এখানে তাদের স্বার্থে হাত পড়েছে। এছাড়া আরেকটি গ্রুপ আছে আওয়ামী লীগে যারা দীর্ঘদিন মৌলবাদী ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আপোস করে করে এখন আর ঠিক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর শতভাগ বিশ্বাস রাখতে পারছে না। তারা মনে করছে দেশের মানুষও তাদের মতো গত ৩৯ বছরে পরিবর্তন হয়ে গেছে। তাই তারা একটি দোদুল্যমানতায় আছে। এবং এ ক্ষেত্রে তাদেরকে সব থেকে বেশি প্রভাবিত করছে তথাকথিত সুশীল সমাজ মিডিয়ার মাধ্যমে। কারণ এই সব আওয়ামী লীগ নেতার উপলব্ধি করার ক্ষমতা নেই যে, এই তথাকথিত সুশীল সমাজ পাকিস্তান আমলে আইউব-মোনায়েমের মাধ্যমে সৃষ্ট এবং বাংলাদেশে জিয়া ও এরশাদের মাধ্যমে সৃষ্ট। তাই এরা শেষ বিচারে ধর্ম ব্যবসায়ী ও মৌলবাদীদের পক্ষে থাকবে।
আওয়ামী লীগের বিপরীতে বাংলাদেশে বিএনপি। বিএনপি এখন তাদের সকল পর্দা ফেলে দিয়ে প্রকাশ্যে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে একাত্ম হয়েছে। কারণ তরুণ প্রজন্মের মিরপুর ঘোষণার পরে বিএনপির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে গেছে, যদি না এ দেশে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির অস্তিত্ব তারা টিকিয়ে রাখতে পারে। কারণ তরুণ প্রজন্ম স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে অনান্য স্বাধীন দেশের মতো বাংলাদেশের সরকার ও বিরোধী দলকে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের হতে হবে। বিএনপি জিয়াউর রহমান নামক মুক্তিযুদ্ধের একটি পর্দা পরে থাকে ঠিকই, কিন্তু তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তিরই প্রতিনিধিত্ব করে। তাই বর্তমানে যে অবস্থানে বিএনপি আছে ওই অবস্থানে থাকলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এ দেশে জয়লাভ করলে বিএনপির স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটবে। ঠিক তেমনিভাবে স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটবে মৌলবাদী অর্থনীতিসহ তথাকথিত সুশীল সমাজের। যারা আউয়ুব, জিয়া ও এরশাদ দ্বারা গঠিত।
মুক্তিযুদ্ধের এই জাগ্রত চেতনাকে রুখে দিতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি হবার পর থেকেই সব থেকে ন্যক্কারজনক ভূমিকা নেয় পত্র-পত্রিকার মধ্যে আমার দেশ। এবং তার তথাকথিত বা বাইচান্স সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। এই পত্রিকাটি যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য কী কী করেছে তা গত কয়েক মাস দেশের মানুষ দেখেছে। তারপরে দেখেছে কিভাবে তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের তরুণ সমাজকে নাস্তিক ও নষ্ট প্রজন্ম হিসেবে উপস্থিত করার জন্য, মিথ্যে বিষয় উপস্থাপন করেছে। এবং কিভাবে একের পর এক মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করেছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে দেশের স্বাধীনতার চেতনার বিরুদ্ধে ও যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কীভাবে কাজ করেছে। পৃথিবীর কোথাও কোন দেশে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে এভাবে প্রচারণা চালানো যায় না। কোন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সেটাকে গ্রহণ করে না। কোন গণতন্ত্র সে সুযোগ দেয় না। কিন্তু সেই কাজ মাহমুদুর রহমান করেছে। সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে দাঙ্গা বাধিয়েছে। হিন্দুদের বাড়ি-ঘর-মন্দির ভাঙচুর করানোতে উস্কানি দিয়েছে। যে কারণে দেশের মানুষের স্বার্থে, স্বাধীনতার চেতনার স্বার্থে ও সমাজের শান্তির স্বার্থে তাকে গ্রেফতার করার সঙ্গত দাবি ওঠে নানান মহল থেকে। কিন্তু সরকার প্রথমে তাতে কান দেয়নি। যার ফলে মাহমুদুর রহমান দেশের ও দেশের মানুষের অনেক ক্ষতি করতে সমর্থ হন। যাহোক, সরকার শেষ অবধি তাকে গ্রেফতার করছে।
এখন মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করার পর সম্পাদকের অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বার্থের নামে তাকে মুক্তি দেবার দাবি জানিয়েছে দেশের ১৫ বিশিষ্ট সম্পাদক। যার ভিতর ইনকিলাব ও নয়া দিগন্ত পত্রিকার সম্পাদক আছে। এ দুটি পত্রিকাও মূলত আমার দেশ যে কাজ করে সেই কাজই করে চলেছে। আমার দেশ যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে যা করেছে তারপরও এদেশে তার প্রকাশনা অব্যাহত ছিল। গণতন্ত্রের পীঠস্থান ব্রিটেনেও এমন পত্রিকা প্রকাশের অনুমতি দেবে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তবে এই পত্রিকা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এই দুটি বিষয় নিয়ে মনে হয় ১৫ সম্পাদকের এই বিবৃতির পর এ সমাজে নতুন করে ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে। কারণ এখানে সকলেই যে মাহমুদুর রহমানের কীর্তিকে জায়েজ করার জন্য এ কাজ করেছেন এটা সাংবাদিক হিসেবে আমার পক্ষে বিশ্বাস করা কষ্ট। যেমন যে পত্রিকা গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে একটি সংখ্যায় হাসনাত আবদুল হাই ও অদিতি ফাল্গুনিকে দিয়ে নোংরা গল্প লিখিয়েছে। যাদের জনমত জরিপে হেফাজতীদের উত্থান, জামায়াতের তা-ব, বিরোধী দলের কর্মীদের দ্বারা হিন্দুদের বাড়ি-ঘর ও মন্দির ভাঙ্গা এমনকি হিন্দুদের অস্ত্রের মুখে মিছিলে নিয়ে তাদের দিয়ে নারায়ে তকবির/আল্লাহু আকবার বলানোÑএ সব নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। এসব পত্রিকার কর্ণধাররা মাহমুদুর রহমানকে সমর্থন করবেন। তাছাড়া যারা একাত্তরে রাজাকার ছিলেন পাকিস্তান বেতারে ‘প্লেন ট্রুথ’ লিখতেন। বঙ্গবন্ধু এসে তাকে প্রেস সেক্রেটারি করার পর শুধু প্লেন ট্রুথ লেখা নয়, তিনি পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর মনোরঞ্জনের জন্য আর কি কি করেছিলেন সেগুলো দৈনিক গণকণ্ঠে ছাপা হলে বঙ্গবন্ধু তাকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হন। তারা আজ যতই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা বা সম্পাদক হন না কেন, তারা কিন্তু শেষ বিচারে মাহমুদুর রহমানের পক্ষেই থাকবেন। কারণ যে রাজাকার তিনি যুদ্ধাপরাধী রক্ষাকারীর পক্ষেই থাকবেন। তাই তাদের নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন হচ্ছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে আমরা কতদূর যাব সেটা এখনই মনে হয় ভেবে দেখার দরকার। যেমন আজ অনেক গণতান্ত্রিক দেশে অনেক নির্বাহী কাজে বিচার বিভাগ বার বার হস্তক্ষেপ করাতে সে সব দেশ নতুন করে ভাবছে কোর্টের হাত কতদূর যাবে? ঠিক তেমনি আমাদেরও ভেবে দেখার সময় এসেছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে আমরা কতদূর যেতে পারি। ভিন্ন মত আর দেশদ্রোহিতা বা দেশের ভিতর অস্থিরতা সৃষ্টি করার জন্য প্রচারণা চালানো কি একই বিষয়? ভিন্ন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আর যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য মিথ্যা প্রচারণা চালানো কি একই বিষয়?
মাহমুদুর রহমান যেটা করেছেন সেটা কিন্তু তিনি দেশের কোন একটি মতের সঙ্গে ভিন্ন মতপ্রকাশ করেননি। তিনি মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে সমাজে অস্থিরতা ও হত্যা-খুনের উস্কানি দিয়েছেন। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা ও সে বিচারে বাধা দেবার জন্য যা যা করা দরকার সব করেছেন। তিনি দেশকে লাদেনের অনুসারীদের দিয়ে তালেবানী রাষ্ট্র বানানোর পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। তাদেরকে তার পত্রিকার মাধ্যমে ও সশরীরে উপস্থিত হয়ে সংগঠিত করার চেষ্টা করেছেন। এখন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে আমাদের অনেক সম্মানিত সম্পাদক কি সেখানে যাবেন? যে মত দেশের স্বাধীনতার চেতনার বিরুদ্ধে, যুদ্ধাপরাধী রক্ষার পক্ষে সর্বোপরি সেটা মতামত নয় সেটা দেশের অস্তিত্বের ও সমাজের শান্তির বিরুদ্ধে প্রচারণা।
আমার দেশের এই মিথ্যা প্রচারণার মুখোশ সত্যিকার অর্থে যদি কোন মিডিয়া উন্মোচন করে থাকে সেটা এ দেশের সর্বাধিক প্রচারিত ইংরেজী দৈনিক ডেইলি স্টার। ফটোশপের মাধ্যমে মিথ্যা ছবি প্রকাশ করে আমার দেশ কি করেছে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়ার মতো রিপোর্ট করেছে ডেইলি স্টার। শুধু যে এটা উন্মোচন করেছে তা নয়, এই সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক অন্ধকার সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যেমন ২০০১ সালে যখন হিন্দুদের ওপর হাবিয়া দোযখ নেমে আসে বিএনপি ও জামায়াতের কর্মীদের মাধ্যমে। সে সময়ে বিদেশীরা কিন্তু প্রথমে বিশ্বাস করছিল না। কারণ ওই ঘটনাগুলো কেবল বাংলা পত্রিকা দৈনিক জনকণ্ঠ ছাপছিল। সেদিন প্রথম আলো ধর্ষিতা পূর্ণিমার প্রেস কনফারেন্সের খবরও ছাপেনি। ওই দুঃসময়ে ডেইলি স্টার তাদের শুত্রুবারের ম্যাগাজিনটাই করে ওই এথনিক ক্লিনজিংয়ের ওপর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দিয়ে। এর পরে অবশ্য বিদেশীরা বিশ্বাস করে ঘটনা। তারা সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় যায় এবং ঘটনার ভয়াবহতা দেখে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এরপর কিছুটা রক্ষা পায় বাংলাদেশের হিন্দু সমাজ। শুধু তাই নয়, গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে ডেইলি স্টারের ভূমিকা ছিল অনবদ্য। পাশাপাশি সাঈদীর রায়ের পর হিন্দুদের ওপর যে অত্যাচার ও হত্যা নির্যাতন নেমে আসে সেখানে ডেইলি স্টার ছিল অগ্রণী ভূমিকায় সত্য তুলে ধরতে। তাই এর পর ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম যুদ্ধাপরাধী রক্ষাকারীর পক্ষে দাঁড়িয়েছেন ওই বিবৃতিতে সই করে এটা সাংবাদিক হিসেবে বলতে পারি না। তাছাড়া মাহফুজ আনামের ওপর বিশ্বাস রাখা যায়। কারণ তার পিতা আবুল মনসুর আহমদ। যিনি আওয়ামী লীগের মন্ত্রী হিসেবে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে এই কৃষি বাংলাকে শিল্প বাংলার পথে তুলে আনার অন্যতম রূপকার। তাই মাহফুজ আনাম এক জেনারেশন নন। তার অতীত আছে। বর্তমান আছে। তার মেয়ের দিকে তাকালে বলা যায় তার পরবর্তী প্রজন্মও আছে।
তাই স্বাভাবিকভাবে এই বিবৃতিটি ছাপার পর প্রশ্ন উঠেছে, অনেকেই সই করতে পারেন। যারা ’৭১-এ রাজাকার ছিলেন তারা সই করতে পারেন। যারা সুবিধাবাদী তারা সই করতে পারেন এ বিবৃতিতে। কিন্তু মাহফুজ আনাম বা তার মতো যারাÑতারা নিশ্চয়ই কেবল মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়টি চিন্তা করে করেছেন।
আমরা যারা সাংবাদিক, যে কোন অবস্থায়, যে কোন মূল্যে আমরা মতপ্রকাশের পক্ষে থাকব। কিন্তু আমাদের কি ভেবে দেখতে হবে না, আমাদের মতপ্রকাশ যেন আমার দেশ সৃষ্টির মাতৃজনন কোষ অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস না করে। আমার মতপ্রকাশ যেন কোন মতেই দেশ ধ্বংসকারী মৌলবাদীদের হাতকে শক্তিশালী না করে। আমেরিকা এখনও জেফারসনের কথা মানে, এখনও সেখানে প্রথম পছন্দ স্বাধীন সংবাদপত্র। তারপরও আমেরিকা কি লাদেনের কোন অনুচরকে সম্পাদক করে সেখানে লাদেনের মত প্রকাশ করার জন্য কোন পত্রিকা ছাপার অনুমতি দেবে? আর যদি লাদেনের কোন অনুচর সে কাজ করে তাহলে তাকে কি গ্রেফতার করবে না? আর তার গ্রেফতারের পর কি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, বস্টন গ্লোব, নিউইয়র্ক পোস্ট, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর, শিকাগো টাইমসের সম্পাদকরা লাদেনের ওই অনুচরের মুক্তি দাবি করে বিবৃতি দেবেন? মাহমুদুর রহমান যে গোলাম আযম বা জামায়াতের একজন অনুচর ও তাদের জন্য, যুদ্ধাপরাধীদের জন্য কাজ করছেন সেটা প্রমাণিত হয়ে গেছে গণজাগরণ মঞ্চ সৃষ্টি হবার পর। এরপর কি ভেবে দেখব না মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে আমরা কতদূর যাব? গণজাগরণ মঞ্চ সৃষ্টির পর এখন বাংলাদেশের সব রাজকার-আলবদর ও তাদের সন্তানরা এক হবে। কিন্তু তাই বলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে তাদের পক্ষে দাঁড়াতে হবে? এমনকি যারা এই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অংশ, এই দেশের অন্যতম জাতীয় নেতাদের সন্তান তারাও গোলাম আযমের অনুচরের পক্ষে যাবেন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে কোন একটি মরীচিকাকে সামনে রেখে?
দেশে ৩৯ বছর পর তরুণ প্রজন্ম স্বাধীনতার চেতনাকে বুকে ধারণ করে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে চূড়ান্ত আঘাতের প্রস্তুতি নিয়েছে। এ সময়ে সবারই কি একটু সচেতন হওয়া উচিত নয়? কারণ স্বাধীনতাবিরোধীরা ৩৯ বছরে অনেক অর্থবিত্ত, অনেক শক্তি সঞ্চয় করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ১৯৭১-এর মতো তরুণরা শুধু প্রাণকে পুঁজি করে নেমেছে। এ সময়ে বড় অবস্থানে বসে যদি ভুল হয়, লোভের কাছে পরাজয় হয়, সেটা হয়তো তরুণ প্রজন্মের বিজয়কে ঠেকাতে পারবে না কিন্তু কিছুটা হলেও কাঁটার ক্ষত বাড়াবে। রক্ত ঝরাতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে স্বাধীনতাবিরোধীদের।
২৩ মে ২০১৩। দৈনিক জনকণ্ঠ
No comments:
Post a Comment